বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) জানাচ্ছে, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের ন্যূনতম ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Tao
বিজ্ঞাপন
স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বাড়ন্ত কিশোর-কিশোরীদের প্রয়োজন ব্যায়াম বা কায়িক পরিশ্রম৷ শুধু নিয়ম মেনে ব্যায়াম বা খেলাধুলা নয়, সাইকেল চালানো, সাঁতার বা হাঁটাও এই বিকাশে সাহায্য করতে পারে৷ কিন্তু ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সিরা পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত করছে না৷ ফলে, বিশ্বের ৮১ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে৷
দিনে ন্যূনতম এক ঘণ্টাব্যাপী কোনো কায়িক পরিশ্রমটুকুও না করার ফলে এমন অবস্থা, জানাচ্ছে ডাব্লিউএইচও বা হু-র একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ফিওনা বুল শুক্রবারে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের লেখকদের একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতি পাঁচজন কিশোরের মধ্যে চারজনই কোনো ধরনের ব্যায়াম করে না৷ এর ফলে ব্যায়ামের মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক উপকার থেকে তারা বঞ্চিত থাকে৷’’
শিশুদের কেন পিঠে ব্যথা হয়, হলে কী করবেন?
আজকাল শিশুদের খুব কম খেলাধুলা বা ব্যায়াম করতে দেখা যায়৷ যার পরিণতিতে জার্মানিতে পিঠের ব্যথায় ভুগছে হাজারো শিশু-কিশোর৷ শিশুদের পিঠে ব্যথা হলে কী করা উচিত তা জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
ছবি: dpa
শিশুদের খেলাধুলাহীন জীবন
শিশুরা সবসময়ই খেলাধুলা আর দৌড়াদৌড়ি করতে ভালোবাসে৷ তবে স্কুলে যাওয়া শুরুর পর থেকে ওদের খেলাধুলায় আস্তে আস্তে ভাটা পড়তে থাকে৷ স্কুলে বসে থাকা ছাড়াও ওরা বাসায় বসে হোমওয়ার্ক করে, টিভি দেখে৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে ওদের আর আগের মতো দৌড়াদৌড়ি বা খেলা করা হয়ে ওঠেনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অধিকাংশই ভুগছে ব্যথায়
সারাদিন স্কুলে বসে থাকা আর বাড়িতে এসেও বসে থাকার ফল হতে পারে ভয়ংকর৷ আর সেকথাই জানিয়েছে রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট৷ প্রতিষ্ঠানটি ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৭ হাজার ৬৪১টি শিশু-কিশোরকে নিয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছে৷ দেখা গেছে ওই শিশু-কিশোরদের অধিকাংশই বিভিন্ন ব্যথায় ভুগছে৷ ব্যথায় আক্রান্ত অর্ধেকই পিঠের ব্যথায় ভুগছিল৷
ছবি: picture alliance/chromorange/E. Weingartner
মাত্র এক ঘণ্টা খেলাধুলা?
রবার্ট কখ ইন্সটিটিউটের করা গবেষণাটিকে নিশ্চিত করেছে আরো একটি গবেষণা, যেটা করেছে জার্মনির কার্লসরুহে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলা বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র৷ সেখানে ১০০০ শিশু-কিশোরকে প্রশ্ন করে জানা গেছে, প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা দিনে মাত্র এক ঘণ্টা খেলাধুলা করে৷ আরো জানা গেছে, দিনে মোট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওদের ৯ ঘণ্টাই বসে, ৯ ঘণ্টা ঘুমিয়ে আর পাঁচ ঘন্টা দাঁড়িয়ে৷ খেলার জন্য থাকে মাত্র এক ঘণ্টা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে সতর্ক
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সন্তান যেন পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে সেদিকে মা-বাবা বেশ সতর্ক৷ ছেলে-মেয়ের স্বাস্থ্যের জন্য কিন্তু খেলাধুলাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ তাই নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের ব্যায়াম ও খেলাধুলা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Colourbox
একসাথে আনন্দ!
জার্মানিতে এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে শিশু ও মা-বাবা একসাথে ব্যায়াম করতে পারে৷ ছোট শিশুদের নিয়ে সেভাবেই ব্যায়াম করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের৷ তাছাড়া ছেলে-মেয়েকে সাথে নিয়ে সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা যেতে পারে৷
ছবি: picture alliance/ZB/W. Grubitzsch
নিজেরাই বেছে নিতে পারে
তবে কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার ক্লাব বা জিমে কিছুদিন গেলে, ওরা নিজেরাই ওদের পছন্দের খেলা বা ব্যায়াম ঠিক করে নিতে পারবে৷ তবে ভালো হয় যদি ওরা প্রথমদিকে ফুটবল, ভলিবল, দলনৃত্য বা এ ধরনের কোনো দল বা গ্রুপের সাথে খেলাধুলা করে৷ কারণ এতে কিশোর-কিশোরীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে৷
ছবি: Fotolia/stockmaker
প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকাল প্রায় সকলের হাতেই রয়েছে মোবাইল বা স্মার্টফোন৷ মোবাইল অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে অনেক কিশোর-কিশোরীর ঘাড়ে ব্যথা হয়ে থাকে৷ তবে নিয়মিত ব্যায়াম করলে ঘাড় ব্যথাসহ অন্যান্য সব ব্যথাই কমানো সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/Jake Hellbach
7 ছবি1 | 7
২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ১৪৬টি দেশের ১৬ লক্ষ কিশোর-কিশোরীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তি তৈরি হয়েছে এই প্রতিবেদন৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি সচল৷
কেন ব্যায়ামে অনীহা?
প্রতিবেদনের আরেক লেখকের মতে, কিশোরদের মধ্যে ব্যায়ামে অনীহা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির ভূমিকা৷ জীবন যাপনের ধরন-জনিত রোগ বিশেষজ্ঞ লিয়েন রাইলি বলেন, ‘‘ইলেক্ট্রনিক বা বৈদ্যুতিন বিপ্লব আমাদের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এক ধরনের আলস্য সৃষ্টি করেছে, যার কারণে তারা আগের তুলনায় কম হাঁটে, কম খেলাধুলা করে, গাড়িঘোড়া কম চালায়৷ বিপরীতে এক জায়গায় বসে থাকাতেই তাদের বেশি স্বাচ্ছন্দ্য৷’’
এছাড়া দেশের অবকাঠামো এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো কারণও প্রাসঙ্গিক হতে পারে, জানাচ্ছে প্রতিবেদনটি৷
দিনে এক ঘন্টার কায়িক পরিশ্রম না করার মধ্যে রয়েছে গবেষণার অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ৯৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী৷ রাইলি আরো জানান, একাধিক দেশে শারীরিক পরিশ্রম না করার পাশাপাশি কিশোরদের খাদ্যাভ্যাসে বাড়ছে চিনির পরিমাণ৷ ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্থূলতা, হৃদরোগ, পেশি ও হাড়ের রোগ ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গ৷