বিমানের জন্য টেকসই জ্বালানি
৪ নভেম্বর ২০২০প্রযুক্তির উন্নতির দৌলতে নানা পদ্ধতির মাধ্যমে আজই জেট ফুয়েল কৃত্রিমভাবে ও অনেক ক্ষেত্রে টেকসই পদ্ধতিতে উৎপাদন করা সম্ভব৷ যেমন বড় অ্যালজি খামারে সেটা করা যেতে পারে৷ বহুকাল ধরে বিমান সংস্থাগুলি সেই পথে অগ্রসর হচ্ছে, কিন্তু এখনো তেমন কার্যকর ফল পাওয়া যায় নি৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়া এখনো বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল৷
শেষ পর্যন্ত যে সংস্থা সস্তায় ও বড় আকারে কৃত্রিম জেট ফুয়েল তৈরি করতে পারবে, সেই সাফল্যের মুখ দেখবে৷ হাইডে শোধনাগারের প্রধান ইয়ুর্গেন ভলশ্লেগার বলেন, ‘‘বাস্তব ঘটনা হলো, এখনো পর্যন্ত এই সব প্রকল্পের অর্থনৈতিক ফায়দা নেই৷ কার্বনের ব্যবহার কমানো ও জ্বালানীর ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে বর্তমান বিতর্কের কারণেই বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷’’
ইয়ুর্গেন ভলশ্লেগার জার্মানির উত্তরে হাইডে শোধনাগারের প্রধান৷ সেখানে হামবুর্গ বিমানবন্দরের জন্য জ্বালানী পরিশোধন করা হয়৷ তা সত্ত্বেও সেই প্রতিষ্ঠান বিমানের জ্বালানীর ক্ষেত্রে পরিবর্তনের অংশ হতে চায়৷ কারণ ভলশ্লেগার ভবিষ্যতে সেখানে টেকসই জেট ফুয়েল উৎপাদনের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন৷ তিনি সূর্যের রশ্মির বদলে অব্যবহৃত বায়ুশক্তি কাজে লাগাতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ রয়েছে৷ তবে গ্রিডে অতিরিক্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ থাকায় প্লান্ট বন্ধ রেখে তা উৎপাদন করা হচ্ছে না৷ প্রথম ধাপে সেই অব্যবহৃত বিদ্যুৎ হাইড্রোজেনে রূপান্তরিত করে দ্বিতীয় ধাপে সেই হাইড্রোজেন থেকে জেট ফুয়েলের মতো কৃত্রিম জ্বালানি তৈরি করাই হলো আমাদের আইডিয়া৷’’
বিশেষ এই ‘পাওয়ার টু লিকুইড’ পদ্ধতির একটি সুবিধা রয়েছে৷ জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গমনের বদলে আশেপাশের কারখানা সেটি শুষে নিয়ে পানি ও বিদ্যুতের মতো উপাদান কাজে লাগিয়ে জ্বালানীতে রূপান্তরিত করতে পারে৷ অর্থাৎ এই কৃত্রিম জেট ফুয়েল পোড়ালে নতুন করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হবে না, বরং পুরানো গ্যাস পুনর্ব্যবহার করা হবে৷
বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে জলবায়ুর ক্ষতি এড়ানোর উদ্যোগে ভারী শিল্পশাখা সত্যি কি সমাধানসূত্রের অংশ হতে পারে? ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমো ভাসারমান বলেন, ‘‘জ্বালানী থেকে হাইড্রোকার্বন বার করা ও তা সামলানোর জ্ঞান শোধনাগারগুলির কাছে রয়েছে৷ এই সব প্লান্টের বর্তমান অবকাঠামো ও উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে ‘পাওয়ার টু লিকিউড’ প্লান্টও চালানো সম্ভব৷’’
পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্লান্টে জার্মান বিমান সংস্থা লুফটহানসার জন্য কৃত্রিম জেট ফুয়েল উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে৷ ইয়ুর্গেন ভলশ্লেগার বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে আমরা হামবুর্গ বিমানবন্দরের পাঁচ শতাংশ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি৷’’
ভবিষ্যতে বিভিন্ন সূত্র থেকে টেকসই জেট ফুয়েলের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কম খরচে এই বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন করাই হবে সাফল্যের চাবিকাঠি৷ তবে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা অর্ধেক করতে হলে বিমান পরিবহন ক্ষেত্রকে জুরিখ ও হামবুর্গের মতো প্রকল্পের উপর নির্ভর করতে হবে৷
ক্রিস্টিয়ান অফনব্যার্গ/এসবি