1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিনা ভোটে পাশ আর সহিংসতার ইউপি নির্বাচন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ ডিসেম্বর ২০২১

সংঘাত আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে চতুর্থ ধাপে দেশের ৪৮০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তবে ভোটের আগেই এই ধাপে বিনা ভোটে ৪৮জন চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন৷

প্রতীকী ছবিছবি: Imago/Naim-ul-karim

আগামী ৫ জানুয়ারি শুধু পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন৷ সেখানেও ৫২জন বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন৷

রোববারের নির্বাচনে ৪৮জন চেয়ারম্যান ছাড়াও, মেম্বার পদে ১৩৫জন এবং সংরক্ষিত নারী মেম্বার পদে ১১২জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে৷ অর্থাৎ বিনা ভোটে বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হয়েছেন মোট ২৯৫জন৷

বিনা ভোটে চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার এই ধারা প্রথম ধাপ থেকেই শুরু হয় এবং তা অব্যাহত গতিতে চলছে৷ চারধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে মোট এক হাজার ৩৫৯ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন৷ যারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের বলতে গেলে সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী৷

বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা স্থানীয় প্রভাব, ভয়ভীতিসহ নানা কৌশল অবলম্বন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে৷ গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানতে পেরেছে ডয়চে ভেলে৷

‘ওরা সন্ত্রাসীভাবে সবকিছু নিয়ে যেতে চায়, নিয়ে গেছে’

This browser does not support the audio element.

ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে এবার বিনা ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা চেয়ারম্যান হয়েছেন৷ তারই একটি ইউনিয়ন হলো মাতুভুঞা৷ সেখানে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকার আব্দুল্লাহ আল মামুন৷ জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবদুর রহিমসহ সবাই তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন৷

আব্দুর রহিমের দাবি, তিনি তার ছেলের কথা চিন্তা করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন৷ কারণ তার ছেলের জীবন নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলে কান্নাকাটি করে বলেছে, বাবা আমরা কেউ বাঁচতে পারব না৷ তুমিও না, আমিও না৷ আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিলো৷ পাস করতাম বলে বিশ্বাস৷ কিন্তু জীবন না থাকলে পাস করে কী হবে?’’

তবে ওই ইউনিয়নে বিনা ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷‘‘তারা (ওই প্রার্থীরা) স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন৷ কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়নি,'' ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন তিনি৷

একই উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলী রেজা চৌধুরী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও কৌশলে তারটি বাতিল করা হয়েছে বলে দাবি তার স্বজনদের৷

আলী রেজা চৌধুরীর ছেলে মো. বাদশা চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বাবার মনোনয়নপত্রে যারা প্রস্তাবক ও সাক্ষি হন তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর প্রস্তাবক ও সমর্থক ঠিক নেই এই কথা বলে আমার বাবার মনোনয়ন পত্র বাতিল করানো হয়৷ এরপর থেকেই আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন৷’’

একই রকম অভিযোগ পাওয়া গেছে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়ও৷ অভিযোগ আছে,  উপজেলার কড়ইয়া ইউনিয়নে তিনজন প্রার্থীকে বসিয়ে দিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন নৌকা মার্কার প্রার্থী আবদুস সালাম সওদাগর৷

সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাহারকারীদের একজন হলেন সদ্য সাবেক চেয়াম্যান আহসান হাবীব জুয়েল৷ তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন৷ আহসান হাবীব জুয়েল ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘তাদের (ক্ষমতাসীন দলের নেতারা) ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার আমার ক্ষমতা নাই৷ ওরা সন্ত্রাসীভাবে সবকিছু নিয়ে যেতে চায়, নিয়ে গেছে৷ এই ঘটনায় আমার বাবা স্ট্রোক করেছেন৷ তিনি এখন হাসপাতালে৷’’

নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হবে কবে?

52:22

This browser does not support the video element.

সংঘাত ও সহিংসতা

এদিকে চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে সহিংসতা ছাড়াও প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে মারাধর, ভোটকেন্দ্র দখল, ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷

মাদারীপুরে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানিকে কুপিয়েছে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের লোকজন৷ পাবনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে পেটানো হয়েছে৷ টাঙ্গাইলে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারা হয়েছে৷ ভোলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ফেনীতে ভোটকেন্দ্রের সামনে তিনজনকে কোপানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

কিশোরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, কক্সবাজারে ভোটকেন্দ্র দখল ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে৷ আরো কয়েকটি এলাকায় ব্যালট পেপার ছিনতাই রোধ ও সংঘর্ষ ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে৷

তবে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, চতুর্থ ধাপের নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্নই হয়েছে৷ বড় ধরনের কোনো সংঘাত সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷

কেন এমন হচ্ছে?

এমন পরিস্থিতির জন্য ‘রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা' এবং ‘মনোনয়ন বাণিজ্যকে' দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা৷

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘‘নির্বাচনে বিএনপি না থাকার পরও মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে৷ এখন যারা শাসক দলের মনোনয়ন পেয়েছেন তারা মনে করছেন জয় না পেলে ক্ষতি হবে৷ তারা রিস্ক নিতে চাইছেন না৷ তাই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যে-কোনো উপায়ে বসিয়ে দিয়ে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হতে চাইছেন৷ তাদের যারা মনোনয়ন এনে দিয়েছেন তারাও নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এসব প্রার্থীদের বিনা ভোটে পার করে দিতে চাইছেন৷’’

‘সবাই যেকোনো উপায়ে ভোটে জয়ী হতে মরিয়া’

This browser does not support the audio element.

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সবাই যে-কোনো উপায়ে ভোটে জয়ী হতে মরিয়া৷ কারণ নির্বাচিত হলে আয়, বাণিজ্য হবে৷ সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করা তাদের লক্ষ্য নয়৷ ফলে বিএনপি না থাকলেও নিজেরা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে৷’’

বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে আমাদের কী করার আছে? আমরা জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কিছু অভিযোগ তদন্ত করে দেখেছি৷ কিন্তু যারা প্রত্যাহার করেছেন তারা লিখিত দিয়েছেন যে, তারা স্বেচ্ছায় প্রত্যাহার করেছেন৷ এখন আমাদের কী করার আছে?’’

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চার ধাপে নির্বাচনি সহিংসতায় ৯৭জন নিহত হয়েছেন৷ এ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি নির্বাচনপূর্ব সহিংসতা কমাতে, কিন্তু পারিনি৷ এর নানা কারণ রয়েছে৷ তার মধ্যে অন্যতম হলো করোনায় অনেকে কাজ হারিয়েছেন৷ তারা অর্থের জন্য সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন৷ পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বও বেড়েছে৷ ফলে সহিংসতার বিস্ফোরণ ঘটেছে৷’’

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