মহাকাশে ‘হাবল' টেলিস্কোপের কথা আমরা অনেকেই জানি৷ কিন্তু বিমানের মধ্যে টেলিস্কোপ? ‘সোফিয়া' নামের এক ভাসমান মানমন্দির ঠিক সেই কাজটাই করে চলেছে৷ তবে এমন বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ বিশাল এক চ্যালেঞ্জ৷
বিজ্ঞাপন
দেখলে সাধারণ বিমান মনে হলেও এটি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাসমান মানমন্দির৷ নাম ‘সোফিয়া'৷ সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা রাতের আকাশে উত্তাপের বিকিরণ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ বিমানে একটি বিশাল ইনফ্রারেড টেলিস্কোপও রয়েছে৷ সেটা কাজে লাগিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দূরের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করতে পারেন৷ বায়ুমণ্ডলে ১৪ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে সোফিয়া৷ নীচের স্তরে বাষ্প ইনফ্রারেড আলো গিলে ফেলে৷ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছালে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়৷
ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের মহাজাগতিক ধুলার মেঘে উঁকি মারতে দেয়৷ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে নক্ষত্রের জন্মও পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তাঁরা৷ হামবুর্গ শহরে লুফৎহানসা বিমান সংস্থার প্রকৌশল কেন্দ্রে সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণ চলছে৷ বোয়িং ৭৪৭এসপি বিমানটির বয়স প্রায় ৩৭ বছর৷ বিশাল উচ্চতায় উড়তে পারে সেটি৷ বিশেষজ্ঞদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ বিশেষ করে ১৭ টন ওজনের টেলিস্কোপটির কারণে বিমানটিকে ‘জ্যাক আপ' করা, অর্থাৎ তুলে ধরা সত্যি অ্যাডভেঞ্চারের মতো৷ লুফৎহানসা টেশনিক-এর আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘আমরা জানতাম, সমস্যা হবে৷ তবে যাবতীয় তথ্য ও হিসেব অনুযায়ী সব কিছু সীমার মধ্যেই ছিল৷ তবে বিমানটি ওজন করে বুঝতে পারলাম, যেভাবে সাধারণত কাজ করি, এক্ষেত্রে সেটা করা সম্ভব হবে না৷''
শুভ জন্মদিন, হাবল!
পঁচিশ বছর ধরে মহাশূন্য থেকে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখ দিয়ে দেখে অসাধারণ সব ছবি তোলা হচ্ছে৷ হাবল টেলিস্কোপের পঁচিশ বছর পূর্তিতে হাবল নিয়ে আজকের ছবিঘর৷
ছবি: PD/NASA/J. Schmidt
মহাশূন্যে চোখ...
১৯৯০ সাল থেকে পৃথিবীকে ঘিরে ১৭ হাজার মাইল বেগে ঘুরছে হাবল টেলিস্কোপ৷ হাবল টেলিস্কোপ আয়তন এবং ওজনে একটা স্কুলবাসের মতো৷ ১১ মিটার দৈর্ঘ্যের টেলিস্কোপটির ওজন ১১ টন৷
ছবি: NASA/Getty Images
ভাসমান রং
হাবল টেলিস্কোপের চোখ কত রং খুঁজে নেয় দেখুন৷ এগুলো আসলে ভাসমান গ্যাস৷ লাল রংয়ের সালফার, সবুজ রংয়ের হাইড্রোজেন এবং নীল রংয়ের অক্সিজেন ভেসে ভেসে অভূতপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা করেছে, তাইনা?
হাবলের প্রথম ছবিটা ছিল হতাশাজনক৷ টেলিস্কোপে ভুল আয়না ব্যবহারের কারণে ফল খারাপ হয়েছিল৷ ১৯৯৩ সালে মহাকাশযান এন্ডেভারে আয়না বদলানোর জন্য বিশেষজ্ঞদের পাঠানো হয়৷ দুটো নতুন কাচ লাগানোর পর শুরু হয় অসাধারণ সব ছবি তোলা৷ এ পর্যন্ত পাঁচবার হাবল টেলিস্কোপ ঠিক করতে হয়েছে৷ সর্বশেষবার ঠিক করা হয়েছে ২০০৯ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
স্পেস কিন্ডারগার্টেন
এই ছবিটি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের৷ নীল রংয়ের বিন্দুগুলো হলো সবচেয়ে কম বয়সি তারা৷ তাদের বয়সও কমপক্ষে কয়েক মিলিয়ন বছর৷ ম্যাগেল্যানিক মেঘের আড়ালে পাওয়া যায় শিশু তারাদের এমন কিন্ডারগার্টেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Nasa
প্রজাপতি?
