যেসব বিমান যাত্রী বিমানে তাঁদের মোবাইল ব্যবহার করেন, তাঁদের উপর নজর রেখেছে মার্কিন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা৷ মার্কিন ‘হুইসেলব্লোয়ার' এডওয়ার্ড স্নোডেনের বরাতে এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
যেসব বিমান যাত্রী বিমানে বসে মোবাইল ব্যবহার করেন, তাদেরমোবাইলে গোয়েন্দাগিরির চেষ্টা করে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ এবং ব্রিটেনের জিসিএইচকিউ৷ এয়ারফ্রান্সের মতো বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলোর যাত্রীরা কার্যত ২০০৫ সাল থেকে এমন নজরদারির মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের ল্যঁ ম্যঁদে পত্রিকা৷
এয়ারফ্রান্স হচ্ছে প্রথম দিককার বিমান সংস্থা, যাদের যাত্রীদের উপর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করে গোয়েন্দা সংস্থা দুটি৷ ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো যাত্রীদের আকাশে বসেই মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ করে দেয় এয়ারফ্রান্স৷ তখন বিষয়টি এখনকার মতো সহজ ব্যাপার ছিল না, বর্তমানে ১০০-র মতো কোম্পানি এই সেবা দিয়ে থাকে৷ ফরাসি বিমান সংস্থাটিকে সন্ত্রাসীদের বড় টার্গেট হিসেবে বিবেচনা করেছিল মার্কিন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দারা৷
ল্যঁ ম্যঁদে লিখেছে, ‘‘আকাশে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল ব্যবহার গোয়েন্দা সংস্থা দু'টিকে বিশেষ প্রোগ্রাম তৈরিতে উৎসাহ জুগিয়েছে৷'' পত্রিকাটি অপর নিউজ ওয়েবসাইট ‘দ্য ইন্টারসেপ্টে'-এর সঙ্গে যৌথভাবে এনএসএ-র সাবেক কন্ট্রাক্টর স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যের আর্কাইভ গবেষণা করেছে৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির পরিধি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি প্রকাশ করেন ২০১৩ সালে৷ বিষয়টি তখন গোটা বিশ্বে সাড়া জাগায়৷
মার্কিন এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা দু'টির গোয়েন্দা প্রকল্পের কোড নেম হচ্ছে ‘থিভিং মেগপাই' এবং ‘হোমিং পিজন৷' এগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ হাজার ফুট উপরে থাকা বিমানের যাত্রীদের মোবাইল ব্যবহারের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম৷ মোবাইলের সিগনাল মাটিতে থাকা গোপন ইন্টারসেপশন স্টেশনগুলো সংগ্রহ করতো, কেননা সেগুলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরিবহন হতো৷
লে মন্ডে লিখেছে, ‘‘একটি মোবাইল চালু করলেই সেটির অবস্থান সম্পর্কে জানা সম্ভব৷ এরপর বিমানের যাত্রীদের তালিকা, বিমান নম্বর এবং এয়ারলাইন কোড মিলিয়ে যাত্রীর নাম বের করা সম্ভব৷''
প্রসঙ্গত, স্বাভাবিকভাবে উড়ন্ত বিমানে বসে মোবাইলে ফোন করা সম্ভব না হলেও কিছু বিমানসংস্থা কেবিন ওয়াইফাই সিস্টেমের মাধ্যমে যাত্রীদের মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে৷ সেই সংযোগ যোগাযোগের বিভিন্ন কাজে লাগানো সম্ভব৷ স্নোডেন বর্তমানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে মস্কোতে বসবাস করছেন৷ কখনো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ত্রিশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর৷
এআই/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
বিমান যাত্রায় যে ১০টি কাজ করবেন না
বিমানে চড়া আজকাল আর খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়৷ কাজের প্রয়োজনে, বেড়াতে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই যাচ্ছেন অন্য দেশে, বিমানে৷ আর এই যাত্রায় যে দশটি জিনিস করা উচিত নয়, তা থাকছে এখানে৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে উঠতে তাড়াহুড়া নয়
একটি বিমানে একসঙ্গে কয়েকশত যাত্রী আরোহণ করেন৷ যাত্রীদের ঠিকভাবে তুলতে তাই বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গ্রুপ নম্বরে যাত্রীদের ভাগ করে ফেলেন৷ এরপর সেই নম্বর অনুযায়ী যাত্রীদের বিমানে উঠতে বলা হয়৷ সমস্যা হয়, যখন নম্বরের তোয়াক্কা না করেই অনেকে বিমানে উঠতে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন৷ এটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার৷ অনেক সময় শুধুমাত্র এ জন্য বিমান ছাড়তে দেরি হয়৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে ওঠার আগে শেষ টান
