নানামুখী উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর পেঁয়াজের লাগামহীন বাজার শান্ত করতে বিমানে করে এই খাদ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
বিজ্ঞাপন
আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিতে মিশর ও তুরস্ক থেকে বিমানযোগে পেঁয়াজ ঢাকায় পৌঁছাবে বলে আশা করছেন বাণিজ্যসচিব জাফর উদ্দিন৷ তবে প্রতিদিন কী পরিমাণ পেঁয়াজ আসবে এবং দাম কত হবে, সে বিষয়ে এখনো কিছু বলেননি তিনি৷
ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শুক্রবার সচিব জাফর উদ্দিন বলেন, ‘‘বাজারের এই পরিস্থিতিতে সরকার মিশর ও তুরস্ক থেকে বিমানযোগে পেঁয়াজ আনার উদ্যোগ নিয়েছে৷ আগামী সপ্তাহের সোম অথবা মঙ্গলবার এই পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছাবে৷ তারপর টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশে ব্যাপকভিত্তিতে পেঁয়াজ বিপণন করা হবে৷''
ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোতে শুক্রবার ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায়, আর মিশর-তুরস্কের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়৷
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার পর থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা হারে বাড়ছে৷ পাইকারির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই খুচরায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম৷ শুক্রবার খুচরা বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে৷
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর আমদানি করতে নতুন দেশ খুঁজতে শুরু করে বাংলাদেশ৷ এরপর ৬৬ হাজার ১৬২ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র (এলসি) খোলা হলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ছয় হাজার টনের মতো পেঁয়াজ এসেছে৷ এই পরিস্থিতিতে অন্যদের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে সরকারিভাবেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান বাণিজ্যসচিব৷
পেঁয়াজ ছাড়া মজাদার রান্না
চড়া দামের কারণে পাতে পেঁয়াজ নেই? তবুও ঘরে থাকা অন্যান্য উপকরণ দিয়ে বানিয়ে দেখতে পারেন দেশি স্বাদের এই রান্নাগুলি৷
ছবি: Rangoli Restaurant
শুক্তো
পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা ভাবলেই মাথায় আসে নিরামিষ রান্নার কথা৷ আর শীতের মরসুমে নানা রকমের সবজি দিয়ে শুক্তো রান্নার মজাই আলাদা৷ অল্প মেথি, মৌরি বা পাঁচফোড়ন বাগাড় দিয়ে পছন্দের সবজির সাথে দুধ বা নারকেল বাটা বা সর্ষে দিয়ে খুব কম সময়েই বানানো যায় এই পদটি৷ পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় এই রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন একদমই দেওয়া হয় না৷
ছবি: DW/S. Surita
পাতুরি
শুধু সর্ষেবাটা, কাঁচা মরিচ ও সর্ষের তেল দিয়ে মেখে কলাপাতায় মুড়ে সেঁকে নিলেই তৈরি মজার ‘পাতুরি’৷ ইলিশ, ভেটকি ছাড়া চিংড়ি বা ছানা দিয়েও বানানো যায় এই পদটি৷ পাতুরি সেঁকার কাজ কয়লার চুলাতেই সবচেয়ে ভালো হয়৷
ছবি: DW/S. Surita
ইডলি-দোসা
দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত এই পদ বর্তমানে বাংলাদেশের রান্নাঘরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ মূলত ডাল ও চালবাটা দিয়ে তৈরি এই দুটি খাবার পরিবেশন করা হয় নানা ধরনের চাটনি ও সাম্বার নামের ডালের স্যুপের সাথে৷ স্বাদ বদল করতে এই পদটি চেখে দেখতে পারেন৷
