গত দেড় দশকে এই শহরের খাদ্য শিল্পে বিপ্লব ঘটেছে৷ রেস্তোরাঁ আর ফাস্টফুড শিল্পে বিপ্লবের পাশাপাশি ভেজাল খাদ্য তৈরিতে ঘটেছে বিস্ফোরণ৷
বিজ্ঞাপন
একটা সময় শুধু ঢাকা শহরের বেইলি রোডে একসঙ্গে বেশ কিছু ফাস্টফুডের দোকান ছিল৷ চাইনিজ রেস্তোরাঁ বলতে ক্যান্টন, চাংপাই আর মিডনাইট সান৷ পরে চেইন রেস্তোরাঁয় জিনজিয়ান যুক্ত হয়৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খাদ্য চাহিদার বদল, চাওয়া পাওয়ার নানা পরিবর্তনে এই দেশে রেস্তোরাঁ শিল্পে তুমুল বদল এসেছে৷ মানুষের খাদ্যাভাসে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে৷ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো তথা বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ বলছে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে রেস্তোরাঁ রয়েছে- চার লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪৷ ৬৪ জেলা ধরে হিসাব করলে গড়ে প্রতি জেলায় সাত হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে৷ তবে গড়ের হিসাব ঠিক হবে না৷ ঢাকা শহরেই লাখ দুয়েক রেস্তোরাঁ রয়েছে৷ অবশ্য এই হিসাবে গলির মোড়ের পুরি- সিঙ্গারার দোকানও ধরা হয়েছে৷
ঢাকা শহরে এখন মানুষের বিনোদন বলতে শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চেক-ইন দেওয়া৷ তাই মানুষের চাহিদার সঙ্গে এইসব হোটেল-রেস্তোরাঁ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে৷ কিন্তু এইসব স্থানে আপনাকে আপনাকে কী খাওয়ানো হয় আপনার সাধ্যের মধ্যে কখনো ভেবে দেখেছেন?
হোটেল রেস্তোরাঁয় খাবার বাড়ির তৈরি খাবার থেকে সস্তা হয় প্রায়শই৷ কিন্তু কীভাবে এত সস্তায় খাবার দেওয়া সম্ভব এটা সবসময়ই প্রশ্নের বাইরে থেকে গেছে৷ নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন, ভেজালবিরোধী অভিযানের পরপরই আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি৷ খুব সামান্যই নজরে এসেছে আমাদের৷ তবে আদৌ কি আমরা পুরো চিত্রটা পেয়েছি কখনো? খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কোন পর্যায়ে আমরা রয়েছি শুধু মাত্র সস্তায় ক্রেতা ধরার তাগিদে তার সামান্য একটু নমুনা দেখুন-
বাংলাদেশ কৃষি তথ্য সার্ভিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী- বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাসট্রিয়াল রঙ, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়৷ ইউরিয়া, ফরমালিনসহ নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে মাছকে বিপজ্জনক বিষে পরিণত করা হচ্ছে৷ আড়তগুলো ফরমালিন মিশ্রিত বরফ দ্বারা মাছের গায়ে ফরমালিন প্রয়োগ করছে অভিনব স্টাইলে৷ এক্ষেত্রে ফরমালিন মেশানো পানি দিয়েই বরফের পাটা বানানো হয়৷ সেই ফরমালিন বরফের মধ্যেই দিনভর চাপা দিয়ে রাখা হয় মাছ৷
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক বের করে৷ ছবিঘরে ২০২২ সালের সূচকের তথ্য থাকছে৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক বের করে৷ ২০২২ সালের সূচকে ১১৩টি দেশের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷ চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সূচকটি তৈরি করা হয়৷ এগুলো হচ্ছে খাবার কেনার ক্ষমতা; খাবারের প্রাপ্যতা; মান ও নিরাপত্তা; এবং একটি দেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তা মোকাবিলা করা ক্ষমতা৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বাংলাদেশের অবস্থান ৮০
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০২২-এ ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০৷ দক্ষিণ এশিয়ায় এই সূচকে সবার আগে আছে ভারত (৬৮)৷ তারপর নেপাল (৭৪), শ্রীলঙ্কা (৭৯) ও পাকিস্তান (৮৪)৷
ছবি: Rajib Paul/DW
খাদ্য নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশের অবস্থান
সূচকে চারটি বিবেচ্য বিষয়ের একটি খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা৷ এই বিভাগে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১৷ একটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন আছে কিনা, এবং সেটি গত ৫-১০ বছরে হালনাগাদ করা হয়েছে কিনা তারও স্কোর দিয়ে থাকে ইকোনমিস্ট৷ এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের স্কোর ৫০, যা বৈশ্বিক গড়ের (৭০.৮) চেয়ে কম৷
ছবি: Rajib Paul/DW
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের অবস্থান
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকের মান ও নিরাপত্তা বিভাগেও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এগিয়ে আছে (৬৭)৷ এরপরেই আছে বাংলাদেশ (৭১), তারপর নেপাল (৭২), শ্রীলঙ্কা (৮১) ও পাকিস্তান (৯৭)৷ এর মধ্যে পাকিস্তান কোনো খাদ্য নিরাপত্তা আইন নেই বলে জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আইন
২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস হয়৷ এরপর ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়৷ তবে পুরোদমে কাজ শুরু করে ২০২০ সালে৷
ছবি: Rajib Paul/DW
যেমন চলছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
জনবল সংখ্যা ১৫০ জনের মতো৷ উপজেলা তো দূরের কথা সব জেলায়ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিস নেই৷ সংস্থার সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, ‘‘শুধু হোটেল নয়, সবধরনের খাদ্যই আমরা দেখি৷ তবে জেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা যেতে পেরেছি৷ তাও জেলায় একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহায়ক নিয়ে কাজ করতে হয়৷ আমরা অন্যান্য দপ্তরের সহায়তা নিই৷ সেটাও সবসময় পাওয়া যায় না৷’’
ছবি: Rajib Paul/DW
6 ছবি1 | 6
উৎপাদন ব্যয় কমাতে বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্ন বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়৷ বেকারির কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে ট্যালো, ফ্যাটি এসিড ও ইমউসাইল্টিং, টেক্সটাইল রঙসহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার করতে দেখা যায়৷ পানীয়তে মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল৷ চিনি সাদা করতে ফসফেট, মুড়িতে ইউরিয়া, মসলায় রঙ, ইট ও কাঠের গুঁড়া মেশানো হয় নিয়মিত৷
গোলমরিচের মতো মশলায় পেঁপের বিজ, চা-কফিতে কাঠ বা তেঁতুল বীজের গুঁড়া ব্যবহার খুবই নিত্য বিষয়৷ রেস্তোরাঁয় ও বাড়িতে ব্যবহার হওয়া বাটার বা ঘিতে থাকে সেদ্ধ আলু, পাকা কলা ও কেমিক্যাল প্রিজার্ভেটিভ৷ অন্যদিকে দামি ডালে খেসারির ডাল, বেসনে সস্তা আটা, ভাজা ছোলায় কোলটার ডাই, সুজিতে লোহার গুঁড়ো মেশানো হয়৷ আটা ও ময়দায় চকের গুঁড়ো থাকে দামে সস্তা করার জন্য৷
এইসব ভেজাল পণ্য দিয়ে তৈরি খাবারই রেস্তোরাঁয় পরিবেশিত হয়৷ লাভের আশায় রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ আরও দুই কাঠি ওপরে চলাচল করেন৷ ধরেন আপনি মুরগির কোনো একটি পদ খাবেন৷ এমনিতেই মুরগিকে প্রোটিন ইনজেকশন দিয়ে মোটাতাজা করা হয়, এতে মুরগির মূল উপাদানে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় বলে দাবি করেন গবেষকরা৷ তার ওপর দীর্ঘদিন ফ্রিজে রেখে মেয়াদহীন মাংস কিংবা জীবিত মৃত সব ধরনের মুরগি দেদার ব্যবহৃত হয় রেস্তোরাঁতে এবং নানা পদের ভেজাল মিশ্রিত মসলা বা কাপড় ডাই করার রঙ দিয়ে রান্না হয় মুরগি৷ এতে যে তেলটি ব্যবহার হয় সেটিও ভোজ্য তেল নয়৷ এতে ডালডা বা প্রাণিজ চর্বি ব্যবহার করা হয়৷ নিরাপদ খাদ্য অভিযানে ভেজাল তেল বের করে ফেলে দেওয়া, কাপড়ের রঙ দেওয়া খাবার ফেলে দেওয়ার গল্প তো অহরহ৷
