গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমের আলোচনায় সুলতান’স ডাইনের বিরিয়ানি৷ সংবাদকর্মী হওয়ার পাশাপাশি ‘বিরিয়ানি’ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ থাকায় দেশের শীর্ষ কয়েকটি অনলাইন ও ছাপা কাগজে খবরটি খুঁটিয়ে পড়লাম৷
বিজ্ঞাপন
সমস্ত পড়ে ভোজনরসিক (আমি বলি খাদ্যপ্রেমী, বন্ধুরা বলে খাদক!) হিসেবে মনে হলো ঢাকার খাবার নিয়ে অনেক কথাই বলার আছে৷
ঢাকা শহরে বাস করার অসংখ্য প্রতিবন্ধকতার পরও যে কয়েকটি ভালো লাগা রয়েছে তার একটি খাবার৷ আরও নির্দিষ্ট করে বললে খাবারের জায়গা৷ এই মেগাসিটির ‘আপস্কার্ট’, ‘ডাউনটাউন’সহ অলি-গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য খাবারের দোকান৷ শুধু যে বাংলাদেশিদের প্রিয় ডাল-ভাত-মাছ-ভর্তার দোকানের আধিক্য তা নয়, বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচ, পাস্তার মতো ‘কমফোর্ট ফুড’ রেস্তোরাঁও আছে প্রায় সবখানে৷
নানা দেশের খাবারের বিশেষায়িত রেস্তোরাঁর পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি, তেহারি, কাবাব, নেহারির দোকানের আধিক্য৷ এ কারণে আমার মতো ভোজনরসিকের কাছে ঢাকা শহরের আবেদন ভিন্ন৷ প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার অজুহাতে নানা রেস্তোরাঁয় খাওয়া এখন আমার দৈনন্দিন রুটিনের অংশ৷ মাঝে মধ্যে কোনো সঙ্গ ছাড়াই শুধু রসনাবিলাসের উদ্দেশেও ঢুঁ মারা হয় প্রিয় কিংবা নতুন কোনো রেস্তোরাঁয়৷
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক বের করে৷ ছবিঘরে ২০২২ সালের সূচকের তথ্য থাকছে৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক
ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক বের করে৷ ২০২২ সালের সূচকে ১১৩টি দেশের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে৷ চারটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সূচকটি তৈরি করা হয়৷ এগুলো হচ্ছে খাবার কেনার ক্ষমতা; খাবারের প্রাপ্যতা; মান ও নিরাপত্তা; এবং একটি দেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তা মোকাবিলা করা ক্ষমতা৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বাংলাদেশের অবস্থান ৮০
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচক ২০২২-এ ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০৷ দক্ষিণ এশিয়ায় এই সূচকে সবার আগে আছে ভারত (৬৮)৷ তারপর নেপাল (৭৪), শ্রীলঙ্কা (৭৯) ও পাকিস্তান (৮৪)৷
ছবি: Rajib Paul/DW
খাদ্য নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশের অবস্থান
সূচকে চারটি বিবেচ্য বিষয়ের একটি খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা৷ এই বিভাগে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১৷ একটি দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আইন আছে কিনা, এবং সেটি গত ৫-১০ বছরে হালনাগাদ করা হয়েছে কিনা তারও স্কোর দিয়ে থাকে ইকোনমিস্ট৷ এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের স্কোর ৫০, যা বৈশ্বিক গড়ের (৭০.৮) চেয়ে কম৷
ছবি: Rajib Paul/DW
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের অবস্থান
বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা সূচকের মান ও নিরাপত্তা বিভাগেও দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এগিয়ে আছে (৬৭)৷ এরপরেই আছে বাংলাদেশ (৭১), তারপর নেপাল (৭২), শ্রীলঙ্কা (৮১) ও পাকিস্তান (৯৭)৷ এর মধ্যে পাকিস্তান কোনো খাদ্য নিরাপত্তা আইন নেই বলে জানিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট৷
ছবি: Rajib Paul/DW
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আইন
২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন পাস হয়৷ এরপর ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়৷ তবে পুরোদমে কাজ শুরু করে ২০২০ সালে৷
ছবি: Rajib Paul/DW
যেমন চলছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ
জনবল সংখ্যা ১৫০ জনের মতো৷ উপজেলা তো দূরের কথা সব জেলায়ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিস নেই৷ সংস্থার সচিব আব্দুন নাসের খান বলেন, ‘‘শুধু হোটেল নয়, সবধরনের খাদ্যই আমরা দেখি৷ তবে জেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা যেতে পেরেছি৷ তাও জেলায় একজন কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহায়ক নিয়ে কাজ করতে হয়৷ আমরা অন্যান্য দপ্তরের সহায়তা নিই৷ সেটাও সবসময় পাওয়া যায় না৷’’
ছবি: Rajib Paul/DW
6 ছবি1 | 6
ঢাকা শহরে মোটা দাগে চার ধরণের রেস্তোরাঁ চোখে পড়ে:
