গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করার পর এবার তাঁর সিরিসা দলের প্রায় ২৫ জন সাংসদ একটি নতুন দল গড়তে চান৷ এই ‘গণ ঐক্য' দল সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হবার ক্ষমতা রাখে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Gouliamaki
বিজ্ঞাপন
সাবেক জ্বালানি মন্ত্রী পানাগিওটিস লাফাজানিস হবেন নতুন ‘এলএই' দলের নেতা৷ গ্রিক সংসদের আসনসংখ্যা ৩০০৷ তার মধ্যে বামপন্থি সিরিসা দলের রয়েছে ১২৪টি আসন; রক্ষণশীল ‘নেয়া ডেমোক্রাটিয়া' বা নয়া গণতন্ত্র দলের ৭৬টি আসন; তার পরেই আসছে মধ্যমপন্থি ‘টো পোটামি' দল এবং চরম দক্ষিণপন্থি ‘গোল্ডেন ডন' বা ‘সোনার সকাল' দল – যাদের ১৭টি করে আসন৷ সেই হিসেবে ‘গণ ঐক্য' দল গঠিত হলে এবং তাদের অন্তত ২৫টি আসন থাকলে, তারা সংসদে তৃতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী হবে৷
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ দুই কারণে৷ প্রথমত, বেইলআউট সংক্রান্ত ভোটে সিরিসা দলের যে পরিমাণ সদস্য বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তা-তে সিপ্রাস সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতাই বিপন্ন হতে চলেছিল৷ সেটা বুঝেই সিপ্রাস – প্রত্যাশা মতো – পদত্যাগ করে নতুন মধ্যকালীন নির্বাচনে ভাগ্য পরীক্ষা করার পথ বেছে নিলেন৷ মাত্র সাত মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সিপ্রাস – এবং পদত্যগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরেও তাঁর জনপ্রিয়তা বিশেষ কমেনি; জনপ্রিয়তায় অন্য কোনো রাজনীতিকের তাঁর ধারে-কাছে আসার ক্ষমতা নেই৷ সেই হিসেবে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সিপ্রাসের গুরুত্ব দেওয়ার মতো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই৷
নতুন ‘গণ ঐক্য’ দলের নেতা হবেন সম্ভবত পানাগিওটিস লাফাজানিসছবি: picture-alliance/epa/O. Panagiotou
দ্বিতীয়ত, প্রেসিডেন্ট প্রোকোপিস পাভলোপুলস শুক্রবার সকালেই রক্ষণশীলদের নেতা ভ্যাঞ্জেলিস মাইমারাকিসকে ইমেল-এর মাধ্যমে সরকার গঠনের প্রচেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন – যদিও নেয়া ডেমোক্রাটিয়া দলের আসন মাত্র ৭৬টি এবং সহযোগী পাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ৷ মাইমারাকিস তিন দিন সময় পাবেন৷ তার পরে সরকারগঠনের সুযোগ যাবে পরবর্তী দলের কাছে৷ সেক্ষেত্রে ‘গণ ঐক্য' দল গঠিত হবার সঙ্গে সঙ্গে অন্তত খাতাকলমে সকারগঠনের আহ্বান পেতে পারে!
সব মিলিয়ে আলেক্সিস সিপ্রাস যে পথ ও পন্থা বেছে নিয়েছেন, তা স্বদেশে বা বিদেশে শুধু প্রত্যাশিতই নয়, দৃশ্যত বাঞ্ছিতও বটে৷ সিপ্রাস তাঁর পদত্যাগ সংক্রান্ত টেলিভিশন ভাষণে জাতিকে বলেছেন: ‘‘আমি যা কিছু করেছি, সব সাফল্য বা অসাফল্য, আপনাদের রায়ের কাছে পেশ করার একটা গভীর নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব বোধ করছি৷'' অপরদিকে গ্রিসের ইউরোপীয় পাওনাদাররা দৃশ্যত সিপ্রাসের পদক্ষেপে আদৌ বিস্মিত কিংবা বিড়ম্বিত নন – যদিও মুডি'জ ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মধ্যকালীন নির্বাচনের ফলে ভবিষ্যতে বেইলআউট-এর অর্থ হস্তান্তর করায় বিলম্ব ঘটার ঝুঁকি দেখছে৷
বিদায়ী সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন যে, নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ হলো ২০শে সেপ্টেম্বর৷
গ্রিক হওয়ার বিপদ
গ্রিসের ইউরো এলাকায় থাকা বা না থাকা নিয়ে বিতর্ক যখন চরমে, ঠিক সেই মুহূর্তে বন শহরের গ্রিক বাসিন্দারা স্বদেশবাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও, কোনো পক্ষ সরাসরি সমর্থন করতে গররাজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘আমি গ্রিক শিখছি’
বন-এর একটি গ্রিক রেস্টুরেন্টের এই পেপার ন্যাপকিনটির ওপর বেশ কিছু গ্রিক শব্দ ও তাদের জার্মান অনুবাদ ছাপা রয়েছে৷ যে সব জার্মান রাজনীতিক গ্রিক প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে নতুন প্রস্তাবগুলো বোঝানোর চেষ্টায় রয়েছেন, তাদের হয়ত এই ন্যাপকিনের শব্দকোষ কাজে লাগতে পারতো!
