চতুর্থবারের মতো সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রথম ভাষণে বিএনপির নির্বাচিত সাংসদদের সংসদে আমন্ত্রণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৭টায় তিনি এ ভাষণ দেন৷
বিজ্ঞাপন
তাঁর ভাষণে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘সংখ্যায় যত কমই হোক না কেন আমরা বিরোধীদের সংসদে উপস্থিতি চাই৷ সংসদে বিরোধী দলের যে কোনো সদস্যের ন্যায্য ও যৌক্তিক প্রস্তাব, আলোচনা-সমালোচনার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে৷ আমি বিরোধী দলের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ নিয়ে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি৷''
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে দেশবাসী, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান৷ তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের এই বিজয় সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতার কারণেই সম্ভব হয়েছে৷
২৫ মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের পরাজয়ের কারণ তুলে ধরে বলেন, বিএনপির প্রতীকে জামায়াতের নির্বাচন তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য, একই আসনে তিনের অধিক প্রার্থী, দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া, নিজেদের সাফল্য তুলে ধরতে ব্যর্থতাও হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নি-সন্ত্রাস জনগণ মনে রেখেছে৷''
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভাষণে সকল মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন৷
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের সাফল্যগাঁথাও তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি চাকুরিজীবীদের বেতনভাতা বিগত ১০ বছরে আড়াই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সরকারি ও বেসরকারি খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও সমহারে বেড়েছে৷ এসময় তিনি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি এবং কৃষিজীবীদের সার, বীজসহ বিভিন্ন উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷
শেখ হাসিনা বলেন, শিল্প-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্যও প্রসারিত হয়েছে, যার সুবিধা সাধারণ জনগণ পাচ্ছেন৷ শেখ হাসিনা আরো বলেন, পদ্মাসেতু, ঢাকা মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহাসড়কগুলোকে চার-লেনে উন্নীতকরণসহ মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হওয়ায় সাধারণ মানুষের বর্তমান সরকারের উপর আস্থা জন্মেছে৷
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের সমর্থন এবং সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা৷ জনগণের সহযোগিতায় তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভাষণ শেষ করেন৷
সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা
চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা৷ কিন্তু সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের রেকর্ডের কাছে এটি তুচ্ছ৷ সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা রাষ্ট্রনায়কদের নিয়েই এই ছবিঘর...
ছবি: Reuters/Official Khamenei website
ক্ষমতায় ৩৯ বছর!
মধ্য আফ্রিকার ছোট্ট দেশ ইকুয়েটোরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট টিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমা৷ সেই ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন৷ তারপর থেকে তিনিই সে দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী৷ টিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমার বয়স এখন ৭৪ বছর৷
ছবি: Getty Images/AFP
৩৭ বছর পর পতন
সেনা অভ্যুত্থানের মুখে জিম্বাবোয়ের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হলো রবার্ট মুগাবেকে৷ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দেশ জিম্বাবোয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৮০ সালে৷ স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর ২০১৭ সালে ক্ষমতা হারান প্রেসিডেন্ট মুগাবে৷
ছবি: Reuters/P. Bulawayo
পল বিয়া, ৩৬ বছর ধরে ক্ষমতায়
পল বিয়া গত ৩৬ বছর ধরে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট৷ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ১৯৮২ সালে৷ তারপর থেকে এ পর্যন্ত তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দু’টি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে৷ দু’টিকেই ব্যর্থ করে ক্ষমতা আগলে রেখেছেন ৮৫ বছর বয়সি পল বিয়া৷
ছবি: imago/Xinhua Afrika
ডেনিস সাসৌ নগুয়েসোর মোট ৩৪ বছর
মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো-ব্রাজাভিলের নাম অনেকেই হয়ত শোনেননি৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসৌ নগুয়েসো ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন ১৯৭৯ সালে৷ সেই দফায় ছিলেন ১৯৯২ পর্যন্ত৷ তারপর পাঁচ বছরের বিরতি৷ ১৯৯৭ সালে ফেরার পর থেকে ক্ষমতায় আবার তিনি অবিচল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Longari
হুন সেন, কম্বোডিয়া
১৯৮৫ সাল থেকে হিসেব করলে হু সেন কম্বোডিয়ার প্রধানমনাত্রীর দায়িত্বে আছেন ৩৩ বছর ধরে৷
ছবি: Reuters/S. Pring
৩২ বছর ধরে ক্ষমতায় সমকামীবিদ্বেষী মুসেভেনি
পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্টের নাম ইয়োয়েরি মুসেভেনি৷ ৩২ বছর ধরে তিনি সে দেশের প্রেসিডেন্ট৷ ৭৪ বছর বয়সি এই শাসক সমকামীবিদ্বেষী হিসেবেও পরিচিত এবং সমালোচিত৷
ছবি: Reuters/E. Echwalu
২৯ বছর ধরে সুদানের শাসক
সুদানের ওমর আল-বাশির রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে৷ দারফুরে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালানোর জন্য ১৯৮৯ সালে তাকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত৷ ২৯ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
নুরসুলতান নাসারবায়েভ, কাজাখস্তান
১৯৯০ সালে সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে কাজাখস্তান৷ তারপর থেকেই সে দেশের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ৷ অর্থাৎ ২৮ বছর ধরে দেশটির প্রেসিডেন্ট তিনি৷
ছবি: picture alliance/Sputnik/S. Guneev
শেখ হাসিনা: ২০ বছরের পথে যাত্রা শুরু
আগে মোট তিন মেয়াদে ১৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর এবার চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা৷ সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীদের তুলনায় তিনি এখনো অনেক পিছিয়ে৷ তবে চতুর্থ মেয়াদ শেষ করলে তাঁরও ২০ বছর পূর্ণ হবে৷
ছবি: bdnews24.com
আলি খামেনি, ইরান
সায়িদ আলি হোসেইনি খামেনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৮১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসেন তিনি৷ তবে ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ ৩৭ বছর ধরে দেশটির সর্বোচ্চ পদে আছেন আলি খামেনি৷