আর মাস ছয়েকের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। পুজোর বাদ্যি থামার আগেই ভোটের বাদ্যি বেজে যাবে গঙ্গা পাড়ে। দিন যত গড়াচ্ছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষও তত তীব্র হচ্ছে। নির্বাচনে রাজনৈতিক বিতর্ক হবেই। সেটাই কাম্য। পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির নামে যে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে, তার দায় রাজনৈতিক দলগুলিকেও নিতে হবে। শাসক দল তৃণমূলের যতটা দায়, তার চেয়ে এতটুকু কম দায় নয় বিরোধী বিজেপির।
২০১৬ সালেও পশ্চিমবঙ্গে কার্যত কোনো জায়গা ছিল না বিজেপির। ১০ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রদীপের আলোর মতোই টিটিমে অস্তিত্ব ছিল দলটির। অথচ সেই বিজেপিই ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে বঙ্গভূমিতে। কেন পেয়েছে? এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বাম এবং কংগ্রেসকে সাইনবোর্ড বানাতে গিয়ে শাসক দল তৃণমূল যে বিজেপিকে খাল কেটে নিয়ে এসেছে, তা এখন প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করেন। কিন্তু এটাই কেবল একমাত্র কারণ নয়। খুব সন্তর্পণে পশ্চিমবঙ্গের জনমানসে বিভেদের রাজনীতির বিজ রোপণ করে দিতে পেরেছে বিজেপি। কী ভাবে?
বিজেপিকে চিনে নিন
ভারতে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি৷ বর্তমানে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সর্বাধিক প্রতিনিধিত্ব রাখা দলটি সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের বৃহত্তম৷ ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী অবস্থানের বিজেপির গল্প এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
আদর্শগত উৎস
বিজেপিকে চিনতে হলে ‘সংঘ পরিবার’-এর অন্তর্গত হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির উৎস আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে জানা দরকার৷ বিশ্বের বৃহত্তম এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মারাঠি চিকিৎসক কেশব হেডগেওয়ার৷ ১৯২৫ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি৷ ভি ডি সাভারকরের ‘হিন্দুত্ব’ চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু রাষ্ট্র নির্মাণই আরএসএস-এর প্রধান উদ্দেশ্য৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে দূরত্ব
কংগ্রেসের নেতৃত্বে চলা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে দূরে ছিল আরএসএস৷ ১৯৪০-এর দশকে সংগঠনের নেতা হিসেবে এম এস গোলওয়ালকর হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে ব্রিটিশ বিরোধিতার বদলে ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষার ডাক দেন৷ উল্লেখ্য, পরবর্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় সত্যাগ্রহীদের সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷ লিখিত মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাড়া পান তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M.Desfor
দেশভাগ ও আরএসএস
দেশভাগের সময় আরএসএস পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুদের সাহায্য করে৷ আরএসএস ও বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কর্মীরা মনে করেন, দেশভাগ মুসলিমদের প্রতি নরম আচরণের ফল৷ এজন্য গান্ধী ও নেহরুকে বিশেষভাবে দায়ী মনে করেন তাঁরা৷ স্বাধীনতার পর কংগ্রেসকে ঠেকাতে ১৯৫১ সালে জনসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়৷ সেই জনসংঘই আসলে বিজেপির উৎস৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
জরুরি অবস্থা ও জনতা পার্টির জন্ম
১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন৷ বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে জনসংঘের অসংখ্য সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থা শেষে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন৷ কংগ্রেসকে হারাতে অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে যায় জনসংঘ, জন্ম নেয় জনতা পার্টি৷ নির্বাচনে জিতেও যায় জনতা পার্টি৷ প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই৷ স্বাধীন ভারতে সূচিত হয় হিন্দুত্ববাদীদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ জয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিজেপির জন্ম
১৯৮০’র পর দল ও আরএসএসের দ্বৈত সদস্য হবার বিধান না থাকায় জন্ম নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি৷ নতুন দলে নতুন সদস্য যোগ দিলেও, গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিল পুরোনোদের দাপট৷ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন বাজপেয়ী৷ মূলত, ইন্দিরা হত্যার পর ভোটে খারাপ করার কারণেই নেতৃত্বে এই পরিবর্তন৷ তবে বিজেপির উত্থান শুরু ১৯৮৪ সালে৷ সে বছর দলের সভাপতি হন লালকৃষ্ণ আডবানি৷ রাম জন্মভূমির দাবিকে ঘিরে তাঁর নেতৃত্বেই শক্তিশালী হতে থাকে বিজেপি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Raveendran
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও বাবরি মসজিদ
নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই বিজেপি সরাসরি ধর্মের রাজনীতিতে নামে৷ বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গঠনের দাবিতে সারা দেশ থেকে অযোধ্যার পথে রওয়ানা দেয় হাজার হাজার ‘করসেবক’৷ পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ফলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে উত্তেজিত জনতা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হন দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
সরকার গঠন ও জোটের রাজনীতি
সাম্প্রদায়িক আবেগকে হাতিয়ার করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ১৬১টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷ প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেন অটলবিহারী বাজপেয়ী৷ কিন্তু ১৩ দিন পর, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার গঠন করতে পারেনি বিজেপি৷ ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক দলগুলির একটি জোট সরকার গঠন করে৷ কিন্তু সেই সরকারের স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি৷ ১৯৯৮ সালে আবার নির্বাচন হয়৷
ছবি: UNI
প্রথম এনডিএ সরকার
নির্বাচনে জিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার গড়ে৷ জোটে অংশগ্রহণ করে সমতা পার্টি, অকালী দল, শিব সেনা, নিখিল ভারত আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (এআইএআইডিএমকে), বিজু জনতা দল ও শিব সেনা৷ ১৯৯৯ সালে তাঁরা সংসদে ৩০৩টি আসন জিতলে বাজপেয়ী তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন৷ পাঁচ বছরের পূর্ণমেয়াদী এই জোট সরকার প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসের মোকাবিলার পাশাপাশি নব্য-উদার অর্থনীতির ওপর জোর দেয়৷
ছবি: Imago/photothek/T. Koehler
দুর্নীতি ও দাঙ্গায় কোণঠাসা বিজেপি
বিজেপির জয়রথে প্রথম ‘বাধা’ গোধরা দাঙ্গা৷ তীর্থযাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগাকে ঘিরে প্রায় ২০০০ মানুষ মারা যান৷ তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতার নাম এই দাঙ্গার সাথে জড়ায়৷ বিজেপি-প্রধান বঙ্গারু লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ সব মিলিয়ে বিপন্ন বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট ২০০৪ সালে নতুন সরকার গড়ে৷ প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং৷
ছবি: AP
নেতৃত্বে কে? মোদী, না আডবাণী?
২০১৪’র লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে বিজেপি৷ অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দলের নেতৃত্বের দায়ভার বর্ষীয়ান নেতা এল কে আডবানির ওপর বর্তানোর কথা উঠলেও, বাস্তবে তা হয়নি৷
ছবি: AP
মোদীর উত্থান
বিজেপির ইতিহাসে ব্যক্তিকেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচার মোদীর ক্ষেত্রেই প্রথম৷ পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে মোদীর ‘গুজরাট মডেল’-কে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয় প্রচারে৷ সুবক্তা মোদী শীঘ্রই হয়ে ওঠেন তরুণ প্রজন্ম থেকে সংবাদমাধ্যম, সকলের প্রিয়পাত্র৷ নির্বাচনের আগে বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেলেও, মোদীর প্রাক-নির্বাচন বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’৷
ছবি: picture alliance/AA/M. Aktas
মোদী থেকে ‘মোদীজি’
২০১৪ সালে বিজেপি ২৮২টি আসন জিতে ক্ষমতায় আসে৷ ভোটারদের কংগ্রেসের প্রতি অনাস্থার পাশাপাশি বিজেপির সাফল্যের আরেকটি কারণ ছিল আরএসএসের নিঃশর্ত সমর্থন৷ নরেন্দ্র মোদীই হন প্রধানমন্ত্রী৷ পিউ গবেষণা কেন্দ্রের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রথম বছরের তুলনায় বর্তমানে মোদীর জনপ্রিয়তা আরো বেড়েছে, যা ২০১৯-র নির্বাচনে কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলির জন্যও নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়৷
ছবি: Reuters
12 ছবি1 | 12
২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের প্রায় সবক'টি জনসভা সাংবাদিক হিসেবে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা কী ভাবে সাম্প্রদায়িক সুর চড়িয়েছিলেন, তা বিলক্ষণ মনে আছে। প্রায় প্রতিটি সভায় এনারসি আর সিএএ-এর প্রসঙ্গ টেনে এনে মুসলিম বিদ্বেষ প্রকট করার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের বক্তব্য খড়ের গাদায় জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি ফেলার মতো। এবং সেটাই ঘটেছিল। বড় আকারে না হলেও দিকে দিকে ছোট ছোট সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা একাধিক ঘটেছে। এবং এখনও ঘটছে। শুধু তাই নয়, গেরুয়া বাহিনীর আইটি সেল লাগাতার সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক পোস্ট করে গিয়েছে।
গেরুয়া বাহিনী শব্দটি একটু ব্যাখ্যা করে দেওয়া ভালো। আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের অনেকগুলি সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন আছে। বিজেপি যেমন তাদের রাজনৈতিক সংগঠন তেমনই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল তাদের সামাজিক সংগঠন। একত্রে এই সমস্ত সংগঠনকে গেরুয়া বাহিনী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রতিটি সংগঠনেরই নিজস্ব আইটি সেল রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অত্যন্ত অ্যাক্টিভ। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট থেকে দক্ষিণবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তের বসিরহাট দেগঙ্গায় ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে একবার দিল্লির দিকে তাকানো যাক। মাস কয়েক আগে দিল্লিতে নির্বাচন হয়েছে। বহরে দিল্লির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনো তুলনাই চলে না। দিল্লি ছোট একটি জায়গা। এখানকার নির্বাচনের বিস্তারও কম। পশ্চিমবঙ্গ একটি বড় রাজ্য। সেখানে রাজনীতির বিস্তার অনেক বেশি। কিন্তু সাধারণ দিল্লি নির্বাচনেও সিএএ এবং এনআরসিকে সামনে রেখে, প্রতিবাদীদের সামনে রেখে বিজেপি কী ধরনের প্রচার চালিয়েছিল, তা এখনো অনেকের মনেই টাটকা। শাহিনবাগের আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তীব্র ভাষায় আক্রমণ চালিয়েছিলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 'গোলি মারো শালো কো' স্লোগান এখনও ইতিহাস হয়ে যায়নি। বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল, দিল্লিতে বিভেদের আবহ তৈরি করতে। দিল্লি দাঙ্গার রেশ এখনো কাটেনি।
ভারতে যত ‘গরু-বাণী’
গত কয়েক বছরে ভারতে গরু নিয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উক্তি, দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AP
অক্সিজেন শুধু গরুর
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত জুলাই মাসের একটি জনসভায় গরু নিয়ে করেন বিস্ফোরক মন্তব্য৷ তিনি বলেন, ‘‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে গরুই একমাত্র প্রাণী যে একাধারে অক্সিজেন নিশ্বাসের সাথে বাতাস থেকে গ্রহণ করে ও শ্বাস ছাড়ার সাথে তা পরিত্যাগও করে৷ এই কারণেই গরুকে আমরা মায়ের সম্মান দিই৷’’ একই সভায় তিনি বলেন যে ভারতের গির অঞ্চলের গরুর দুধে নাকি রয়েছে সোনা!
ছবি: AP
ক্যান্সাররোধে গরু
ভোপাল কেন্দ্র থেকে লোকসভায় গেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা৷ নির্বাচনের আগে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে গোমূত্র পান করে নাকি ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন তিনি৷ পরে যদিও ড. এস এস রাজপুত, যিনি প্রজ্ঞার একটি অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন, জানান যে প্রজ্ঞার ক্যান্সার রয়েছে এমন কোনো তথ্যউপাত্ত তাঁর মেডিকাল রিপোর্টে পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Imago Imaged/Hindustan Times
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও গরু
একই সাক্ষাৎকারে প্রজ্ঞা গরু নিয়ে একটি মন্তব্যেই থামেননি৷ গরুর গায়ের চামড়ায় হাত বোলালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় রক্তচাপ, বলে তাঁর বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, ‘‘গরুর পিঠ থেকে ঘাড়ের দিকে হাত বোলালে যিনি হাত বোলাচ্ছেন, তার রক্তচাপ কমে আসবে৷ এই চিকিৎসা অমৃতের সমান৷’’
ছবি: IANS
শ্রীকৃষ্ণ ও গরুর দুধ
সম্প্রতি আসামের শিলচরের বিধায়ক ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিক দিলীপ পাল বলেন, ‘‘ঠিক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঢঙে একটি গরুর সামনে বাঁশি বাজালে গরুর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত হয়৷’’
ছবি: DW/S.Mishra
গোমূত্রের যত সুফল
ভারতে বর্তমান রাজনীতি ও অর্থনীতিতে গোমূত্রের বিশাল গুরুত্ব৷ বাবা রামদেবের ‘পতঞ্জলি’ সংস্থা গত কয়েক বছরে গোমূত্র ও গোমূত্রজনিত নানা পণ্য থেকে বিরাট ব্যবসা করেছে৷ রাজীব দিক্ষিত নামে এক ইউটিউব ব্যক্তিত্ব রামদেবের গোমূত্রপণ্যের ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি রাখতে গিয়ে বলেন যে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার, আলসার, দৃষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত মেদ, গ্লুকোমাসহ একাধিক শারীরিক অসুবিধার সমাধান নিয়মিত গোমূত্র পান৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
গরুর জন্য মন্ত্রণালয়
ভারতই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে রয়েছে গরুর পৃথক মন্ত্রণালয়৷ ২০১৪ সালে সরকার গঠন করে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ ভারতের বৃহত্তম রাজ্য রাজস্থানেও ক্ষমতায় তারাই৷ সেই রাজ্যেই গঠিত হয় প্রথম ‘গরু সংরক্ষণ মন্ত্রণালয়’৷ পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় ‘আয়ুষ’ (আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ও সিদ্ধ চিকিৎসা গবেষণার মন্ত্রণালয়) সম্প্রতি ৫৮০ কোটি রুপি ব্যয় করেছে গোশালা নির্মাণখাতে৷
ছবি: DW/S.Mishra
6 ছবি1 | 6
দিল্লির প্রচারের কায়দায় যদি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রচার শুরু করে, তা হলে কী ঘটতে পারে, তার আঁচ এর আগেই পাওয়া গিয়েছে। মনে রাখা দরকার, পশ্চিমঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট ৩৩ শতাংশ। মুসলিম ভোট ২৮ দশমিক ছয় শতাংশ। সেখানে সামান্য আগুন মারাত্মক হতে পারে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেরুকরণের সেই ভয়াবহতা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে। ২০২১ সালেও যদি সেই রাজনীতি চলতে থাকে, তা হলে মেরুকরণ আরও ভয়াবহ চেহারা নেবে।
নিচ্ছে। ঠিক সেটাই ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে। খুনোখুনি শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ বিশেষ এলাকা থেকে সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর মিলছে। সব চেয়ে বড় কথা, গোটা রাজ্য জুড়ে এক ধরনের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
এক সময় ঠিক এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বিশেষ কিছু করে উঠতে পারতো না। বলা হতো, হিন্দি বলয়ের রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গে চলে না। দীর্ঘ বাম এবং কংগ্রেস ঐতিহ্যই পশ্চিমবঙ্গকে বিভেদের রাজনীতি থেকে খানিক আড়াল করে রেখেছিল। তৃণমূল সেই আড়াল তুলে দিয়েছে। বিজেপিও তার সম্পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে। শুধু একটি কথাই এ ক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। নগর পুড়লে দেবালয়ও রক্ষা পায় না। বিজেপি যে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে, তা একবার লেগে গেলে বিজেপিও কিন্তু তা সামলাতে পারবে না। জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাবে সব। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা সে কথা মনে রেখেছেন কি?
পুনশ্চ: পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একটি অংশ দলভাঙা তৃণমূল। একসময় বিজেপি যাদের গালিগালাজ করতো, এখন তাঁরাই বিজেপির বড় বড় নেতা। বিভেদের রাজনীতি কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তাঁরা কিন্তু জানেন। আকাশে মেঘ দেখলে মাঝি নৌকো ডাঙায় তোলেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আসমানে সেই মেঘ স্পষ্ট।