বুদ্ধমূর্তি হোক, অথবা টেরাকোটা আর্মি – এ এক নিজস্ব জগত৷ মূর্তি, মহাসাগর ও মহাদেশ – সবই বালু দিয়ে তৈরি৷ শিল্পীরা ভেবেচিন্তে কোনো বিষয়কে বাস্তব রূপ দেন৷ কয়েকটি নমুনার ভিত্তিতে প্রেরণা পাওয়া যায়৷ বাকিটা ঘটনাস্থলেই সৃষ্টি করা হয়৷ হাঙ্গেরির বালু শিল্পী জল্ট টোট বলেন, ‘‘আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে৷ আমরা জগতের ব্যাখ্যা দিতে পারি৷ ভ্রমণই আমার ব্যাখ্যা৷ ট্রেন, বাস, বিমান, নৌকা, সাঁতার থেকে যেটা খুশি বেছে নিতে পারেন৷''
রিও-র বিখ্যাত কার্নিভাল দর্শনও এই ভ্রমণের অঙ্গ হতে পারে৷ ৫০ জন আন্তর্জাতিক শিল্পী বালু দিয়ে বিখ্যাত, দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থান বা ব্যক্তির রূপ ফুটিয়ে তুলছেন৷ জার্মানির বিনৎস সমুদ্রতটও বালু শিল্পীদের বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে৷ জায়গাটির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের শিল্পী মারিকে ফান ডেয়ার মেয়ার-এর একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানেই আমার রুশ স্বামীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল৷ সেও এই প্রকল্পের শিল্পী৷ প্রতিবার গাড়ি চেপে বিশাল সেতু পেরিয়ে এখানে এলে মনে হয় নিজের বাসায় এলাম৷''
বিশ্বের সব সমুদ্র সৈকতেই প্রতিদিন কেউ না কেউ মাতেন অদ্ভুত এক খেলায়৷ বিশ্বের অনেক দেশে সেই খেলা শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে৷ বালু দিয়ে দুর্গ গড়া! দেখুন তারই অসাধারণ কিছু নমুনা৷
ছবি: Getty Images/M. Rendersশৈশবে সুযোগ পেলে বালু দিয়ে ঘর বাঁধা বাঁধা খেলেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে কমই আছে৷ শৈশবের এই নেশা অনেকে আবার চিরকাল ধরে রাখেন – সমুদ্রের কাছে গিয়ে বালু দিয়ে গড়ে তোলেন অসাধারণ সব শিল্পকর্ম৷
ছবি: Colourbox/O. Dimierবালু দিয়ে শিল্প সৃষ্টিতে বেলজিয়ানদের জুড়ি মেলা ভার৷ এই শিল্পকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ করে ধরেও রেখেছে দেশটি৷ দারুণ একটা উৎসব হয় সেখানে৷ সে উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত শত লোক শুধু বালু দিয়ে দুর্গ, মূর্তি ইত্যাদি গড়ে৷ বন্দর নগর অস্টেন্ডেতে ক’দিন আগেও হয়ে গেল এমন এক উৎসব৷
ছবি: Reuters/Y. Hermanঅস্টেন্ডের উৎসবে এখন বরফ রানি ‘এলসা’-র রাজত্ব৷ ১২টি দেশের ৩০ জন শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল ‘এলসা’৷ শিল্পীরা কাজটি করেছেন ডিজনি গ্রুপের হয়ে৷ ঝড়-বৃষ্টি সামলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অবস্তাতেই থাকবে অপূর্ব সুন্দর এই বালুর মূর্তি৷ এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখেই ‘এলসা’-কে গড়েছেন শিল্পীরা৷
ছবি: Reuters/Y. Hermanবালু দিয়ে দুর্গ বা মূর্তি গড়া অস্ট্রেলিয়াতেও বেশ জনপ্রিয়৷ মেলবোর্নে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় এমন শিল্পের প্রদর্শনী৷ ওপরের ছবিটি ২০১৩ সালের প্রদর্শনীর৷ সেবার প্রদর্শনীর ‘থিম’ ছিল ‘আন্ডার দ্য সি’, অর্থাৎ সমুদ্রের নীচের জগত৷ তাই গ্রীক পুরান থেকে উঠে এসেছিলেন সমুদ্রের দেবতা পসিডন৷
ছবি: Getty Images/G. Denholm‘বালুর বাঁধ’ মানেই নাকি ভঙুর কিছু৷ কিন্তু বালি দিয়ে গড়া মূর্তি, দুর্গ বা অট্টালিকা কেন এত উঁচু, এত বড় হলেও ভাঙে না? রহস্যটা কী? আসলে নাজুক বালুর স্বভাব বদলাতে অনেক রকমের কৌশলের আশ্রয় নিতে হয় শিল্পীদের৷ কখনো কখনো খুব ভারি কিছু দিয়ে চেপে বালুকে পাথরের মতো শক্ত করা হয়৷ সুইজারল্যান্ডের রহশাস-এর এক উৎসবে প্রদর্শিত এই মূর্তিটিকে ওভাবেই শক্ত করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/DUMONT Bildarchivজাপানেও সমুদ্র আছে, বালু নিয়ে শিল্পের খেলাও আছে সেখানে৷ ২০০৬ সালে বালু-শিল্প নিদর্শনের সবচেয়ে বড় জাদুঘরটির উদ্বোধন হয়েছে টোট্টরি শহরে৷ এছাড়া আশিয়া সমুদ্র সৈকতে বালু দিয়ে মূর্তি তৈরির উৎসবও হয় প্রতি বছর৷
ছবি: picture-alliance/Kyodoবাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের অজপাড়াগাঁয়ের শিশু-কিশোরদের মতো ইউরোপ-অ্যামেরিকার শিশু-কিশোররাও বালু পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ নিমেষেই তারাও মেতে ওঠে স্বপ্নের সৌধ গড়ার খেলায়৷
ছবি: Colourbox/len4ik মহাকাশ যাত্রাও এই প্রদর্শনীর অঙ্গ৷ বালু দিয়ে যতটা সম্ভব বাস্তব রূপ ফুটিয়ে তুলতে পানি অপরিহার্য৷ বালু দিয়ে কিছু তৈরি করার সময়ে অনেক শিল্পী যেন ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন৷
স্থাপত্যের ছাত্র এভাঙ্গেলোস স্টাফিলিডিস-এর কাছে বিশ্বভ্রমণ জীবনদর্শনেরই অঙ্গ৷ তিনি বলেন, ‘‘গোটা জীবনটাই আসলে ভ্রমণেরই নামান্তর৷ এই সব প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক জায়গা দেখার, সেখানে আজব কিছু সৃষ্টির সুযোগ হয়৷ এটা আমার জীবনের অংশ হয়ে পড়েছে৷''
আগামী ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত বালুর তৈরি এই সব ভাস্কর্য বিনৎস শহরে প্রদর্শিত হচ্ছে৷
রোব্যার্ট শুব্যার্ট/এসবি