১৷ পাড়ার হোটেল: মেন্যুতে সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুর ও রাতের ভাত-ডাল-মাছ-মাংস এবং বিকেলে নান ও চিকেন গ্রিলের (আদতে চিকেন বারবিকিউ) দোকান৷ ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকায় মনে হয় বিসমিল্লাহ হোটেল নামে একটা করে খাবারের রেস্তোরাঁ আছে৷
২৷ এলাকার জনপ্রিয় ‘কমফোর্ট ফুড’ রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে: বার্গার, পিৎজা, পাস্তাসহ, কফি এখানে সহজলভ্য৷ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারাই এর মূল ভোক্তা৷ ধানমন্ডি, বেইলি রোড, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, খিলগাঁওসহ প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে এমন এক বা একাধিক রেস্তোরাঁর হাব৷ পিৎজা হাট, বার্গার কিং, কেএফসি, ডমিনোসের মতো বিখ্যাত কমফোর্ট ফুড চেইনগুলোও এর মধ্যে পড়ে৷
৩৷ ফ্যামিলি ডাইনিং রেস্তোরাঁ: নানা দেশের কুইজিন সমৃদ্ধ বিশেষায়িত রেস্তোরাঁ৷ লেবানিজ, তুর্কি, কোরিয়ান, জাপানিজ, চাইনিজ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও অন্যান্য দেশের খাবার পাওয়া যায় এগুলোতে৷ পারিবারিক গেট টুগেদার বা চাকরিজীবীদের মান সম্পন্ন খাবারের চাহিদা মেটানোর মতো করে গড়ে উঠেছে এগুলো৷ এর মধ্যে বুফে রেস্তোরাঁগুলোর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে৷
৪৷ তারকা রেস্তোরাঁ: পাঁচ কিংবা চার তারকার হোটেল বা একই মানের রেস্তোরাঁ৷ এর বেশিরভাগ গুলশান, বনানী, উত্তরা ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকাগুলোতে অবস্থিত৷ সেগুলোর খাবারের খরচ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে৷
মোটা দাগে বলা যেতে পারে এর মধ্যেই ঢাকার হাজারো রেস্তোরাঁগুলো পড়ে৷ এর বাইরেও হয়ত কিছু রেস্তোরাঁ আছে৷
রেস্তোরাঁ যে ধরনেরই হোক না কেন খেতে যাওয়ার আগে যে বিষয়টা আমি মাথায় রাখি (খাবারের মান ও দাম ছাড়া) তা হলো সেবা৷ এরমধ্যে রেস্তোরাঁ কর্মীদের খাবার পরিবেশনসহ বিভিন্ন কিছু খেয়াল রাখা জরুরি৷ যেমন, মানসম্মত পরিবেশ, কর্মীদের আন্তরিকতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ওয়াশরুমের সহজলভ্যতা৷ কিন্তু ঢাকার অধিকাংশ রেস্তোরাঁতেই এগুলো অনুপস্থিত৷
পুরান ঢাকার জনপ্রিয় যত খাবার
পুরান ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে আছে দারুণ সব খাবার৷ কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, পুরি, কাবাব, বাকরখানিসহ অনেক জনপ্রিয় খাবারের ঠিকানাই পুরান ঢাকা৷ ছবিঘরে তেমন কিছু খাবার ও তার প্রাপ্তিস্থানের কথা...
ছবি: Rajib Paul
হাজী বিরিয়ানি
পুরান ঢাকায় বিরিয়ানি দারুণ জনপ্রিয়৷ উপরের সারিতেই মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী হাজী বিরিয়ানি৷১৯৩৯ সালে হাজী মোহাম্মদ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন৷ বংশপরম্পরায় তার নাতিরা এখন ব্যবসা দেখছেন৷খাসির মাংস দিয়ে অপূর্ব রন্ধনশৈলী মানেই হাজী বিরিয়ানি৷ প্রতি প্লেট ২০০ টাকা (হাফ)৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে ৭০ নম্বর দোকানটি খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
নান্নার মোরগ পোলাও
হাজী নান্না বিরিয়ানির মোরগ পোলাও ভোজনরসিকদের খুব প্রিয়৷ পুরান ঢাকার বাবুর্চি হাজী নান্না মিয়া ১৯৬২ সালে শুরু করেন এই ব্যবসা৷ পরিবারের সদস্যরা সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন৷ নান্নার মোরগ পোলাও প্রতি প্লেট ১৫০ টাকা (হাফ)৷ এছাড়া আছে খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি৷ এখানে প্রতি মাসের ৫ তারিখে গোটা মোরগের কাচ্চি বিক্রি হয়৷ বেচারাম দেউড়িতে ৪১ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
হানিফ বিরিয়ানি
বহু বছর ধরে স্বাদ, মান ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে হানিফ বিরিয়ানি৷ এটি যাত্রা শুরু করে ১৯৭৫ সালে৷ পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ এটির প্রতিষ্ঠাতা৷ ২০০৫ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি ব্যবসার হাল ধরেন৷ এখানকার প্রধান আকর্ষণ খাসির বিরিয়ানি৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে ৩০ নম্বর দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বিরিয়ানিপ্রেমীদের ভিড় চোখে পড়বেই৷
ছবি: Rajib Paul
ঝুনুর মোরগ পোলাও
