বিপর্যয়ের সময় ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া মানুষের প্রাণ বাঁচাতে প্রতিটি মূহূর্তের দাম রয়েছে৷ উদ্ধারকর্মীদের সীমিত ক্ষমতার পরিপূরক হিসেবে একাধিক রোবট সেই কাজে তৎপর হয়ে উঠছে৷
বিজ্ঞাপন
৩৬টি জয়েন্ট থাকায় ‘স্নেক বট' বেশ নমনীয়৷ ফলে কঠিন বা দুর্গম জায়গায় চলাফেরা করতে অসুবিধা হয় না৷ এমনকি পাইপের মধ্য দিয়ে অথবা সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলার ক্ষমতাও তার আছে৷ বিপর্যয়ের সময়ে এমন সর্পিল রোবট মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক দল সেটি তৈরি করেছে৷
রোবট ডেভেলপার হিসেবে ফুমিটোশি মাটসুনো বলেন, ‘‘প্রথমত এই রোবট এমন সব জায়গায় কাজে লাগানো হয়, যেখানে ঝুঁকির আশঙ্কায় মানুষ প্রবেশ করতে পারে না, অথবা যেখানে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ এই রোবটগুলি অক্সিজেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ মাপতে পারে৷ তারপর সাহায্যকারী দল পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়৷ এমন রোবট কাজে লাগানোর আরেকটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি হলো যে সব জায়গা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ রোবট সেখানে ঢুকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ অর্থাৎ এই সব রোবট মানুষের জন্য অসম্ভব বা বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে৷''
বিপর্যয়ের সময়ে প্রাণ বাঁচায় যে রোবট
04:04
উদ্ধারকার্যের সময় এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জাপানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে৷ প্রায় প্রতিদিনই ভূমিকম্প হয়৷ তার উপর টাইফুন, সুনামি ও অগ্নুৎপাতও ঘটে৷ ১৯৯৫ সালে কোবে শহরে ভূমিকম্পের পর থেকে বিজ্ঞানীরা বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ মাটসুনো বলেন, ‘‘আমি মূলত মহাকাশ অভিযানের জন্য রোবট তৈরি করতাম৷ তারপর গ্রেট হানশিন আওয়াচি ভূমিকম্পে আমার এক ছাত্রের মৃত্যুর পর আমি বিপর্যয়ের সময়ে ব্যবহারের উপযোগী রোবট নিয়ে গবেষণায় মন দিলাম৷''
এক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্নেক রোবট চালনা করা হয়৷ সেটির মধ্যে একটি ক্যামেরা ও অনেক সেন্সরও রয়েছে৷ গবেষকদের নানা সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা ভাবতে হয়৷
যেখানে করোনা, সেখানেই রোবট আর ড্রোন
জানালায় এসে কথা বলছে ড্রোন। পুলিশের নির্দেশে উড়ে যাচ্ছে যেখানে দরকার। রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, সুপার মার্কেটসহ অনেক জায়গায় করোনা ভাইরাসকে রুখতে রোবটও কাজ করে চলেছে বিরামহীনভাবে। দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/China Daily
ড্রোন বলছে, সাবধান!
মালয়েশিয়ার পুলিশ করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার কথা বলতে পাঠিয়েছে তাকে। রাজধানী কুয়ালালামপুরের এই ঘরটির সামনে এসে সে কথাই বলছে ড্রোন। মন দিয়ে ড্রোনের কথা শুনছেন এক গৃহিণী।
ছবি: Reuters/Lim Huey Teng
শিক্ষার্থীর বেশে রোবট
করোনা ভইরাস থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে হচ্ছে সবাইকে। জাপানের রাজধানী টোকিওর এক অনুষ্ঠানে তাই সদ্য স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীরা আসতে পারেননি। তাদের জায়গায় গাউন পরে দাঁড়িয়েছে রোবট।
ছবি: Reuters/BBT UNIVERSITY
রোবট যখন ফটোগ্রাফার
ইটালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের ছবি তুলে বেড়াচ্ছে রোবট। রোগীদের চিকিৎসায় খুব কাজে লাগছে সেই ছবি। কম্পিউটারের স্ক্রিনে রোবটের তোলা ছবি দেখছেন এক স্বাস্থকর্মী।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
সচেতন রোবট
করোনা ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে একজন সচেতন মানুষের যা যা করা উচিত, সবাই মিলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়া উচিত, সুপার মার্কেটে সেই কথাগুলো বলছে মানুষের আদলে গড়া এক রোবট। জার্মানির লিন্ডিয়ার শহরের এক সুপার মার্কেট থেকে তোলা ছবি।
ছবি: Reuters/W. Rattay
সংবাদ সম্মেলনে রোবট
বেজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে সাংবাদিকদের দেখানো হচ্ছে হাসপাতলে রোবট কিভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সহায়তা করে। 'নকল মানুষ' সামনে রেখে রোবটই তা দেখাচ্ছে।
ছবি: Reuters/C. Garcia Rawlins
শহর জীবাণুমুক্ত করছে ড্রোন
চিলির তালকাহুয়ানা শহরে জীবাণুনাশক ছিটাতে আর মানুষের দরকার হয় না। লকডাউন মেনে মানুষ থাকছে ঘরে আর শহরময় উড়ে উড়ে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/J. Luis Saavedra
খাবার পরিবেশনে
চীনের সাংহাই শহরের এক রেস্তোরাঁয় চাহিদামতো খাবার পরিবেশন করছে রোবট।
ছবি: Reuters/Aly Song
সিঁড়ি বেয়ে ওঠে স্প্রেয়ার!
