বিরোধ করবেন অধীর, কোর্টে সিংভি সমর্থনে লড়বেন এটা হয় নাকি!
গৌতম হোড়
সংবাদভাষ্য
৭ মার্চ ২০২৪
রাজ্যে সন্দেশখালি, শাহজাহান নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস, দিল্লিতে কংগ্রেস নেতাই রাজ্য সরকারের হয়ে মামলা লড়ছেন।
বিজ্ঞাপন
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের নেতত্বাধীন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, শেখ শাহজাহানকে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে। কারণ, সন্দেশখালি নিয়ে পুলিশ বা তাদের বিশেষ তদন্তকারী দল নয়, সিবিআই তদন্ত করবে।
এরপর তিনটে ৪০ মিনিট নাগাদ সিবিআইয়ের একটি দল শেখ শাহজাহানকে তাদের হেফাজতে নেয়ার জন্য ভবানী ভবনে পৌঁছে যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও সেখানে ছিলেন। আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর তারা ফিরে যান। তাদের হাতে শেখ শাহজাহানকে তুলে দেয়নি সিআইডি। সিবিআই দলকে জানানো হয়, শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে। তার ফয়সালা না হলে তাকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়া হবে না।
সুপ্রিম কোর্টে শেখ শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাতে তুলে না দেয়ার আবেদন নিয়ে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী অভিষেক মণু সিংভি। তিনি শুধু সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীই নন, বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতাও। তিনি কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেসের মুখপাত্র। গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ। কয়েকদিন আগেই তিনি হিমাচল প্রদেশে রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন। সেই ভোটে তিনি হেরেছেন। এর আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে তণমূলের সমর্থনে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। সেই অনুমতিও দল তাকে দিয়েছিল।
সিংভি-র আবেদন খারিজ করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জানিয়েছে, তাকে নিয়মমাফিক রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদন করতে হবে।
খুনের চেষ্টা থেকে ডাকাতি, মোট ৩৪টি ধারায় মামলা শাহজাহানের বিরুদ্ধে
সন্দেশখালি-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি ধারায় মামলা করেছে পুলিশ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডাকাতি থেকে খুনের চেষ্টা
শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ডাকাতি থেকে খুনের চেষ্টা সংক্রান্ত নানা অভিযোগে ৩৪টি মামলা করেছে পুলিশ। ন্যাজাট থানায় এই অভিযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলি ধারায় জামিন পাওয়া যায় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ইডি কর্মকর্তাদের মার
সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি-র কর্মকর্তারা। শাহজাহান সপরিবারে বাড়ি থেকে পালায়। আর তার অনুগামীরা ইডি কর্মকর্তাদের মারধর করে, গাড়ি ভাঙচুর করে, তাদের তাড়া করে গ্রামের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। এরপর পুলিশ দুইটি মামলা করে। তাতেই ৩৪টি ধারা যোগ করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধারায় কী বলা হয়েছে?
ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারায় পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে, তাতে খুনের চেষ্টা, ডাকাতি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা, ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা, জোর করে আটকে রাখা, অপরাধে প্ররোচনা দেয়া, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে বাধা দেয়া ও ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার মতো বিষয়গুলি রয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্দেশখালির মানুষের অভিযোগ
শাহজাহানের বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সন্দেশখালির মানুষ। তার নেতৃত্বে আছেন নারীরা। তাদের অভিযোগ, শাহজাহান ও তার সঙ্গীরা নারীদের রাতে ডেকে পাঠাত। বসিয়ে রাখত। নারীদের লাঞ্ছনা করার কথাও বলেছেন তারা। তাছাড়া জোর করে জমি দখল করে নেয়া, চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ করা, মারধর, বাড়ি ভাঙচুরের মতো প্রচুর অভিযোগ করেছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৫৫ দিন পর গ্রেপ্তার
৫৫ দিন ধরে পলাতক ছিলেন শাহজাহান। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। অবশেষে বৃহস্পতিবার পুলিশ জানায়, তারা শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দাবি, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে এতদিন তারা শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শাহজাহানের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড
শাহজাহান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন দাবি করেছেন,, '''দুই ধরনের দল আছে। এক ধরনের রাজনৈতিক দল শুধু নানা কথা বলে যায়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস যা বলে তা করে দেখায়। এটা প্রথমবার নয়। অতীতেও আমরা যা বলেছি তা করেছি।'' তৃণমূল আপাতত শাহজাহানকে দল থেকে সাসপেন্ড করে সন্দেশখালি-কাণ্ডের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কী বলছেন সন্দেশখালির মানুষ
শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করার পর আনন্দে মাতেন সন্দেশখালির মানুষ। তবে তাদের মধ্যে আশঙ্কাও আছে। একাধিক মানুষের আশঙ্কা, শাহজাহান ফিরে এলে আরো বেশি অত্যাচার করতে পারে। একজন বলেছেন, ''টিভিতে দেখলাম শাহজাহান বীরদর্পে হাঁটছে, তাতে মনে হয় না, ওর কোনো অনুশোচনা আছে।'' অনেকেই বলেছেন, তাদের ভয় যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
7 ছবি1 | 7
এবার সেই পদ্ধতির মধ্যে গিয়ে আবেদন জানাবেন সিংভি। সেটা আইনগত বিষয়। কিন্তু সিংভির এভাবে শেখ শাহজাহান ও রাজ্য পুলিশের পক্ষে সর্বোচ্চ আদালতে আইনজীবী হিসাবে দাঁড়ানোর পর আবার সেই পুরনো প্রশ্নটা নতুন করে খুব জোরালোভাবে উঠছে। তাহলে কি এই আইনজীবী-রাজনীতিকদের দলের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাই নেই? দিনের পর দিন তারা দলের অবস্থানের উল্টো মেরুতে গিয়ে আদালতে আবেদন করবেন, তাতে দলের রাজনৈতিক ক্ষতি হবে, রাজ্য নেতারা বিপাকে পড়বেন, তারপরেও তারা পেশার স্বার্থের কথা বলবেন, এইভাবে দুই নৌকায় পা দিয়ে তারা কতদিন চলবেন?
সবচেয়ে বড় কথা, এই ক্রমশ তলানিতে চলে যাওয়া কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতারা আর কতদিন এই কাজ বরদাস্ত করবেন? রাজ্য নেতারা অভিযোগ জানাবার পরেও তো তারা সিংভিদের নিরস্ত করেন না। চুপ করে বসে থাকেন। বিজেপি-তেও তো আইনজীবী নেতার সংখ্যা কম নয়। তাদের কারো সাধ্য হবে, দলের নীতির বাইরে গিয়ে শেখ শাহজাহানের বা রাজ্য সরকারের পক্ষ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর? হবে না। রাজনীতি করতে গেলে দলের স্বার্থে এই ন্যূনতম স্বার্থত্যাগ তো করতেই হয়।
দল তো তাদের কম দিচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তাদের রাজ্যসভায় জিতিয়ে এনেছে। সম্মান দিয়েছে। প্রধান মুখপাত্র করেছে। নির্বাচনী কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। এমনও নয়, এই মামলাগুলি না করলে তাদের রোজগার ভয়ংকরভাবে কমে যাবে। সিংভিরা সকলেই খ্যাতনামা আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টে একবার কোনো মামলায় দাঁড়ালেই প্রতিদিন তারা লাখ লাখ টাকা পান। ফলে একটা-দুটো মামলা না করলে তাদের কিছুই যাবে আসবে না।
সন্দেশখালি : তৃণমূল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য করলেন বিক্ষুব্ধ নারীরা
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অজিত মাইতিকে লাঠি, ঝাঁটা নিয়ে তাড়া করেন নারীরা। নারীদের হাত থেকে বাঁচতে এক বাড়িতে ঢুকে ভিতর থেকে তালা মেরে দেন অজিত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের তাড়া
অজিত মাইতি হলেন সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের কাছের মানুষ। তার বিরুদ্ধেও জমি জবরদখল করাসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। রবিবার তাকে দেখামাত্রই তাড়া করেন সন্দেশখালির নারীরা। তাদের হাতে ছিল লাঠি, ঝাঁটা। তাদের দাবি ছিল, অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং শাস্তি দিতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেই বাড়ি
