1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্যুৎ ছাড়াই আলো

১২ জুলাই ২০১৭

দীর্ঘ হাইওয়েতে আলো বসানোর ব্যয় যেমন কম নয়, সেই আলো গাড়িচালকদের চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে৷ পরিবেশের জন্যও তা ক্ষতিকর৷ নেদারল্যান্ডসের এক শিল্পী অভিনব উপায়ে রাস্তা আলোকিত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

Bildergalerie LED Glühbirne
ছবি: Philips

আফসলাউডাইক যাবার পথে প্রথমে কয়েকটা ঝাপসা আলো চোখে পড়ে৷ এই ডাইক বা প্রাচীরের উপরে ৩২ কিলোমিটার হাইওয়ে রয়েছে৷ বাঁদিকে উত্তর সাগর, ডানদিকে আইসেলমেয়ার৷ হাইওয়ের বেশিরভাগ অংশ অন্ধকারে ঢাকা, কারণে এখানে আর বিদ্যুৎ সংযোগ নেই৷

ডান রোসেখার্ডে ডাইকের উপর আলো আনতে চলেছেন৷ তবে তিনি ইঞ্জিনিয়ার নন, শিল্পী৷ এর আগে আলো নিয়ে নানা চোখ-ধাঁধানো কাজ করে বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন৷ যেমন পদ্মফুল নামের এক সৃষ্টি, যা শরীরের উত্তাপ পেলে খুলে যায়৷

আফসলাউডাইক তাঁর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ – সেইসঙ্গে অভিনব সুযোগও বটে৷ তিনি বলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডসে ডাইক ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ৷ ভারতে যেমন গরু পবিত্র, এখানে ডাইক সে রকম৷ অর্থাৎ সাধারণত ছোঁয়ার উপায় নেই, কিছু করার উপায় নেই৷ কিন্তু ডাচ মন্ত্রণালয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখার মতো৷ ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব হাইওয়ে জ্বালানিমুক্ত করার এক প্রকল্প শুরু করেছে তারা৷ বেশি প্রযুক্তি ব্যবহার না করে আলো ও ইন্টারঅ্যাক্টিভিটির স্তর যোগ করাই আমাদের ‘কনসেপ্ট'৷ এখানকার চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে প্রযুক্তি দুই-এক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাবে৷''

আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বেড়ে চলা উচ্চতার কারণে প্রায় ১০০ বছর পুরানো ডাইক বেশ চাপের মুখে পড়েছে৷ এবার তার সংস্কার করা হচ্ছে৷ ফলে সেখানে অভিনব কিছু করার সুযোগ এসেছে৷

পথের ধারে ৬০টি লকগেট রয়েছে৷ সিমেন্টের তৈরি দৈত্যাকার ওই কাঠামোকে দ্রষ্টব্য করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তার আলোকসজ্জাও দেখার মতো৷ অথচ ভবিষ্যতে কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগও থাকবে না৷

রাস্তা আলোকিত করার অভিনব উদ্যোগ

05:41

This browser does not support the video element.

সত্যি উচ্চাকাঙ্ক্ষাই বটে৷ কিন্তু রোসেখার্ডে এর আগে তাঁর উদ্ভাবনশীল আলোর মাধ্যমে সাইকেলের এক পথকে বিশ্ববিখ্যাত করে তুলেছেন৷ নেদারল্যান্ডসের ন্যুনে শহরে সেই আলো বিখ্যাত শিল্পী ভিনসেন্ট ফান গখ-এর ‘স্টারি নাইটস' ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়৷ হাজার হাজার ছোট পাথর সারাদিন সৌরশক্তি শুষে নেয়৷ রাতে সেগুলি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ রোসেখার্ডে বলেন, ‘‘গ্লো-ইন-দ্য-ডার্ক ২৫-৩০ বছর ধরে রয়েছে৷ কিন্তু পুরানো উপকরণে বিষাক্ত রেডিয়াম থাকায় সেটি বেশ বিপজ্জনক, একেবারেই ভালো নয়৷ প্রকাশ্যে মানুষের আওতায় এমন জিনিস রাখা ঠিক নয়৷ তাছা়ড়া মাত্র ৩০, ৪০ মিনিট উজ্জ্বল থাকে৷''

এর মধ্যে সাইকেলের পথে রাখা উজ্জ্বল পাথরকে অনেক উন্নত করে তোলা হয়েছে৷ এখন তাতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই৷ তবে সারারাত উজ্জ্বল রাখতে হলে সৌরশক্তি চালিত এলইডি-র সাহায্য লাগে৷ বিশেষ করে শীতকালে পাথর চার্জ করতে যথেষ্ট সূর্যের আলো পাওয়া যায় না৷ অর্থাৎ ডাইকের উপর পথ আলোকিত করতে এই প্রযুক্তি মোটেই উপযুক্ত নয়৷ সেখানে প্রয়োজন অন্য সমাধানসূত্র৷

