২০১৪ সালে ইউক্রেনের আকাশসীমায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭ ফ্লাইট দুর্ঘটনার জন্য শুক্রবার রাশিয়াকে দায়ী করেছে নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া৷ বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ডাচ সরকার৷
ছবি: Oleg Vtulkin
বিজ্ঞাপন
একদিন আগে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দল তাদের প্রতিবেদনে ঐ দুর্ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে৷ অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা ঐ তদন্ত দলে ছিলেন৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বুক’ নামে যে মিসাইল ব্যবহার করে দুর্ঘটনাটি ঘটানো হয়, সেটি রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে ছোঁড়া হয়েছে৷ আর যে বাহনগুলোতে করে মিসাইলটি পরিবহণ করা হয়েছে, সেগুলোও রুশ সামরিক বাহিনীর বলে জানায় ঐ তদন্ত দল৷
বিমানটিতে থাকা ২৯৮ জন যাত্রীর সবাই প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই বিমানটি আমস্টারডাম থেকে কুয়ালালামপুর যাচ্ছিল৷ অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন নেদারল্যান্ডসের৷ অস্ট্রেলিয়ারও বেশ কয়েকজন যাত্রী ছিলেন ঐ ফ্লাইটে৷
ফ্লাইটটি যেখানে দুর্ঘটনায় পড়েছিল
তদন্ত দলের প্রতিবেদন উল্লেখ করে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টেফ ব্লক জানান, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টি বিশ্বাস করছে৷ এক বিবৃতিতে ডাচ সরকার জানিয়েছে, তদন্তের ‘পরবর্তী’ ধাপ হতে পারে বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত বা কোনো সংস্থায় তোলা৷
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন৷ তদন্তের ফলাফল ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি' বলে মনে করছেন তিনি৷
তবে ক্রেমলিন এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, রাশিয়াকে যেহেতু তদন্তের অংশ হতে দেয়া হয়নি, তাই এই প্রতিবেদন বিশ্বাস করা যায়না৷ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, দুর্ঘটনায় ব্যবহৃত মিসাইলটি যে রাশিয়ার ছিল সে ব্যাপারে কোনো ‘তথ্যপ্রমাণ’ দেয়নি নেদারল্যান্ডস৷ দেশটির সরকার তাদের ‘নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের’ জন্য এমন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
দুর্ঘটনা বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে রাশিয়ার দেয়া প্রমাণগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখতে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান লাভরভ৷
এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর বলে এসেছে যে, মিসাইলটি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ছিল৷
ন্যাটো মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ ‘দায় স্বীকার’ করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি ও যুক্তরাজ্যও আন্তর্জাতিক তদন্ত দলের প্রতিবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছে৷
জেডএইচ/জেডএ (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
এমএইচ১৭ দুর্ঘটনার চারদিন পর প্রকাশিত ছবিঘরটি দেখুন...
বিমান দুর্ঘটনা, না হত্যাকাণ্ড!
১৭ জুলাই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ১৭ বিমানটি৷ এতে ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হন৷ ধারণা করা হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
নিহত সব আরোহী
১৭ জুলাই রুশ সীমান্তের কাছে একটি গ্রামে বিধ্বস্ত হয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ১৭ বিমান৷ এতে ২৯৮ আরোহীর সবাই নিহত হন৷
ছবি: imago/Xinhua
চলছে উদ্ধার কাজ
রুশপন্থিরা রবিবার থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে এক জায়গায় নিয়ে রাখা শুরু করে৷ ইউক্রেনের জরুরি বিভাগের কর্মীরা জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে আরো ২১ আরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷ ফলে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫১’তে৷
ছবি: Reuters
তদন্তকারীদের প্রবেশ নিষেধ
আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার কর্মীদের দুর্ঘটনাস্থলের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত যেতে দেয়া হচ্ছে৷ সব স্থানে প্রবেশের অনুমতি তাঁরা পাচ্ছেন না৷
ছবি: imago/Itar-Tass
লাশবাহী ট্রেন
রুশপন্থিরা মৃতদেহগুলোকে আপাতত একটি ট্রেনে রেখেছে৷ ঐ ট্রেনের চারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে আছে লাশগুলো৷
ছবি: Reuters
দেহাবশেষ
এখনো মৃতদেহ উদ্ধার চলছে৷ কিছু কিছু মৃতদেহ চেনার উপায় নেই৷ আছে কেবল দেহাবশেষ৷
ছবি: Reuters
দুপক্ষের অভিযোগ
ইউক্রেনের দাবি, তাদের দেশে থাকা রুশপন্থিরাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে বিমানটি বিধ্বস্ত করেছে৷ তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, রাশিয়া এর সাথে জড়িত নয়৷
ছবি: imago/Itar-Tass
অভিযোগ ‘বুক’ এর দিকে
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘বুক’ নামে পরিচিত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের প্রতিক্রিয়া এতই ভয়াবহ ছিল যে, যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়৷ ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমি থেকে ৭২ হাজার ফুট উচ্চতার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম৷ আর মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানটি উড়ছিল ৩৩ হাজার ফুট উচ্চতায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেঁচে গেল এয়ার ইন্ডিয়া
মাত্র ৯০ সেকেন্ড৷ এই সময়টাই বাঁচিয়ে দিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানকে৷ পূর্ব ইউক্রেনে মিসাইল হামলায় বিধ্বস্ত মালয়েশিয়ার বিমানটির মতোই পরিণতি হতে পারতো দিল্লি থেকে বার্মিংহামগামী বিমানটির৷ মালয়েশিয়ার বিমানটি যখন বিধ্বস্ত হয় তখন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি ছিল মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে৷
ছবি: picture alliance/dpa
শোকে স্তব্ধ নেদারল্যান্ডস
বিমানটিতে ১৫৭ জন যাত্রী ছিল নেদারল্যান্ডসের৷ তাই শোকে স্তব্ধ দেশটি৷
ছবি: Reuters
দেশে দেশে শোক
এছাড়া মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চলছে শোক৷