বিরোধীদের কেউ জেলে, কেউ দেশের বাইরে, কারও মৃত্যু হয়েছে। ফলে পঞ্চমবার যে দেশের প্রধান হিসেবে পুটিন নির্বাচিত হবেন, তা সকলেরই জানা ছিল। দেখার ছিল, তিনি কত শতাংশ ভোট পান। বুথ ফেরত সমীক্ষার দাবি, প্রায় ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় ফিরছেন ভ্লাদিমির পুটিন।
গত তিনদিন ধরে ভোটগ্রহণ পর্ব চলেছে রাশিয়ায়। রোববার সবচেয়ে পশ্চিমের এলাকা কালিনিনগ্রাদে ভোটের পর বুথ ফেরত সমীক্ষা করেছে দেশের জাতীয় গণমাধ্যম। সেখানেই দেখা গেছে, ৭১ বছরের পুটিন ৮৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় ফিরছেন। বাস্তবে এমনটা হলে এটা হবে রেকর্ড। জোসেফ স্তালিনের চেয়েও বেশি ভোটে ক্ষমতার সিংহাসনে বসবেন পুটিন। শুধু তা-ই নয়, টানা পাঁচবার দেশের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি হবেন গত ২০০ বছরে সবচেয়ে বেশি ধরে রাজত্ব করা রাশিয়ার শাসক। এক্ষেত্রেও তিনি স্তালিনের রেকর্ড ভাঙবেন।
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র কত?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বুধবার পশ্চিমা বিশ্বকে সতর্ক করে বলেন, তার দেশ পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
সংখ্যা
‘ফেডারেশন অফ অ্যামেরিকান সায়েন্টিস্ট’ বা এফএএস-এর হিসেবে রাশিয়ার কাছে পাঁচ হাজার ৫৮০টি পরমাণু অস্ত্র আছে৷ এর মধ্যে ১,৭১০টি অস্ত্র মোতায়েন অবস্থায় আছে৷ ৮৭০টি আছে ভূমিতে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে, আর ৬৪০টি আছে ডুবোজাহাজে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলে৷ আরও প্রায় ২০০টি পরমাণু অস্ত্র বিভিন্ন ঘাঁটিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ আর কোনো দেশের কাছে এতগুলো পরমাণু অস্ত্র নেই৷
ছবি: AP Photo/picture-alliance
কখন ব্যবহার হবে?
২০২০ সালে রাশিয়ার প্রকাশিত এক নির্দেশিকায় বলা হয়, পরমাণু বা অন্য কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার উপর হামলা হলে বা প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে রাশিয়াকে হামলা করে ‘রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে নিয়ে গেলে’ এই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
পরীক্ষা
পুটিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে তারাও তা করবে৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন সবশেষ ১৯৯০ সালে এমন পরীক্ষা করেছিল৷ যুক্তরাষ্ট্র সবশেষ পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে৷ এছাড়া চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে৷ ছবিতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার খবর টিভিতে দেখছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকেরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Ahn Young-joon
চুক্তি থেকে রাশিয়ার সরে আসা
রাশিয়া ১৯৯৬ সালে ‘কম্প্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার-টেস্ট ব্যান ট্রিটি’ বা সিটিবিটিতে সই করেছিল৷ পরে ২০০০ সালে সেটি অনুমোদন করে৷ তবে গতবছর এই চুক্তি থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে নেওয়ার চুক্তিতে সই করেন পুটিন৷ যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৬ সালে চুক্তিটি সই করলেও কখনও অনুমোদন করেনি৷
ছবি: Mikhail Klimentyev/Kremlin/Sputnik/REUTERS
নিউক্লিয়ার বাক্স
রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুটিনের৷ সেজন্য ‘চেগেত’ নামের একটি নিউক্লিয়ার বাক্স সবসময় তার সঙ্গে থাকে৷ এই বাক্সের মাধ্যমে পুটিন তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন৷ ছবিতে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিনের কাছে থাকা চেগেত নিউক্লিয়ার বাক্স দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: NATALIA CHERNOKHATOVA/REUTERS
5 ছবি1 | 5
ইউক্রেন আক্রমণ
দুই বছর আগে ইউক্রেনে আক্রমণ চালিয়ে ছিলেন পুটিন। পুরোপুরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। পুটিন অবশ্য যুদ্ধ নয়, একে অভিযান বলে দাবি করেছিলেন। সেই যুদ্ধ এখনো চলছে। তারই মধ্যে নির্বাচন হলো। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ পুটিনের পাশে কতটা দাঁড়াবেন, তা নিয়ে বিবিধ আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই নির্বাচনের মাধ্যমে পুটিন দুইটি বিষয় প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এক, দেশের মানুষের সমর্থন তার প্রতি আছে। এবং দুই, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে দেখানো, রাশিয়ার জনগণ তাকে এখনো সমর্থন করছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি অবশ্য রাশিয়ার এই ভোটকে 'কারচুপির ভোট' বলে উল্লেখ করেছেন। বস্তুত, ভোট চলাকালীনও রাশিয়ার বেশ কিছু এলাকায় ইউক্রেন আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
অ্যামেরিকার অবস্থান
হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়েছে, এই নির্বাচন 'ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার' বা অবাধ ও নিরপেক্ষ নয়। বিরোধীদের জেলে ঢোকানো, দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে নাভালনির মতো বিরোধীদের মৃত্যুর প্রসঙ্গও সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। পুটিনের বিরুদ্ধে যারা এবারের ভোটে লড়াই করেছেন, তারাও কার্যত নির্বাচনি বক্তৃতায় পুটিনকে সমর্থন করেছেন।