প্রাণের ভয়ে অজিত এই বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। চার ঘণ্টা এ বাড়িতেই ছিলেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে সেখান থেকে আটক করে। সোমবার সকালে জানানো হয়, পুলিশ অজিত মাইতিকে গ্রেপ্তার করেছে। এতদিন অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। নারীরা তাড়া করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অজিত মাইতির বাড়ি
এই বাড়িটি অজিত মাইতির। সকাল থেকে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ি ছিল পুরো শুনশান। পরে তাকে দেখতে পান নারীরা। দেখার সঙ্গে সঙ্গে অজিত মাইতি পালিয়ে গিয়ে একটা বাড়িতে লুকিয়ে পড়ে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নারীদের বিক্ষোভ চলছে
সন্দেশখালির বেড়মজুরের নারীরা এবার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি হলধপ আড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অজিত মাইতিকে সরিয়ে হলধরকেই অঞ্চল সভাপতি করে তৃণমূল। কিন্তু রাতে তার খড়ের গাদায় আগুন ধরানো হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সাবেক পঞ্চায়েত সদস্য তপন সর্দার ও বর্তমান সদস্য শঙ্কর হালদারকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নারীরা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনেক অভিযোগ
সন্দেশখালিতে একাধিক অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলেছে পুলিশ। সেখানে গিয়ে মানুষ তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন। সেখানেই একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে। অধিকাংশই হলো জমি জবরদখল, অত্যাচার ও নারীনিগ্রহের। পুলিশ সব অভিযোগ লিখে নিচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে এবং রাজ্যের মন্ত্রীদের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে এবং জবরদখল জমি ফেরত দেয়া হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
একজন অভিযোগকারী
এই অভিযোগকারী বেড়মজুরের। তার জমি জবরদখল করা হয়েছিল। এর জমি নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছিল। টাকা চাইতে গেলেই মারধর করা হতো।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হামলার শিকার এক গ্রামবাসী
এই মানুষটি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, শেখ শাহজাহানের নির্দেশে সিরাজ ও অজিত মাইতি মিলে তার বাড়িতে হামলা করে। ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তার ছেলেরা এখনো ঘরছাড়া। তিনি আয়লা, আমফানের ত্রাণের টাকাও পাননি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেখ শাহজাহান কোথায়?
সন্দেশখালি-কাণ্ডে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে। তার তিন সহযোগী উত্তম সর্দার, শিবু হাজরা ও অজিত মাইতিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু শেখ শাহজাহান এখনো ফেরার। তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ এখনো তার খোঁজ পায়নি। স্থানীয় মানুষের জানিয়েছেন, কোনো অভিযোগ নিয়ে গেলে বলা হতো, শাহজাহানের কাছে যেতে, শাহজাহানই নাকি বিচার করে দেবেন। বেড়মজুরে এই বিচার করত শাহজাহানের ভাই সিরাজ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সেখানে এখন শুধু পুলিশ
বেড়মজুরে কাঠপোল এলাকায় চারপাশে শুধু পুলিশ। একসময় যেখানে পুলিশের দেখা পাওয়া যেত না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ, এখন সেখানে কিছুটা দূরদূর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সারাদিন ধরে টহল
পুলিশ সারাদিন ধরে এলাকায় টহল দিচ্ছে। তারা এখন অতি-সক্রিয়। কিন্তু তাই বলে বিক্ষোভ থামছে না। সমানে চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশি নজরদারি
এভাবে পুলিশ নজর রাখছে চারিদিকে। এলাকাবাসীর বক্তব্য- একসময় তারা চাইতেন পুলিশ আসুক এবং তাদের অভিযোগের সুরাহা করুক। কিন্তু তখন তাদের এখানে দেখা যেতো না। শেখ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
টাকা ফেরত এবং বিধায়কের দাবি
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর দাবি, স্থানীয় মানুষ এখনো শেখ শাহজাহানের নামে কোনো অভিযোগ করেননি। ইতিমধ্যে তারা সন্দেশখালির মানুষকে ডেকে ডেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, তাহলে টাকাটা নিয়েছিল কারা? যদি শেখ শাহজাহান ও তার দলবল জোর করে টাকা না নিয়ে থাকে, তাহলে ফেরতই বা দিচ্ছেন কেন?
