যুক্তরাষ্ট্রের ‘হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ'-এর ‘কর্ম পরিবেশে নিরাপত্তা এবং সুস্থ পরিবেশ' বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ অ্যালেন এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন৷ ৩ হাজার ৫০০ পাইলটকে তাঁদের কাজের পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল৷ তাঁদের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে পেরেছিল অংশগ্রহণকারীদের মাত্র অর্ধেকভাগ৷
পাইলটদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার দাবি
জার্মানির জার্মানউইংস বিমান দুর্ঘটনার চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসি তদন্তকারীরা৷ তাঁরা বিশ্বাস করেন, বিমানটির সহ-পাইলট আন্দ্রেস ল্যুবিৎস জোর করে বিমানটি ফরাসি আল্পসে বিধ্বস্ত করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Deutsche Lufthansa
মানসিকভাবে অসুস্থ পাইলটদের সম্পর্কে জানাতে হবে
বিমান চলাচল তদন্তকারী এজেন্সি বিইএ মনে করে, নতুন একটি ‘গাইডলাইন’ দরকার যাতে একজন পাইলট বা বৈমানিকের মানসিক সুস্থতা ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায়৷ আর চিকিৎসকদের উচিত হবে, পাইলটের কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা ধরা পড়লে তা সংশ্লিষ্ট বিমান কোম্পানিকে জানানো, ফরাসি তদন্তকারীদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ সব তথ্য৷ তবে সকল পাইলটের নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পক্ষে নন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/French Interior Ministry/Handout
লুবিৎসের মনোরোগের লক্ষণ ছিল
ফ্রান্সে জার্মানির বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত দল জানিয়েছে, জার্মানউইংসের কো-পাইলট আন্দ্রেস ল্যুবিৎসের মানসিক সমস্যা ছিল৷ এমনকি দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে চিকিৎসক তাঁকে মানসিক ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন৷ এমনকি দুর্ঘটনার সময়ও দু’টি বিষন্নতা প্রতিরোধক ওষুধ নিচ্ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Foto-Team-Müller
পাইলটের নিরাপত্তা নাকি যাত্রীর সুরক্ষা?
ফরাসি তদন্ত দলের প্রধান আর্নো দেজার্দাঁ রবিবার বলেন, পাইলটের যোগ্যতা যাচাইয়ের পরীক্ষায় ল্যুবিৎসের মারাত্মক বিষন্নতা, যা একটি মানসিক রোগ, সনাক্তে ব্যর্থ হয়েছে৷ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জার্মানির গোপনীয়তা আইন অত্যন্ত কঠিন৷ কিন্তু জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যক্তির গোপনীয়তা কতটা লঙ্ঘণ করা যাবে, সে সম্পর্কে পরিষ্কার নীতিমালা দরকার৷
ছবি: picture alliance/dpa/I. Langsdon
দশ মিনিট ধরে নীচের দিকে নামানো হয়েছে বিমানটি
জার্মানউইংসের ৯৫২৫ উড়ালটি ২০১৫ সালের ২৪ মার্চ বার্সেলোনা থেকে ডুসেলডর্ফে আসার সময় ফরাসি আল্পসে বিধ্বস্ত হয়৷ সেটিতে ১৪৪ জন যাত্রী এবং ছ’জন ক্রু ছিলেন, যাঁদের অধিকাংশই জার্মান এবং স্প্যানীয় নাগরিক৷ দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফরাসি তদন্ত দল জানান, বিমানটির কো-পাইলট সম্ভবত ইচ্ছা করে বিমানটি অনেক নীচে নামিয়ে এনে দুর্ঘটনা ঘটান৷
প্রচণ্ড গতিতে হত্যা-আত্মহত্যা
সেদিন সকাল ১০:৩১ মিনিটে ফ্লাইট ৯৫২৫ ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ মিটার উঁচুতে তার স্বাভাবিক চলার পথ থেকে নীচের দিকে নামতে শুরু করে৷ সেসময় ফরাসি এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকরা বিমানের পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন৷ পরবর্তীতে, বিমানে ব্ল্যাক বক্স থেকে জানা যায়, মূল পাইলট ককপিটে ফেরার চেষ্টা করলেও, কো-পাইলট ল্যুবিৎস দরজা আটকে দেন৷ সেসময় তিনি বেশ স্বাভাবিক ছিলেন৷
ছবি: Reuters/Gonzalo Fuentes
নতুন কোনো ককপিট নিয়মের কথা নেই
ফরাসি প্রতিবেদনে, ককপিটের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন কোনো নিয়মের কথা বলা হয়নি৷ তবে সেই দুর্ঘটনার পরপরই ককপিটে সবসময় দু’জনকে রাখার নিয়ম চালু করেছে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা৷ উল্লেখ্য, ৯/১১ এর পর বিমানে ককপিটের দরজা অত্যন্ত মজবুত করা হয়েছে, যাতে করে বিমান ছিনতাই করা না যায়৷
ছবি: Reuters/L. Foeger
পরিবার চায়, শিক্ষা নেয়া হোক
বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, ল্যুবিৎসের মানসিক রোগের কথা একটি মার্কিন ফ্লাইট ট্রেনিং স্কুল এবং তাকে নিয়োগদাতা বিমান কোম্পানি শনাক্তে ব্যর্থ হয়েছে৷ অথচ ২০০৯ সালে যখন তিনি ট্রেনিং নিচ্ছিলেন, তখনও মারাত্মক মানসিক রোগে ভুগছিলেন৷ ফরাসি তদন্ত প্রতিবেদন সবার জন্য প্রকাশের একদিন আগে, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বার্সেলোনা এবং বনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Fernandez
নিহতদের দেহাবশেষ ঘরে আনা হয়েছে
জার্মানির ১৬ কিশোর-কিশোরী এবং দুই শিক্ষকের, যারা স্কুল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে দুর্ঘটনায় পতিত বিমানটিতে ফিরছিলেন, দেহাবশেষ দুর্ঘটনার দুই মাস পর জার্মানিতে ফিরিয়ে আনা হয়৷ তাদের এভাবেই শবযানে শেষ গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়৷
ছবি: Reuters/I. Fassbender
জার্মানউইংসের নতুন রূপ
গত বছরের দুর্ঘটনার পর জার্মানউইংস ব্রান্ডের নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে ইউরোউইংস৷ এদিকে, স্বল্পবাজেটের বিমান সংস্থাটির মূল কোম্পানি লুফৎহানসা ফরাসি তদন্তদলের বিভিন্ন পরামর্শকে স্বাগত জানিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Deutsche Lufthansa
9 ছবি1 | 9
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের পর চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা দেখেন, প্রতিযোগীদের ১২.৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ রয়েছে৷ তাই পাইলটরা যে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন, তা বলাই যায়৷ এদের মধ্যে ৪ শতাংশ গবেষণার সময় জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে তাঁরা কয়েকবার আত্মঘাতী হওয়ার কথা ভেবেছিলেন৷
তবে যেসব পাইলটদের জীবনে যৌন বা মৌখিক নির্যাতন বা হয়রানির ঘটনা ঘটেছে তাঁদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি৷ গবেষণায় যেটা লক্ষ্যণীয় তা হলো পাইলটরা তাঁদের মানসিক অবস্থা নিয়ে কখনোই কথা বলেন না৷ ‘এনভার্নমেন্টাল হেল্থ' জার্নালে ১৫ ডিসেম্বর গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়৷
কাজের চাপ থেকে মানসিক সমস্যা
জার্মানির পাইলট ট্রেড ইউনিয়নের মুখপাত্র মার্কুস ভাল এই গবেষণার ফলাফলে বিস্মিত হয়েছেন৷ তিনি সরাসরি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তবে কেন পাইলটরা এ ধরনের বিষণ্ণতায় ভোগেন, তার কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন৷ ভাল-এর মতে, বিমানের পাইলটরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন, তাঁদের এক ভুল সিদ্ধান্তে অনেক মানুষের প্রাণ যেতে পারে, এই ভয় সব সময় তাঁদের মধ্যে কাজ করে৷ কাজের ক্ষেত্রে তাঁদের অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ ফলে কর্ম পরিবেশে চাপ বাড়তে থাকে, আর এই চাপ একসময় মানসিক সমস্যায় রূপ নেয়৷
কাজ এবং পরিবার
এয়ার ফোর্স ওয়ান, যাকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই
মার্কিন প্রেসিডেন্টের উড়ন্ত কমান্ড সেন্টার সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বিমান৷ সেই এফডিআর-এর ‘ডিক্সি ক্লিপার’ থেকে বর্তমানের ‘বোয়িং ৭৪৭’, এয়ার ফোর্স ওয়ানের ইতিহাস এক নজরে দেখে নেই চলুন৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রেসিডেন্টের বিমানযাত্রার সূচনা
এয়ার ফোর্স ওয়ান আসলে একটি সুনির্দিষ্ট প্লেনের নাম নয়, বরং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মার্কিন এয়ার ফোর্সের যে বিমান প্রেসিডেন্টকে বহন করে সেটিকে এই নামে আখ্যায়িত করে৷ ১৯১০ সালে থিয়োডোর রুসভেল্ট কার্যত অল্পক্ষণের জন্য একটি এয়ারক্রাফটে চড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিমান যাত্রার সূচনা করেন৷
ছবি: Public domain
‘ডিক্সি ক্লিপারের’ ইউরোপ যাত্রা
ফ্র্যাংকলিন ড. রুসভেল্ট হচ্ছেন প্রথম ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট যিনি আকাশে ওড়েন৷ ১৯৪৩ সালে তাঁকে নিয়ে বোয়িং ৩১৪ ক্লিপার ফ্লায়িং বোট ‘ডিক্সি ক্লিপার’ ৮,৮৫১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে কাসাব্লাংকা কনফারেন্সে আসে৷ সেখানে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে উইন্সটন চার্চিল এবং শার্ল দ্য গোলের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ ফিরতে পথে বিমানটির খাবার ঘরে জন্মদিন পালন করেন প্রেসিডেন্ট রুসভেল্ট৷
ছবি: The Boeing Company
প্রেসিডেন্টের প্রথম আনুষ্ঠানিক বিমান
১৯৪৫ সালে ফ্র্যাংকলিন ড. রুসভেল্টের জন্য সি-৫৪, যেটির ডাকনাম ছিল ‘সেকরিড কাউ’, অর্ডার দেয়া হয়৷ এটা হচ্ছে মার্কিন ইতিহাসে প্রথম বিমান, যেটি শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়৷ এতে রেডিও টেলিফোন, ঘুমানের জায়গা এবং একটি সংকোচনীয় লিফটও ছিল৷ তবে মৃত্যুর আগে শুধুমাত্র একবার বিমানটি ব্যবহার করতে পেরেছিলেন রুসভেল্ট৷
ছবি: The Boeing Company
জেট যুগে প্রেসিডেন্টের বিমান যাত্রা
জেট প্রযুক্তির কারণে গত শতকের ষাটের দশক থেকে রাষ্ট্রপ্রধানদের মুখোমুখি বৈঠক নিয়মিত ব্যাপার হয়ে ওঠে৷ ১৯৭২ সালে স্পেশাল এয়ার মিশন (এসএএম) ২৬০০০-এ চড়ে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে চীন সফর করেন নিক্সন৷ ফার্স্ট লেডি জেকি কেনেডি এয়ার ফার্স ওয়ানের বর্তমানের আইকনিক ট্রেডমার্ক: গাঢ় নীল এবং উজ্জ্বল সাদা রং এবং তার উপরে লেখা ইউনাইটেড স্টেটস অফ অ্যামেরিকা-র নকশা করেছিলেন৷
ছবি: Byron E. Schumaker, White House Photo
এয়ার ফোর্স ওয়ানের অভ্যন্তরীণ রূপ
প্রয়োজনমতো পরিবর্তিত বোয়িং ৭৪৭-২০০বি বিমান ৭৬ জন যাত্রী এবং ২৬ জন ক্রু পরিবহণে সক্ষম৷ এটির উপরের ডেকে থাকা কমিউনিকেশন রুম থেকে প্রেসিডেন্ট চাইলে পারমাণবিক হামলা চালাতে পারেন৷ পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে বাঁচতে বিমানটির বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে৷
ছবি: DW
আপদকালীন কমান্ড সেন্টার
এয়ার ফোর্স ওয়ান শুধু একটি ট্রান্সপোর্ট নয়৷ এই বিমানে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যত বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে দেশ পরিচালনা করতে পারেন৷ এ জন্য বিমানটিকে বলা হয় ‘উড়ন্ত ওভাল অফিস’৷ ছবিতে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ উড়ন্ত বিমানে আপদকালীন বৈঠক করছেন৷
ছবি: picture-alliance/Everett Colle
ভবিষ্যতের এয়ার ফোর্স ওয়ান
পরবর্তী প্রেসিডেন্সিয়াল বিমানটি হবে একটি বোয়িং ৭৪৭-৮৷ এটিতে থাকবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস প্রতিরোধক ব্যবস্থা, উড়ন্ত অবস্থায় তেল ভরার ক্ষমতা এবং সম্ভবত আরো আধুনিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম৷ সেই শুরুর ‘ডিক্সি ক্লিপারের’ তুলনায় এটি দ্বিগুণের বেশি লম্বা৷ আর ওয়াশিংটন ডিসি থেকে হংকং যাওয়ার সময় বিবেচনা করছে ক্লিপারের তুলনায় নতুন বিমানটি তিনগুণ দ্রুত গতি সম্পন্ন৷
ছবি: The Boeing Company
7 ছবি1 | 7
কাজের দরুণ পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় পাইলটকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়৷ ২০ থেকে ২২ দিন তাদের কাটাতে হয় হোটেলে৷ তাই বন্ধুবান্ধব, সঙ্গী এবং পরিবার ছাড়া তাঁদের সময় কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে৷ একদিকে কাজের চাপ, অন্যদিকে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা – তাই মানসিকভাবে তাঁরা অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলে৷ সে কারণে যখন তাঁরা কাজে থাকেন তখন পরিবারের নানা সমস্যা নিয়েও ভাবতে থাকেন৷ এমন কিছু পারিবারিক সমস্যা দেখা দেয়, যেখানে কেবল টেলিফোনে কথা বলে সমাধান সম্ভব নয়, তখন সেই দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা নিয়েই বিমান চালাতে হয় পাইলটকে৷ আর সময়ের পার্থক্যও একটা বড় ব্যাপার৷ যে কারণে যখন হয়ত কথা বলা দরকার, তখন সম্ভব হয় না৷ আর সেই দুশ্চিন্তা পাইলটকে মানসিকভাবে আরো বিষাদগ্রস্ত করে তোলে৷
জার্মান পাইলট ট্রেড ইউনিয়নের ঐ মুখপাত্র আরও জানান যে, আগে বিমানের খুঁটিনাটি কিছু বিষয় দেখার জন্য ‘গ্রাউন্ড টেকনিশিয়ান' থাকতো৷ এখন সেই কাজটিও পাইলটদের করতে হয়৷ ছোট্ট একটা কাজ করার জন্য বিভিন্ন কাগজপত্রে সই করতে হয়, যেমন বিমানের যদি একটা বাল্ব নষ্ট থাকে এবং সেই মুহূর্তে সেটা সারানো সম্ভব না হলে ফোনের মাধ্যমে তা কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং নিশ্চিত করা যে এর ফলে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে না৷ এমনকি বিমান চালকরা যখন নির্বিঘ্নে বিমান অবতরণ করেন, কোনো সহকর্মী বা অফিসের কেউ আজকাল আর তাঁদের বাহবা পর্যন্ত দেয় না৷ এই ছোট্ট একটু প্রশস্তি হয়ত তাঁর মানসিক চাপকে অনেকটাই কমিয়ে দিত৷ এমনকি ছুটির দিন যেমন ক্রিসমাসেও তাঁদের জন্য বিশেষ কোনো বার্তা থাকে না, যেমন ‘তুমি আসলেই দারুণ কাজ করেছো৷'
ভাল বলেন, ‘‘আগে ম্যানেজমেন্ট থেকে সরাসরি কেউ এসে বলতো ‘তুমি একদম ঠিক সময় অবতরণ করেছ, এ কারণেই ভোক্তারা আমাদের এয়ারলাইন্স পছন্দ করে৷’ কিন্তু বহু বছর হয়ে গেছে এখন আর এমন কেউই বলে না৷’’
