মাদাইনের পর্যটন
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২আজ থেকে দুই হাজার বছরেরও আগের কথা৷ তখনও পৃথিবীতে খ্রীষ্টের জন্ম হয় নি৷ তখনো অতটা উজ্জ্বল নয় বাকি দুনিয়ার ইতিহাস৷ সে সময় মাদাইন ছিলো এক সমৃদ্ধ নগর৷ ছিলো স্বর্ণোজ্জ্বল এক রাজধানী৷
বর্তমান ইরাকের যুদ্ধ বিধস্ত যে মাদাইন শহরের নামটি আপনি জানেন তার কথাই বলছি৷ বাগদাদ থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে আজ শ্রীহীন, ঐশ্বর্যহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে এ শহর৷
একদিন মাদাইন-ই ছিলো প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার বিরাট জনপদ; ছিলো পারস্য সাম্রাজ্যের সাসানিড গোত্রের রাজধানী৷ এখানেই আছে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ‘আর্চ অব ক্টেসিফন'৷
‘আর্চ অব ক্টেসিফন' বা ‘ধনুকের মতো বাঁকা খিলান'ওয়ালা প্রাসাদটি গুরুত্বপূর্ণ এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ ১২২ ফুট চওড়া এবং ১৫৮ ফুট উঁচু এই খিলানটি আজো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খিলান৷
এখানেই রয়েছে মুসলিমদের শেষ নবী হজরত মহম্মদ এর অন্যতম সঙ্গী সালমান পাক এর সমাধিস্থল৷
টাইগ্রিস নদীর উত্তর-পূর্ব পাড়ে অবস্থিত ছোট্ট এ শহরটির সৌন্দর্য ও গৌরবকে নষ্ট করেছে ইরাক- ইরানের যুদ্ধ৷ তবু যা বাকি ছিলো সেটুকুও একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে অ্যামেরিকার সামরিক অভিযান৷
ইরাকে মানববিধ্বংসী অস্ত্র থাকার কারণ দেখিয়ে অ্যামেরিকার অভিযানের ফলে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে৷ প্রতিবাদে, প্রতিরোধে আল-কায়েদা এবং অন্যান্য সংগঠনগুলো রুখে দাঁড়ায়৷ তখন যেনো শুরু হয় রক্ত ঝরার উৎসব৷
এখনো মাদাইনে ধর্মীয় উগ্রপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম আছে সন্দেহে সে এলাকায় চলে নিয়মিত সামরিক টহল৷
অ্যামেরিকান অভিযানের সময়ে মাদাইনের জাদুঘর থেকে লুট হয়েছে অসংখ্য প্রত্ন-সম্পদ৷ বাকি যা আছে তারও নেই কোনো যত্ন-আত্তি৷
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খিলান আর্চ অব ক্টেসিফন'কে আজও ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয় নি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে৷ আর এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেবার জন্য ইউনেস্কোর কাছে এখনো আবেদনও করে নি সে দেশের সরকার৷
যুদ্ধ, সামরিক অভিযান, গুপ্ত হত্যা, পাল্টাপাল্টি হামলা, গোত্রে গ্রোত্রে হানাহানির ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ সব ভেঙে পড়েছে৷
থমথমে মাদাইনে এখন আর নেই পর্যটকের কলরব৷ নেই পর্যটনকে ঘিরে বাণিজ্যিক প্রসার৷ মাদাইন যেনো আজ এক ভূতুড়ে নগর; পরিত্যক্ত জনপদ৷
পতিত এ নগরটিকে আবারো জাগাতে হলে তাকে পর্যটনের উপযোগী করে তুলতে হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন৷
তাদের কেউ বলছেন, হোটেল, রেস্তোরাঁগুলোকে আবার ঠিকঠাক করতে হবে৷ সরকারকে আবার নতুন করে বানাতে হবে শহরের অবকাঠামো৷
কেউ বলছেন, মানুষকে দিতে হবে নিরাপদ পরিবেশ৷ তাদের মনে ফিরে পেতে হবে আস্থা৷ তবেই আবারো স্বাভাবিক হবে সবকিছু৷ আবারো হয়তো ফিরে আসবে শান্তির দিন৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন