1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

বিপর্যয়ে বেড়েছে সুন্দরবনের নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ ডিসেম্বর ২০২১

বেড়ে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নোনা জলে কাজ করে জটিল স্ত্রী রোগে ভুগছেন সুন্দরবন অঞ্চলের নারীরা৷ এই সমস্যা সমাধানে তাদের জীবনমান উন্নয়ন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের উপর জোর দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা৷

সুন্দরবন অঞ্চলে অনেক নারীর দিনে সাত-আট ঘণ্টা কাটে নোনা জলের নদী ও ভেড়িতে (ফাইল ছবি)ছবি: Payel Samanta/DW

‘‘নোনা জলের দৌরাত্ম্যে চাষবাস প্রায় উঠে গেছে৷ ফলে জীবিকার জন্য মেয়েদেরই এগিয়ে আসতে হয়েছে৷ মীন ধরা ছাড়া আর তেমন বিকল্প কোথায়?’’ বলছিলেন রেবা বিশ্বাস৷ দীর্ঘদিন সুন্দরবন অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেছেন তিনি৷

বাস্তবিকই একের পর এক বিপর্যয়ে সংকট বেড়েছে সুন্দরবন অঞ্চলের মৎস্যজীবী মানুষের৷ এর মধ্য চাপা পড়ে থাকছে নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যার কথা৷ নোনা নদীতে বাগদা চিংড়ি ধরা নয় শুধু, নোনা পুকুরে স্নান করে, বন্যায় ভেসে যাওয়া ঘরে কোমরজলে দিনের পর দিন কাটে মেয়েদের৷ যার কারণে দেখা দিচ্ছে নানা জটিল স্ত্রী রোগের প্রকোপ৷ মেডিকেল ক্যাম্প করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছেন চিকিৎসকেরা৷

‘আয়রন বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সুন্দরবনের মহিলারা পান না’

This browser does not support the audio element.

হাজার হাজার নারীরা দিনে প্রায় সাত-আট ঘণ্টা কাটান নোনা জলের নদী ও ভেড়িতে৷ পরিচ্ছন্নতা বজায় না মানায় রোগাক্রান্ত হচ্ছেন তারা৷ সরবেড়িয়ার স্বাস্থ্যকর্মী সুভদ্রা মন্ডল বলেন, ‘‘এঁদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রতি মাসে পয়সা দিয়ে কিনে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন না৷ কাপড়ের ওপরে নির্ভর করেই মাসিকের দিন চলে৷ চর্মরোগ আর সাদা স্রাবের সমস্যা এখানে ৬০ শতাংশ মহিলার৷’’

কোভিড পরিস্থিতিতে নারী স্বাস্থ্য রক্ষার কাজ ব্যাহত হয়েছে অন্যান্য পরিষেবার মতো৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শ্যামল চক্রবর্তী নিয়মিত মেডিক্যাল ক্যাম্প করেন সুন্দরবনের বানভাসি গ্রামগুলিতে৷ তিনি বলেন, ‘‘জনস্বাস্থ্যের সমস্যা রয়েছে অনেকটাই৷ আমরা প্রেগনেন্ট মহিলাদের নুন কম খেতে বলি, কিন্তু লিটারে প্রায় ২০ গ্রাম নুন রয়েছে এখানকার জলে৷ নোনাজলে যোনিপথ স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছে৷ গর্ভপাতের কেসও পাচ্ছি৷ বাংলাদেশেও নোনা জলের জন্য প্রি-অ্যাক্লেমসিয়া পাওয়া গিয়েছে৷’’ চিকিৎসকেরা বলছেন, বাংলাদেশের নারী স্বাস্থ্য ভারতের তুলনায় উন্নত

চিকিৎসকেরা দেখেছেন, এইসব প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের অযথা রক্তক্ষরণ এবং ইন্টারকোর্সে ব্যথা, ইউরিনারি ট্র্যাকে সংক্রমণের জন্য প্রস্রাবের জ্বালা ভোগ করতে হয়৷ যোনি, গর্ভাশয়ে সংক্রমণ ও পিআইডির সমস্যা এখানে প্রচুর৷ নোনাজলে কাজ করে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের মতো রোগের প্রকোপও বাড়ছে৷ আমপান থেকে ইয়াস, সবক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলি বেড়েছে৷ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী মনে করেন, ‘‘বিষয়টা শুধু পরিচ্ছন্নতা বা সচেতনতার নয়৷ মানুষের কাছে বিকল্প কাজ নেই বলেই মহিলারা মীন ধরতে নোনা জলে থাকছেন৷ এ জন্য সরকারকে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে৷’’

‘দুয়ারে সরকার নয়, দুয়ারে চিকিৎসা পৌঁছতে হবে’

This browser does not support the audio element.

সমাধানের পথ খুঁজতে চাইছেন চিকিৎসকরা৷ নারী স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তিনটি বিষয় খুব জরুরি৷ শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আয়রন বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সুন্দরবনের মহিলারা পান না৷ প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে মহিলাদের খাবারে আয়রনের অনেকটা ঘাটতি থাকে৷ সপ্তাহে তিন দিন ডিম খাওয়া জরুরি৷ নইলে হিমোগ্লোবিন বাড়বে না৷ রক্তাল্পতার সমস্যা থেকে যাবে৷ শাক সবজি আয়রনের উৎস হিসেবে পর্যাপ্ত নয়৷’’ এর সঙ্গে আর কী দরকার? চিকিৎসকের মতে, ‘‘ডি-ওয়ার্মিং জরুরি৷ অৰ্থাৎ হুক ওয়ার্ম নষ্ট করতে হবে যা মহিলাদের স্বাস্থ্যহানি ঘটায়৷ এছাড়া অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করা প্রয়োজন৷ অর্থাৎ মেনোরেজিয়া বন্ধ করতে হবে৷ অনেকের অর্শের জন্যও রক্তক্ষরণ হয়৷’’

সুন্দরবনে নিকটতম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বলতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র৷ বহির্বিভাগের চিকিৎসা মিললেও মেলে না ইনডোর চিকিৎসা৷ পয়সা খরচ করে শহরে আসা ছাড়া উপায় নেই৷ ফলে রোগ চেপে চেপে বেড়ে যাওয়াটা এ অঞ্চলের বড় সমস্যা৷ দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে পদ্মশ্রী চিকিৎসক, ‘সুন্দরবনের সুজন’ ডাঃ অরুণোদয় মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারের সদর্থক ভূমিকা নেওয়া উচিত ছিল৷ দুয়ারে সরকার নয়, দুয়ারে চিকিৎসা পৌঁছতে হবে৷ মহিলারা সাংঘাতিকভাবে অবহেলিত৷ রেগুলার চেক- আপ যদি করা যেত, তাহলে অনেক রোগই ধরা পড়ত৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