এই তো সম্প্রতি এক রেস্তোরাঁয় খাদ্যে কাপড়ের রঙ ব্যবহার করে ভেজালবিরোধী অভিযানে জরিমানা দেন৷ এইসব রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফুঁসে ওঠে সেইসময়৷ তারা তাদের বিজ্ঞাপন লেখেন- ‘আমরা বিরিয়ানিতে খাবারের রঙ মিশাই না৷’ তার এক সপ্তাহ পর রঙ না মেশানো একটি রেস্তোরাঁ অভিযুক্ত হয় বিরিয়ানিতে খাসীর মাংসের পরিবর্তে কুকুর বা বেড়ালের মাংসের ব্যবহার করার৷ এটি একটি অবাস্তব অভিযোগ৷ ঢাকা শহরে বেড়াল বা কুকুর চাষ করা হয় না, একইসঙ্গে ফুটপাতের কুকুরের মতো হিংস্র প্রাণীকে জবাই করে প্রসেস করার বিষয়টিও প্রায় অসম্ভব৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন পাইকারি ১,১০০ টাকা কেজি দামের খাসীর মাংসের বিশাল সমাহারে কীভাবে ৪০০-৫০০ টাকায় বিরিয়ানী দেওয়া সম্ভব হয় যদি না এগুলো লাওয়ারিশ কুকুর বেড়াল হয়৷ অনেকে ছোট ছোট হাড়ের উল্লেখ করেছেন৷ এইসব রেস্তোরাঁতে মাংস কেনার ক্ষেত্রে দাম কমাতে একেবারেই কম ওজনের ছাগল কেনা হয়, অনেক সময় কেনা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ফ্রোজেন মাংস৷ যদিও মাংসের আমদানি সরকার বন্ধ রেখেছে কিন্তু পাইকারি বাজারে ফ্রোজেন মিট বিক্রি হয় হরহামেশা৷ এইসব মাংসের দাম অনেক কম থাকে৷ এবং মান ও মেয়াদোত্তীর্ণ থাকে বেশিরভাগ সময়৷ এসব মাংস প্রসেসে ব্যবহার করবেন হরেক রকম কেমিক্যাল যুক্ত সস, ইটের গুঁড়া মেশানো মশলা, কাপড়ের রঙ আর সবশেষে রান্না করবেন ভেজাল মেশানো ভোজ্য তেল দিয়ে৷ ভীষণ মুখরোচক একটি খাবার আপনার প্লেটে হাজির৷
পদে পদে ভেজাল
বাংলাদেশ ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যদ্রব্যে সয়লাব৷ নামি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র খাবার দোকানও এর থেকে মুক্ত নয়৷ খাবারে ভেজালের কিছু চিত্র দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
ফরমালিন
মাছ, ফলমূল, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যে ফরমালিন ব্যবহার হয় দেদারছে৷ মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফরমালিনযুক্ত পণ্য জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়৷ ফরমালিন পাওয়া সহজলভ্য হওয়ায় তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance
কার্বাইড
কাঁচা ফলমূল পাকানোর জন্য ব্যবহার হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড৷ কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে, বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়৷
ছবি: DW/K. Saleh
দুধে সীসা, অ্যান্টিবায়োটিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিচার্স সেন্টারে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের দুধ পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার পর সেটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়৷ এরমধ্যে ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সীসা পাওয়ার কথা হাইকোর্টকে জানায় সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ৷ শুধু ভেজাল নয়, নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করার ঘটনাও আছে৷
ছবি: Getty Images
বিষাক্ত এনার্জি ড্রিংক ও জুস
এনার্জি ড্রিংক বলে কোনো পণ্যসামগ্রী উৎপাদন বা বাজারজাতের জন্য বিএসটিআই কোনো রকম অনুমোদন দেয় না৷ তা সত্ত্বেও অনুমোদন পাওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্র বিএসটিআই কার্যালয়ে জমা দিয়েই উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি৷
ছবি: bdnews24.com
মসলায় রঙ, ইট ও কাঠের গুঁড়া
অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রঙ, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশান৷ বিএসটিআই ও ক্যাবের অনুসন্ধানে মাঝেমধ্যে এমন চিত্র বেরিয়ে আসে৷ কিন্তু এসবের শেষ যেন নেই৷
ছবি: bdnews24.com
ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল
পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড, উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তরে অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রঙ ও তাজা রাখতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন উপায় নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ ক্ষেত শুরু করে উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ সব পর্যায়ে মিশ্রণ ঘটানো হয় এসবের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বেকারির অস্বাস্থ্যকর খাবার
রাজধানীসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর বেকারি৷ নোংরা, দূষিত পরিবেশে তৈরি হয় রুটি, বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন পণ্য৷ উৎপাদন ব্যয় কমাতে বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের ঘটনা ঘটে অনেকক্ষেত্রে৷
ছবি: bdnews24.com
জলে মলের জীবাণু
ঢাকার বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) একদল গবেষক৷ এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিএসটিআই নির্ধারিত মান না পাওয়ার তথ্য উঠে আসে ওই গবেষণায়৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ
সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একজন উপপরিচালক জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির তথ্য পেয়েছেন তারা৷ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের বাজার তদারকি প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়ার কথা জানান তিনি৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
মাঝে মধ্যে এর মধ্যে তেলাপোকা, কিংবা জানা বা অজানা পোকা পেয়ে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই করবেন৷ কিন্তু রেস্তোরাঁর বসার জায়গার নান্দনিকতা দেখে ভেতরের অবস্থা কী সে বিষয়ে কখনোই প্রশ্ন করবেন না৷ ফুচকার মতো স্ট্রিটফুড, বেকারির বিস্কুট কিংবা লাচ্ছা সেমাই তৈরির জায়গাগুলো নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদনের আগে যেমন কেউই জানতেন না কোথায় তৈরি হয় এসব খাবার৷ তেমনি বড় বড় রেস্তোরাঁর কিচেন না দেখলে কখনো বিশ্বাসই করবেন না কতটা নোংরা পরিবেশে আপনার জন্য তৈরি হচ্ছে কাচ্চি বা চিকেন পারমিজানের মতো মুখরোচক খাবার৷ আন্তর্জাতিক রেস্তোরাঁ নিয়ম অনুযায়ী কিচেনে টয়লেট থাকতে পারবে না৷ কিন্তু ঢাকার বেশিরভাগ রেস্তোরাঁর কিচেনে থাকে টয়লেট, সেখানেই কর্মীরা যাচ্ছে শৌচকর্ম সারতে পাশাপাশি রান্নার যাবতীয় ধোয়ার কাজও সেখানেই হচ্ছে৷ হাতে গোনা অল্প কয়েকটা রেস্তোরাঁর কিচেনের পরিবেশ সুন্দর৷ কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই৷ আমরা শুধু ইয়াম্মি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতেই ব্যস্ত ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা শূন্যের কোটায় বলে এইসব দিকে কখনো নজর দেই না বা প্রতিবাদ করি না৷
অবশ্য প্রায় সাড়ে চার লাখ রেস্তোরার পরিবেশ ঠিক করতে কতশত কর্মী প্রয়োজন সেটির ব্যয় বহন করতে আদৌ রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ রাজী কিনা এগুলো সবই দেখার ও ভাববার বিষয়৷ কারণ একজন কর্মী মানেই তার সারাদিনের খাওয়ার খরচ, বেতন, থাকার খরচ, এর সঙ্গে ক্লিনিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যয়৷ এতটা খরচ কেউই করতে ইচ্ছুক নয় লাভের দুনিয়ায়৷
কথিত আছে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ৪০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ থাকে৷ ব্যক্তিগত ক্যাটারিং অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ভেজাল এড়িয়ে শতভাগ ভোজ্য খাদ্যপণ্য ও পরিচ্ছন্ন কিচেনে ফুড গ্রেডের বাসনে খাবার দিতে গেলে আপনার লাভের চিন্তা দূরে খরচ উঠিয়ে আনাটাই মাঝে মাঝে দূরহ হয়ে পড়ে৷ একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাই এসব ঝামেলাতেই যান না৷ শুরুই করেন তেলের বদলে পামওয়েল দেওয়া খাবার বিক্রি করতে৷ এতে দেশে কতজন তরুণ হৃদরোগের ঝুঁকিতে পড়ছেন, কিংবা গত এক বছরে ২০-৪০ বছর বয়সী লোক হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন সেই তথ্য আপনাদের না জানলেও চলবে৷ শুধু ব্যবসা করে অর্থ উপার্জনটিই গুরুত্বপূর্ণ৷
খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে একটি জিনিসই অনুধাবন করেছি বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ- যে দেশে শিশুখাদ্যে সীসা, লৌহকনা, প্লাস্টিক, ইটের গুঁড়া, চকের গুঁড়া ব্যবহার করা হয়৷ কোনো ব্যবসায়ী কখনোই চিন্তা করেননি তার বিক্রি করা খাবারটি তার সন্তানও খাবে, তার আত্মীয়-পরিজন সবাই খাবে৷ অবশ্য এইসব নীতি নৈতিকতার ধার ধারলে তো ব্যবসায়ীরা শীর্ষ ধনীদের তালিকায় থাকতে পারবেন না৷
বরং সামনে আসছে রমজান মাস৷ এই মাসে খাদ্য গ্রহণ ও ব্যয় যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়ে যায়৷ আগাম জানিয়ে রাখছি এই সময় চকবাজারের মতো ঐতিহ্যবাহী ইফতারের দোকানে- হাইড্রোজ দেওয়া মুচমুচে জিলাপি, স্যাকারিনে ডোবানো কুড়কুড়ে, ডায়িংয়ের রঙ দেওয়া শরবত ও কাবার টিকিয়া, ইউরিয়ায় ভাজা মুড়ি ও চিড়ায় বানানো বড় বাপের পোলায় খায় আপনার জন্য অপেক্ষা করছে৷ পাশাপাশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া ট্যাং, খেজুরসহ আরও অনেক পণ্যে বাজার সয়লাব হয়ে যাবে৷ ফ্রোজেন চিকেন, বিফ, মরা মুরগি বা কার্বাইড দেওয়া সব্জির আলাপে নাইবা গেলাম৷ রেস্তোরাঁগুলোতে সাজানো হবে নানাবিধ মুখরোচক খাবারের পসরা, পেঁয়াজু, বেগুনী চপের মতো খাবার দীর্ঘক্ষণ খাবার মুচমুচে রাখতে তেলের সঙ্গে মেশানো হবে ডিজেল বা মোবিল৷ ভোজ্য তেলের সঙ্গে ডিজেল বা মোবিল ব্যবহার করলে খাবার মুচমুচে থাকে এই আবিষ্কারককে একটি সম্মাননা দেওয়া সময়ের দাবি৷ সুতরাং ঢাকার প্রায় দুই লাখ রেস্তোরাঁর খাবার খেতে প্রস্তুত হয়ে যান আপনারা৷
সঙ্গে এও জানিয়ে রাখছি- গতবছর দেশে মোট মৃত্যুর ৩৪ শতাংশ ঘটেছে হৃদরোগে৷ এর মধ্যে বায়ুদূষণ ও খাদ্যে ভেজাল অন্যতম কারণ৷ সরাসরি খাবার থেকে ক্রোমিয়ামের মতো ধাতু গ্রহণ করে ক্যান্সার রোগীর হার কতটা বেড়েছে সেই তথ্যটাও জেনে নেবেন প্লিজ৷ পাশাপাশি রেস্তোরাঁর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশটাতেও নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি সচেতন নাগরিকদের ও হালের ফুড ক্রিটিক, গবেষক ও ব্লগারদের৷ শুরুটা তো কাউকে না কাউকে করতেই হবে৷
পুরান ঢাকার জনপ্রিয় যত খাবার
পুরান ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে দারুণ সব খাবার৷ কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, পুরি, কাবাব, বাকরখানিসহ অনেক জনপ্রিয় খাবারের ঠিকানাই পুরান ঢাকা৷ ছবিঘরে তেমন কিছু খাবার ও তার প্রাপ্তিস্থানের কথা...
