মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার পর পুরো এক মাস কেটে গেছে৷ বিভিন্ন তথ্য কখনো যেমন অনুসন্ধানে আশার আলো দেখিয়েছে, আবার কখনো ডুবিয়েছে গভীর হতাশায়৷ মঙ্গলবার পাওয়া গেছে নতুন দুটি সংকেত৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার থেকে আবারো তল্লাশি অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন অনুসন্ধানকারীরা৷ নিখোঁজ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন তারা৷ সংকেত দুটির প্রথমটির স্থায়ীত্ব সাড়ে পাঁচ মিনিট এবং দ্বিতীয়টির স্থায়ীত্ব সাত মিনিট বলে জানা গেছে৷
মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন মার্ক ম্যাথিউস বলেছেন, ‘‘সমুদ্রের তলদেশে অনেক কিছুই হতে পারে৷ ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যেতে পারে, ভেসে দূরে কোথাও চলে যেতে পারে এটি৷ তবে এটাও সম্ভব যে এটি কাছেও চলে আসতে পারে৷ তবে এটা বুঝতে হলে পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও চাপ পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ কেননা এই তিনটি বিষয় শব্দকে প্রভাবিত করে৷''
বুধবার তল্লাশি অভিযান সমন্বয়কারী অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার চিফ মার্শাল অ্যানগাস হিউস্টন পার্থে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘ব্ল্যাকবক্স থেকে দুটি নতুন সংকেত পাওয়ায় বিমানটির ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পাওয়ার নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ কয়েক দিনের মধ্যেই আমরা বিমানের কিছু না কিছু অংশ খুঁজে পাবো বলে আশা করছি৷''
তিনি জানান, ‘‘অস্ট্রেলীয় জাহাজে থাকা চারটি মার্কিন ট্রান্সমিটার ডাটা রেকর্ডার থেকে দুটি সংকেত শনাক্ত করতে পেরেছে৷ আমাদের বিশ্বাস, আমরা সঠিক জায়গাতেই অনুসন্ধান চালাচ্ছি৷ সংকেতগুলো বিশ্লেষণ করে যেধরনের পরিষ্কার শব্দ পাওয়া গেছে তা কোন বিমানের ব্ল্যাক বক্সের এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত৷ তবে কোনো ধ্বংসাবশেষ না পাওয়া পর্যন্ত এটি নিখোঁজ বিমানটির ব্ল্যাকবক্স কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷'' ব্ল্যাক বক্সটি সমুদ্রের ৪.৫ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে যেখানে অনুসন্ধান চালানো বেশ কঠিন কাজ৷ হিউস্টন এটাও স্বীকার করেন যে সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে৷ ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটির ককপিটের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে ব্যবহৃত ‘ব্ল্যাক বক্স' থেকে সংকেতগুলো ভেসে আসছে৷ ব্ল্যাক বক্সের ব্যাটারির মেয়াদকাল এক মাস৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
ভারত মহাসাগরের নির্দিষ্ট একটি অংশে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি ছোট ডুবুরিযান পাঠানোর আগ পর্যন্ত বর্তমান তল্লাশি-প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে৷ ঐ শব্দের উৎস সন্ধানে অস্ট্রেলীয় নৌবাহিনীর জাহাজ ওশেন শিল্ড আরও কয়েক দিন ধরে অভিযান চালাবে৷
৮ই মার্চ ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রুসহ মালয়েশীয় বিমান ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ কুয়ালালামপুর থেকে চীনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে৷ কিন্তু যাত্রার ৪০ মিনিট পর ফ্লাইটটির সঙ্গে ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ এরপর থেকে বিমানটির কোনো তথ্য আর জানা যায়নি৷