ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে৷ পাঁচ বছরের জন্য সরকার বাছাই নয়৷ এ এমন এক সিদ্ধান্ত, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে ব্রিটেনের জন্য৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেন থাকবে, না বিদায় নেবে?
বিজ্ঞাপন
‘রিমেন' ও ‘ব্রেক্সিট' – অর্থাৎ যথাক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার পক্ষে ও বিপক্ষের শিবিরের প্রচার অভিযান শেষ৷ এবার ভোটারদের পালা৷ প্রায় ৪ কোটি ৬৫ লক্ষ ভোটার বৃহস্পতিবার গণভোটে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ প্রায় ৪১,০০০ কেন্দ্রে ভোট দেবার সুযোগ থাকছে৷ শুক্রবার ভোর থেকে চূড়ান্ত ফলাফল স্পষ্ট হয়ে ওঠার কথা৷
যুক্তি, তর্ক-বিতর্ক, আবেগ – সব মিলিয়ে ভোটারদের মনস্থির করতে হয়েছে, ব্যালট পেপারে তারা কোনো বিকল্প বেছে নেবেন৷ বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী দুই শিবিরের মধ্যে সামান্য ফারাক রয়েছে৷ সেইসঙ্গে রয়েছেন অনেক ভোটার, যাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মনস্থির করে উঠতে পারেননি৷ তাঁরাই দাঁড়িপাল্লার হিসেব বদলে দিতে পারেন বলে অনুমান করা হচ্ছে৷
তার উপর সব ভোটার আদৌ তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন কিনা, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন৷ যেমন বয়স্ক মানুষের মধ্যে বেশি উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ভোট দেবার ক্ষেত্রে কিছুটা অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ এমনটা হলে ব্রেক্সিট-পন্থিদের পাল্লাভারি হতে পারে৷ ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন৷
ভোটারদের সিদ্ধান্তের পরিণতি কতটা সুদূরপ্রসারী হতে চলেছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷ তিনি বলেন, বিমান থেকে একবার ঝাঁপ দিলে আবার সেখানে ফিরে যাবার কোনো উপায় থাকে না৷ তাই যাদের মনে কোনো সংশয় রয়েছে, তাদের ইইউ-তে থাকার পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার-ও বুধবার সাফ বলে দিয়েছেন, ব্রেক্সিট শিবিরের জয় হলে নতুন করে ব্রিটেনের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার কোনো অবকাশ থাকবে না৷ তাঁর ভাষায়, ‘আউট ইজ আউট'৷
অন্যদিকে ব্রেক্সিট-পন্থি শিবিরের অন্যতম প্রধান নেতা বরিস জনসন বলেন, ব্রিটেন ও ইউরোপ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে পড়েছে৷
ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুখে ব্রিটেন
ব্রিটিশ ভোটাররা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, যার পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারী৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ ছেড়ে দেবার পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুই শিবির৷ দাঁড়িপাল্লায় সমর্থনের মাত্রা প্রায় সমান-সমান৷
ছবি: Reuters/T. Melville
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত
একক বাজার ও শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের মতো লাভজনক সুবিধার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে ব্রিটেনের কোনো আপত্তি নেই৷ কিন্তু শুধু পণ্য ও পরিষেবা নয়, নাগরিকদের অবাধ প্রবেশের অধিকার, অভিন্ন মুদ্রা, শরণার্থীদের আশ্রয়ের মতো বিষয় তাদের পছন্দ নয়৷ এই ভাবমূর্তি কতটা ঠিক, গণভোটে তার প্রমাণ পাওয়া যবে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
ব্রেক্সিট-এর প্রবক্তাদের যুক্তি
‘লিভ’ ক্যাম্পেন ভোটারদের উদ্দেশ্য ইইউ-র আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মের বেড়াজাল থেকে ব্রিটেনকে মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছে৷ তাদের যুক্তি, নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ‘স্বাধীনতা’ ফিরে পেলে ব্রিটেন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, বিশ্বে তাদের মর্যাদা বাড়বে৷
ছবি: Imago
‘ব্রেক্সিট অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে’
ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে প্রবল অনিশ্চয়তা ও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে ব্রিটেনের ব্যবসা-বাণিজ্য জগত৷ তাদের মতে, ভবিষ্যতে ইইউ-র সঙ্গে সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হলেও প্রথম কয়েক বছরে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Halle'n
মিথ্যা প্রচারণার অভিযোগ
ব্রেক্সিট শিবির ব্রিটিশ ভোটারদের সামনে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷ যেমন তাদের দাবি, তুরস্কের নাগরিকরা নাকি অদূর ভবিষ্যতে দলে দলে ব্রিটেনে বসবাস করতে আসছে৷ ‘রিমেন’ শিবিরের বিরুদ্ধেও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. J. Ratcliffe
ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগের রূপরেখা
ইইউ-র বাইরে ব্রিটেনের বিকল্প সম্পর্কে স্পষ্ট চালচিত্র দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রেক্সিট শিবির৷ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেও এই দুই দেশকে যে বাধ্যতামূলকভাবে ইইউ-র অনেক নীতি কার্যকর করতে হয়, সেই সত্যটা গোপন রাখা হচ্ছে৷
ছবি: DW/B.Riegert
ইউরোপে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ
ভোটাররা ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেও ব্রিটেন-এর সঙ্গে ইইউ-র সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ সংহতি দেখানোর বদলে প্রায় প্রতিটি বিষয়ে আলাদা ছাড় দাবি করার ব্রিটিশ অভ্যাস নিয়ে বিরক্ত ইইউ-র বেশিরভাগ দেশ৷