প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পিতা ছিলেন স্থানীয় পৌর দপ্তরের প্রধান কেরানি জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মা প্রতিভাদেবী৷ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ১৯২৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ ১৯৩০ সালে তিনি ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম হন৷ ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক শ্রেণির পরীক্ষায় অংশ নেন৷ কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে প্রীতিলতা এবং তাঁর সহপাঠী বীণা দাসগুপ্ত কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তাদের পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়৷ অবশেষে প্রায় ৮০ বছর পর ২০১২ সালের ২২শে মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তাঁদেরকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে৷
স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে যান৷ পরিবারের অর্থসংকট মেটাতে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন৷ তৎকালীন নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন৷ কিন্তু সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ বীর সাহসী নারী নেত্রী প্রীতিলতা সবসময় চালিয়ে গেছেন স্বদেশী আন্দোলনের কর্মকাণ্ড৷ ফলে তাঁর শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের সবটুকু সময় কেটেছে লোমহর্ষক ও ঘটনাবহুল সংগ্রামী কাজের মধ্য দিয়ে৷ আন্দোলনের কৌশল হিসেবে ৫ই জুলাই তাঁকে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে যেতে হয়৷ এসময় তাঁকে পুলিশ হন্যে হয়ে খোঁজে৷ আনন্দবাজার পত্রিকাতেও ওঠে তাঁর আত্মগোপনের খবর৷
এরপর মাষ্টারদা সূর্য সেন এর পরিকল্পনা মাফিক ২৩শে সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে ১০-১২ জনের একটি দলকে নেতৃত্ব দেন প্রীতিলতা৷ উইকিপিডিয়া'র বাংলা সংস্করণে অবশ্য ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণের তারিখ ২৪শে সেপ্টেম্বর বলে উল্লেখ রয়েছে৷ এই অভিযানের পর পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে দেশের জন্য আত্মবিসর্জন দেন এই সংগ্রামী নেত্রী৷ তবে তাঁর মাত্র ২১ বছরের জীবনে তিনি যে দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং সংগ্রামী আন্দোলনের উদাহরণ রেখে গেছেন তা ভারত উপমহাদেশের সকল মানুষের জন্য অনুস্মরণীয় হয়ে রয়েছে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম