মিসাইল হামলার ফলেই বুধবার ইরানে ইউক্রেনের বিমান ভেঙে পড়েছে। দাবি ট্রাম্প সহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। যদিও তা অস্বীকার করেছে ইরান।
বিজ্ঞাপন
যান্ত্রিক গোলযোগ নয়, মিসাইলের আঘাতেই ধ্বংস হয়েছে ইউক্রেনের বিমান। দাবি করলেন ক্যানাডা এবং অ্যামেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান। একই মত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও।
বুধবার তেহরান থেকে ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল ইউক্রেন এয়ারলাইন্সের একটি বিমান। উল্লেখ্য, ওই একই দিনে ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে এক ডজন মিসাইল ছুড়েছিল ইরান। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার পরেই ইরানের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই ১৭৬ জন যাত্রী নিয়ে ভেঙে পড়েছে বিমানটি। ঘটনায় একজনকেও বাঁচানো যায়নি।
ইরান যা-ই বলুক, বৃহস্পতিবারই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর ধারণা এর পিছনে অন্য কারণ রয়েছে। সরাসরি না বললেও ট্রাম্পের কথায় স্পষ্ট, তিনি মিসাইল হামলার কথাই বোঝাতে চাইছেন। ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোও ট্রাম্পের বক্তব্য সমর্থন করে সাংবাদিকদের স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি মনে করেন যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এই ঘটনা ঘটেনি। বিমানটি মাঝ আকাশে ভেঙে পড়েছে মিসাইলের আঘাতেই। ট্রুডো জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট খবর আছে।
যেসব এয়ারলাইন্সের বিমান কখনো বিধ্বস্ত হয়নি
সম্প্রতি বেশ কিছু বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই যাত্রা কিছুটা ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু এমন কিছু এয়ারলাইন্স আছে যাদের ফ্লাইট কখনো বিধ্বস্ত হয়নি৷ চলুন দেখা যাক একনজরে৷
ছবি: Wright Electric
হাওয়াইয়ান এয়ারলাইন্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিমান সংস্থাটি ১৯২৯ সাল থেকে আকাশ পথে যাত্রা শুরু করেছে৷ যদিও ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত লোকসানের মুখে পড়েছিল এটি৷ কিন্তু নিরাপদ যাত্রার ক্ষেত্রে এর তুলনা নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Garcia
ইজিজেট
ব্রিটিশ বাজেট এয়ারলাইন্স ইজিজেট এর পথচলা শুরু হয়েছে ১৯৯৫ সালে৷ এখন পর্যন্ত এই এয়ারলাইন্সের কোনো বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি৷
ছবি: Wright Electric
রায়েন এয়ার
নিরাপদ যাত্রার ক্ষেত্রে এই আইরিশ এয়ারলাইন্সের ভালো রেকর্ড রয়েছে৷ যদিও ২০০৮ সালে রোম যাওয়ার পথে কিছু পাখি যাত্রাপথে বাধার সৃষ্টি করায় জরুরি অবতরণ করতে হয়েছিল বিমানটিকে৷ কিন্তু যাত্রীদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি৷ কেবল দু’জন ক্রু কিছুটা আহত হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
ভার্জিন
ভার্জিন ব্যান্ডের ভার্জিন আটলান্টিক, ভার্জিন অস্ট্রেলিয়া এবং ভার্জিন অ্যামেরিকা এয়ারলাইন্স – এদের প্রতিটি ফ্লাইটের নিরাপদ যাত্রার রেকর্ড খুবই ভালো৷
ছবি: picture alliance/AP Images/M. Faulkner
এমিরেটস
এমিরেটস এয়ারলাইন্সের পথচলা শুরু হয়েছে ১৯৮৫ সালে৷ এই এয়ারলাইন্সের কোনো ফ্লাইট বড় কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি৷ কেবল একবার দুবাই বিমানবন্দরে ২০১৬ সালের আগস্টে বিমান অবতরণের সময় আগুন ধরে গিয়েছিল ফ্লাইটে৷ বিমানের কোনো আরোহী হতাহত হননি৷ তবে একজন দমকলকর্মী প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/M. Gambarini
ইত্তিহাদ
ইত্তিহাদ এয়ারলাইন্সের সেফটি রেকর্ডও ভীষণ ভালো৷ কেবল একবার ফ্রান্সের তুলু বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড টেস্টিং-এর সময় একটি ফ্লাইট এত দ্রুতগতিতে যাত্রা শুরু করেছিল যে দেয়ালে গিয়ে আঘাত হানে৷ এতে বিমানের ভেতরে থাকা ন’জন আহত হন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
কাতার এয়ারওয়েজ
২০০৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করেছে কাতার এয়ারওয়েজ৷ বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমান বলা হয় এই এয়ারলাইন্সের বিমানগুলোকে৷ কিন্তু দু’বার এদের বিমান দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়৷ প্রথমবার আবুধাবিতে ২০০৭ সালে এবং দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালে দোহাতে৷ কিন্তু দু’টি ঘটনার কোনোটাই কেউ হতাহত হননি৷
ছবি: Airbus - photo by master films/ H. Goussé
7 ছবি1 | 7
বস্তুত, মার্কিন গোয়েন্দাদের দেওয়া রিপোর্টেও স্পষ্টই বলা হচ্ছে, বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে মিসাইলের কারণেই। স্যাটেলাইট ছবিও সে ধারণা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, তিনিও বিমান দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার আশঙ্কাই করছেন।
যদিও পশ্চিমা বিশ্বের অভিমত মানতে নারাজ তেহরান। বৃহস্পতিবার ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইরান জানিয়ে দিয়েছে, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আছে। ইরানের তরফ থেকে মার্কিন বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোয়িংকে আহ্বান জানানো হয়েছে, ঘটনাটির তদন্তে অংশ নেওয়ার জন্য। তারা ক্যানাডার কাছ থেকেও তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে এবং জানতে চেয়েছে, কোন তথ্যের ভিত্তিতে ট্রুডো বলছেন, মিসাইল হানাই বিমান দুর্ঘটনার কারণ?
