বিমানের রুট পরিবর্তন করে পরিবেশের ক্ষতি কমানোর চেষ্টা
৬ মে ২০২৫
এছাড়া বিমানের কনডেনসেশন ট্রেইল বা কনট্রেইলও পরিবেশের অনেক ক্ষতি করছে৷ বিমান চলার পথে কিছু পরিবর্তন এনে এই ক্ষতি কমানো সম্ভব হতে পারে৷
বিমান চলাচল খাত পরিবেশের যে ক্ষতি করে, তার এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী বিমানের জ্বালানি পোড়ানো থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, যা কনট্রেইল নামে পরিচিত৷ একটি ফ্লাইটের অর্ধেকেরও বেশি গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য কনট্রেইল দায়ী৷ এগুলি মূলত প্রায় ১১ হাজার মিটার উচ্চতায় চলাচল করা বড় যাত্রী ও পণ্যবাহী বিমান থেকে নির্গত হয়৷ ঐ উচ্চতায় তাপমাত্রা খুব কম থাকে৷ যখন উচ্চ আর্দ্রতা প্রবর্তন করা হয়, তখন এলাকাটি বরফ-অতিসম্পৃক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়৷
সেখানে, বিমানের নিষ্কাশনে নির্গত কণার সাথে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কনট্রেইল তৈরি হয়, যা ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকতে পারে৷ এবং তারা একটি গ্রিনহাউসে কাচের প্যানেলের মতো কাজ করতে পারে৷
এয়ারক্রাফট ডিজাইনার ডিটার শলৎস বলেন, ‘‘কনডেনসেশন ট্রেইল বা কনট্রেইল মেঘের মতো আচরণ করে৷ দিনের বেলায় মেঘের শীতল প্রভাব থাকে, আর রাতে থাকে উষ্ণতা৷ শীতের তারাভরা ও মেঘহীন রাত হিমশীতল হয়ে থাকে৷''
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টার ২০১১ সালে কনট্রেইলের উষ্ণতা ও শীতলতার প্রভাব পরিমাপ করে একটি মানচিত্র তৈরি করে৷ যেসব এলাকা বিমানের এড়িয়ে চলা উচিত সেগুলো লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কনট্রেইল এড়ানোর বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফ্লাইটের রুট তৈরি করা গেলে জলবায়ুর উপর বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷
লাল অঞ্চলগুলো মূলত রাতে এবং শীতল অঞ্চলে দেখা যায়৷
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের পদার্থবিদ ক্রিস্টিয়ানে ফোইগ্ট জানান, ‘‘মোট ফ্লাইটের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ কনট্রেইল তৈরি করে, আর মাত্র পাঁচ শতাংশ ফ্লাইট উষ্ণ কনট্রেইল উৎপন্ন করে৷ এর অর্থ, কনট্রেইলের প্রভাব কমাতে মাত্র পাঁচ শতাংশ ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে হবে৷''
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের বিজ্ঞানীরা প্রথমে কনট্রেইল তৈরি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা করেছিলেন৷ এর জন্য তারা কনট্রেইল তৈরি হয়, বায়ুমণ্ডলের এমন ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে এলাকার উপর বা নীচ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিলেন৷ তাদের গবেষণার সময় বিমানগুলি জোড়-সংখ্যার দিনে প্রচলিত উচ্চতায়, আর বিজোড়-সংখ্যার দিনে প্রচলিত উচ্চতা থেকে ৬০০ মিটার উঁচু বা নিচ দিয়ে উড়েছিল৷
জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের পদার্থবিদ ড. ক্লাউস গিরেন্স বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় আমরা দেখাতে পেরেছি, বিমানগুলি যেদিন ভিন্ন পথে উড়েছিল, সেই দিনগুলিতে ফলাফল সত্যিই ভিন্ন ছিল৷ আমরা ৯৭.৫ ভাগ নিশ্চিত যে, কনট্রেইল এড়ানোর বিষয়ে আমরা একটি অর্থপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি৷''
বিমান সংস্থাগুলি কবে থেকে জলবায়ুবান্ধব ফ্লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করতে পারে? ভিয়েনার ‘ফ্লাইটকিজ' এর রাইমুন্ড সপ তা জানেন৷ তিনি একজন পাইলট, এবং বিশ্বের বৃহত্তম ফ্লাইট পরিকল্পনাকারী কোম্পানিগুলির একটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা৷
বর্তমানে ফ্লাইট পরিকল্পনা সাজানোর সময় বাতাস ব্যবহার করে দ্রুততম ও সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে ফ্লাইট পরিচালনার বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়৷ আর এখন ফ্লাইটকিজ, কনট্রেইল কোথায় তৈরি হতে পারে, সেটি নির্ধারণ করে বিকল্প পথের পরামর্শ দিচ্ছে৷
ফ্লাইটকিজ সাড়ে আট হাজারেরও বেশি ফ্লাইট সিমুলেট করেছে৷ ফ্লাইট চলাচলের পথ পরিমাপের বিষয়টি এখনো চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফল বেশ আশাব্যাঞ্জক৷ পরিবর্তন সবসময় লাভজনক৷
ফ্লাইটকিজ এর প্রধান নির্বাহী রাইমুন্ড সপ বলেন, ‘‘গবেষণার ফল দেখে আমরা সত্যিই অবাক হয়েছি৷ রুট পরিবর্তনের জন্য মাত্র ০.১১ শতাংশ বেশি জ্বালানির প্রয়োজন পড়েছে৷ অন্যান্য অনিশ্চয়তার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই বলছি, অতিরিক্ত জ্বালানিতে বিনিয়োগ করে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের উপর কনট্রেইলের নেতিবাচক প্রভাব অনেকখানি কমাতে সক্ষম হবো৷''
ফলে শিগগিরই আরও জলবায়ুবান্ধব বিমান রুট চালু হতে পারে৷
১০০ ইউরোর একটি ফ্লাইটে কনট্রেইল এড়াতে অতিরিক্ত প্রায় আট সেন্ট খরচ হবে৷ অর্থাৎ প্রায় শূন্য খরচেজলবায়ুর উপর প্রভাব কমানো সম্ভব৷ তবে এখন প্রশ্ন হলো: কোন বিমান সংস্থা প্রথম এটি শুরু করবে?
মার্কুস স্টাইনহাউসেন/জেডএইচ