সম্প্রতি দেশে যারা বিবর্তনের বিষয়ে ডারউইনের মতবাদের পাঠদান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে ওই মতবাদ পড়ে সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান৷
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেছেন, ‘‘ডারউইনকে এখনও অনেকে মানতে চায় না৷ তাকে পড়ে আপনি রিফিউজ করতে পারেন, কিন্তু অনেকে বলছে বিবর্তনবাদ পড়বে না৷ বিবর্তনবাদ পড়ে তার ত্রুটি থাকলে সেটার সমালোচনা করুন৷
‘‘অনেকে এখনও বিশ্বাসই করে না যে, পৃথিবী ঘুরছে৷ আমরা ডিএনএ টেস্ট করবো, কিন্তু বিবর্তনবাদ পড়বো না! আমরা বলি, মানুষ আশরাফুল মাকলুকাত৷ ডারউইন আরেকটু এগিয়ে বলছেন, ‘অবশ্যই আশরাফুল মাকলুকাত নয়তো পৃথিবী ধ্বংস করার জন্য এত মুখিয়ে আছে কেন?' এটা আমরা এখন দেখছি, পরমাণু অস্ত্র নিয়ে৷”
বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘দোঁহার পূর্বাপর ও ইউসুফ মুহম্মদের দোঁহা' শীর্ষক সেমিনারে প্রশ্নোত্তরে পর্বে তিনি এসব কথা বলেন৷
শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘মানুষ নিজে যা চিন্তা করে তা নয়, অন্যে তাকে নিয়ে যা চিন্তা করে, সে তাই- এটা ফ্রয়েড বলেছেন৷ ফ্রয়েড, মার্ক্স, ডারউইনের মত লোকেরা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন৷ পেছনে তাকালে তাই দেখতে পাই৷ আমাদের মধ্যে এমন মানুষ জন্মেছেন, তাদের আমরা হয়ত এখনও চিনতে পারিনি৷
‘‘কবির, লালন ফকির এরাই আধুনিক৷ কিন্তু এদের বীজ আমরা মাটিতে পড়তে দিইনি৷ ইউরোপীয়রা মানুষের কল্যাণে যা করেছে, তার সবই আমরা নিব, তাদের আধুনিকতা আমরা নিব; তবে তাদের সবকিছুই ভালো, এমনটা নয়৷”
আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের যে কারণ ছিল, সেটা আমরা দেখি না কোথাও৷ এখন মনে হয় সব যেন অলিক হয়েছে৷ কোনো একটা দেশ স্বাধীন হয়েছে কি না তার প্রমাণ, সেদেশের সব থেকে দুর্বল জনগোষ্ঠী কেমন আছে৷
ডারউইনের ঐতিহাসিক কাজের দেড়শ’ বছর
২৪ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বই ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’ প্রকাশনার দেড়শ বছর৷ তাঁর অনবদ্য কাজের কিছু ঝলক দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Nicolas Economou/NurPhoto/picture alliance
বিবর্তনবাদ তত্ত্ব
আধুনিক বিজ্ঞানের যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার তার অন্যতম ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদের তত্ত্ব৷ এতে দেখানো হয়েছে প্রাণীরা সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিক নিয়মে ধীরে ধীরে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে৷ ডারউইন প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর বছরের পর বছর ধরে গবেষণা করে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছেন, যেখানে প্রাণীর টিকে থাকার সংগ্রামের কথা বিশদ ও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
জীবনের সেরা ভ্রমণ
২২ বছর বয়সে চার্লস ডারউইন এইচএমএস বিগল নামের এক জাহাজে চড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হন৷ পাঁচ বছরব্যাপী এই সমুদ্র ভ্রমণে ডারউইন প্রকৃতি ও বিভিন্ন প্রাণী পর্যবেক্ষণ করে তার নমুনা সংগ্রহ করেন৷ পরবর্তীতে এটিই তার জীবনে অসাধারণ এক গবেষণার মূল পাথেয় হয়ে ওঠে৷ তরুণ ডারউইনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে জীবাশ্ম৷ এ কারণে বিলুপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং গাছের জীবাশ্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করেন তিনি৷
ছবি: Mary Evans/picture-alliance
ভ্রমণের দিনপঞ্জি