ছবিটি দেখে কী মনে হয়? প্রজাপতির মতো লাগছেনা? হাবল টেলিস্কোপ কোথায়, কিসে এমন রংয়ের খেলা দেখেছে কে জানে! গত ২৫ বছরে ৩০ হাজারেরও বেশি তাক লাগানো ছবি পাঠিয়েছে হাবল৷
ছবি: NASA/ESA/ Hubble Heritage Team
এডউইন পাওয়েল হাবল (১৮৮৯-১৯৫৩)
টেলিস্কোপটির নাম রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী এডউইন পাওয়েল হাবল-এর নামে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্পেস স্মাইলি
হাবলের নবতম সৃষ্টি এই স্পেস স্মাইলি৷ এটা দিয়েই হাবল টেলিস্কোপকে হাসিমুখে শুভ জন্মদিন বলা যাক!
ছবি: PD/NASA/J. Schmidt
7 ছবি1 | 7
সাধারণত ইঞ্জিনিয়াররা তিনটি জায়গায় বিমান ‘জ্যাক আপ', অর্থাৎ তুলে ধরতে পারেন৷ কিন্তু পেছনের দিকে টেলিস্কোপ থাকায় সোফিয়া প্রায় উলটে যাচ্ছিল৷ ওজন পাঁচটি হাইড্রলিক লিফটারের উপর ভাগ করে দিতে হয়েছিল৷ আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘প্রথমে বেশ উত্তেজনা হচ্ছিল৷ কারণ অঙ্ক কষে যা বার করা হয়েছিল, তা সত্যি কাজ করবে কিনা, তা জানা ছিল না৷ তারপর বিমানটি যখন উপরের দিকে উঠতে লাগলো, এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজনের কোনো সতর্কতা-সংকেত এলো না, তখন সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল৷ তারপর সব কিছু বেশ দ্রুত হয়ে গেল৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিমানটাকে তোলা গেল৷''
মেনটেনেন্স ইনস্পেকশন শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগে৷ প্রকৌশলিরা ফাটল, ক্ষয়ের চিহ্ন ও ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি খোঁজেন৷ কাজটা সহজ নয়, কারণ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এই পুরানো বিমানটিকে হাই-টেক সজ্জায় সজ্জিত করেছিল৷ তাই প্রায় কিছুই আর প্রাথমিক অবস্থায় নেই৷ আন্দ্রেয়াস ব্রিৎস বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে এত রকম রদবদল করা হয়েছে যে, তার ১১,০০০-এরও বেশি নকশা রয়েছে৷ নাসা এখনো সেগুলি ক্যাটালগ করতে পারেনি৷ তাই প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিজেদেরই খুঁজে নিতে হয়৷''
টেলিস্কোপের রক্ষণাবেক্ষণ করাও সহজ কাজ নয়৷ কারণ সেটি বিমানের স্থায়ী অংশ হিসেবেই বসানো হয়েছিল৷ তাই ‘অন দ্য স্পট' রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া উপায় নেই৷ জার্মান সোফিয়া ইনস্টিটিউটের ড. টোমাস কাইলিশ বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ এখানেই হচ্ছে বলে আমাদের সেন্সর-গুলিকেও নতুন করে প্রস্তুত করতে হচ্ছে৷
তার গোটা সারফেস জুড়ে আমরা বেশ কয়েকটি সেন্সর লাগিয়েছি৷ বিমান ওড়ার সময় সেটিকে নিখুঁতভাবে মাঝখানে রাখতে হয়৷''
মহাকাশে প্রথম মানুষ থেকে প্রথম ফুল
মহাকাশে মানুষের যাওয়া একটা সময় অকল্পনীয়ই ছিল৷ কুকুর পাঠিয়ে স্বপ্নযাত্রার সোপান তৈরি হলো৷ প্রথম মানুষ হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন গেলেন৷ তারপর প্রথম নারী, প্রথম ফুল হয়ে এবার শুরু হলো মহাকাশে প্রথম টমেটো দেখার অপেক্ষা৷
ছবি: Colourbox/M. Bell
সবার আগে ফলের মাছি
