1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিপন্ন বাঘেরা যেমন আছে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২১ ডিসেম্বর ২০১৮

ঘরে-বাইরে বিপন্ন ভারতের জাতীয় পশু বাঘ৷ কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় এক দশকেরও বেশি সময় কোনো ব্যাঘ্রশাবক জন্ম নেয়নি৷সুন্দরবনের প্রকৃতির কোলেও বাঘের সংখ্যা বাড়ছে না৷

ছবি: DW/P. Samanta

ব্যাপক হারে অরণ্যের ক্ষতি আর চোরাশিকারের কারণে বিপন্নদের তালিকায় ঢুকে পড়েছে বাঘ৷ এমন পরিস্থিতিতেই চীন গবেষণা ও ওষুধ তৈরির জন্য বাঘের হাড়-সমেত বিভিন্ন দেহাংশ ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে৷ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে ভারতের অরণ্য থেকে অচিরেই বিলুপ্ত হবে বাঘ

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কয়েকবছর আগে চীন বিপন্ন প্রাণীদের দেহাবশেষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু এবার সেই অবস্থান থেকে সরে আসায় চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বাড়বে ও ভারতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কর্মসূচি ব্যাহত হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড (ডব্লুডব্লুএফ) বলেছে, এর ফলে বিশ্বজুড়ে বাঘ এবং গন্ডার সংরক্ষণ কর্মসূচির উপর ভয়ঙ্কর আঘাত আসবে৷ 

এমন পরিস্থিতে ডয়চে ভেলে খোঁজ নিয়ে দেখেছে, চিড়িয়াখানার ঘেরাটোপ থেকে পরিবেশের উন্মুক্ত চরাচরে কেমন আছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার৷ প্রথমে নজর দেওয়া যাক কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার দিকে৷ এই মুহূর্তে ৭টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে সেখানে৷ চারটি পুরুষ ও তিনটি বাঘিনী৷ তিনটি বাঘের নামকরণ হয়েছে— ঋষি, রাজা ও বিশাল৷ সুন্দরবন থেকে আনা বাঘের নামকরণ হয়নি৷ তিনটি বাঘিনীর নাম রানি, রূপা ও পায়েল৷ এরা একসঙ্গে ঘরকন্না করলেও এদের সন্তান নেই৷ আলিপুর চিড়িয়াখানায় এবার বাঘের বংশ বিস্তারের জন্যই উত্তরবঙ্গের সাফারি পার্ক থেকে স্নেহাশিস নামে নতুন একটি বাঘকে আনা হবে৷

আলিপুর চিড়িয়াখানায় গত ২০০৬ সাল থেকে কোনো সফল প্রজনন হয়নি৷ পাঁচ বছর আগে একটা চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু তাতে সাফল্য মেলেনি৷ কেন? আলিপুর চিড়িয়াখানার সূত্রে জানা গেছে, মিলনের সময় পুরুষ বাঘেরা নিষ্ক্রিয় থাকে৷ বাঘের প্রজনন ঘটানোর বিষয়টা তাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অথচ ভুবনেশ্বরের নন্দনকানন জঙ্গল সাফারিতে কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে জটিলতা নেই৷ সেখানে রয়্যাল বেঙ্গলের সার্থক প্রজনন হয়েছে৷ তারই ফলে দিব্যি বাঘের সংসার বেড়ে ২৬-এ দাঁড়িয়েছে৷ 

আশিসকুমার সামন্ত

This browser does not support the audio element.

আলিপুর চিড়িয়াখানার আধিকারিকরা জানান, ২০১৫ সাল থেকে তাঁরা সবরকম চেষ্টাই করেছেন৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ এর কারণ ব্যাখা করলেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত৷ তিনি বললেন, ‘‘বাঘের প্রজননের বয়স সাধারণত পাঁচ থেকে আট বছর৷ এখন এখানে যে সমস্ত বাঘ আছে, তাদের বয়স বেশি৷ ঋষি ও বিশালের বয়স ১২ বছরের কাছাকাছি৷ ঋষি ও পায়েলের মিলনের চেষ্টা করা হলেও লাভ হয়নি৷ প্রজননের বয়স পার হয়ে যাওয়ায় তারা মিলনে আগ্রহ হারাচ্ছে৷ ভিটামিন ও কামবর্ধক ওষুধও কাজে আসেনি৷'' সেই কারণেই স্নেহাশিসকে আনার পরিকল্পনা৷ উত্তরবঙ্গের সাফারি পার্কে স্নেহাশিস ও শীলার মিলনে সফল প্রজনন হয়েছে৷ এর আগেও স্নেহাশিস আলিপুরে ছিল৷ সে ফিরে এলে আলিপুরের নতুন ব্যাঘ্র শাবকের পিতা হতে পারবে, এই আশাতে রয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ স্নেহাশিসের পাশে পাটনা থেকে আরেকটি বাঘও আসবে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ্৷    

কিন্তু শুধুই কি বাঘের বয়স প্রজননে বাধা? বাঘের জন্য সুস্থ পরিবেশের অভাব রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন৷ আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেল, খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে অতুৎসাহী দর্শকরা বন্দি বাঘকে প্রায়ই উত্যক্ত করেন৷ সাধারণভাবে বন্যপ্রাণীরা প্রচুর মানুষের ঘোরাফেরাতে বিরক্ত হয়৷ এমনকি দর্শকদের দ্বারা উত্যক্তও হয়৷ ধুলো, ভিড় বা কোলাহলে বাঘের অসুবিধা হয় বৈকি! আশিসকুমার সামন্ত এ ব্যাপারে বললেন, ‘‘সুন্দরবন থেকে আনা বাঘের হাবভাব আলাদা হয়৷ বন্দি বাঘের মতো নয়৷ তারা মানুষের উপস্থিতিতে বেশি বিরক্ত হয়৷ সুন্দরবন থেকে আসা একটি বাঘের বয়স ৭ বছর৷ তাকে দিয়েও প্রজননের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সফল হয়নি৷''

শুভ্রাংশু পান

This browser does not support the audio element.

চিড়িয়াখানায় প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করাও কঠিন৷ এটাও বাঘের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ প্রাণীপালন ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক ডঃ শুভ্রাংশু পান বললেন, ‘‘বন্যপ্রাণের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে৷ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বাসস্থানের মধ্যে যতটা দূরত্ব বাড়বে, তত বন্যপ্রাণীর জীবন স্ট্রেসফুল হবে৷ এই স্ট্রেসের কারণেই প্রাণীরা তখন প্রজনন করবে না৷ একটা প্রাণীকে যতটা তার প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে রাখা যাবে, তত তার জীবনে স্ট্রেস কমে যাবে৷'' অর্থাৎ, বাঘের প্রজনন ঘটানো আলিপুর চিড়িয়াখানার কর্মীদের কাছে একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ বলা যেতে পারে৷ নন্দনকাননের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই৷ শুভ্রাংশু বলেন, ‘‘চিড়িয়াখানায় কেমনভাবে দিন কাটাচ্ছে একটা বন্দি প্রাণী, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আলিপুর চিড়িয়াখানা খুবই প্রাচীন৷ তাই এর ধ্যানধারণা ও গঠনও প্রাচীন৷ আধুনিক চিড়িয়াখানা বলতে যা বোঝায়, এটা তা মোটেই নয়৷ ১৮৭৫ সালের সেই পুরনো ধারণাতেই বন্দি করে প্রাণী রাখা হচ্ছে আলিপুরে৷ কাজেই স্ট্রেস তো থাকছেই৷ বরং ওড়িশার নন্দনকানন সাফারি অনেকটাই মুক্ত অবস্থায় রাখে প্রাণীদের৷''

এ তো গেল বন্দি বাঘের কথা৷ কিন্তু প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে যে বাঘ রয়েছে, তাদের অবস্থা কী? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহকারী অধিকর্তা ডঃ শিবাজী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সুন্দরবনের সামগ্রিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে৷ তাই রেহাই মিলছে না বাঘেরও৷ বাঘ যেহেতু বাস্তুতন্ত্রের একদম সর্বোচ্চ শ্রেণীতে পড়ে, তাই সুন্দরবনের ক্ষতির জন্য বাঘের খাবারেও টান পড়ছে৷ ফলে বাঘকে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে৷''

খাদ্য পিরামিডের সর্বোচ্চ খাদক বাঘ৷ তাই খাদ্য-শৃঙ্খলের নীচের দিকের প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই রেশ বাঘের উপরেও পড়বে৷ এমনটাই মনে করেন প্রাণিবিজ্ঞানীরা৷ শিবাজী বলেন, ‘‘সুন্দরবনের নদীতে দূষণ৷ বৃহত্তর কলকাতার পয়ঃপ্রণালী বিদ্যাধরী নদীর মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে সুন্দরবনে৷ তাই মাছ, কাঁকড়ার মতো জলজ প্রাণীরাও ক্ষতির মুখে৷ ক্ষতি হচ্ছে মানুষেরও৷ এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে বাঘও ক্ষতির মুখে পড়ছে৷ বাঘ এখন খুবই বিপন্ন৷''

শিবাজী ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

সারা পৃথিবীর ৭০ শতাংশ বাঘ ভারতেই আছে৷ তবে সেই সংখ্যাটাও কম বলে দাবি করছেন প্রাণিবিজ্ঞানীরা৷ মানুষের সভ্যতার অভিশাপে অন্যান্য অরণ্যের প্রাণীদের মতো বাঘও একসময় কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল৷ তারপর তারা ধীরে ধীরে বিপন্ন হয়ে উঠেছে৷ সহজভাবে বললে, মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণের সংঘাতের শিকার হয়েছে বাঘ৷ মানুষের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কমেছে বাঘের বিচরণভূমিও৷ ১৯৭২ সালে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প চালু হওয়ায় পরে বাঘ বাস করে এমন ৯টি জঙ্গলকে ভারতের ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় এনে শুরু হয়েছিল সংরক্ষণ৷ এর ফলে বাঘের সংখ্যা বেড়েছিল৷ ভারতীয় বনাঞ্চলে বাঘের সংখ্যা ১,৮২৭ থেকে বেড়ে চার হাজারে পৌঁছেছিল৷ 

চলতি শতকের বাঘ-সঙ্কট মূলত চীনের জন্যই৷ চিড়িয়াখানার সঙ্কট সাময়িক৷ বয়স্ক বাঘের তুলনায় নতুন অল্পবয়সি বাঘ নিয়ে এলে এ সমস্যা কাটানো যাবে৷ কিন্তু সভ্যতার আগ্রাসনের থেকে রেহাই কি মিলবে এত সহজে? শিবাজী বলেন, ‘‘সভ্যতার আগ্রাসনে সারা ভারতেও বাঘের সংখ্যা কমেছে৷ গত একশ' বছরে কমতে কমতে তা তলানিতে ঠেকেছে৷ জিম করবেটের সময়ে যা বাঘের সংখ্যা ছিল, তার থেকে কমেছে৷ তবে আশার কথা, এর আগের বাঘসুমারিতে যা বাঘের সংখ্যা ছিল, তার থেকে বেড়েছে৷ সঠিকভাবে ব্রিডিং করালে বাঘের সংখ্যা বাড়বে৷ তাতে বাঘের বিপন্নতা আটকানোর সার্থক চেষ্টা করা যাবে৷ একইসঙ্গে চিড়িয়াখানায় ক্যাপটিভ ব্রিডিংকে আরো উৎসাহিত করা উচিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