গালাপাগোস দ্বীপে ফিঞ্চ পাখির বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন রকমের ঠোঁট চোখে পড়ে তার৷ ভ্রমণের পুরো সময়টাতে বিভিন্ন বিষয়ে নোট রেখেছিলেন তিনি৷ সবশেষে যা ১৭৫০ পৃষ্ঠায় দাঁড়ায়, পরে ‘জার্নাল অফ রিসার্চেস ইনটু দ্য জিওলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্ট্রি অফ দ্য ভেরিয়াস কান্ট্রিজ ভিজিটেড বাই এইচএমএস বিগল’ নামে প্রকাশ পায়৷ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর হাড় ও কঙ্কাল নিয়ে এসেছিলেন লন্ডনে৷
ছবি: Ken Welsh/Design Pics/picture alliance
প্রাকৃতিক নির্বাচন
প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি প্রাণী থেকে নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে৷ এই তত্ত্ব বিজ্ঞানের জগতে বৈপ্লবিক তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত৷ ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে৷ এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়৷
ছবি: Natural History Museum/dpa/picture-alliance
যোগ্যতমের বিজয়
টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াইয়ে প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়৷ অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়৷ এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়৷
লন্ডনের গির্জাগুলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়৷ কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে প্রশংসার সাথে গৃহীত হয় এটি৷ তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়টি কম গ্রহণযোগ্যতা পায়৷ এ কারণে ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ বইটি ছয়বার সংশোধন করতে হয় ডারউইনকে৷
ছবি: ANDY RAIN/Epa/dpa/picture-alliance
মানুষের প্রাকৃতিক নির্বাচন
সব প্রজাতিই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডারউইনই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন৷ ১৮৭১ সালে তিনি লেখেন ‘দ্য ডিসেন্ট অফ ম্যান অ্যান্ড সিলেকশন ইন রিলেশন টু সেক্স’৷ এ সময় তার ভাবনাগুলো বেশ সাড়া ফেলে এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়৷
ছবি: akg-images/picture alliance
বিজ্ঞানীদের তীর্থক্ষেত্র
বর্তমানে ইকুয়েডরের গালাপাগোস দ্বীপে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করেন৷ দ্বীপের ঐশ্বর্যময় জীববৈচিত্রকে রক্ষা করতে এখানে এখনো চার্লস ডারউইন গবেষণা কেন্দ্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Karol Kozlowski/imageBROKER/picture alliance
8 ছবি1 | 8
‘‘আমরা যে এখন‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী' বলছি, তা তো মুক্তিযুদ্ধের কথা ছিল না৷ মুক্তিযুদ্ধ যে ব্যর্থ হয়েছে- তার প্রমাণ, সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষরা কেমন আছে? অনেকে বলবেন- কত উন্নয়ন হয়েছে, জিডিপি বেড়েছে, অনেক অবকাঠামো হয়েছে৷ কিন্তু ন্যূনতম মজুরি আর স্বাস্থ্যসেবার কী হল, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার কী হলো?”
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘দরিদ্রতম কৃষকের যে দুরবস্থা ছিল ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে, তার কি গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়েছে? শিক্ষা যে সবার কাছে নিতে পারিনি এর ব্যাখ্যা কী? ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের বাচ্চাদের বেতন মাসে ৩০ হাজার টাকা৷ পয়সা থাকলেই এখন শিক্ষা কেনা যাচ্ছে৷ শিক্ষা আর অধিকার নেই৷
‘‘এখনও জটিল রোগ হলে ভারতে ছুটতে হচ্ছে৷ যার পয়সা আছে, সে সিঙ্গাপুর যেতে পারছে, আমি পারছি না৷ অথচ শতকরা একশ ভাগ লোককে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনার কথা ছিল৷ সেটা সম্ভবও ছিল৷ কত শতাংশ হয়েছে? হয়নি৷”
দুপুরলতা সাহিত্য পত্রিকা আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন কবি রিজোয়ান মাহমুদ৷ শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হাটখোলা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান৷