1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর বাধা গো-রক্ষকরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ মে ২০১৯

বিপুল জনাদেশ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিতীয়বার ক্ষমতা লাভের মুখে গো-রক্ষকদের নিয়ে অস্বস্তি৷ গোমাংস পরিবহণ করা হচ্ছে এই সন্দেহে কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করেছে গো-রক্ষকরা৷ ভাইরাল হয়েছে এই ভিডিও৷

ছবি: Reuters/A. Abidi

হিন্দু জাতীয়তাবাদের সমর্থক ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সাধারণ নির্বাচনে বিরাট জয় পেয়েছে৷ গতবারের থেকেও বেশি আসনে জিতেছে বিজেপি তথা এনডিএ৷ জনকল্যাণের কর্মসূচি, না সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ, কিসের জোরে এই সাফল্য মোদীর, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে৷ এই জয়ের গন্ধ পেয়েই গো-রক্ষকরা মাঠে নেমে পড়েছিল৷ ২২ মে মধ্যপ্রদেশে এক মুসলিম মহিলাহ চার জনকে বেধড়ক মারধর করা হয়৷ তাঁদের অপরাধ, তাঁরা একটি অটো রিকশায় মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন৷ সেটিকে গোমাংস ভেবেছিল শ্রীরাম সেনার সদস্যরা৷ তারা জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দিতে লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করে কয়েকজনকে৷ ২৩ মে ফল প্রকাশের একদিন পর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে৷অনেকের আশঙ্কা, মোদী বাহিনী বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকারে ফেরায় এই ধরনের ঘটনা আরো বাড়বে৷ গেরুয়া শিবিরের পাল্টা দাবি, এ সব কাজে বিজেপির অনুমোদন নেই৷ এটা সমাজবিরোধীদের কাজ৷

গো-রক্ষকরা কেউ বিজেপির সদস্য নয়: পরেশচন্দ্র দাস

This browser does not support the audio element.

গো-রক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে গত কয়েক বছরে ভারতে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে৷ ফ্রিজে গোমাংস রাখার জন্য মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে৷ এই ঘটনায় সমালোচনা তুঙ্গে উঠেছিল৷ এরপর গো-রক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন, ধরপাকড়ও হয়েছে৷ কিন্তু, তাদের কার্যকলাপে ছেদ পড়েনি৷ বিজেপি বরাবরই গো-রক্ষকদের তাণ্ডবের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ যেমন এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী, প্রাক্তন আমলা পরেশচন্দ্র দাস ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এসব কাজকে আমরা সমর্থন করি না, যদিও এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়৷ প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে৷’’ এটাকে নিছক আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা ভাবলে ভুল হবে, আদতে এই বাহিনী একটি উগ্র মৌলবাদী মতাদর্শকে সামনে রেখে তৎপরতা চালায় বলে মত রাজনীতির বিশ্লেষকদের৷ পরেশের বক্তব্য, ‘‘গো-রক্ষকরা কেউ বিজেপির সদস্য নয়৷ এই সংগঠনগুলি বিজেপির অনুমোদিতও নয়৷ এরা সব স্বঘোষিত গো-রক্ষক সংগঠন৷ এদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷’’

এতে দলের ভাবমূর্তি মলিন হয় না, সেটার প্রমাণ নির্বাচনের ফল: রন্তিদেব সেনগুপ্ত

This browser does not support the audio element.

গো-রক্ষার নামে সংখ্যালঘুদের নিশানা করা হচ্ছে৷ বলা ভালো, সেটাই এই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য৷ অথচ নির্বাচনে জয়ের পর, ২৩ মে সন্ধ্যার ভাষণে মোদী বলেন, তিনি সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়নের বার্তা দিয়েছিলেন, এবার তাঁর সঙ্গে জুড়তে চান সকলের আস্থা অর্জনকে৷ পর্যবেক্ষকদের মতে, সকলের আস্থা বলতে মোদী মূলত সংখ্যালঘুদের কথা বলতে চেয়েছেন৷ গো-বলয়ের একাধিক রাজ্যে বিজেপির একচেটিয়া আধিপত্যের নেপথ্যে মুসলিমদের একাংশের সমর্থন আছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ একইসঙ্গে এখানকার জাতপাতভিত্তিক ভোটব্যাঙ্কের হিসেব এই নির্বাচনে মেলেনি বলে বিজেপি এত সংখ্যক আসনে জিতেছে৷ কিন্তু গো-রক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কি সকলের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে? এবারের নির্বাচনের আরেক বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্যও ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজের সব অংশের সমর্থন পেয়েছেন৷ তিনি বিভাজনকে অনুমোদন করেন না, বিজেপি করে না৷ গো-রক্ষকদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই৷’’ একই বিজেপি নেতা, সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্তের৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবার কাউকে বলেনি মুসলমানদের উপর অত্যাচার চালাও৷ এ ধরনের ঘটনা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে৷ এতে দলের ভাবমূর্তি মলিন হয় না৷ সেটার প্রমাণ নির্বাচনের ফল৷ অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে, কংগ্রেসের কর্মীরা গো-রক্ষার নামে এই কাজ করছে, লক্ষ্য বিজেপিকে বদনাম দেওয়া৷’’

মাংস রপ্তানিকারকদের একজন ইন্দ্রা নুয়ি তামিল ব্রাহ্মণ এবং নরেন্দ্র মোদীর বন্ধু: তন্ময় ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

বিরোধীদের বয়ানে বিজেপি সাম্প্রদায়িক দল৷ হিন্দুত্বের ভাবাবেগ জাগিয়ে তারা রাজনীতি করে৷ তাদের বক্তব্য, সরাসরি বিজেপির নির্দেশে না হলেও, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের রমরমা গেরুয়া শিবিরের প্রচ্ছন্ন মদতে৷ মাথার উপর নরেন্দ্র মোদী থাকায় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করার সাহস পায় তারা৷ বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গোমাতাকে নিয়ে বিজেপির প্রচার নাটক ছাড়া কিছু নয়৷ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ৷ যে সংস্থাগুলি মাংস রপ্তানি করে, তার মালিকরা হিন্দু৷ তাঁদের একজন ইন্দ্রা নুয়ি তামিল ব্রাহ্মণ এবং নরেন্দ্র মোদীর বন্ধু৷’’ গো-রক্ষাকে প্রচারের আলোয় আনার উদ্দেশ্য কী? তন্ময়ের যুক্তি, ‘‘বিজেপির লক্ষ্য ভারতের দরিদ্র মুসলমানকে সমস্যায় ফেলা৷ গোমাংস এদের কাছে সুলভ প্রোটিনের উৎস৷ এর সঙ্গে ধর্মের রং মিশিয়ে দিলে একটা হিন্দু ভাবাবেগ তৈরি করা সম্ভব৷ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে এটা কাজে আসে৷ তাই উত্তরপ্রদেশে কসাইখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ রাজ্যে রাজ্যে নিষিদ্ধ করা হয় গোমাংস৷’’

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও নরেন্দ্র মোদীকে হিন্দুত্বের পোস্টার বয়ের তকমা দেওয়া হয়৷ যদিও সব সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের ডাক দিয়ে দ্বিতীয়বার মসনদে বসেছেন তিনি৷ গো-রক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কি তিনি সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