অন্তত দশ শতাংশ বিদ্যুৎ বাঁচাতে চায় ফ্রান্স। তাই স্মারকগুলিতে তাড়াতাড়ি আলো বন্ধ করে দেয়া হবে। আইফেল টাওয়ারে আলোর খেলা বেশিক্ষণ থাকবে না।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুতের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। তাই পরিস্থতি সামাল দিতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে উঠে পড়ে লেগেছে ফ্রান্স। অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম খরচ করতে চায় মাক্রোঁর দেশ।
তাই স্মারকগুলিতে এখন আগের থেকে অনেক আগেই আলো বন্ধ করে দেয়া হবে। পর্যটকদের হতাশ করে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যাবে আইফেল টাওয়ারের আলো। প্যারিসের মেয়র জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, স্বাভাবিক সময়ের থেকে আগেই স্মারকগুলির আলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
এমনিতে রাত একটা পর্যন্ত আলোকিত থাকত আইফেল টাওয়ার। মায়াবী আলোয় আইফেল টাওয়ারের সৌন্দর্যে মোহিত হতেন পর্যটকরা। কিন্তু এখন ১১টা ৪৫ মিনিটেই বন্ধ করে দেয়া হবে সেই আলো। পর্যটকদের হতাশ করে, প্যারিসবাসীর শ্লাঘায় ঘা দিয়ে আপাতত খরচ সামলানোর দিকে নজর দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাপত্তার খাতিরে রাস্তার আলো বন্ধ করা হচ্ছে না।
কেন এই পরিকল্পনা?
মেয়র জানিয়েছেন, প্যারিসে বিদ্যুতের খরচ এক কোটি ইউরো বেড়ে গেছে। এই ধাক্কা সামলাতেই ঠিক হয়েছে, শহরে অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম খরচ করা হবে। আইফেল টাওয়ারে আলো আগে বন্ধ করে দিয়ে চার শতাংশ বিদ্যুৎ বাঁচবে।
মেয়র জানিয়েছেন, আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সংযমের পরিকল্পনা পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে।
ঠিক হয়েছে, পুলে তাপমাত্রা এক ডিগ্রি এক ডিগ্রি কমানো হবে। আগে তা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকত, এবার ২৫ ডিগ্রিতে থাকবে। সরকারি বাড়িতে হিটিংও কমানো হবে। তা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা হবে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই পরিকল্পনা পুরোপুরি কার্যকর হবে।
ইউরোপের আইকনিক শহর প্যারিসে কী দেখবেন?
ইউরোপ মানেই ইতিহাসের হাতছানি৷ ইউরোপের কোন শহরে যেতে চান আপনি? প্যারিস? শিল্পসমৃদ্ধ এই শহরে গেলে কী কী দেখতেই হবে, চলুন দেখে নেওয়া যাক ছবিঘরে..
ছবি: Marcel Ibold/Chromorange/picture alliance
আইফেল টাওয়ার
১,০৬৩ ফুট লম্বা (৩২৪ মিটার) এই আইফেল টাওয়ার তৈরি হয়েছিল ১৮৮৯ সালে৷ টাওয়ারের স্থপতি গুস্তাভ আইফেল ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ পূর্তিতে এটি নির্মাণ করেন৷ প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক আসেন শুধু আইফেল টাওযার দেখতে৷ তিনটি তলবিশিষ্ট আইফেল টাওয়ারে (৫৮ মিটার, ১১৫ মিটার, ২৭৫ মিটার) লিফটে ওঠানামা করা যায়৷ তবে অন্য অ্যাডভেঞ্চার করতে এক হাজার ১,৬৬৫ ধাপ সিঁড়িও বাইতে পারেন ৷
ছবি: Givaga/Zoonar/picture alliance
দ্য ল্যুভঁ দেখতেই হবে
দ্য ল্যুভঁ মিউজিয়ামে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসেন সারা পৃথিবী থেকে৷ প্যারিসের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক বিল্ডিং৷ প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে প্রদর্শনীর আয়োজন৷ সারা দিন ধরে থাকলেও এই সংগ্রহশালার সবটা দেখে ওঠা মুশকিল৷ তিন ঘণ্টার একটা 'হাইলাইট' বুকিং করা সম্ভব৷ এর ফলে মোনালিসা, ভেনাস দে মিলো এবং উইংড ভিক্টরি দেখে নেওয়া যাবে৷