ছবি: Rajib Paul
হাজী বিরিয়ানি
পুরান ঢাকায় বিরিয়ানি দারুণ জনপ্রিয়৷ উপরের সারিতেই মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানি৷১৯৩৯ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন৷ বংশপরম্পরায় তার নাতিরা এখন ব্যবসা দেখছেন৷খাসির মাংস দিয়ে অপূর্ব রন্ধনশৈলী মানেই হাজী বিরিয়ানি৷ প্রতি প্লেট ২০০ টাকা (হাফ)৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে ৭০ নম্বর দোকানটি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
নান্নার মোরগ পোলাও
হাজী নান্না বিরিয়ানির মোরগ পোলাও ভোজনরসিকদের খুব প্রিয়৷ পুরান ঢাকার বাবুর্চি হাজী নান্না মিয়া ১৯৬২ সালে শুরু করেন এই ব্যবসা৷ পরিবারের সদস্যরা সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন৷ নান্নার মোরগ পোলাও প্রতি প্লেট ১৫০ টাকা (হাফ)৷ এছাড়া আছে খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি৷ এখানে প্রতি মাসের ৫ তারিখে গোটা মোরগের কাচ্চি বিক্রি হয়৷ বেচারাম দেউড়িতে ৪১ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
হানিফ বিরিয়ানি
বহু বছর ধরে স্বাদ, মান ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে হানিফ বিরিয়ানি৷ এটি যাত্রা শুরু করে ১৯৭৫ সালে৷ পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ এটির প্রতিষ্ঠাতা৷ ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি ব্যবসার হাল ধরেন৷ এখানকার প্রধান আকর্ষণ খাসির বিরিয়ানি৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে ৩০ নম্বর দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিরিয়ানিপ্রেমীদের ভিড় চোখে পড়বেই৷
ছবি: Rajib Paul
ঝুনুর মোরগ পোলাও
দেশি মোরগ দিয়ে রান্না হয় মজাদার ঝুনুর পোলাও৷ এটি পুরান ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ৷ হাফ প্লেট মোরগ পোলাও ১৭৫ টাকা, ফুল প্লেট ৩৬০ টাকা৷ এতে থাকে এক টুকরো মাংস, একটি ডিম, মুরগির গিলা-কলিজা-মাথা ভুনা৷ নারিন্দা রোডের ১১ নম্বরে ঝুনু পোলাও ঘর৷ ১৯৭০ সালে নূর মোহাম্মদ তার মেয়ে ঝুনুর নামে দোকানের নাম রাখেন৷ প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে বেচাকেনা চলে
ছবি: Rajib Paul
নীরব হোটেলের ভর্তা-ভাজি
ভর্তা-ভাজির কথা বললেই জিভে জল আসে৷ নাজিমউদ্দিন রোডের ১১৪ নম্বরে নীরব হোটেলের তাই আলাদা সুখ্যাতি আছে৷ দুপুর ও রাতে ২০-২৫ পদের ভর্তা-ভাজির পসরা বসে এখানে৷ নীরব হোটেল তাই সরব থাকে দিনভর৷ ভর্তা-ভাজি দিয়ে পেট পুরে খাওয়া যায়৷ এছাড়া মাংসের কালাভুনা ও মগজ ভুনা জনপ্রিয়৷ দোকানটি খোলা থাকে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বুদ্দুর খাসির কাচ্চি
বাসমতি চাল দিয়ে রান্না করা বুদ্দুর খাসির কাচ্চি বেশ লোভনীয়৷ হাফ প্লেটের দাম ১৫০ টাকা, ফুল প্লেটের দাম ২৫০ টাকা৷ ১৯৫৯ সালে বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু করেন বুদ্দু মিয়া৷ তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ রানা এখন ব্যবসা দেখভাল করছেন৷ বুদ্দু বিরিয়ানি হাউজে খাসির কাচ্চির পাশাপাশি মোরগ পোলাও জনপ্রিয়৷ ফরিদাবাদের হরিচরণ রায় রোডে ৫৬ নম্বর দোকানটিতে বেচাকেনা হয় সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বিউটি লাচ্ছি
ঐতিহ্যবাহী বিউটি লাচ্ছির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২২ সালে৷ এটির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ৷ আগামী জুনে শতবর্ষের মাইলফলক স্পর্শ করবে দোকানটি৷ বর্তমানে আজিজের দুই নাতি পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য সুনামের সঙ্গে ধরে রেখেছেন৷ ৩০/১ জনসন রোডে অবস্থিত বিউটি লাচ্ছি-ফালুদা৷ লাচ্ছি প্রতি গ্লাস ৪০ টাকা, ফালুদা ৭০ থেকে ৯০ টাকা৷ দোকানটি খোলা থাকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর
ঐতিহ্যবাহী কাবাবের জন্য ভোজনরসিকদের কাছে অনন্য বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত এই দোকানে আছে গরুর মাংসের চাপ, গরুর বটি কাবাব, মুরগির পায়ের চাপ ও ব্রেস্ট চাপ, খাসির গুর্দা কাবাব, গরু ও খাসির খিরি কাবাব ও মগজ ফ্রাই৷ এগুলির দাম ৯০ থেকে ১৪০ টাকা৷ ১৯৮৭ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. খোরশেদ৷ তার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন বড় ছেলে হাবিবুর রহমান৷
ছবি: Rajib Paul
বুদ্দুর পুরি
স্বাদ ও ঘ্রাণের দিক দিয়ে বুদ্দুর পুরি অতুলনীয়৷ ১৯৫০ সালে সূত্রাপুরের ডালপট্টিতে প্রতিষ্ঠিত বুদ্দুর হোটেলে এখন প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি পুরি তৈরি হয়৷ এজন্য লাগে মণখানেক আটা৷ এখানকার বিশেষ পদ ডিম পুরি৷ বুদ্দুর নামকরা ডালপুরির দাম ৫ টাকা, ডিমপুরি ২০ টাকা৷ হেমন্ত দাস রোডে ৩৫ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি
মোগল আমলের প্রসিদ্ধ খাবার বাকরখানি৷ উত্তাপ ছড়ানো জ্বলন্ত কয়লায় ময়দা দিয়ে তৈরি হয় বাকরখানি৷ জনশ্রুতি আছে, জমিদার আগা বাকের ও তার প্রেয়সী মুর্শিদাবাদের নর্তকি খনি বেগমের নাম মিলিয়ে এর নামকরণ হয়৷ লালবাগ কেল্লার কাছে প্রথম বাকরখানি বিক্রি হতো৷ পুরান ঢাকার ছোট-বড় সব গলিতে এসব দোকান চোখে পড়ে৷ এগুলোতে বিভিন্ন আকৃতি ও স্বাদের বাকরখানি পাওয়া যায়৷ প্রতিটির দাম ২ থেকে ৪ টাকা৷
ছবি: Rajib Paul
কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁর চপ, কাটলেট
সুস্বাদু খাবারের জন্য ৪৪ বছরের পুরনো কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁ রসনাবিলাসীদের প্রিয়৷ ১৯৭৮ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ৷ পুরান ঢাকার কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষকদের আড্ডার জায়গা ছিল এটি৷ এখানে পাওয়া যায় চপ, কাটলেট, মোগলাই পরোটা, চিকেন ফ্রাই ও স্যুপ৷ দাম ১০ থেকে ৫৫ টাকা৷ গেন্ডারিয়ায় কেশব ব্যানার্জি রোডে ৩৪/১ নম্বর দোকানটি খোলা থাকে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