বিমানে সন্ত্রাসী হামলা, বিমান ছিনতাই থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে হামলার একাধিক ঘটনার জের ধরে গোটা বিশ্বেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ধারাবাহিকভাবে জোরদার করা হচ্ছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অঘটন ঘটছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ
যাত্রীর পোশাকে ধাতু অথবা বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ তবে যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা সেই কাজ করছেন, তারাও মানুষ৷ ফলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নজর এড়িয়ে দুষ্কৃতি বিমানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
গাফিলতির দৃষ্টান্ত
ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট৷ কিন্তু সেখানেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্মীদের নজর ফাঁকি দিয়ে বিপজ্জনক বস্তু পাচার করার ঘটনা বিরল নয়৷ চলতি দশকের শুরুতে ইইউ কমিশনের প্রতিনিধিরা গোপনে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, যে অস্ত্র সহ বিপজ্জনক বস্তু নিয়ে সিকিউরিটি চেক পেরিয়ে যাওয়া মোটেই কঠিন নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বডি-স্ক্যানার
নিরাপত্তা কর্মীদের ভুল এড়াতে অনেক বড় বিমানবন্দরে চালু হয়েছে বডি-স্ক্যানার৷ ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক কম নয়৷ কারণ এ ক্ষেত্রে মনিটারের পর্দায় যাত্রীদের শরীর অনেকটাই উন্মোচিত হয়৷ তাই অনেক বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বেচ্ছায় এই প্রক্রিয়া বেছে নেবার সুযোগ দেওয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Fotografia
মালপত্রের উপর নজরদারি
যে সব ছোট আকারের মালপত্র সঙ্গে নিয়ে যাত্রীরা বিমানে উঠতে পারেন, সেগুলিও বিপদের উৎস হতে পারে৷ তাই স্ক্যানারের মাধ্যমে সেগুলি পরীক্ষা করাও জরুরি৷ তবে শুধু বিমানবন্দর নয়, মালপত্রের স্ক্যানারের ব্যবহার অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
বিপজ্জনক বস্তুর সংজ্ঞা
প্রায় প্রত্যেক বড় মাপের হামলার জের ধরে বিপজ্জনক বস্তুর তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে৷ জুতার মধ্যে বিস্ফোরক পাচারের প্রচেষ্টার পর যাত্রীদের জুতা খুলে স্ক্যানারে দিতে হয়৷ তরল বা মলম জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বিমানেই বিস্ফোরক তৈরির ঝুঁকি এড়াতে এমন দ্রব্যের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৪ সাল থেকে অবশ্য ইউরোপে এই নিয়ম আবার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেলজিয়ামে বিমানবন্দরে হামলা
সাম্প্রতিক কালে শুধু বিমান নয়, বিমানবন্দরও বার বার সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে৷ ২০১৬ সালের ২২শে মার্চ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার ঘটনার পর সার্বিকভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ইউরোপে সাধারণত বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
ইস্তানবুলে হামলা
২০১৬ সালের ১লা জুলাই তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৪৪ জন নিহত হয়৷ আত্মঘাতী হামলাকারীরা অনেক মানুষকে জিম্মি করারও ষড়যন্ত্র করেছিল বলে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম দাবি করে৷ এত বড় আকারে হামলার জের ধরে গোটা বিশ্বে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