মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের নিখোঁজ বিমানটির কোনো হদিশ এখনো মেলেনি৷ টানা দশদিন ধরে বিমানটি খোঁজার ফলাফল এখনো শূন্যই থেকে গেছে৷ এদিকে, প্রশ্ন উঠেছে মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি তার যাত্রাপথ পরিবর্তন করে অন্যদিকে যখন যাচ্ছিল, তখন তা ধরা পড়ে মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনীর রাডারে৷ শুরুতে অবশ্য এটা যে বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমান তা বুঝতে পারেনি সামরিক বাহিনী৷ কিন্তু নিজের দেশের আকাশসীমায় তখন অপরিচিত একটি বিমান ওড়ার বিষয়টি টের পাওয়ার পরও কেনো সামরিক বাহিনী নিরব ছিল, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে৷ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এছাড়া জার্মান গণমাধ্যমেও বিষয়টির সমালোচনা করা হয়েছে৷
মালয়েশিয়ার সামরিক বাহিনী রাডারে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিমানটির সম্ভাব্য গতিপথ ধরে তল্লাশি অভিযান চলছে৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমানটি থেকে পাঠানো সিগন্যাল, যা ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি, বিমানটি কি বিধ্বস্ত হয়েছে, নাকি কোথাও অবতরণ করেছে৷ ফলে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া বিশ্বের ২৬টি দেশ এখনো অনুসন্ধান চালাচ্ছে খুবই অল্প তথ্যের ভিত্তিতে৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
এমতাবস্থায় উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছে বিভিন্ন দেশ৷ চীন দেশটির কাছ থেকে আরো ভালো সহায়তা চেয়েছে৷ ওদিকে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ ‘সহায়তা করতে অস্বীকার করায়' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদরা হতাশা প্রকাশ করেছেন৷
মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসামুদ্দিন হুসেইন অবশ্য বিভিন্ন দেশকে সহায়তা না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সঙ্গে নিয়মিত যোগোযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আজ সকালে আমি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেলের সঙ্গে কথা বলেছি৷ চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার৷''
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর কর্মকর্তাদের মালয়েশিয়ায় তদন্ত কাজে সহায়তা করা হচ্ছে না, এমন অভিযোগের জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করছি৷ তবে তাদের যদি আরো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়, তাহলে এটা আমাদের বলাটা তাদের দায়িত্ব৷''
প্রসঙ্গত, এর আগে বিমান দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে পেতে বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে এফবিআই৷ ১৯৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট কোস্টে টিডাব্লিউএ ফ্লাইট ৮০০ বিধ্বস্তের কারণ শনাক্তে সক্ষম হয় সংস্থাটি৷ এছাড়া ১৯৯৯ সালে ইজিপ্টএয়ার ৯৯০-র দুর্ঘটনার কারণও তারা শনাক্তে সক্ষম হয় দীর্ঘ তদন্তের পর৷
উল্লেখ্য, ২৩৯ জন যাত্রী এবং ক্রু নিয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিখোঁজ হয় ৮ই মার্চ ভোরের দিকে৷ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ এখনো জানা যায়নি৷