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, বিমানটি ভেঙে পড়ার যে ছবি পাওয়া গিয়েছে, তা স্বাভাবিক নয়। শুধুমাত্র যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেই যদি বিমানটি ভেঙে পড়ত, তাহলে আগুনের তীব্রতা অত বেশি হত না। মিসাইলের আঘাতে ভাঙলেই এ ধরনের দৃশ্য দেখা যায়।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এএফপি, এপি)
আপোশের নাম বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান
ছয়মাসের মধ্যে দুইটি বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ার পর বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়৷ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিকে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
স্বল্প খরচের বিমান
২০১৭ সালে প্রথম আকাশে ওড়ে ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ ব্র্যান্ডের বিমানটি৷ কম জ্বালানি ব্যবহার করতে পারা এই বিমানের ইঞ্জিন অন্যান্য বিমানের চেয়ে বেশ বড়৷
ছবি: Getty Images/S. Brashear
দুর্ঘটনায় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ার-এর একটি ‘বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮’ বিমান ভেঙে পড়ে৷ ঘটনায় প্রাণ হারান বিমানে থাকা ১৮৯ জন মানুষ৷ এরপর, ২০১৯ সালে মার্চে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি মাঠে বিমানটি ভেঙে পড়লে তাতে প্রাণ হারান বিমানের মোট ১৫৭ জন যাত্রী৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভেঙে পড়ার আগেই বিমানের গায়ে ধরে যায় আগুন৷
ছবি: Reuters/T. Negeri
উড়াল স্থগিত
কম খরচে উড়তে পারলেও ছয় মাসের মধ্যে বড় দুটি দুর্ঘটনার কারণে বিশ্বের বহু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এই মডেলের বিমান চালু স্থগিত রাখে৷ ফলে চীন, ভারত, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও সিঙ্গাপুরের একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমান রুটে তার প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Getty Images/J. Raedle
ত্রুটির কথা জানা ছিল!
বোয়িং বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানতেন বোয়িং-এর কর্মকর্তারা৷ কিন্তু এই ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে যে পরিমাণ অর্থলগ্নির প্রয়োজন ছিল, তা না করে, কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন আরেকটি বিমান ‘বোয়িং ৭৮৭’-এর উন্নয়নে মনোনিবেশ করার৷ ফলে, ৭৩৭ ম্যাক্স-কে করতে হয় সমঝোতা৷
ছবি: picture alliance/Joker/H. Khandani
কাদের কাছে রয়েছে এই বিমান?
২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশটি ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান উড়াল কার্যক্রম শুরু করে৷ তখন এই মডেলের সবচেয়ে বেশি বিমান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের কাছে৷ এছাড়া আরও ৫,১১০টি বিমান কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছিল প্রায় ৬০টি এয়ারলাইন্স৷ ইউরোপে এই মডেলের বিমানের বড় ক্রেতা নরওয়েজিয়ান এয়ারলাইন্স, টিইউআই, টার্কিশ এয়ারলাইন্স ও রায়ানএয়ার৷
ছবি: Reuters/J. Redmond
পাইলটের ক্ষমতা
ইন্দোনেশিয়ায় ২০১৮ সালে ভেঙে পড়া বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার হবার পর জানা যায় যে, বিমানের চালক শেষ সময়ে বিমানকে স্বভাবিক উচ্চতায় ফিরিয়ে আনতে অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি৷ বিভিন্ন পাইলট সংগঠন এই বিমানের নিরাপত্তা ও নিকৃষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার নিন্দা জানিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
কোম্পানি কী বলছে?
ইথিওপিয়ায় দুর্ঘটনার পর একটি অনুসন্ধানকারী দল পাঠায় বোয়িং৷ ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার দুর্ঘটনার পর, কোম্পানি পাইলটদের উদ্দেশ্যে একটি সতর্কবাণী দিয়ে জানায় যে, ভুল নির্দেশ দেওয়া হলে বিমানের সফটওয়্যার আপনা থেকে বিমানকে নিম্নগামী করে তুলতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ কিন্তু তারা এটাও বলেছিল যে সাময়িকভাবে কম্পিউটার বন্ধ করে পুনরায় চালু করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Redmond
জরিমানা
বোয়িংকে ২০২১ সালের সাত জানুয়ারিতে এসে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর মধ্যে প্রায় ২৪.৪ কোটি ডলার তাদের অপরাধের জন্য, ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইন গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ ১৭৭ কোটি ডলার আর ৫০ কোটি ডলার দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের জন্য ৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, বোয়িং কর্মকর্তারা এফএএ এর কাছ থেকে উপকরণ সংক্রান্ত তথ্য লুকিয়ে মুনাফার পথ বেছে নিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Thompson
আবার দুর্ঘটনা
২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ইন্দোনেশিয়ায় বোয়িং এর ৭৩৭-৫০০ মডেলের একটি বিমান উড্ডয়নের পর নিখোঁজ হয়ে যায়৷ পরে জাভা সমুদ্রে এর ব্ল্যাক বক্সের সংকেত মিলে৷ তবে দুর্ঘটনাকবলিত এই বিমানটি ২৭ বছরের পুরানো এবং বর্তমান প্রজন্মের ৭৩৭ ম্যাক্স-এর ত্রুটিপূর্ণ এমসিএএস সিস্টেম এতে ব্যবহার হয়নি৷ দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি৷