চীনের লুসিয়াং হেনান প্রদেশের এক ভবনে জীবাণুনাশক ছিটাতে সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে এগিয়ে চলেছে স্প্রেয়ার।
ছবি: Reuters/China Daily
রংমিস্ত্রি রোবট
করোনা ভাইরাসের কারণে ফ্রান্সও এখন বিপর্যস্ত। সব মানুষকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে। অনেক কাজেই নামতে হয়েছে রোবটকে। করোনায় মৃতদের জন্য বানাতে হচ্ছে নতুন নতুন কফিন। কফিনে রং করছে এক রোবট।
ছবি: Reuters/G. Fuentes
মাস্ক লাগবে?
ভারতের কোচি শহরে ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে আছে রোবট। ট্রে-তে আছে মাছ আর স্যানিটাইজার। যার দরকার নিয়ে নিন!
ছবি: Reuters/Sivaram V
বিকল্প স্বাস্থ্যকর্মী
ইতালির ভারেসে শহরের এক হাসপাতলে করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসায় সহায়তা করছে রোবট।
ছবি: Reuters/F. Lo Scalzo
পরম বন্ধু
করোনা-সংকটে সবচেয়ে বিপদে আছেন প্রবীণরা। রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি, একাকিত্বের যন্ত্রণাও তাদের জন্য বেশি অসহনীয়। বেলজিয়ামে এমন মানুষদের জন্য ঘরে ঘরে বিনামূল্যে রোবট পাঠাচ্ছে একটি কোম্পানি। রোবটগুলোর কাজই হলো ভিডিও কলের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলানো।
ছবি: Reuters/Y. Herman
পুলিশ এবং ড্রোন
ইন্দোনেশিয়ার রিয়াউ প্রদেশের পেকানবাউ শহরে
জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজও করতে হচ্ছে পুলিশকে। অবশ্য পুলিশ কাজটা নিজে করছে না। রিমোট হাতে নিয়ে শুধু নির্দেশ দিচ্ছে আর সেই নির্দেশ মেনে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছে ড্রোন।
ছবি: Reuters/R. Muharrman
'বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক'
বেজিংয়ের করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতো নানা উপদেশ দেবে এই রোবট। কিভাবে, কোন ইশারায় কী বোঝাতে হবে তা দেখিয়ে দিচ্ছেন ফাইভ জি প্রযুক্তির রোবটটি তৈরি করা কোম্পানির কর্মীরা।
ছবি: Reuters/China Daily
14 ছবি1 | 14
জরুরি অবস্থায় জীবিত মানুষের খোঁজে রোবটটিকে পাইপের ভিতর অথবা বাইরের অংশ বেয়ে উপরে উঠতে হতে পারে৷ সেই ক্ষমতা তাই অত্যন্ত জরুরি৷ ফুমিটোশি মাটসুনো বলেন, ‘‘প্রথমদিকে আমি মানুষের উদ্ধারকার্যে রোবট তৈরির কথা ভেবেছিলাম৷ তারপর মত বদলালাম৷ বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিপর্যয় ঘটলে মানুষের অবস্থান নির্ণয় করা বড় চ্যালেঞ্জ৷ উদ্ধারকর্মীরা আন্দাজে এখানে-সেখানে মাটি খুঁড়ে মানুষের খোঁজ করেন৷ কিন্তু সেই মূল্যবান সময় নষ্ট হলে মানুষের প্রাণ যেতে পারে৷''
এই রোবটটিকেও শুধু উদ্ধারকার্যে সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে৷ চার পায়ের সাহায্যে সেটি মানুষের জন্য দুর্গম জায়গায়ও পৌঁছে যায়৷ বহুমূখী হাতের সাহায্যে এই রোবট দরজা খুলতে ও কোনো বস্তু তুলে আনতে পারে৷
এমন সব রোবট এখনো গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে৷ তবে অদূর ভবিষ্যতে সেগুলি বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারবে৷