ছবি: Eesha Kheny
মুগডালের খিচুড়ি
নিরামিষ খিচুড়ি মূলত করা হয় মুগের ডাল দিয়ে৷ রসুন বা পেঁয়াজের জায়গায় বাগাড় দেওয়া হয় পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ বা গরম মশলা দিয়ে৷ আদাবাটার সাথে নানা রকম সবজিও দেওয়া হয় এই খিচুড়িতে৷
ছবি: Colourbox/FormaA
লাবড়া
পাঁচমিশালি সবজির আরেকটি নাম লাবড়া৷ সাধারণত পুজোবাড়িতে নিরামিষ খিচুড়ির সাথে খাওয়া হয় এই লাবড়া৷ আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম ও বেগুনের এই সবজি রান্না করতে ব্যবহৃত হয় শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা৷ অনেক সময় ধরে কষিয়ে মাখামাখা এই পদটি শুধু রুটি দিয়েও খেতে পছন্দ করেন অনেকে৷
ছবি: DW/S. Surita
কালীপুজোর পাঁঠার মাংস
মাছ বা মাংষ রান্না পেঁয়াজ ছাড়া কল্পনাই করা যায় না৷ কিন্তু কালীপুজোর সময় যে পাঁঠা বলি দেওয়া হয়, সেই মাংস রান্নায় থাকেনা পেঁয়াজ বা রসুন৷ শুধু আদা, জিরে ও ধনেবাটা সাথে বেশি করে কাঁচা মরিচ দিয়ে ঝাল ঝাল এই পদটি পুজোবাড়িতে খুব জনপ্রিয়৷ এক এক পুরোনো বনেদী হিন্দু পরিবারে রয়েছে এক এক ধরনের মশলা দিয়ে এই মাংস রান্নার প্রচলন৷
ছবি: Lars Bevanger
ইলিশের তেল ঝোল
বাংলাদেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে ইলিশের নানা রকমের রান্নার জনপ্রিয়তা৷ তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ইলিশের ‘তেল ঝোল’, যা অন্য মাছ দিয়েও করা হয়৷ শুধু কালোজিরের বাগাড় ও কাঁচামরিচের স্বাদের উপর ভিত্তি করেই করা হয় এই রান্নাটি৷ কেউ কেউ মাছের সাথে ডালের বড়ি ভাজা দিয়েও এই রান্নাটি করে থাকেন৷
ছবি: DW/S. Surita
বিদেশি যে যে পেঁয়াজ ছাড়া রেসিপি
শুধু দেশি স্বাদের রান্না কেন, পেঁয়াজ ছাড়া এমন অনেক বিদেশি রান্না করা যায় যা দেশি স্বদ থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷ পিৎজা বা পাস্তা রান্নায় সচরাচর পেঁয়াজ ব্যবহার করেন না ইতালিয়ানরা৷ মূলত টমেটো ও নানা রকমের হার্ব, চিজ দিয়েই বানানো যায় অনেক ধরনের পাস্তা বা পিৎজা৷ স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা পেঁয়াজ ছাড়া মুরগির রোস্ট বা সালাদও বানাতে পারেন৷
পেঁয়াজের পরিবর্তে যা
ভারতের অনেক গোষ্ঠীদের মধ্যেই প্রচলিত নেই পেঁয়াজ বা রসুনের ব্যবহার৷ কিন্তু সমস্বাদ আনতে তারা ব্যবহার করেন হিং, যা দিয়ে বাগাড় দিলে ডাল বা সবজিতে আসে অবিকল রসুনের স্বাদ৷ এই হিং ব্যবহার করা হয় রাজস্থান বা উত্তরপ্রদেশের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় খাবার রান্নায়৷
ছবি: Getty Images/S.Hussain
9 ছবি1 | 9
তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম সরকার নিজ উদ্যোগে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে, পরিস্থিতি এখন সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ নতুন পেঁয়াজ আসার আগ পর্যন্ত এবং সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আসার আগ পর্যপ্ত এভাবে চালিয়ে নেওয়া হবে৷ শুধু মিশর তুরস্ক নয়, ইউক্রেন, আফগানিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে বিমান যোগে পেঁয়াজ আনতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷''