স্বাস্থ্য সচেতন নারী-পুরুষ চিনি খান মেপে মেপে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, রক্তে চিনির অভাব সুখের সংসারেও জ্বেলে দিতে পারে অশান্তির আগুন৷
বিজ্ঞাপন
১০৭ জোড়া বিবাহিত দম্পতির ওপর গবেষণা চালিয়ে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী দেখতে পেয়েছেন, রক্তে শর্করার পরিমাণ যখন কমে যায়, সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতি রাগ, ক্ষোভ ও আক্রমণাত্মক মনোভাব ততো বেশি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে৷
এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের টানা ২১ দিন প্রাতরাশ ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রক্তে শর্করার পরিমাণ মেপে দেখতে বলা হয়৷ আর প্রত্যেককে দেয়া হয় একটি করে ভুডু পুতুল, সঙ্গে ৫১টি কাঁটা৷ এই ভুডু পুতুল আসলে সঙ্গী বা সঙ্গীনীর প্রতীক৷ অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, প্রতিদিন তাঁরা স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি যতটা রাগ বা ক্রোধ অনুভব করেছেন, সে অনুযায়ী অতি গোপনে কাঁটা বিঁধিয়ে দিতে হবে ওই পুতুলের গায়ে৷
২১ সপ্তাহ পর প্রত্যেকের রক্তে চিনির পরিমাণ এবং ভুডু পুতুলে কাঁটার সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যেদিন শর্করার পরিমাণ যত কম, পুতুলে কাঁটার সংখ্যা তত বেশি৷ এই গবেষণা প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ব্র্যাড বুশম্যান বলেন, ‘‘এমনকি যাঁরা সুখি দাম্পত্য জীবনের কথা বলেছেন, রক্তে চিনি কম থাকলে তাঁরাও রাগ দেখিয়েছেন পুতুলের ওপর৷''
এখানেই শেষ নয়৷ ভুডু পুতুলের পরীক্ষার পর এই অংশগ্রহণকারীদের একটি গবেষণাগারে নিয়ে চালানো হয় আরেকটি পরীক্ষা৷ দু'জনকে পাশাপাশি দুটি আলাদা ঘরে রেখে সঙ্গী ও সঙ্গীনীর বিপক্ষে একটি কম্পিউটার গেম খেলতে বলা হয়৷ একজন জিতে গেলে তার পরাজিত সঙ্গী বা সঙ্গীনী কতটা চিৎকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, হেডফোনে তাও খেয়াল রাখতে বলা হয়৷
সব ঋতুতেই সুস্থ থাকুন
গ্রীষ্মকালের রোদ ঝলমলে আনন্দের দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে মেঘলা আকাশ আর প্রচণ্ড শীতের কথা ভাবলেই তো খারাপ লাগে, শরীর খারাপ হয়৷ কিন্তু এর থেকে বাঁচার উপায়ও রয়েছে৷ চলুন জানা যাক সে বিষয়ে৷
ছবি: picture alliance/chromorange
হেমন্তকাল
যে কোনো দেশেই ঋতু পরিবর্তনের সময় মানুষের শারীরিক ও মানসিক কম বেশি সমস্যা দেখা দেয়৷ বিশেষকরে জার্মানির মতো শীতপ্রধান দেশে হেমন্তকালে৷ গ্রীষ্মকালের রোদ ঝলমলে আনন্দের দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে মেঘলা আকাশ আর প্রচণ্ড শীতের কথা ভাবলেই তো খারাপ লাগে৷ গ্রীষ্মকালে সূর্যের আলো থাকে রাত ১০টার পরেও৷ আর শীতের সময় বেলা চারটে হলেই যেন সূর্য পালাতে চায়৷ কাজেই এর প্রভাব তো মানুষের শরীর, মনের উপর পড়বেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সর্দি, কাশি বা ঠান্ডার ভাইরাস
গলা খুস খুস, গলা ব্যথা, কাশি, নাকে সুরসুর – এসবের সাথে কে পরিচিত নয়? ঠান্ডার ভাইরাসকে চোখে দেখা যায়না, তবে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে৷ যখন একটু গলা খুস খুস বা নাকে সুরসুর করতে শুরু করে, তখনই কিন্তু দেরি হয়ে গেছে! তাহলে উপায়?
ছবি: Fotowerk - Fotolia.com
ঋতু উপভোগ
ঋতু পরিবর্তনের সময় হঠাৎ করে যখন বাইরের তাপমাত্রা কমে যায়, তখন শরীরের উপর তার প্রভাব পড়ে, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তখনই শুরু হয় নানা ভাইরাসের উপদ্রব৷ ঘরে ঘরে সর্দি-কাশিতে মানুষ ভোগে৷ ঠিক এই সময়টাতে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করে কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক সহজে হেমন্তকালকে উপভোগ করা যায়৷ কারণ সব বয়সের মানুষের মতো প্রত্যেক ঋতুরই যে রয়েছে চাহিদা আর আলাদা সৌন্দর্য !