দেশি মোরগ দিয়ে রান্না হয় মজাদার ঝুনুর পোলাও৷ এটি পুরান ঢাকার অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ৷ হাফ প্লেট মোরগ পোলাও ১৭৫ টাকা, ফুল প্লেট ৩৬০ টাকা৷ এতে থাকে এক টুকরো মাংস, একটি ডিম, মুরগির গিলা-কলিজা-মাথা ভুনা৷ নারিন্দা রোডের ১১ নম্বরে ঝুনু পোলাও ঘর৷ ১৯৭০ সালে নূর মোহাম্মদ তার মেয়ে ঝুনুর নামে দোকানের নাম রাখেন৷ প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এখানে বেচাকেনা চলে
ছবি: Rajib Paul
নীরব হোটেলের ভর্তা-ভাজি
ভর্তা-ভাজির কথা বললেই জিভে জল আসে৷ নাজিমউদ্দিন রোডের ১১৪ নম্বরে নীরব হোটেলের তাই আলাদা সুখ্যাতি আছে৷ দুপুর ও রাতে ২০-২৫ পদের ভর্তা-ভাজির পসরা বসে এখানে৷ নীরব হোটেল তাই সরব থাকে দিনভর৷ ভর্তা-ভাজি দিয়ে পেট পুরে খাওয়া যায়৷ এছাড়া মাংসের কালাভুনা ও মগজ ভুনা জনপ্রিয়৷ দোকানটি খোলা থাকে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বুদ্দুর খাসির কাচ্চি
বাসমতি চাল দিয়ে রান্না করা বুদ্দুর খাসির কাচ্চি বেশ লোভনীয়৷ হাফ প্লেটের দাম ১৫০ টাকা, ফুল প্লেটের দাম ২৫০ টাকা৷ ১৯৫৯ সালে বিরিয়ানির ব্যবসা শুরু করেন বুদ্দু মিয়া৷ তার ছেলে হাজী মোহাম্মদ রানা এখন ব্যবসা দেখভাল করছেন৷ বুদ্দু বিরিয়ানি হাউজে খাসির কাচ্চির পাশাপাশি মোরগ পোলাও জনপ্রিয়৷ ফরিদাবাদের হরিচরণ রায় রোডে ৫৬ নম্বর দোকানটিতে বেচাকেনা হয় সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বিউটি লাচ্ছি
ঐতিহ্যবাহী বিউটি লাচ্ছির যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২২ সালে৷ এটির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ৷ আগামী জুনে শতবর্ষের মাইলফলক স্পর্শ করবে দোকানটি৷ বর্তমানে আজিজের দুই নাতি পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য সুনামের সঙ্গে ধরে রেখেছেন৷ ৩০/১ জনসন রোডে অবস্থিত বিউটি লাচ্ছি-ফালুদা৷ লাচ্ছি প্রতি গ্লাস ৪০ টাকা, ফালুদা ৭০ থেকে ৯০ টাকা৷ দোকানটি খোলা থাকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর
ঐতিহ্যবাহী কাবাবের জন্য ভোজনরসিকদের কাছে অনন্য বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর৷ নাজিরা বাজারের কাজি আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত এই দোকানে আছে গরুর মাংসের চাপ, গরুর বটি কাবাব, মুরগির পায়ের চাপ ও ব্রেস্ট চাপ, খাসির গুর্দা কাবাব, গরু ও খাসির খিরি কাবাব ও মগজ ফ্রাই৷ এগুলির দাম ৯০ থেকে ১৪০ টাকা৷ ১৯৮৭ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন মো. খোরশেদ৷ তার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন বড় ছেলে হাবিবুর রহমান৷
ছবি: Rajib Paul
বুদ্দুর পুরি
স্বাদ ও ঘ্রাণের দিক দিয়ে বুদ্দুর পুরি অতুলনীয়৷ ১৯৫০ সালে সূত্রাপুরের ডালপট্টিতে প্রতিষ্ঠিত বুদ্দুর হোটেলে এখন প্রতিদিন আড়াই হাজারের বেশি পুরি তৈরি হয়৷ এজন্য লাগে মণখানেক আটা৷ এখানকার বিশেষ পদ ডিম পুরি৷ বুদ্দুর নামকরা ডালপুরির দাম ৫ টাকা, ডিমপুরি ২০ টাকা৷ হেমন্ত দাস রোডে ৩৫ নম্বর দোকানটি প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সকাল ১১টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি
মোগল আমলের প্রসিদ্ধ খাবার বাকরখানি৷ উত্তাপ ছড়ানো জ্বলন্ত কয়লায় ময়দা দিয়ে তৈরি হয় বাকরখানি৷ জনশ্রুতি আছে, জমিদার আগা বাকের ও তার প্রেয়সী মুর্শিদাবাদের নর্তকি খনি বেগমের নাম মিলিয়ে এর নামকরণ হয়৷ লালবাগ কেল্লার কাছে প্রথম বাকরখানি বিক্রি হতো৷ পুরান ঢাকার ছোট-বড় সব গলিতে এসব দোকান চোখে পড়ে৷ এগুলোতে বিভিন্ন আকৃতি ও স্বাদের বাকরখানি পাওয়া যায়৷ প্রতিটির দাম ২ থেকে ৪ টাকা৷
ছবি: Rajib Paul
কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁর চপ, কাটলেট
সুস্বাদু খাবারের জন্য ৪৪ বছরের পুরনো কিছুক্ষণ রেস্তোরাঁ রসনাবিলাসীদের প্রিয়৷ ১৯৭৮ সালে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ৷ পুরান ঢাকার কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষকদের আড্ডার জায়গা ছিল এটি৷ এখানে পাওয়া যায় চপ, কাটলেট, মোগলাই পরোটা, চিকেন ফ্রাই ও স্যুপ৷ দাম ১০ থেকে ৫৫ টাকা৷ গেন্ডারিয়ায় কেশব ব্যানার্জি রোডে ৩৪/১ নম্বর দোকানটি খোলা থাকে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত৷
ছবি: Rajib Paul
নবাবি ডাইন
বৈচিত্র্যময় পদের সুবাদে বেশ নাম করেছে নবাবি ডাইন৷ এখানে টুনা, কোরাল, রূপচাঁদা, তেলাপিয়া ও পোয়া মাছ এবং অক্টোপাস ও স্কুইডের বার-বি-কিউ পাওয়া যায়৷ এছাড়া রয়েছে কাঁকড়া, ব্যাম্বু চিকেন, পাহাড়ি কাবাব ও চিংড়ি কাবাব৷ ওয়ারির টিপু সুলতান রোডে ২৫/১ নম্বর দোকানটি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত জমজমাট থাকে৷
ছবি: Rajib Paul
আলাউদ্দিনের মিষ্টি
