এই কর থেকে যে অর্থ আয় হবে তা পরিবেশবান্ধব পরিবহণ চালুতে ব্যয় করা হবে৷
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফ্রান্স ও ইউরোপের ভেতর চলা ফ্লাইটের ইকোনমি শ্রেণির একটি টিকিটের জন্য যাত্রীদের দেড় ইউরো সবুজ কর দিতে হবে৷ আর বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের দিতে হবে নয় ইউরো৷
আর ইউরোপের বাইরে চলাচলকারী ফ্লাইটের ইকোনমি শ্রেণির জন্য তিন ইউরো ও বিজনেস ক্লাসের জন্য সর্বোচ্চ ১৮ ইউরো কর আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
ফলে বছরে ১৮০ মিলিয়ন ইউরো আয় হবে বলে আশা করছেন ফ্রান্সের পরিবহণমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্ন৷ শুধু ফ্রান্স ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এই কর প্রযোজ্য হবে, ফ্রান্সে নামা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে নয়৷
এয়ার ফ্রান্স সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে৷ তারা বলছে, এর ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে তারা৷ টিকিটে কর না বসিয়ে বরং নতুন পরিবেশবান্ধব বিমান ক্রয়ে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন ছিল বলে উল্লেখ করেছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ৷
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা বা আইএটিএ’ও টিকিটে কর বসানোর সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে৷ এই ধরনের পদক্ষেপ ‘কার্যকরী’ কিনা, সে বিষয় সংশয় প্রকাশ করেছে সংস্থাটি৷ তারা বলছে, এমন কর বসিয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানো গেছে বলে প্রমাণ দিতে পারেনি কোনো সরকার৷
গতবছর এপ্রিল মাসে সুইডেন বিমানের টিকিটে ৪০ ইউরো পর্যন্ত কর বসায়৷
সে দেশের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা থুনব্যার্গ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন৷ তাঁর কারণে সুইডেনে ‘ফ্লাইট শেমিং’ নামে একটি মুভমেন্ট শুরু হয়েছে৷ এর মাধ্যমে বিমানে চড়া যাত্রীদের লজ্জার অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করা হয়৷ কারণ সব পরিবহণ মাধ্যমের মধ্যে বিমানের কারণেই পরিবেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়৷
মেগাসিটি মানে অসংখ্য মানুষের মুখরতায় সরগরম প্রতিটি প্রান্তর৷ শহরগুলোতে মানুষের আধিক্য তীব্র হলেও, সবুজের অভাব বড্ড বেশি৷ শশব্যস্ততার নগরে পার্ক-উদ্যানের প্রয়োজনটা আসলে কোথায়?
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marin২০৫০ সালে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষের ঠাঁই হবে নগরে৷ জাতিসংঘের সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷ এই বিপুল জনরাশির ছোট্ট একটা অংশ শহরে থেকেও পাবে প্রকৃতির ছোঁয়া৷ বড় শহরগুলোর তুলনায় তুরস্কের ইস্তানবুলে সবুজের পরিমাণ সবচেয়ে কম৷ ২০১৫ সালের হিসেব বলছে, শহরের মাত্র দুই দশমিক ২০ ভাগ জুড়ে আছে উদ্যান৷ তাই পুরনো পাবলিক প্লেসগুলোকে পার্কে বা উদ্যানে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার৷
ছবি: Reuters/M. Sezerবিশ্বজুড়ে নগর থেকে নগরের ফারাকটা অনেক৷ ওয়ার্ল্ড সিটিস কালচালার ফোরামের পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই তা বোঝা যায়৷ এদিকটায় চীন বেশ এগিয়ে আছে৷ দেশটির শেনচেন শহরের ৪০ ভাগ জুড়ে সবুজের ছোঁয়া৷ অথচ এই শহরে আকাশচুম্বী ভবনের নির্মাণও চলছে৷ লোকারণ্য হিসেবে পরিচিত দেশটির বেইজিং শহরের ৪৫ ভাগ দখল করেছে বৃক্ষরাজি, গাছ-গাছালি৷ তাতেও সন্তুষ্ট নয় নগর কর্তৃপক্ষ৷ আরো একটু সবুজ করতে চান বেইজিংকে৷
ছবি: picture alliance / dpaশরীরচর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলে পার্ক-উদ্যান৷ মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বললে, সবুজের তুলনা নেই৷ সবুজের মাঝে চাপমুক্ত থাকাটা সোজা৷ আচার-আচরণে আসে ইতিবাচক পরিবর্তন আর বাড়িয়ে তোলে মানুষে মানুষে সান্নিধ্য৷ কংক্রিটের স্তুপ খ্যাত নিউ ইয়র্কের এক চতুর্থাংশ কিন্তু সবুজে ঘেরা৷ আর পুরনো ও পরিত্যক্ত শিল্প কারখানায় নাগরিকদের জন্য নতুন করে উদ্যানের কথা ভাবছে নগর কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/E. Rooneyনির্মল আর বিশুদ্ধ বায়ুর উৎস গাছপালা৷ বুক ভরে শ্বাস নিতে চাইলে গাছের পরিমাণ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই৷ টোকিওর মতো জনবহুল শহরে সবুজায়ন খুব জরুরি৷ ২০১৫ সালের ব্যুরো অব আরবান ডেভেলপমেন্টের পরিসংখ্যান বলছে, শহরের সবুজ মাত্র সাত দশমিক ৫০ শতাংশ৷ আর জনসংখ্যা ৯২ লাখ৷ প্রবীণ মানুষে মুখর এই শহরের নাগরিকরা আছেন বায়ু দূষণের ঝুঁকিতে৷
ছবি: Imago/Aurora Photos/T. Martinইট কাঠ পাথরের শহরে বেড়েই চলছে উষ্ণতা ৷ তীব্র দাবদাহের শিকার হচ্ছেন শহরের মানুষ৷ যাকে বলা হয় ‘আরবান হিট আইল্যান্ড এফেক্ট৷’ অর্থাৎ আশপাশের চেয়ে শহরে গরম অনুভূত হবে বেশি৷ যেন শহরটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ৷ মুক্তির একমাত্র পথ সবুজায়ন৷ হিসেব কষে দেখা গেছে, শহুরে উষ্ণতার কালিমা লাগা লস অ্যাঞ্জেলসে পার্কের পরিমাণ শহরটির ৩৫ভাগ৷
ছবি: Iwan Baanপার্ক কিংবা উদ্যানের রয়েছে পানি শোষণ ক্ষমতা৷ এসব থাকলে ২০১৮ সালে প্যারিসকে বন্যার কবলে পড়তে হতো না৷ এই শহরের পার্ক উদ্যানের পরিমাণ শহরের মাত্র নয় দশমিক ৫০ ভাগ৷ নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে, বৃ্ক্ষরোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্যারিস৷ ২০২০ সালের মধ্যে ২০ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হবে শহরজুড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Marinকোটি মানুষের বসতি কলম্বিয়ার বোগোতা শহরে৷ বড় শহরের মর্যাদার পথে নিয়ত ছুটছে শহরটি৷ অথচ শহর জুড়ে সবুজের উপস্থিতি মাত্র চার দশমিক ৯০ ভাগ৷ শহরটি দিন দিন বড় হচ্ছে, ঘুরছে অর্থনীতির চাকা৷ স্বল্পমেয়াদে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে, পাবেও৷ কিন্তু নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা আর জলবায়ু পরিবর্তনের হিসেব মাথায় নিয়ে লম্বা মেয়াদে দৃষ্টি দিতে হবে নগর কর্তৃপক্ষকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Robayo জেডএইচ/জেডএ (এএফপি)