ছবি: James Early
২০০ রকমের সর্দি-কাশি রয়েছে
টিকা, অ্যান্টিবায়োটিক, এমনকি ক্যানসারের মতো রোগের জন্য নানা সাফল্য বের হলেও সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা লাগার মতো ছোটখাটো রোগের জন্য কোনো ওষুধ বের করতে বিশেষজ্ঞরা এখনো অসমর্থ৷ এর অবশ্য কারণও রয়েছে৷ প্রায় ২০০ রকমের ঠান্ডা লাগার অসুখ রয়েছে৷
ছবি: Yvonne Bogdanski/Fotolia
সাথে জ্বর
তবে সবচেয়ে বড় ধরনের ঠান্ডা লাগা যেটা আমরা জানি, প্রচণ্ড শরীর, মাথা ও গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর, সেই সাথে সর্দি – যা সত্যিই খুব কষ্ট দেয়৷ এরকম ঠান্ডা লাগলে তা ৭ থেকে ১০ দিন থাকবেই, কোনো ওষুধ খাওয়া হোক আর না হোক৷
ছবি: Fotolia
ইনফ্লুয়েন্জা
সাধারণ ঠান্ডা সাথে ইনফ্লুয়েন্জার কোনো সম্পর্ক নেই৷ সাধারণ ঠান্ডা লাগা আর ইনফ্লুয়েন্জার লক্ষণগুলো অনেকটা একরকম হলেও ইনফ্লুয়েন্জা পুরোপুরি ভিন্ন৷ এটাকে অবশ্যই গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ তা না হলে হঠাৎ করে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে৷ ইনফ্লুয়েন্জা একটি ইনফেকশাস বা ছোঁয়াচে রোগ – বিশেষ করে শিশু, ডায়াবেটিসের রোগী এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে৷ বলেন জার্মানির চিকিৎসা সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ফ্যার্ডিনান্ড গেয়ারলাখ৷
ছবি: Novartis Vaccines
সাবধানতা অবলম্বন
বাইরে থেকে এসে হাত ধুতে হবে৷ শুধু তাই নয়, অন্যের কম্পিউটার বা যে কোনো কিছু ব্যবহার করার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেওয়া ভালো৷ যানবাহনে চলাফেরা করার সময় ইনফ্লুয়েন্জা জাতীয় ইনফেকশন রোগীদের কাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকার চেষ্টা করুন৷ গোসলের সময় গরম পানির পর গায়ে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন৷ প্রচুর ফল, নানা রংয়ের সবজি খান ও পানি পান করুন৷ আর অবশ্যই নিয়মিত মুক্ত বাতাসে হাঁটাহাঁটি করতে হবে – এমনটাই বিশেষজ্ঞরা বলেন৷
ছবি: picture alliance/chromorange
7 ছবি1 | 7
অবশ্য গবেষকরা যে ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন, তাতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী আসলে খেলেছেন কম্পিউটারের বিরুদ্ধে৷ এমনভাবে এই প্রোগাম তৈরি করা হয়েছিল, যাতে প্রত্যেকেই সমান সংখ্যক বার জয়ী হতে পারেন৷
বিনাচিনির রাগতত্ত্ব মিলে গেছে এখানেও৷ গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, যাঁদের রক্তে শর্করা কম, হেরে গিয়ে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি রাগ ঝেরেছেন৷ আর আগের গবেষণায় যাঁরা ভুডু পুতুলে বেশি কাঁটা বিঁধিয়েছেন, তাঁদের মধ্যেই হেরে গিয়ে ক্ষেপে যাওয়ার প্রবণতা বেশি৷ বুশম্যান বলেন, ‘‘রক্তে শর্করা কম থাকলে আক্রমণাত্মক মনোভাবও যে বেড়ে যায় – এটা তারই নির্দেশক৷''
তিনি বলেন, গ্লুকোজ বা শর্করা মস্তিষ্কে জ্বালানির মতো কাজ করে৷ মস্তিষ্কের ওজন মানবদেহের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ হলেও প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে শরীরে যাওয়া শর্করার ২০ শতাংশ ওই মস্তিষ্কই খরচ করে৷ রাগ বা ক্রোধ সামলাতে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাতে মস্তিষ্কের বাড়তি শক্তি প্রয়োজন হয়৷ এই সময়টায় চিনিতে টান পড়লেই বাঁধে গোল৷
বুশম্যান বলেন, ‘‘আমাদের পরামর্শ খুব সাধারণ, তবে কাজের৷ পেটে ক্ষুধা নিয়ে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে কোনো গুরুতর বিষয়ে আলোচনায় না যাওয়াই ভালো৷''