শুক্রবার বিকেলে গ্রিস ও আনাতোলিয়া উপদ্বীপ সংলগ্ন এজিয়ান সাগরে সৃষ্ট ভূমিকম্পতুরস্কের ইজমির শহর ও গ্রিসের সামোস দ্বীপে আঘাত হানে৷ ছয় দশমিক নয় মাত্রার এ ভূমিকম্পে ইজমির শহরের বহু স্থাপত্য ভেঙে পড়েছে৷
শুক্রবারের পর থেকে ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের বের করতে উদ্যোগী হয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও বাসিন্দারা৷ তুরস্কের বিপর্যয় বিষয়ক দপ্তর এএফএডি জানায়, এখন পর্যন্ত তুরস্কে ভূমিকম্পের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৬৯ জন, আহত ৮০৪জন৷ হাসপাতালে ২০০জনের চিকিৎসা চলছে বলেও জানিয়েছে তারা৷
বিপদ মাথায় নিয়ে বসবাস
পৃথিবীর কোনো অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, কোথাও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বেশি, কোথায়ও পাহাড় ধস হয়, কোথাও ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে৷ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/K. Ragaza
ভূমিকম্প
পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় সিসমিক বেল্টের মধ্যে ‘অ্যালপাইড বেল্ট’ দ্বিতীয়৷ এটি হিমালয়ের মধ্য দিয়ে জাভা থেকে সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের ১৭ শতাংশ এই অঞ্চলে হয়েছে৷ যার মধ্যে অন্যতম ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার (প্রায় নয় হাজার মানুষ মারা যায়) এবং ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার (৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু) ভূমিকম্প হয়৷
ছবি: AP
সুনামি
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট আরেকটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামি৷ ২০১১ সালে উত্তরপূর্ব জাপানে সমুদ্রের তলদেশে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে হওয়া সুনামিতে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ মারা যায়৷ তার আগে ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: Fotolia/Friday
আগ্নেয়গিরি: রিং অব ফায়ার
প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে প্রায় ২৫ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চলকে রিং অব ফায়ার বলে৷ ৭৫ শতাংশ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এ অঞ্চলে অবস্থিত৷ যেগুলোতে মাঝে মধ্যেই অগ্নুৎপাত হয়৷ এই অঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সুমবাওয়া দ্বীপে মাউন্ট তামবোরাতে ১৮১৫ সালে ভয়াবহ অগ্নুৎপাত বৈশ্বিক তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Marquez
ঘূর্ণিঝড়ের চলার পথে
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় নিয়মিত আঘাত হানে৷ সাধারণত জুন থেকে নভেম্বরে ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে৷ তবে সবচেয়ে বিপদজনক সময় জুন থেকে অক্টোবর৷ ওই অঞ্চলে মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যামিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ) এর উদ্যোগে ‘হ্যারিকেন প্রিপেয়াডনেস উইক’ পালন করা হয়৷ যেখানে স্থানীয়রা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রশিক্ষণ পান৷
ছবি: picture-alliance/AP
ভূমিধস
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে অতি বৃষ্টিতে প্রায়ই ভূমিধস ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের ১১ জুন ভারি বর্ষণে বাংলাদেশের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়৷ নিহতরা নিম্নআয়ের মানুষ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করতো৷ বর্ষা মৌসুমে প্রশাসন থেকে সতর্ক করার পরও তারা নিরাপদ স্থানে সরে যায়নি৷
ছবি: Brasilien, Regen, Regenfällen, Katastrophe , Wetter
কেন এসব অঞ্চলে বসবাস করে মানুষ
এসব অঞ্চলে বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষ সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তেমন সচেতন নন৷ এছাড়া নিয়মিত ছোট ছোট দুর্যোগ ঘটলেও বড় আঘাত পরপর আসে না৷ তাই মানুষ নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ পায় না৷ শেকড়ের টানেও মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই এসব অঞ্চলে বাস করে যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Rezas
6 ছবি1 | 6
৩৪ ঘন্টা পরে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার এক ব্যক্তি
এই ভূমিকম্পের কারণে তুরস্কের হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷ দেশের জরুরি পরিষেবার পক্ষে ইতিমধ্যে দেড় হাজার তাঁবু পাঠানো হয়েছে৷ জানা গেছে, আরো দুই হাজার তাঁবুও শীঘ্রই এসে পৌঁছাবে৷ ইজমিরে কমতে থাকা তাপমাত্রার পারদের কথা মাথায় রেখেই তাঁবু ও লেপ-কম্বল দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জানালেন মেয়র টুনক সোয়ের৷
প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকর্মীরা মোট আটটি ভেঙে পড়া বহুতলের মধ্যে জীবিতদের খোঁজ চালানো শুরু করেন৷ আটকে পড়া মানুষের আওয়াজ শুনতে আশেপাশে জমা জনতার ভিড়কে চুপ থাকতে বলা হয়৷ কিন্তু রোববারে সেই ধ্বংসস্তূপে জীবিতের তুলনায় মৃতদেহই বেশি পাওয়া গেছে৷
তবে, উদ্ধারকর্মীদের অবাক করে দিয়ে শনিবার ৭০ বছর বয়েসি এক ব্যক্তিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে আনা হয়৷ ‘‘আমি কখনোই হাল ছাড়িনি'', জানান বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেই ব্যক্তি৷
তুরস্কে ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া মোট ২৬টি বহুতলের অবশেষ গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে৷ এবিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতায় বলেন, ‘‘আসলে ভূমিকম্প মানুষ মারছে না, এই বহুতলগুলি মারছে৷''
বর্তমান তুরস্কে পুরোনো, সংস্কারহীন বহুতলের পাশাপাশি রয়েছে সস্তা, বেআইনীভাবে তৈরি বহুতলও, যা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের সময়ে বিপদ বাড়াতে পারে৷ গত কয়েক বছরে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ এই ধরনের বহুতলের ওপর কড়াকড়ি বাড়িয়েছে৷