ঐতিহ্যের পরশে জৌলুস ধরে রেখেছে আলাউদ্দিন সুইটমিট৷ ভারতের লক্ষ্মৌ থেকে চকবাজারে এসে মিষ্টি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন হালওয়াই ১৮৯৪ সালে গড়ে তোলেন আলাউদ্দিন সুইটমিট৷ এটি ঢাকায় প্রথম নামকরা মিষ্টির দোকান৷ এখানকার মিষ্টির মধ্যে উল্লেখযোগ্য– জাফরানি মিষ্টি, স্পঞ্জ রসগোল্লা, ইত্যাদি৷ ১৫৬ বছরের পুরনো দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে৷
ছবি: Rajib Paul
সুস্বাদু মাঠা
স্বাদে-গুণে খাঁটি মাঠা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার৷ নবাবপুর রোডে রথখোলার মোড়ে ৪০ বছর ধরে মাঠা বিক্রি করছেন বাবুল দাস৷ ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে ব্যস্ততা৷ দুধ, টক দই, ছানা ও লবণ দিয়ে মাঠা বানিয়ে পরিবেশন করেন তিনি৷ প্রতি গ্লাস ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা৷ রথখোলার মোড়ে আড়ত থেকে দুধ সংগ্রহ করেন বাবুল দাস৷ পাশেই আদি মরণচাঁদ ঘোষ অ্যান্ড সন্স দোকানটি রয়েছে৷
ছবি: Rajib Paul
নিউ ক্যাফে কর্নারের ক্রামচাপ
ছয় দশক ধরে চিরচেনা স্বাদ ধরে রেখেছে ‘নিউ ক্যাফে কর্নার’৷ কবি-সাহিত্যিকরা এখানে আড্ডা দিতেন এক সময়৷ ১৯৬২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন হরিনারায়ণ ঘোষ। এর বর্তমান স্বত্বাধিকারী হাজী সোলায়মান৷ রেস্তোরাঁটির জনপ্রিয় পদ ক্রামচাপ ব্রিটিশরা পছন্দ করতো৷ ১৫০ টাকায় খাসির মাংসের এই সুস্বাদু খাবারটি পাউরুটির সঙ্গে পরিবেশন করা হয়৷ এছাড়া রয়েছে খাসির ভুনা, মোরগ পোলাও, আলুর চপ, মোগলাই, কাটলেট ও চিকেন ফ্রাই৷
ছবি: Rajib Paul
গ্র্যান্ড নবাব
নান্দনিক নবাবি অন্দরসজ্জা ও সুস্বাদু খাবারের মিশেল হল গ্র্যান্ড নবাব৷ এখানকার জনপ্রিয় পদ বার বি কিউ কাচ্চি বিরিয়ানি (২২০ টাকা), খাসির লেগ কাচ্চি (৩০০ টাকা), বার বি কিউ চিকেন রোস্ট (১২০ টাকা), জাফরানি শরবত (২৮০ টাকা)৷ সাত রওজার কাছে আবুল হাসনাত রোডে ১৩/১ নম্বর দোকানটিতে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বেচাকেনা হয়৷
ছবি: Rajib Paul
16 ছবি1 | 16
ঢাকার বিখ্যাত স্টার কাবাবের ধানমন্ডি শাখার (আবাহনী মাঠের উলটো দিকে অবস্থিত) উদাহরণ টানা যেতে পারে এখানে৷ সবসময় ভিড় লেগে থাকলেও, শাখাটিতে বসার জায়গা অপ্রতুল৷ বাইরে সাময়িকভাবে কিছু চেয়ার বসিয়ে ভিড় সামাল দেয়া হয়৷ স্টার কাবাবের অন্যান্য শাখায় রেস্টরুম বা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকলেও এ শাখাটিতে সেটি নেই৷ হাত ধোয়ার জায়গা নেই ঢাকার অন্যতম পুরনো দুই দোকান বিগ বাইট ও লা বাম্বারেও৷
আবার কেএফসির ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর যে ওয়াশরুম আছে সেগুলো ব্যবহারের উপযুক্ত নয়৷ কেএফসির মতো একটি বড় ব্র্যান্ডের সব দোকানের ওয়াশরুম কীভাবে এতটা নোংরা হতে পারে সে প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই৷
এরপর আসা যাক গ্রাহকসেবা প্রসঙ্গে৷ হোটেল, রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানের সঙ্গে যে আতিথেয়তার বিষয়টি জড়িত তা ঢাকার অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট কর্মীদের জানা নেই৷ শুধু গলির বিসমিল্লাহ হোটেলই আপনাকে খাইয়ে বিদায় করতে পারলে বাঁচে ব্যাপারটা এমন নয়, খরুচে ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট কিংবা পাঁচ তারকা হোটেলের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে অহরহ৷
এই প্রসঙ্গে সুলতান’স ডাইনের গ্রাহকসেবা নিয়ে বলতে চাই৷ এ কাচ্চি বিরিয়ানির চেইন রেস্তোরাঁর দুইটি শাখায় (ধানমন্ডি ও গুলশান) আমার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়৷ দুপুর কিংবা রাতের ব্যস্ততম সময়ে (দুপুর ১২টা থেকে ৩টা ও সন্ধ্যা ৮টা থেকে ৯টা) প্রচণ্ড ভিড়ে জায়গা মেলা দুষ্কর৷ কর্মীরা (ম্যানেজারসহ) অপেক্ষমান দেখার পরও সমাধান দিতে একেবারেই আগ্রহী নন৷
সুলতান'স ডাইন তাদের বিরিয়ানিতে ‘প্রচলিত ধারণায় অখাদ্য’ কোনো কিছুর মাংস দিচ্ছে না এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷ কিন্তু তাদের কাছ থেকে গ্রাহক সেবার প্রত্যাশা আরও বেশি৷
একই অভিজ্ঞতা এয়ারপোর্ট রোডের রিজেন্সি হোটেলেও৷ বুফে বুকিং দিয়ে তা ৮ ঘণ্টা আগে বাতিল করার পরেও অভ্যর্থনাকর্মীর রূঢ় আচরণের শিকার হতে হয়েছে৷ বনানীতে আমারি হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীদেরও রূঢ় ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়েছে৷ ডিনারের জন্য তাদের হোটেলে পৌঁছানোর পর জানা গেল হোটেল চত্বরে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না৷ রাখতে হবে রাস্তায়!
পদে পদে ভেজাল
বাংলাদেশ ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যদ্রব্যে সয়লাব৷ নামি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র খাবার দোকানও এর থেকে মুক্ত নয়৷ খাবারে ভেজালের কিছু চিত্র দেখে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: bdnews24.com
ফরমালিন
মাছ, ফলমূল, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যে ফরমালিন ব্যবহার হয় দেদারছে৷ মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ফরমালিনযুক্ত পণ্য জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়৷ ফরমালিন পাওয়া সহজলভ্য হওয়ায় তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না৷
ছবি: picture-alliance
কার্বাইড
কাঁচা ফলমূল পাকানোর জন্য ব্যবহার হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড৷ কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রোগে, বিশেষ করে বদহজম, পেটের পীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়৷
ছবি: DW/K. Saleh
দুধে সীসা, অ্যান্টিবায়োটিক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিচার্স সেন্টারে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের দুধ পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার পর সেটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়৷ এরমধ্যে ১১টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সীসা পাওয়ার কথা হাইকোর্টকে জানায় সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ৷ শুধু ভেজাল নয়, নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করার ঘটনাও আছে৷
ছবি: Getty Images
বিষাক্ত এনার্জি ড্রিংক ও জুস
এনার্জি ড্রিংক বলে কোনো পণ্যসামগ্রী উৎপাদন বা বাজারজাতের জন্য বিএসটিআই কোনো রকম অনুমোদন দেয় না৷ তা সত্ত্বেও অনুমোদন পাওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্র বিএসটিআই কার্যালয়ে জমা দিয়েই উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি৷
ছবি: bdnews24.com
মসলায় রঙ, ইট ও কাঠের গুঁড়া
অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রঙ, দুর্গন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া, ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশান৷ বিএসটিআই ও ক্যাবের অনুসন্ধানে মাঝেমধ্যে এমন চিত্র বেরিয়ে আসে৷ কিন্তু এসবের শেষ যেন নেই৷
ছবি: bdnews24.com
ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল
পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড, উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তরে অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রঙ ও তাজা রাখতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন উপায় নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ ক্ষেত শুরু করে উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ সব পর্যায়ে মিশ্রণ ঘটানো হয় এসবের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Singh
বেকারির অস্বাস্থ্যকর খাবার
রাজধানীসহ সারাদেশে গড়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর বেকারি৷ নোংরা, দূষিত পরিবেশে তৈরি হয় রুটি, বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন পণ্য৷ উৎপাদন ব্যয় কমাতে বেকারির খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নিম্নমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহারের ঘটনা ঘটে অনেকক্ষেত্রে৷
ছবি: bdnews24.com
জলে মলের জীবাণু
ঢাকার বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে সরবরাহ করা ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু ‘কলিফর্ম’ পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) একদল গবেষক৷ এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও বিএসটিআই নির্ধারিত মান না পাওয়ার তথ্য উঠে আসে ওই গবেষণায়৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ
সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একজন উপপরিচালক জানান, রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির তথ্য পেয়েছেন তারা৷ চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের বাজার তদারকি প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়ার কথা জানান তিনি৷
ছবি: bdnews24.com
9 ছবি1 | 9
অভিজাত হোটেলগুলোতে পড়তে হয় অন্যরকম বিড়ম্বনায়৷ বনানীর হোটেল শেরাটন, গুলশানের ওয়েস্টিন ও রেনেসাঁ আন্তর্জাতিক ম্যারিয়ট-বনভয় গ্রুপের সদস্য৷ ম্যারিয়ট-বনভয় গ্রুপের মেম্বারশিপ থাকার কারণে প্রতিবার ওই হোটেলগুলোতে খাওয়ার পর কিছু ‘রেওয়ার্ড পয়েন্টস’ পাওয়ার কথা৷ প্রতিবারই কর্মীরা আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন, ‘‘স্যার পয়েন্টস অ্যাড হয়ে যাবে দ্রুত৷’’ কিন্তু চার বছরে একবারও হয়নি!
এ বিষয়গুলো অনেকের চোখে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ কিন্তু পাঠক ও ভোজনরসিকেরা ভেবে দেখুন যেখানে আপনি খাবারের ওপর ১০ শতাংশ ভ্যাট ও ১৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিচ্ছেন (এর সঙ্গে যোগ করুন বাড়তে থাকা দাম!) সেখানে সেবাগুলো আপনার প্রাপ্য কিনা?
