1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিতে চেয়ে মমতার কৌশল

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৬ জুলাই ২০২১

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পরেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজর এখন দিল্লির দিকে।

মোদী-বিরোধী মুখ হয়ে ওটার চেষ্টায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: Payel Samanta/DW

তৃণমূল নেত্রীর প্রাথমিক লক্ষ্য জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেয়া। তারপরের লক্ষ্য অবশ্য ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে হারানো। তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, আপাতত সেই লক্ষ্যে দ্বিমুখী কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন মমতা। প্রথমটি হলো, সংসদের বর্ষা অধিবেশনে, অন্য বিরোধী, বিশেষ করে কংগ্রেসকে টপকে প্রতিটি ইস্যুতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে প্রথমে হইচই করা, দরকার হলে সেই বিষয়টিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে তৃণমূলই যে নেতৃত্ব দিচ্ছে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, দিল্লিতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত।

শান্তনু সেন-কাণ্ড

গত বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পেগাসাস নিয়ে লিখিত বিবৃতি পড়ছিলেন। আর তৃণমূল সাংসদরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন একটি হিন্দি দৈনিকের অফিসে আয়কর হানা নিয়ে। হঠাতই শান্তনু সেন সোজা মন্ত্রীর কাছে গিয়ে তার হাত থেকে লিখিত বিবৃতি টেনে ছিঁড়ে তা চেয়ারম্যানের চেয়ারের দিকে ছুঁড়ে দেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ তখন সভা পরিচালনা করছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যসভা মুলতুবি করে দেন।

শান্তনু সেন এবং তৃণমূলের অভিযোগ, এই সময় আরেক মন্ত্রী হরদীপ পুরী তাকে ডাকেন এবং দুর্ব্যবহার করেন। হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। বিজেপি সাংসদরা তাকে ঘিরে ধরেন। তৃণমূল সাংসদরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু ততক্ষণে টিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছিল বলে তার কোনো ভিডিও রেকর্ড নেই।

নাটকের এখানেই শেষ নয়। শুক্রবার রাজ্যসভা শুরু হতে চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু বলেন, ''যা হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক ও অসাংবিধানিক।'' তার প্রশ্ন, ''আমরা কি গণতন্ত্রের এই চেহারা তুলে ধরব?'' পরে বিজেপি-র প্রস্তাব মেনে অধিবেশনের বাকি দিনগুলির জন্য শান্তনু সেনকে সাসপেন্ড করেন চেয়ারম্যান। কিন্তু তারপরেও শান্তনু সভা ছেড়ে যাননি। ফলে দুই বার সভা মুলতুবি রাখতে হয়।

এমন নয় যে, এরকম ঘটনা প্রথমবার হলো। এর আগে রাজ্যসভাতেই ইউপিএ আমলে মেয়েদের সংসদ ও বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ দেয়া সংক্রান্ত বিল মন্ত্রীর হাত থেকে কেড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। অন্ধ্র প্রদেশকে ভেঙে তেলেঙ্গানাকে পৃথক রাজ্য করা নিয়েও সংসদের দুই কক্ষে ভয়ংকর দৃশ্য দেখা গেছে। এক সাংসদ গোলমরিচের গুড়ো পর্যন্ত স্প্রে করেছিলেন। চেযারম্যান ও স্পিকার সাসপেন্ড করার পরেও সভা ছেড়ে বেরিয়ে না যাওয়ার নজিরও আছে। শান্তনু সেন পেশায় চিকিৎসক। চিকিৎসকদের প্রধান সংগঠন আইএমএ-র শীর্ষ পদে ছিলেন।  তিনি কেন এরকম একটি কাণ্ড করলেন?

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তার ব্যাখ্যা, ''তৃণমূল কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধীদের থেকে বিজেপি বিরোধিতায় এগিয়ে থাকতে চাইছে।'' ডয়চে ভেলেকে শরদ বলেছেন, ''তৃণমূল আপাতত বিজেপি-বিরোধী অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেস ও অন্য আঞ্চলিক দলের থেকে এগিয়ে থাকতে চাইছে। তারা বিরোধী দলবগুলির নেতৃত্ব দিতে চাইছে। তাই বলা যেতেই পারে, এটা তৃণমূলের কৌশলের অঙ্গ। তবে এই ধরনের ঘটনা গণতন্ত্রের মর্যাদা বাড়ায় না।''

মমতার দিল্লি সফর

বিধানসভা ভোটে জয়ের পর সোমবার প্রথমবারের জন্য দিল্লি আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লি পৌঁছবেন। তিনি রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের বাড়িতে গিয়ে দেখা করবেন। অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ বাকি বিরোধী নেতাদের সঙ্গেও তিনি দেখা করবেন। সংসদেও যেতে পারেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীর সফর ওই একই কৌশলের অঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''মমতার প্রথম লক্ষ্য বিরোধী দলগুলিকে একজোট করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য, মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী মুখ হয়ে ওঠা। কংগ্রেস ছাড়া জোট হবে না জানেন বলে, মমতা সোনিয়াকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন।'' দিল্লি আসার আগে মমতা পেগাসাস নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 

সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান

তিনি সাংসদ নন, তা সত্ত্বেও তৃণমূল সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সেন হলেন মমতা। এটাও তৃণমূল তথা মমতার জাতীয় স্তরে নেতৃত্ব দেয়ার কৌশলের একটা অঙ্গ। তবে এটা নজিরবিহীন নয়। রাজনীতিতে আসার পর ১৯৯৮ সালে সোনিয়া গান্ধী কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সেন ছিলেন। তখনো তিনি সাংসদ হননি।

রাহুলও লড়ে যাচ্ছেন

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও জায়গা ছাড়তে রাজি নন। তিনিও লড়ে যাচ্ছেন। এবার সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মোদী বিরোধিতার ক্ষেত্রে রাহুলও রীতিমতো সক্রিয়। তিনি এর আগে আড়িপাতা নিয়ে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সোমবার কৃষকদের সমর্থনে তিনি ট্রাক্টর চেপে সংসদে আসেন। কোনো পদে না থাকলেও তিনি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে মমতার ইচ্ছেপূরণের ক্ষেত্রে কোনো বাধা আসবে না, তিনি সহজেই বিরোধী মুখ হয়ে উঠবেন, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