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
জার্মানিতে গ্রিকদের কোনো কমতি নেই
জার্মানিতে ৩ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি গ্রিক অভিবাসী বাস করেন৷ বিদেশি-বহিরাগতদের কেন্দ্রীয় তালিকা অনুযায়ী গ্রিকরা হলেন জার্মানির পঞ্চম বৃহত্তম বিদেশি গোষ্ঠী: তুর্কি, পোলিশ, ইটালিয়ান এবং রোমানিয়ানদের ঠিক পরেই৷
ছবি: DW
শিয়রে সংকট
গ্রিস আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণেরএকটি দেড় বিলিয়ন ইউরো পরিমাণ কিস্তি সময়মতো শোধ করতে পারেনি; কাজেই গ্রিস বস্তুত দেউলিয়া হওয়ার মুখে৷ গ্রিসের পাওনাদাররা, আইএমএফ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাবি, গ্রিক সরকারকে শ্রম বাজারের পুনর্গঠন, অবসরভাতা হ্রাস ইত্যাদি ব্যয়সংকোচ নীতি কার্যকরি করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/ROPI
আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে
বন-এর সনাতনপন্থি গ্রিক গির্জার প্রধান যাজক সোক্রাটিস ন’টালিস জানালেন যে, ব্যয়সংকোচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপ কার্যকরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে৷ জার্মান আইন মন্ত্রণালয়ের একটি জরিপ অনুযায়ী, ২০১২ সালে এই সংখ্যা বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
এক দেশ থেকে আরেক দেশে
জার্মানিতে গ্রিক খাবারের খুব চল, বিশেষ করে এই ধরনের ছোট্ট রেস্টুরেন্ট থেকে: যেমন স্যালাড আর সাৎসিকি সহযোগে গিরোস৷ কিন্তু এথেন্সের আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বহু জার্মান অভিবাসী গ্রিক তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে রাজি নন৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিকদের মনস্থির করা উচিত
গ্রিসের এলেনা আলিকি পাপিরু প্রায় দশ বছর ধরে বন-এ আছেন; অনুবাদিকা হিসেবে কাজ করছেন৷ গ্রিসের মানুষ অতীতে একের পর এক দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার নির্বাচন করেছেন; এবার নেতা নির্বাচনের সময় তাদের আর একটু সাবধান হওয়া দরকার, বলেন এলেনা৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
খাবারের সময় রাজনীতি আর কার ভালো লাগে
বন-এর গ্রিক রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকরা আর্থিক সংকট নিয়ে কথা বলতে রাজি নন৷ অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের রেস্টুরেন্টের খদ্দেরের সংখ্যাই কমে গেছে৷ যেখানে জীবিকার প্রশ্ন, সেখানে দেশ কিংবা প্রবাসের প্রতি বিশ্বস্ততা কিছুটা প্রচ্ছন্ন রাখাই বোধহয় শ্রেয়৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
গ্রিস ছাড়া ইউরোপ হয় না
বহু বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, এমনকি রাজনীতিকদের অভিমত৷ কেননা ইউরোপীয় সভ্যতার সূচনাই তো গ্রিসে৷ ইউরোপ নামটাই এসেছে ইউরোপা নামধারী এক রাজকন্যের নাম থেকে৷ প্রাচীন গ্রিসের দেবতাদের প্রধান ভগবান জিয়ুস স্বয়ং প্রেমে পড়েছিলেন ইউরোপার৷