এবার আসা যাক খাবারের মানে৷ আমি পুষ্টি কিংবা খাদ্য বিশেষজ্ঞ নই৷ তবে, ভোজনরসিক হিসেবে খাবারের স্বাদ যাচাই করতে বিশেষ জ্ঞানের দরকার খুব একটা পড়ে না৷ পরিবেশিত খাবারের স্বাদ থেকে মান সম্বন্ধে অধিকাংশ সময়ে নিশ্চিত হওয়া যায়৷
অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি ঢাকার ১০টা রেস্তোরাঁর মধ্যে ৮টি রেস্তোরাঁর খাবারের মান ভালো নয়৷ শুধু ভালো নয় বললে ভুল হবে, অত্যন্ত নিম্নমানের৷ উপরে উল্লেখিত ‘ফ্যামিলি ডাইনিং রেস্তোরাঁ' ও এলাকার জনপ্রিয় ‘কমফোর্ট ফুডের’ দোকানের মেন্যুতে খাবারের মূল্য উচ্চমুখী, কিন্তু মান নিম্নমুখী৷
প্রায় সময়ই বাসি ও স্বাদহীন খাবার পরিবেশন করা হয়৷ ক্রেতারা অভিযোগ করলে শুরু হয় কর্মীদের অস্বীকার পর্ব৷ ‘স্বাদ ঠিকই আছে’, ‘অন্যদিন ঠিক থাকে আজকেই একটু এমন’ থেকে শুরু করে ‘ভালো না লাগলে অন্য রেস্তোরাঁয় যান’; এমন কথা শুনতে হয় ভোক্তাদের৷
খাদ্যপ্রেমী হিসেবে যারা নিয়মিত বাইরে খান তাদের কাছে অনুরোধ, নিজেদের সচেতনতা বাড়ান৷ যে খাবার খাচ্ছেন তাতে যথাযথ উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা, রেস্তোরাঁর অন্যান্য সুবিধাগুলো পাচ্ছেন কিনা, কর্মীদের ব্যবহার ঠিক আছে কিনা, যে খাবারটা পরিবেশন করা হলো তার স্বাদ ও মানসহ কিছু বিষয়ের মানদণ্ড করে ফেলতে পারেন৷ আমার প্রস্তাব যে কোনো একটাতে ঘাটতি থাকলে সেটি কর্তৃপক্ষকে জানান৷ জানানোর পর যদি সমাধান না আসে তাহলে পরের বার সে রেস্তোরাঁ পছন্দের তালিকা থেকে বাদ দিন৷
রাস্তার রেস্তোরাঁ
কলকাতায় প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ আসেন রুটি-রুজির তাগিদে৷ এঁদের পেট ভরানোর দায়িত্ব নেয় অফিসপাড়ার রাস্তার ধারের খাবারের দোকানগুলো৷ সারা ভারতের নানা স্বাদের খাবারের সমাহার দেখা যায় এখানে, যা খুব স্বাস্থ্যকর না হলেও সস্তা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
সব পাবেন
যা খেতে চান, সব পাবেন এখানে৷ পাশাপাশি ছাতার তলায়৷ অফিসপাড়ার টিফিনের সময় দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না এ সব রাস্তার ধারের রেস্তোরাঁয়৷ তবে সব কিন্তু অস্থায়ী৷ সন্ধের পর এলাকা শুনশান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
মোগলাই খানা
বিরিয়ানি আর চিকেন চাঁপ৷ দাম শুনলে খাওয়ার সাহস হবে না, এমন সস্তা৷ তবু লোকে খেতে ভালবাসে এবং কী আশ্চর্য, তাঁদের শরীর খারাপ করে না একেবারেই৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
চীনা খাবার
কলকাতার অন্যতম পছন্দ চীনা খাবার৷ সে নামি রেস্তোরাঁ হোক, বা রাস্তার ধারের৷ মেনু অবশ্য সাদামাটা, কিন্তু পেটভরা খাবার৷ বিকেলের দিকে এই দোকানেই বিক্রি হবে তিব্বতি খাবার ‘মোমো’৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিরাপদ ডিম-টোস্ট
চীনা বা মোগলাই খানায় নেহাত সাহস না হলে আছে সামনে দাঁড় করিয়ে খোলা কয়লার উনুনের আগুনে সেঁকা পাঁউরুটি, সঙ্গে ডিম৷ বয়েলড, পোচড বা ওমলেট, যা আপনি খেতে চান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
শহরতলীর মিষ্টি
শেষপাতে মিষ্টি ছাড়া বাঙালির খাওয়া সম্পূর্ণ হয় না৷ এই দোকানিরা আসেন শহরতলী থেকে৷ বনগাঁর কাঁচাগোল্লা থেকে কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, ঘরে তৈরি পিঠে-পাটিসাপটা, সব আছে এখানে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
নিরামিষ ডাল-রোটি
অবাঙালিরা অনেকেই নিরামিষ খান৷ রাস্তার ওপরেই মাটির তন্দুর বানিয়ে গরম গরম রুটি আর নানা রকমের সবজি পাওয়া যায় এখানে৷ অর্থাৎ নিরামিষাশীদের জন্যেও রয়েছে প্রচুর আয়োজন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ইডলি-দোসা
নিরামিষ খাবারের মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারও খুব জনপ্রিয় মহানগরীতে৷ মানে ইডলি, বড়া আর দোসা৷ সে-ও এখানে বানিয়ে দেয়া হয় চোখের সামনে৷ অনেকে আবার এ সব কিনে বাড়িতেও নিয়ে যান৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ভরসার চিঁড়ে-মুড়ি
রাস্তার দোকানের রান্না খাবারে অনেকেরই ভরসা নেই৷ তাঁদের পছন্দ চিরকালীন চিঁড়ে-মুড়ি, ছোলা-বাদাম৷ যাঁরা ডায়েট করায় বিশ্বাসী, তাঁদের পছন্দের খাবার এটা৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
তাজা ফল
নেহাত কিছু খেতে না চাইলে আছে তাজা ফল৷ কলা, আপেল, পেঁপে, আনারস...৷ কলকাতা পুরসভার অবশ্য নিষেধাজ্ঞা আছে খোলা রাস্তায় কাটা ফল বেচার ব্যাপারে৷ রাস্তার ধুলোবালিতে কাটা ফল খাওয়া যে স্বাস্থ্যকর নয়!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
হজমি দাওয়াই
খুব বেশি খাওয়া হয়ে গেলে তারও দাওয়াই আছে এই রাস্তাতে৷ পাতিলেবু, বিটনুন আর পুদিনার রসের সরবত৷ এক গেলাস খেলেই বদহজম দূরে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
10 ছবি1 | 10
ক্রেতা বা ভোক্তাদের জন্য ‘ভ্যালু ফর মানি’ বিষয়টা বোঝা জরুরি৷ ১০০ টাকা কিংবা ১০ হাজার টাকা যতই খরচ করছেন তার ভিত্তিতে পরিবেশিত খাবারের মান ও প্রাপ্য সেবার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে৷
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কলকাতায় ‘স্ট্রিট ফুডে’ ১০০ রূপিতে যা খেতে পারবেন ঢাকায় তার সমপরিমাণ খরচ করে (প্রায় ১২৫ টাকা) অর্ধেকও পাবেন না৷
বিশ্বের অন্যতম খরুচে শহর সিঙ্গাপুরে ১০ ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৮০ টাকা) যতটুকু খাবার পাবেন ঢাকার কোনো কমফোর্ট ফুড শপে, সেটুকুর দাম পড়বে অন্তত ১৫শ টাকা৷ কিন্তু মান থাকবে অত্যন্ত খারাপ৷ একই উদাহরণ দেয়া যায় ইস্তানবুল, দুবাই, জেদ্দা কিংবা কায়রোর রেস্তোরাঁর সাথে মিলিয়েও৷ কমফোর্ট ফুড কিংবা স্ট্রিট ফুডের দাম সব জায়গাতেই সহনীয়৷ শুধু ঢাকায় আকাশছোঁয়া৷
তবে হ্যাঁ, ঢাকাতেও চমৎকার কিছু রেস্তোরাঁ আছে যেগুলোতে আপনার প্রত্যাশিত মানদণ্ড পূরণ করতে পারে৷ কমফোর্ট ফুডের জন্য আমার প্রিয় ধানমন্ডির ক্যাফে সাও পাওলো, মিরপুর রোডের দ্য কোর্টইয়ার্ড, বনানীর টাইমআউট ও ফুলস ডাইনার৷ এখানে খাবারের মানের পাশাপাশি পরিবেশও চমৎকার৷
আড্ডা দেয়ার মতো ক্যাফে চাইলে ‘নর্থ এন্ড ও ক্রিমসন কাপ’ রয়েছে৷ ঢাকায় একাধিক শাখা রয়েছে তাদের৷ খিলগাওঁয়ের চেরিড্রপসও মন্দ না৷
পুরনোদের মধ্যে এখনও বেইলি রোডের সুইস, কাটাবনের শর্মা হাউজ ও হাতিরপুলের বিগ বাইট (ওয়াশরুমের বিষয়টা অগ্রাহ্য করলে) দারুণ নির্ভরযোগ্য৷ বিরিয়ানির জন্য আমার প্রিয় লালবাগের রয়্যাল হোটেল ও আরমানিটোলার কলকাতা কাচ্চি৷ আর সবসময়ের ভরসা স্টার তো রয়েছেই৷
পিৎজা খেতে চাইলে মান, স্বাদ ও সার্ভিসের দিক দিয়ে পিৎজা হাট, পিৎজা ইন ও ডমিনোস ধারাবাহিক৷ তবে, আমার পছন্দ সাত মসজিদ রোডের বেল্লা ইটালিয়া৷
আর পরিবার নিয়ে যদি বুফে পছন্দ হয় তাহলে ধানমন্ডির গার্লিক অ্যান্ড জিঞ্জার ও স্পাইসি রমনায় খেয়ে দেখতে পারেন৷ এছাড়া ফিউশন চাইনিজ রেস্তোরাঁ চিলিস ও অথেনটিক চাইনিজ রেস্তোরাঁ হংবাও, চিওংশেন ও থ্রি ড্র্যাগনস অ্যাট পার্লও পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন৷
কাবাবের জন্য আমার পছন্দ ধানমন্ডি পুরাতন ২৭ নম্বরের বারবিকিউ টুনাইট৷ দেশের সেরা ফালুদাটা সম্ভবত তারা বানায় এখন৷ এছাড়া সাত মসজিদ রোডের দ্য কাবাব ফ্যাক্টরিতেও ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন৷ সবসময়ের জনপ্রিয় মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড ও বিহারি ক্যাম্প তো আছেই! বিহারি ক্যাম্পের মান পড়তির দিকে তাই সলিমুল্লাহ রোডের কাবাব চেখে দেখা হবে বুদ্ধিমানের কাজ৷
তুর্কি খাবার খেতে চাইলে বনানির ইস্তানবুল রেস্তোরাঁ ও লেবানিজ খাবারের জন্য ধানমন্ডির আল-আমার দারুণ৷ যারা অ্যামেরিকান স্টাইলের স্টেক পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে বনানির মিট থিওরি৷ আর ব্রিটিশ স্টাইলের ফিশ অ্যান্ড চিপসের জন্য গুলশানের ফিশ অ্যান্ড কো চমৎকার৷
জাপানিজ খাবারের জন্য আমার এক নম্বর পছন্দ ধানমন্ডির ইজাকায়া৷ এছাড়া বনানীর সুশি সামুরাই, গুলশানের কিয়োসি ও ইজুমির খাবার সুস্বাদু ও অথেনটিক৷
দেশি খাবারে আগ্রহীদের পুরান ঢাকার নীরব হোটলে না যাওয়ার অনুরোধ থাকলো৷ একেবারেই ওভাররেটেড৷ ভাত-মাছ-ভর্তার জন্য আমার পছন্দ কারওয়ান বাজারের কুকার্স সেভেন রেস্তোরাঁ৷ ওদের খিচুড়িটাও মন্দ না৷ মাছের শখ থাকলে যেতে পারেন পল্টনের কস্তুরিতে৷ ওখানকার চিতল মাছের কোপ্তার স্বাদ অতুলনীয়৷ মতিঝিলের ঘরোয়ার খিচুড়িও জিভে লেগে থাকার মতো৷
