মিশরে রাশিয়ার একটি বিমান দুর্ঘটনার দায় স্বীকার জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসকে আবারও আলোচনায় নিয়ে এসেছে৷ অবশ্য রাশিয়া, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার বিমান দুর্ঘটনার পরপর আইএস-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিশরীয় গোষ্ঠী ‘সিনাই প্রভিন্স' জানায় যে, তারাই বিমানটি ভূপতিত করেছে৷ কিন্তু এই দাবি বাস্তবায়নের সামর্থ্য আইএস-এর আছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া ও মিশর৷ যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনার পেছনে সন্ত্রাসী হামলার কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে হামলার পেছনে আইএস-এর হাত থাকার সম্ভাবনার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দেননি৷
মিশরের প্রেসিডেন্ট আইএস-এর দাবিকে ‘প্রপাগান্ডা' বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
মঙ্গলবার বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স' থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে৷ সেখান থেকে দুর্ঘটনার কারণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
দুর্ঘটনার কারণ বের হতে যত সময় লাগবে আইএস-এর জন্য সেটা ততই ভালো হবে বলে মনে করেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ৷ ‘লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স'-এর অধ্যাপক ফাওয়াজ জর্জস মনে করেন, হামলার দায় স্বীকার করে আইএস লাভবান হয়েছে৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
কারণ সাময়িকভাবে হলেও এর মাধ্যমে আইএস-এর নাম আলোচনায় উঠে এসেছে৷ জঙ্গি গোষ্ঠীটি তার সমর্থকদের বোঝাতে পারছে যে, রাশিয়ার প্রতি প্রতিহিংসামূলক হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য তাদের আছে৷ ‘‘দুর্ঘটনার আসল কারণ বের হতে যত সময় লাগবে আইএস-এর জন্য সেটা ততই ভাল হবে'', বলেও জানান অধ্যাপক জর্জস৷
লন্ডনের রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আরব অ্যাফেয়ার্স বিশেষজ্ঞ এইচএ হেলারও মনে করেন, দায় স্বীকার করে আইএস-এর সাময়িক জয় হয়েছে, কারণ তারা নিজেদের নাম আলোচনায় আনতে পেরেছে৷
এদিকে ফ্রান্সের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ বলেন, যেসব টুইটার অ্যাকাউন্ট ও ওয়েবসাইট থেকে আইএস-এর দায় স্বীকারের বার্তা এসেছে সেগুলো থেকে আগে কোনো মিথ্যা দাবি করা হয়নি৷ তাই আইএস-এর দাবি ‘বিশ্বাসযোগ্য' বলে মনে করেন তিনি৷