শিল্পসাহিত্য রসিকেরা মিউজি ড'সে-তে যেতে পারেন৷ একসময়ে এটা ছিল ট্রেন স্টেশন৷ক্যাফেতেও যেতে ভুলবেন না৷ ১৭ থেকে ১৯ শতকের সময়ের বিশাল বিল্ডিং যেখানে শীতের সময় ফলের গাছগুলিকে সুরক্ষা দেওয়া হত, সেগুলি দেখতে ভুলবেন না যেন৷ শ্যাওলা থেকে তৈরি রং দিয়ে আঁকা ট্যাপেস্ট্রি কিংবা 'ওয়াটার লিলি পেইন্টিং'-ও দেখতেই হবে৷ দেখতে হবে রাডি মিউজিয়ামও৷
ছবি: Bildagentur-online/AGF-Foto/picture alliance
এই দ্বীপে প্যারিসের জন্ম
পনউফের মাধ্যমে ইল দে লা সি মূল ভূখণ্ডে সংযুক্ত হয়েছে৷ এখানে রয়েছে কঁসিয়াজেরি৷ এই প্রাসাদকে ফরাসি বিপ্লবের সময় সংশোধনাগারে পরিণত করা হয়েছিল৷ নত্রদাম গির্জাও রয়েছে৷ তবে এখন রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বন্ধ৷ সেইন্ট চ্যাপেল গির্জাও রয়েছে পাশে৷
ছবি: Roman Sigaev/Zoonar/picture alliance
সবুজের সমারোহে হেঁটে দেখা
প্যারিসীয়রা শহরের বুকে সবুজের মাঝে ঘুরতে ভালবাসেন৷ লুক্সেমবার্গ উদ্যান, লেটরিয়েরি উদ্যানের মতো একাধিক জায়গা রয়েছে৷ প্যারিস শহরের উত্তর-পূর্বে বিট শুম উদ্যানে ঘুরতেও দারুণ লাগবে৷
খাবারের জন্য বিশেষ সুনাম রয়েছে ফরাসিদের৷ বেকিং করা খাবার, ক্রসঁ, শামুক-ঝিনুক-সহ নানা সি-ফুড চেখে দেখতে পারেন৷ মিষ্টিজাতীয় খাবার পছন্দ হলে গ্লাস আইসক্রিম, ক্রেমে ব্রুলি রয়েছে৷ পনির আর রুটির হরেক সম্ভার রয়েছে এবং অবশ্যই ওয়াইন অর্থাৎ পানীয়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না৷
ছবি: Kelly Linsale bePress Photo Agency/bppa/abaca/picture alliance
প্যারিস মানেই সংগীতের মূর্চ্ছনা
দ্য পালে গার্নিয়ে-তে সংগীত আয়োজন শুনতে পারেন৷ টিকিট কেনার ক্ষমতা না থাকলে অপেরা হাউস রয়েছে৷ অসাধারণ কারুকার্য এই হাউসের৷ ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে চাইলে গাইড-সহ ট্যুর বুকিং করাই ভাল৷
ছবি: James Byard/Zoonar/picture alliance
প্যারিসের সেরা ভিউ
আইফেল টাওয়ার থেকে প্যারিসের সেরা দৃশ্যগুলি দেখা যায়৷ মপারনাস ট্যুরের ৫৬ তলা থেকে অসামান্য দেখায় এ শহরকে৷ আর্ক দে ত্রিয়ম্ফ থেকে ১২টি অ্যাভিনিউ দেখতে দারুণ লাগে৷ শঁজেলিজেও রয়েছে এই গাছে ঘেরা রাস্তাগুলির মধ্যে ৷
ছবি: Givaga/Zoonar/picture alliance
মমার্ত এবং সাকরে ক্যও
প্যারিসে গেলে মমার্ত অবশ্যই যেতে হবে৷ সাকরে ক্যও বাসিলিকা কিংবা ফিউনিক্যুলা মমার্ত থেকে ঘুরে আসতে পারেন৷ প্লাসে দু তেরতে গিয়ে নিজের পোর্ট্রেট কিংবা ক্যারিকেচার আঁকিয়ে নিতে পারেন শিল্পীদের থেকে৷ শৈল্পিক ক্যাফে আর বুটিক তো আছেই৷
ছবি: Daniel Kalker/picture alliance
ভিড় থেকে আড়ালে
সেওয়ের মিউজিয়াম কিংবা ক্যাটাকম্বসে মাটির নীচে ঘুরে বেড়াতে পারেন৷অব্যবহৃত রেললাইনে তৈরি উদ্যান, কিংবা পের লাশেসের সমাধিস্থলে হেঁটে বেড়াতে পারেন৷সন্ধ্যা নামলে আইফেল টাওয়ারের লাইট শো দেখতে পারেন৷ সবমিলে প্যারিস ভ্রমণ হয়ে উঠবে জমজমাট৷
ছবি: Gilles Targat/Photo12/picture alliance
10 ছবি1 | 10
ইইউ এখন রাশিয়ার গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরতা কমাচ্ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শিল্প, ঘরবাড়ি, পুরসভা তাদের বিদ্যুতের ব্যবহার ১০ শতাংশ কমাবে।
তবে জার্মানি বা অন্য ইইউ দেশের তুলনায় রাশিয়ার গ্যাসের উপর ফ্রান্সের নির্ভরতা কম। তা সত্ত্বেও তারা পরিস্থিতি সামলাতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।