বিধায়ক জীবনকৃষ্ণের চা়ঞ্চল্যকর কাহিনি
২০ এপ্রিল ২০২৩জীবনকৃষ্ণ সাহা পেশায় শিক্ষক। বীরভূমের নানুরের দেবগ্রাম হাইস্কুলে বাংলা পড়ান। যদিও পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের বক্তব্য, মাস্টারমশাইকে স্কুলে দেখা যায় না। বিধায়ক হওয়ার পর একেবারেই নয়!
অথ, শিক্ষকতা বাবদ প্রাপ্য বেতন প্রতি মাসে নিতেন জীবনকৃষ্ণ। বিধানসভার সদস্য হিসেবে পেয়ে থাকেন বিধায়ক ভাতা। প্রশ্ন উঠছে, একই ব্যক্তিকে দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা দেয়া হত কেন?
প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির অনুমোদনের পর শিক্ষা দপ্তরের পরিদর্শকের সবুজ সংকেত লাগে বেতন পাওয়ার জন্য। তারপর ট্রেজারি থেকে বেতন পান সংশ্লিষ্ট শিক্ষক। টিভি নাইনের খবর অনুযায়ী, প্রতিটি স্তরে জীবনকৃষ্ণ অনুমোদন পেয়েছেন। তাই আগামী মাসের বেতন প্রাপক শিক্ষকদের তালিকায় বিধায়কের নাম রয়েছে। কী করে? প্রশ্নের জবাব খুঁজছে সিবিআই।
২০০৬ সালে জীবনকৃষ্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে চাকরি পান, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি একেবারে স্বাভাবিক। কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তা সত্ত্বেও ভুয়ো শংসাপত্র দেখিয়ে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কোটায় চাকরি পান বলে অভিযোগ। তার স্ত্রী ও শ্যালকের চাকরি কীভাবে হয়েছিল, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দুজনেই প্রাথমিক শিক্ষক।
জীবনকৃষ্ণ ও তার স্ত্রীর ৮-১০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর। তদন্তকারীদের দাবি, দিল্লির তিহার জেলে বন্দি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সম্পাদক অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জীবনকৃষ্ণ। গরু পাচার মামলাতেও বিধায়কের ভূমিকা কেন্দ্রীয় সংস্থার স্ক্যানারে রয়েছে।
তৃণমূলের তিন বিধায়ক এখন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বন্দি। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যকে আগেই গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সম্প্রতি নদিয়ার তেহট্ট কেন্দ্রের বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মমতার বক্তব্য
এর পিছনে কেন্দ্রের চক্রান্ত দেখছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, "তৃণমূল বিধায়কদের নিশানা করা হয়েছে। আমাদের সংখ্যা অনেক বেশি বলে কিছু করতে পারছে না। এটা বিজেপির গেমপ্ল্যান।"
মমতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলপন্থি পর্যবেক্ষক ভাস্কর সিংহরায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিধায়কদের গ্রেপ্তারির তথ্য বিধানসভাকে জানানো হচ্ছে না। অধ্যক্ষ এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তদন্ত নিয়ে আদালতও উষ্মা প্রকাশ করেছে।"
রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু তার বক্তব্যে দলের অভিযুক্ত নেতাদের প্রতি কার্যত সমর্থনই প্রকাশ পাচ্ছে। এতে জনমানসে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বদলে গিয়েছেন। এই ভাবনার প্রভাব সাগরদিঘিতে দেখা গিয়েছে।"
টলিউড অভিনেত্রী, মডেলকে জেরা
সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এমন বেশ কয়েকজন পাকড়াও হয়েছেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। এর অন্যতম চাঁই হুগলির নির্মাণ ব্যবসায়ী অয়ন শীল। তার বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তী আজ ইডি দপ্তরে হাজিরা দিয়েছেন। মডেল-অভিনেত্রী শ্বেতার সঙ্গে অয়নের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে সংবাদে প্রকাশ। অয়ন তাকে বিলাসবহুল গাড়িও দেন।
শ্বেতার দাবি, অভিনয়ের সূত্রে তিনি প্রযোজক অয়নের কাছ থেকে টাকা নেন। গাড়িও ব্যবহার করেছেন কাজের প্রয়োজনে। বৃহস্পতিবার ইডি কার্যালয়ে প্রবেশের সময় কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি শ্বেতা। অভিনয় জগতের সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতির যোগ থাকার নানা সূত্র আগেও উঠে এসেছে। নাম জড়িয়েছে অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের।