প্রকাশ্যে তালেবান শাসনের বিরোধিতা করার অপরাধে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেল তালেবান।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক ফৈজুল্লাহ জালাল। আফগানিস্তানে তালেবান আবার ক্ষমতাদখলের পর থেকে এই বিশিষ্ট অধ্যাপক সামাজিক মাধ্যমে তালেবান শাসনের সমালোচনা করছিলেন। তার স্ত্রী ফেসবুক পোস্ট করে জানিয়েছেন, অধ্যাপককে তালেবান আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে।
তার স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য কেমন আছে, তিনি কীরকম আছেন, কিছুই পরিবার জানে না। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো, তাও সরকারিভাবে জানানো হয়নি।
তালেবানের বক্তব্য
তালেবানের মুখপাত্র জবিদুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, জালাল মানুষকে তালেবানি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উসকাচ্ছিলেন এবং তিনি মানুষের মর্যাদাহানি করছিলেন। জালাল সামাজিক মাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
জালালের স্ত্রী অবশ্য দাবি করেছিলেন, ওইসব পোস্ট জাল। জালাল এরকম কোনো পোস্ট করেননি।।
আফগান নারীদের যেসব অধিকার কেড়ে নিয়েছে তালেবান
দ্বিতীয় দফা ক্ষমতায় এসে যুযোপযোগী শাসনব্যবস্থার কথা বললেও একে একে নারীর অনেক অধিকারই কেড়ে নিয়েছে তালেবান৷ ছবিঘরে দেখুন...
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
একা একা দূরে নয়
গত ২৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের নারীরা ৭২ কিলোমিটারের (৪৫ মাইল) চেয়ে বেশি দূরে একা যেতে পারবেন না৷ যেতে হলে সঙ্গে কোনো পুরুষকে রাখতে হবে৷তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস এক নির্দেশনায় কোনো চালক যাতে কখনো একা দূরে যেতে আগ্রহী নারীকে গাড়িতে না তোলেন সেই কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Sayed Khodaiberdi Sadat/AA/picture alliance
গৃহনির্যাতন মেনে নিতে হবে!
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি-কে বলেছেন, তালেবান মিনিস্ট্রি ফর প্রোপাগেশন অফ ভার্চু অ্যান্ড দ্য প্রিভেনশনস অফ ভাইস-এর নির্দেশনায় গৃহ নির্যাতনের স্বীকার হলেও নারীদের স্বামীর সংসার ছেড়ে না যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে৷
ছবি: Safi/Xinhua/imago
টেলিভিশনে, মুভিতে চেহারা দেখানো যাবে না
টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্রে নারীদের চেহারা দেখানোও সীমিত করেছে তালেবান৷ এই নির্দেশের ফলে কোনো নারী আর টিভি শো, নাটক বা চলচ্চিত্রে অংশ নিতে পারেন না৷ বিশেষ ক্ষেত্রে অংশ নিলেও নারীকে অবশ্যই হিজাব পরতে হয়৷এক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর অনেক নারীই মিডিয়া ছেড়েছেন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Ariana News
নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় অবলুপ্ত
২০০১ সালে নারীদের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় খুলেছিল তখনকার সরকার৷২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে সেই মন্ত্ণালয় বন্ধ করেছে তালেবান৷ ওপরের ছবিতে কাবুলের এক বেকারির সামনে দরিদ্র নারীদের মধ্যে রুটি বিতরণের দৃশ্য৷ রুটি দিচ্ছেন এক সাধারণ নাগরিক৷
ছবি: Petros Giannakouris/AP/picture alliance
শিক্ষার সুযোগ সীমিতকরণ
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে প্রাইমারির ওপরে মেয়েদের প্রায় সব স্কুলই বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান৷ এর ফলে মেয়েদের উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ কমে গেল৷
ছবি: Bulent Kilic/AFP
নারী-পুরুষ একসঙ্গে নয়
গত আগস্টে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের দখল নিয়েই সেখানকার বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে নারীদের বের করে দেয় তালেবান৷পরে অন্যান্য শহরেও নারীদের কর্মস্থল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে তারা৷ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তারা মনে করেন, আফগান নারীদের পুরুষদের সঙ্গে বসে কাজ করা উচিত নয়৷
ছবি: TASS/dpa/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষাক-বিধি
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তালেবানের শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী ও পুরুষকে আলাদা বসতে হবে এবং সবাইকে ‘ইসলামি পোশাক’ পরতে হবে৷
ছবি: Javed Tanveer/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
তালেবান মুখপাত্র বলেছেন, জালালকে দেখে অন্যরাও যাতে এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য না করেন, তা বোঝাতেই অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ এরকম মন্তব্য করলে অন্যদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে বাধ্য।
তালেবানের সমালোচনায় জালাল
জালাল কট্টর তলেবান-বিরোধী। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং আশরাফ গনিকে নিয়েও তিনি খোলাখুলি নিজের মত জানিয়েছেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে তালেবান মুখপাত্র মহম্মদ নইমের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন জালাল। দুজনেই একটি টিভি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি তালেবানের নীতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি তালেবানের মুখপাত্রকে 'বাছুর' বলেও সম্বোধন করেন।
তালেবান-বিরোধীরা জালালের সাহস ও খোলাখুলি কথা বলার ক্ষমতার প্রশংসা করেন। অনেকে তাদের সামাজিক মধ্যমে প্রোফাইল পিকচারে জালালের ছবিও রেখেছেন।