ফাইভ জি প্রযুক্তি নিয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় এয়ারলাইনগুলো। সংস্থাগুলো মনে করছে, বিমানবন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় টেলিকম সংস্থাগুলি ফাইভ জি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ না করলে বিমান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
ছবি: Brian Cassella/Chicago Tribune/TNS/ABACA/picture alliance
উড়ান সংস্থার আর্জি, দেশের সর্বত্র ফাইভ জি চালু হোক। তাতে সমস্যা নেই। শুধু বিমানবন্দরের দুই মাইলের আশপাশে যেন ফাইভ জি চালু না হয়।
পরিবহণ সচিব পিট বুটিজিজ-সহ একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে বিমান সংস্থার সিইও জানিয়েছেন, ফাইভ জি চালু হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে। শুধু তাই নয়, উড়ানের যন্ত্রাংশের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন না করে এই প্রযুক্তি আরোপ করলে সমস্যা আরও জটিল হবে।
ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেটর জানিয়েছে, ৮৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে ৪৮টির ক্ষেত্রে ফাইভ জির প্রভাব পড়বে। এয়ারলাইনগুলোর আশঙ্কা, যন্ত্রাংশের সমস্যায় বেশ কয়েকটি বিমানের চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বার্ষিক ১৫ হাজার বিমান চলাচলে সমস্যা হলে ১২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রীর উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ফাইভ জির নয়া নিয়ম কার্যকর হলে হিউস্টন, লস অ্যাঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, শিকাগোর মতো শহরের ক্ষেত্রে বিমান চলাচলে প্রভাব পড়তে বাধ্য, জানিয়েছে এয়ারলাইনগুলো।
ফাইভ-জি দিয়ে যা করা যাবে
পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা ফাইভ-জি, যা আমূল পালটে দেবে মানুষের প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা৷ ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের ফোর-জির তুলনায় হবে ১০০ গুণ বেশি৷ সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়েছে ফাইভ-জি সুবিধার ফোন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
ফাইভ-জি কি?
মোবাইল প্রযুক্তিতে বিবর্তনের ধারাবাহিকতার সর্বশেষ পর্যায় ফাইভ-জি৷ পঞ্চম প্রজন্মের এই নেটওয়ার্কের গতি হবে ঈর্ষণীয়৷ ইন্টারনেট সংযোগের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি এটা অন্যান্য ডিভাইসকেও মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে৷ এই প্রযুক্তি নিয়ে উল্লসিত মোবাইল কোম্পানিগুলো নানা রকমের উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/R. Marchante
ফাইভ-জির পরিক্রমা
আশির দশকে প্রথম আসে ওয়ান-জি মোবাইল, যাতে শুধু কথা বলা যেত৷ এরপর কথা বলার সঙ্গে এসএমএস আদানপ্রদান সুবিধা নিয়ে আসে টু-জি৷ ২০০৩ সালে আসে থ্রি-জি, যার মাধ্যমে মুঠোফোনে যুক্ত হয় ইন্টারনেট৷ এরপর ২০০৮ সালে ফোর-জির কারণে উচ্চগতি পায় মোবাইল ইন্টারনেট৷ ফাইভ-জি অতি উচ্চগতির পাশাপাশি হ্যান্ডসেট ছাড়া অন্যান্য ডিভাইসকেও সমানতালে সংযুক্ত করতে পারবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warnecke
এক মিনিটের কম সময়ে নামবে সিনেমা!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাইভ-জির কারণে ইন্টারনেটের গতি বর্তমানের তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি বেড়ে যাবে৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে!
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zhihao
স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির প্রয়োজনে
২০৩৪ সালের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়ির বাজার দাঁড়াবে ৫৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে৷ ফাইভ-জিকে এই খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে ধরা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকবিহীন গাড়ির পাশাপাশি অন্য গাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ, সরাসরি ম্যাপ এবং যানবাহন চলাচলের তথ্য পাওয়া যাবে এতে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ামক
দেশ-বিদেশ ঘুরে রোবট সোফিয়া যখন সবার সঙ্গে আলাপ করে তখন কে-না আনন্দ পায়৷ বর্তমানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে বড় রকমের জায়গা দখল করে নিচ্ছে সোফিয়ার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট আর এআই প্রযুক্তি৷ ফাইভ-জি থেকে আসা বিপুল পরিমাণের ডেটা এআই প্রযুক্তির এমন কাজকে অনেক দূর এগিয়ে দেবে৷
ছবি: DW/K. Ferguson
রোবটিক্স কমিউনিকেশন
শিল্প কল-কারখানা আর দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে রোবটকে ব্যবহার বাড়ছে সারাবিশ্ব৷ ফাইভ-জিতে ইন্টারনেটের গতি বাড়লে রোবটের মধ্যে যোগাযোগের পরিধি বেড়ে যাবে অনেক৷ শিল্প উৎপাদনের ধারাও আমূল পালটে যাবে এর মাধ্যমে৷
ছবি: picture alliance/Imaginechina/R. Xi
বদলে যাবে ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা
ভিডিও, মিউজিক স্ট্রিমিংসহ বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমের জনপ্রিয়তার কারণে সারাবিশ্বে ডেটা ব্যবহারের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত৷ কিন্তু বর্তমানে স্পেকট্রাম বা তরঙ্গ ব্যবহারের বিদ্যমান সক্ষমতার কারণে এ সেবায় ছেদ পড়ে নানা সময়৷ এর বিপরীতে ফাইভ-জিতে হাজার হাজার ডিভাইস সমানতালে চালানোর সক্ষমতা থাকবে৷ ফলে মোবাইল থেকে শুরু করে ইকুইপমেন্ট সেন্সর, ভিডিও ক্যামেরা থেকে স্মার্ট স্ট্রিট লাইট সবকিছুর অভিজ্ঞতা পালটে যাবে৷