বিরল, লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের সংরক্ষণে অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে৷ কিন্তু সেই তালিকা থেকে এবার একবার বাদ পড়লেই মুশকিল৷ আলাস্কার হাম্পব্যাক তিমিমাছের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ বিষয়টা নিয়ে খুবই চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের তালিকায় ছিল হাম্পব্যাক তিমিমাছ, ফলে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে আর ভাবতে হয়নি৷ এবার তাদের সংখ্যা এত বেড়ে গেছে যে, তাদের শিকারের উপর আর কোনো বিধিনিষেধ থাকা উচিত নয় বলে যুক্তি দেখাচ্ছে আলাস্কার প্রশাসন৷ তালিকা থেকে সেই তিমিকে সরাতে তারা দরবার করছে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছে৷ জাতীয় সামুদ্রিক ও বায়ুমণ্ডলীয় সংস্থা এনওএএ এক প্রাথমিক বিবৃতিতে এই যুক্তি স্বীকারও করেছে৷ উল্লেখ্য, এর আগে হাওয়াই দ্বীপের মৎস্যজীবী সংঘের আবেদনে সাড়া দিয়েও এই কর্তৃপক্ষ প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলের সব তিমি প্রজাতিকে লুপ্তপ্রায় তালিকা থেকে সরানোর পক্ষে সওয়াল করেছিল৷
তবে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই৷ হাওয়াই ও আলাস্কার আবেদনে সাড়া দিয়ে এনওএএ এখন বছরখানেক ধরে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে৷ এই সময় তিমিমাছের বংশবৃদ্ধির হার পরীক্ষা করা হবে৷ তাদের প্রতি কতটা হুমকি রয়েছে, তাও বিচার করা হবে৷ তারপর স্থির হবে, লুপ্তপ্রায়দের তালিকায় তাদের আর রাখা উচিত কিনা৷ সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন, তিন রকমের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে৷ তালিকা থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়া, লু্প্তপ্রায় থেকে তাদের স্ট্যাটাস ‘হুমকির মুখে'-তে নামিয়ে আনা অথবা কোনো পরিবর্তনই না করা৷
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
এমন প্রস্তাবের বিরোধিতারও সুযোগ রয়েছে৷ পরিবেশ সংগঠন বা যে কোনো নাগরিক আগামী ২৮শে জুলাই পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য ও যুক্তি পেশ করার সুযোগ পাবেন৷
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তিমিমাছের সংখ্যা সত্যি অনেক বেড়ে গেছে – এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ১৯৯০-এর দশকের শেষে সংখ্যাটি ছিল মাত্র ১,০০০-এর আশেপাশে৷ আজ আনুমানিক ২২,০০০ তিমি সেখানে বিচরণ করছে৷ আজ এই সাফল্যই কাল হতে পারে তিমিদের জন্য৷ বিশেষ করে নরওয়ে ও জাপানের তিমি শিকারিরা এমন যুক্তি হাতিয়ার করে জোরালো উদ্যমে বিধিনিষেধ বদলানোর চেষ্টা চালাতে পারেন৷