বিমানের মধ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ৷ অনেকে তাই বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে সিগারেটে দু’টো টান দিয়ে নেন৷ সমস্যা হচ্ছে, বিমানের ভেতরটা আবদ্ধ৷ তাই সেখানে আপনার সিগারেটের গন্ধ অন্য আরোহীকে বিরক্ত করতে পারে৷ তাই সম্ভব হলে বিমান ওঠার আগ মুহূর্তে ধূমপান পরিহার করুন৷ আর বিমানে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি নয়
বিমানের সিটগুলো হয় হালকা ধরনের৷ মূলত তেল খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা৷ তাই এসব সিটে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিলে, তা সিটে বসা আরোহীকে আঘাত করতে পারে৷ সুতরাং কোনো অবস্থাতেই সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি দেবেন না৷
ছবি: dapd
হাতল দখলের লড়াই
বিমানের সিটগুলোতে খুব বেশি জায়গা থাকে না৷ একটি সিটের সঙ্গে আরেকটি সিট লাগানো থাকে এবং হাতল থাকে একটা৷ কেউ কেউ তাই কনুই দিয়ে অপর যাত্রীকে গুতা দিয়ে কিংবা হাত শক্ত করে হাতলে রেখে সেটা দখলে রাখার চেষ্টা করে৷ এমনটা করা মোটেই উচিত নয়৷
ছবি: dapd
নগ্ন পায়ে ঘোরা নয়
অনেকেই বিমানে উঠে জুতা, এমনকি মোজাও খুলে ফেলেন৷ এটা অনেকের জন্যই বিরক্তিকর৷ আর খালি পায়ে বিমানের টয়লেট ব্যবহার করলে রোগজীবাণু আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ সুতরাং বিমানে জুতা পরেই থাকুন৷
ছবি: Fotolia/Zeit4men
শব্দ বন্ধ না করেই গেম খেলা
আজকাল স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে সহজেই ভিডিও গেম খেলা যায়৷ এতে অবশ্য খারাপ কিছু নেই৷ কিন্তু বিমানে বসে শব্দ বন্ধ না করে গেম খেললে তা অন্য আরোহীদের বিরক্ত করতে পারে৷ তাই শব্দ বন্ধ করে গেম খেলা ভদ্র ব্যাপার৷
ছবি: imago/Westend61
পেছনের লোকের আগে নামার লড়াই
বিমান ল্যান্ড করার পর তার দরজা খোলার আগেই অনেকে নামার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করে৷ পারলে সামনের যাত্রীকে ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা৷ এটা খুবই অশোভন আচরণ৷ বিমান যখন অবতরণ করেছে, তখন সব যাত্রীকেই নামাবে৷ তাই নিশ্চিন্তে বসে অপেক্ষা করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘হ্যালো, রানওয়েতে আছি’
বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে ফোন করতে শুরু করেন৷ এমনকি নেটওয়ার্ক না পাওয়া গেলে চলে নিরন্তন চিৎকার: হ্যালো, এইমাত্র ল্যান্ড করলাম, শুনতে পাচ্ছো? আসলে এভাবে তাড়াহুড়া করা ভালো নয়৷ বিমানবন্দরে অপেক্ষারতরা বিভিন্ন ডিসপ্লে ঘোষণার মাধ্যমে এমনিতেই বিমান অবতরণের খবর জানতে পারেন৷ তাই প্রিয়জনকে সেটা জানাতে তাড়াহুড়া না করলেও সমস্যা নেই৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ভ্রমণ করছেন, কিন্তু নড়ছেন না
বড় বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ ধরনের ‘মুভিং ওয়াকওয়ে’ থাকে৷ এটা অনবরত সামনের দিকে যেতে থাকে৷ ফলে কেউ ‘মুভিং ওয়াকওয়েতে’ দাঁড়ালে এমনিতেই সামনের দিকে যেতে পারবেন৷ তাই অনেকে এতে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এটা আসলে ঠিক নয়৷ বরং মুভিং ওয়াকওয়েতে আপনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে অন্য যাত্রীদের সুবিধা হবে৷
ছবি: Reuters
লাগেজ নেয়ার তাড়া
বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই লাগেজ নেয়ার জন্য বিশেষ জায়গা আছে৷ সেখানে বেল্টের উপরে লাগেজগুলো একের পর এক দেয়া হয়৷ সেই বেল্ট অনবরত ঘুরতে থাকে৷ অনেক সময় বিমান থেকে নেমেই মানুষ সেই বেল্ট ঘিরে বড় জটলা তৈরি করে ফেলেন৷ এটা অনর্থক৷ বরং একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলে আপনার লাগেজ দেখা সহজ হবে৷ এরপর সময়মত সেটি বেল্ট থেকে সরিয়ে নিলেই হলো৷