বিশেষ রং সেই সমাধান এনে দিলো৷ গাড়ির হেডলাইটের আলো পড়লে তার প্রতিফলনের মাধ্যমে রাস্তা আলোকিত হয়ে ওঠে৷ বিশেষ রঙের হাজার হাজার ছোট মুক্তো আলোর প্রতিফলন ঘটাবে এবং রাস্তার পিচকে আলোর মালায় রূপান্তরিত করবে – এর জন্য বিদ্যুতেরও প্রয়োজন নেই৷ ডান রোসেখার্ডে বলেন, ‘‘সবাই সবসময় শুধু নতুন মডেলের গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত৷ কোনো কারণে রাস্তা, মানে অবকাঠামোকে উপেক্ষা করা হয়৷ সস্তায় রাস্তা বানালেই চলে৷ বিষয়টা সত্যি অদ্ভুত, কারণ গাড়ি চালানোর সময় তো রাস্তাই দেখতে হয়৷ তাছাড়া রাস্তাই তো আরও বেশি করে নৈসর্গ স্থির করছে৷ আগামী প্রজন্মের জন্য এটাই তো রেখে যাব৷''

লক গেট থেকে আফসলাউডাইক পর্যন্ত দীর্ঘ পথের জন্যও রোসেখার্ডে ও তাঁর টিমকে সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে৷ চালকদের আর ঘন অন্ধকারের মধ্যে গাড়ি চালাতে হবে না৷ উজ্জ্বল লাইন তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে৷ ধারের বেড়ার রং-ও প্রতিফলন ঘটাবে৷ একমাত্র চালক সেই প্রতিফলন দেখতে পারবেন৷ কারণ বিশেষ এক অ্যাঙ্গেলে হেডলাইটের আলোর প্রতিফলন ঘটানো হয়৷ এর পোশাকি নাম ‘রেট্রোরিফ্লেকটিভ'৷

ফলে উলটো দিকের গাড়ির চালকের চোখ ধাঁধিয়ে যায় না৷ শুধুমাত্র যার প্রয়োজন, সেই আলো দেখতে পায়৷ এছাড়া রাতের অন্ধকার বজায় থাকে৷ ডান রোসেখার্ডে বলেন, ‘‘এত বেশি আলোর দূষণ ঘটে, অথচ আমরা এ বিষয়ে কিছুই করছি না৷ তাই এখানে আমরা প্রতিফলিত আলো ব্যবহার করছি৷ আলোর অপচয়কে আমরা প্রতিফলনে পরিণত করছি৷''

বড় পরিকল্পনা বটে৷ সেইসঙ্গে পথের ধারের বেড়ায় ছোট যন্ত্রাংশ কাজে লাগানোর উদ্যোগ৷ তবে এখনো আলোর আদর্শ তীব্রতা অর্জন করা যায় নি৷ ডান রোসেখার্ডে বলেন, ‘‘শুরুতে অনেকে বলেছিলেন, তুমি এমন করবে, এটা তো নিষিদ্ধ৷ তুমি নিশ্চিত, এটা সম্ভব? তবে আমি নিশ্চিত, যে একবার করে ফেললে মানুষ বলবে – দারুণ আইডিয়া, সব জায়গায় এখনো করোনি কেন? উদ্ভাবনের সময় এই সব অকৃতজ্ঞ পর্যায়ের মুখোমুখি হতে হয়৷ এটা কাজেরই অংশ৷''

রোসেখার্ডে-র ইনস্টলেশন আশেপাশের পরিবেশের নানা স্টিমুলাস বা উদ্দীপকে সাড়া দেয়৷ নড়াচড়া বা শব্দ কয়েক'শ সেন্সরে ধরা পড়ে এবং তার ফলে ‘ডিউন' উজ্জ্বল হয়ে যায়৷ রোসেখার্ডে-র কাছে শুধু সৌন্দর্যের খাতিরে সৌন্দর্য গ্রহণযোগ্য নয়৷

এ এমন প্রযুক্তিগত মানদণ্ড, যা শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে তৈরি হয়নি৷ শিল্পীরাও তাতে শামিল হয়েছেন৷ এভাবে মানুষের হাতে নিসর্গ তৈরি হচ্ছে, যা একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় এবং সুন্দর৷

ক্রিস্টিনে সাইডেমান/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