আর যদি, কিছুটা বাজেট আপনার বেশি হয় তাহলে ফাইভ স্টার ডাইনিং এর জন্য বেছে নিতে পারেন রেনেসাঁ হোটেলের বাহার, ইন্টারকন্টিনেন্টালের এলেমেন্টস, বনানীর চাওস ও গুলশানের ফ্যাট এম্পেররকে৷
কলকাতার ধর্ম খাবারে
গোটা দেশ যখন পোশাক, খাবার নিয়ে ধর্মীয় বিতর্কে, কলকাতায় তখনো খাবারের বিচিত্র সম্ভার। কলকাতার খাবারে নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
জগৎমাতা ভোজনালয়
উত্তর কলকাতা মানেই নস্টালজিয়া। পুরনো কলকাতার অলি-গলি জুড়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সব 'ভাতের হোটেল'। জগৎমাতা ভোজনালয় তেমনই এক রেস্তোরাঁ। পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের বাঙালি খাবারের স্বাদ চেটেপুটে নেওয়া যায় উত্তর কলকাতার এমন একাধিক প্রাচীন রেস্তোরাঁয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অ্যাংলো খাবার
ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। সেই সময় থেকেই বহু ইউরোপীয় কলকাতায় বসবাস করেছেন। বিয়ে করেছেন ভারতীয় মেয়েকে। কলকাতার বুকে এমন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটি এখনো যথেষ্ট। আর তাদের হাত ধরেই কলকাতায় পৌঁছেছে কন্টিনেন্টাল খাবারের রকমারি রেসিপি। পার্কস্ট্রিটের পিটার ক্যাট, মুলারুশ, মোক্যাম্বো এখনো সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। কন্টিনেন্টাল স্টেক শুধু রসনাতৃপ্তি করে না, ঐতিহ্য চিনিয়ে দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নবাবী কলকাতা
নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরে কলকাতায় পৌঁছেছিল বিরিয়ানি এবং মুঘল খাবার। জাকারিয়া স্ট্রিটের গলি কিংবা টিপু সুলতান মসজিদের গলি অথবা মেটিয়াবুরুজের রাস্তা-- কলকতা মানে শাহি মুঘলাই। রাস্তার ধারে তৈরি হওয়া বিফ সুতি কাবাব নিয়ে এখনো রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি কোনো রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় দল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিজামের কাঠি রোল
নিজামের কাঠি রোল এক কথায় এপিক। গানে কবিতায় বার বার উঠে এসেছে বিফ কাঠি রোলের কথা। গত ১৩ বছর নানা কারণে নিজাম বিফ কাঠি রোল তৈরি বন্ধ রেখেছিল। অক্টোবর থেকে ফের তারা তা শুরু করেছে। লাইনও পড়ছে বিশাল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টেরিটি বাজারের চীনা
বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে কলকাতায় বসবাস করে বিশাল এক চীনা কমিউনিটি। তাদের নামেই একটি জায়গার নাম চায়না টাউন। চীনা পট্টির টেরিটি বাজারে প্রতিদিন সকালে চীনা ব্রেকফাস্ট মেলে। পর্ক মোমো, ফিস মোমো ছাড়াও বাড়িতে তৈরি আরো নানা ধরনের চীনা খাবার পাওয়া যায় সেখানে। আর চীনা পাড়ায় আছে অসংখ্য চীনা রেস্তোরাঁ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রয়্যালের চাপ
নাখোদা মসজিদের উল্টো দিকে রয়্যাল হোটেল। শতাব্দীপ্রাচীন এই রেস্তোরাঁ দাবি করে, ওয়াজেদ আলির রেসিপিতে তারা চাপ এবং বিরিয়ানি বানায়। বড় বড় খানেওয়ালারা এক কথায় মেনে নেন, রয়্যালের চাপ পৃথিবী বিখ্যাত।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পার্ক সার্কাসের মুঘলাই
মুঘলাইয়ের আরেক ঠেক পার্ক সার্কাস। বড় বড় রেস্তোরাঁর পাশে নাম না জানা ছোট রেস্তোরাঁতেও জিভে জল আনা খাবার পাওয়া যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাস্তার কাবাব-রোল
ভারতের কোনো কোনো রাজ্য়ে যখন আমিশ-নিরামিশ খাওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। কলকাতার তখন শুধু খাবার দিয়ে নিজের স্টেটমেন্ট তৈরি করছে। বড় রেস্তোরাঁয় যাওয়ার দরকার নেই, ফুটপাথের দোকানে কাবাব-রোল জিভে জল এনে দেয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এটাই কলকাতা
গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার অপরাধে আকলাখকে হত্যা করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। কলকাতায় এখনো বাজারে পাশাপাশি বিক্রি হয় গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস। যার ভালো লাগে পাশাপাশি বসে খান। প্রতিবাদ নয়, কলকাতা ধর্ম মেলবন্ধনের। কলকাতার ধর্ম খাদ্যরসিকতায়।