সোমবার রাশিয়া লাগাতার রকেট হামলা চালায় কিয়েভ-সহ গোটা ইউক্রেনে। যার জেরে কিয়েভের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। নেই জল।
বিজ্ঞাপন
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎসচো ইউরোপীয় দেশগুলির কাছে আবেদন করেছেন, তারা যেন ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ায়। ডিডাব্লিউকে ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের লড়াই কেবল একটি দেশের লড়াই নয়, গোটা ইউরোপের হয়ে লড়ছে ইউক্রেন।
সোমবারের হামলার পর ৮০ শতাংশ মানুষ জল না পেয়ে পালিয়েছেন। কারণ, হামলার ফলে জলের লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। মেয়রের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিক অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে মস্কো। তারা গোটা ইউক্রেনকে ভেঙে দিতে চাইছে। সাধারণ মানুষকেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সোমবারের আক্রমণ মূলত বেসামরিক অঞ্চলে হয়েছে বলে দাবি কিয়েভের মেয়রের।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
ডনবাস অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর অন্য কয়েকটি ইউক্রেনীয় শহর দখলে রাশিয়া নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও ডনবাস পুনরুদ্ধারে নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে৷ ছবিঘরে থাকছে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনের কিছু ছবি৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো...
খারকিভকে লক্ষ্য করে আক্রমণ শুরু করেছে রাশিয়া৷ তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ অঞ্চলটি নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া ইউক্রেনও৷ খারকিভের ফ্রন্টলাইনে রুশ সৈন্যদের লক্ষ্য করে মর্টার নিক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
পর্যাপ্ত সরবরাহ কি আছে?
দিনের পর দিন রাশিয়া আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে৷ অ্যামেরিকাসহ ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে নিয়মিতই সরবরাহ হচ্ছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ৷ তবে তা অব্যাহত না থাকলে রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখতে বেশ বেগ পেতে হবে ইউক্রেনকে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক সৈন্য গাড়িতে রাখা মর্টার নিয়ে যাচ্ছেন রুশ সৈন্যদের ঠেকিয়ে রাখার অংশ হিসাবে৷
ছবি: Vyacheslav Madiyevskyy/REUTERS
বেসামরিক স্থাপনাও রক্ষা পাচ্ছে না
ছবিটি ইউক্রেনের মাইকোলাইভ শহরের৷ রাশিয়ার বোমা হামলায় একটি স্কুল ধ্বংস হয়েছে৷ তবে ইউক্রেনের সৈন্যরা এখনো শহরটি রাশিয়ার সৈন্যদের দখলে চলে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছেন৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মেরামত চলছে...
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক শহরে একটি ট্যাংকের ওপর এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ বোমার আঘাতে নষ্ট হওয়া ট্যাংক মেরামত করছেন তার সহকর্মী৷ রুশ সৈন্যরা খারকিভ দখলে নিলেও পরবর্তীতে ইউক্রেনের পালটা আক্রমণে দখল হারায় রাশিয়া৷ তবে এখনো এর দখল নিয়ে দুই পক্ষে ব্যাপক লড়াই চলছে৷
ছবি: Clodagh Kilcoyne/REUTERS
মুখোমুখি লড়াই
কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী মাইকোলাইভ অঞ্চলে লড়াই তীব্র হয়েছে৷ ইউক্রেনের সৈন্য মাইকোলা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন৷ অদূরে অবস্থান করছে রুশ সৈন্যরা৷ তাদের ঠেকিয়ে রাখতে একে-৪৭ হাতে পাহারা দিচ্ছেন মাইকোলা৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই
আরেক ইউক্রেনীয় সৈন্য ভালেরি একে-৪৭ হাতে পরিখার মধ্যে বসে রয়েছেন৷ তবে সতর্ক প্রহরার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে অন্যদিকেও নজর থাকছে তাদের৷ ফ্রন্টলাইনেই এক কুকুরকে দেখে ভালেরির হৃদয় আর্দ্র হয়ে উঠেছে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
পালটা আক্রমণ
ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝাপোরিজঝিয়া রয়েছে রাশিয়ার দখলে৷ এর নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার৷ শহরটি পুনর্দখলের জন্য লড়াই করছে ইউক্রেনের সৈন্যরা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে গাড়িতে মোতায়েন করা হাওয়িৎজার এফএইচ-৭০ প্রস্তুত করতে৷
ছবি: REUTERS
7 ছবি1 | 7
আমরা ইউরোপকে রক্ষা করছি
সাক্ষাৎকারে ক্লিৎসচো বলেছেন, গোটা ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে লড়াই করছে। তা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য তারা ইউরোপের দেশগুলির কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু একইসঙ্গে মনে রাখা দরকার, এই লড়াই ইউক্রেনের একার নয়, গোটা ইউরোপের জন্য লড়াই করছে ইউক্রেন। ৫১ বছরের মেয়র আগে ইউক্রেনের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। পুটিন কেবল ইউক্রেন দখলের চেষ্টা করছেন না, ইউরোপের আরো অনেক দেশ দখল করতে চান তিনি।'' ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মতো এদিন মেয়রও বলেছেন, রাশিয়া একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। পুটিন চাইছেন, পুরনো সোভিয়েত ইউনিয়নের অবয়বে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে। সমস্ত পুরনো সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলিকে দখল করতে চান তিনি।
রাশিয়ার কৌশল বদল
ক্লিৎসচো বলেছেন, গত কিছুদিনে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে। ফ্রন্টলাইনে রাশিয়ার সেনা বিশেষ কিছু করতে পারছে না। ইউক্রেনের সেনার কাছে তারা পরাজিত হচ্ছে। যে অঞ্চলগুলি তারা দখল করেছিল, সেখান থেকে তাদের পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। তাই কৌশল বদল করেছে রাশিয়া। মিসাইল ছুঁড়ে তারা ইউক্রেনের শহরগুলিকে ভেঙে দিতে চাইছে। ইউক্রেনের মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে। কিন্তু ইউক্রেনের মানুষও রাশিয়াকে ছেড়ে দেবে না। তার দাবি, সোমবার গোটা ইউক্রেনে অন্তত ৫০টি রকেট হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এর আগে অক্টোবরের গোড়ায় একই ধরনের রকেট হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া।