মহাকাশে প্রথম প্রাণী ফলের মাছি৷ হ্যাঁ, ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিকিরণের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ভি-টু রকেটে মানুষ না পাঠিয়ে এক ধরণের মাছিই পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ দু’বছর পর শুরু হয় বানর পাঠানো৷ ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে ইঁদুর এবং কুকুরও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন, অর্থাৎ আজকের রাশিয়াও মহাকাশে পরীক্ষামূলকভাবে প্রাণী পাঠিয়েছে বেশ কয়েকবার৷ তবে ১৯৫১ সালে প্রথম তাদের পাঠানো দু’টি কুকুর মহাকাশ থেকে জীবিত ফেরে৷ তবে কোনো প্রাণীই মহাকাশে গিয়ে অরবিট প্রদক্ষিণ করেনি৷ ১৯৫৭ সালে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নেরই আরেক কুকুর লাইকা৷ লাইকা অরবিট থেকে ফেরায় মানুষেরও মহাকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন জাগে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন
মহাকাশ ঘুরে আসা প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন৷ ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভস্টক নভোযানে চড়ে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে আসেন তিনি৷ ছবিতে স্ত্রী এবং সন্তানের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তে ইউরি গ্যাগারিন৷
ছবি: AFP/Getty Images
মহাকাশে প্রথম নারী
মহাকাশে প্রথম নারী পাঠাতেও দেরি করেনি সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ ১৯৬১ সালেই ৪০০ আবেদন থেকে বেছে নেয়া হয় ভ্যালেন্টিনা টেরেশকোভাকে৷ ভস্টক চালিয়ে মহাকাশে গিয়ে ভেলেন্টিনা টেরেশকোভা সুস্থ, স্বাভাবিক অবস্থাতেই ফিরেছিলেন নিজের দেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম ফুল
কয়েকদিন আগেই পাওয়া গেছে মজার এক খবর৷ মহাকাশে এবার ফুল ফুটেছে৷ জিনিয়া ফুল৷ মহাকাশে মাটিই নেই৷ তারপরও সেখানে ফুল ফোটানো কিন্তু মহাবিস্ময়েরই ব্যাপার৷ নাসার নভোচারীরা এবার তা-ও সম্ভব করেছেন৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর নভোচারী স্কট কেলি টুইটারে একটি জিনিয়া ফুলের ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, এটা মহাকাশে প্রথম ফোটা ফুল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NASA
তারপর টমেটো?
নভোচারীরা ধীরে ধীরে মহাকাশে খাদ্যশস্য ফলানোর দিকে এগিয়ে যেতে চান৷ সেই লক্ষ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই আসলে জিনিয়া ফোটানো৷ ইতিমধ্যে খুব ছোট আঙ্গিকে লেটুস চাষের চেষ্টা শুরু হয়েছে৷ খুব শিগগির নাকি তাজা টমেটোও দেখা যাবে মহাকাশে!
ছবি: Colourbox/M. Bell
6 ছবি1 | 6
বিমান ওড়ার সময় ছবি যাতে অস্পষ্ট না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে টেলিস্কোপটি এয়ার কুশনের উপর বসানো থাকে৷ পূর্বনির্ধারিত যাত্রাপথ থেকে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলে ফলাফল ভুল হতে পারে৷ উদ্দেশ্য হলো, টেলিস্কোপকে বহু কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোনো অতি ক্ষুদ্র বিন্দুর প্রতি মনোযোগ দিতে শেখানো৷ এভাবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব৷