নবাবি ডাইন
বৈচিত্র্যময় পদের সুবাদে বেশ নাম করেছে নবাবি ডাইন৷ এখানে টুনা, কোরাল, রূপচাঁদা, তেলাপিয়া ও পোয়া মাছ এবং অক্টোপাস ও স্কুইডের বার-বি-কিউ পাওয়া যায়৷ এছাড়া রয়েছে কাঁকড়া, ব্যাম্বু চিকেন, পাহাড়ি কাবাব ও চিংড়ি কাবাব৷ ওয়ারির টিপু সুলতান রোডে ২৫/১ নম্বর দোকানটি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
আলাউদ্দিনের মিষ্টি
ঐতিহ্যের পরশে জৌলুস ধরে রেখেছে আলাউদ্দিন সুইটমিট৷ ভারতের লক্ষ্মৌ থেকে চকবাজারে এসে মিষ্টি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হালওয়াই ১৮৯৪ সালে গড়ে তোলেন আলাউদ্দিন সুইটমিট৷ এটি ঢাকায় প্রথম নামকরা মিষ্টির দোকান৷ এখানকার মিষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য– জাফরানি মিষ্টি, স্পঞ্জ রসগোল্লা, ইত্যাদি৷ ১৫৬ বছরের পুরনো দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে৷
ছবি: Rajib Paul
সুস্বাদু মাঠা
স্বাদে-গুণে খাঁটি মাঠা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার৷ নবাবপুর রোডে রথখোলার মোড়ে ৪০ বছর ধরে মাঠা বিক্রি করছেন বাবুল দাস৷ ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা৷ দুধ, টক দই, ছানা ও লবণ দিয়ে মাঠা বানিয়ে পরিবেশন করেন তিনি৷ প্রতি গ্লাস ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা৷ রথখোলার মোড়ে আড়ত থেকে দুধ সংগ্রহ করেন বাবুল দাস৷ পাশেই আদি মরণচাঁদ ঘোষ অ্যান্ড সন্স দোকানটি রয়েছে৷
ছবি: Rajib Paul
নিউ ক্যাফে কর্নারের ক্রামচাপ
ছয় দশক ধরে চিরচেনা স্বাদ ধরে রেখেছে ‘নিউ ক্যাফে কর্নার’৷ কবি-সাহিত্যিকরা এখানে আড্ডা দিতেন এক সময়৷ ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন হরিনারায়ণ ঘোষ। এর বর্তমান স্বত্বাধিকারী হাজী সোলায়মান৷ রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয় পদ ক্রামচাপ ব্রিটিশরা পছন্দ করতো৷ ১৫০ টাকায় খাসির মাংসের এই সুস্বাদু খাবারটি পাউরুটির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়৷ এছাড়া রয়েছে খাসির ভুনা, মোরগ পোলাও, আলুর চপ, মোগলাই, কাটলেট ও চিকেন ফ্রাই৷
ছবি: Rajib Paul
গ্র্যান্ড নবাব
নান্দনিক নবাবি অন্দরসজ্জা ও সুস্বাদু খাবারের মিশেল হল গ্র্যান্ড নবাব৷ এখানকার জনপ্রিয় পদ বার বি কিউ কাচ্চি বিরিয়ানি (২২০ টাকা), খাসির লেগ কাচ্চি (৩০০ টাকা), বার বি কিউ চিকেন রোস্ট (১২০ টাকা), জাফরানি শরবত (২৮০ টাকা)৷ সাত রওজার কাছে আবুল হাসনাত রোডে ১৩/১ নম্বর দোকানটিতে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়৷