ছবি: Subrata Goswami/DW
13 ছবি1 | 13
প্রশ্নটা হলো নৈতিকতার, এখানে পেশাগত স্বাধীনতার প্রশ্ন অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। এবার একটু ২০২২ সালের ৪ মে-র দিকে নজর ফেরানো যাক। কংগ্রেসের আরেক আইনজীবী সাংসদ ও সাবেক মন্ত্রী পি চিদম্বরম কলকাতায় এসেছিলেন রাজ্য সরকারের হয়ে একটি মামলা করতে। মেট্রো ডেয়ারি নিয়ে সেই মামলা করেছিলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী। সেই মামলায় অধীরের বিপক্ষে ও রাজ্য সরকারের পক্ষে সওয়াল করতে কলকাতায় আসেন চিদম্বরম। সেই সময় আদালতকক্ষ থেকে বেরোনোর পরেই কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তব বাগচীর নেতৃত্বে একাধিক আইনজীবী চিদম্বরমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় কৌস্তভ বলেছিলেন, "চিদম্বরম তৃণমুলের হয়ে দালালি করতে এসেছিলেন। তারই প্রতিবাদ করা হয়েছে। আইনজীবী হিসেবে নয়, কংগ্রেসের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এই প্রতিবাদ করেছি। এরকম কাজ অন্য কেউ করলে তাদের জন্য জুতোর মালা, কালো পতাকা ও গো ব্যাক স্লোগান অপেক্ষা করবে।”
ঘটনা হলো, কিছুদিন আগেই কৌস্তভ বেহাল কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। সেই সময় অধীররঞ্জন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেছিলেন, এরকম কাজ যেন আইনজীবী নেতারা না করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! অধীর-সহ কংগ্রেস নেতারা দিনের পর দিন শাহজাহান নিয়ে, সন্দেশখালি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, মিছিল করবেন, আর দিল্লিতে তাদের নেতাই শাহজাহান ও রাজ্য সরকারের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করবেন। এরপর তণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে?
মঙ্গলবার সাবেক বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন তিনি বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিজেপি-ই একমাত্র জাতীয় দল যারা রাজ্যে তণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই তিনি বিজেপি-কে বেছে নিয়েছেন। কংগ্রেস সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ওটা তো একটা রাজনৈতিক জমিদারি, পারিবারিক জমিদারির দল। সেই দলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ
04:26
কোনো সন্দেহ নেই, এখনো কংগ্রেসে নেহরু-গান্ধী পরিবারের সদস্যদের কথাই শেষ কথা। তারা অভিষেকদের এই ধরনের কাজে কোনো বাধা দেননি, এখনো দিচ্ছেন না। ফলে দল রসাতলে গেলেও, দেশের মানুষের মনে বিরূপ মনোভাব দেখা দিলেও তারা কিছুই করছেন না। হয়ত, মামলা-জর্জরিত কংগ্রেসের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করার জন্য অভিষেকরাই তাদের ভরসা। তাই তাদের কিছু বলা হয় না।
কিন্তু এভাবে পশ্চিমবঙ্গে দলের যেটুকু সমর্থন ছিল, তা-ও যাবে। আব্দুল মান্নানের মতো প্রবীণ নেতা বসে গেছেন। তার অভিযোগ, সমানে অবহেলিত হওয়ার পর শীর্ষ নেতত্বকে নালিশ করার পরও কেউ কোনো কথা শোনে না। সংখ্যালঘু ভোট যে চলে যাচ্ছে সে সম্পর্কে অনেকদিন আগে সতর্ক করে দিয়েছিলেন মান্নান। তার কথা শোনা হয়নি। তৃণমূলের সঙ্গে জোটের প্রবল বিরোধী মান্নানও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। শীর্ষ নেতৃত্ব খবরও নেয়নি। অথচ, এই মান্নানই দলত্যাগ করার যাবতীয় প্রলোভন সত্ত্বেও কংগ্রেসে থেকে গেছেন।
আর রাহুল গান্ধীরা কি করছেন? এখনো পর্যন্ত একবারের জন্যও তিনি সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খোলেননি। তণমূল নেতৃত্বের সমালোচনা করেননি। বরং তৃণমূল মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরেও তাদের সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করেছেন। বিরোধিতা করতে গেলে সর্বাত্মক বিরোধিতা করতে হয়। কলকাতায় রাজ্য নেতারা কুস্তি করবেন, আর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতারা দোস্তির চেষ্টা করবেন, এই নীতি নিয়ে কতদিন আর চলা যায়!
ফলে পশ্চিমবঙ্গে এই কংগ্রেসের ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। এক-দুইটি আসন পেলে যথেষ্ট। আর রাজ্য নেতারা একরকম বলবেন, সন্দেশখালির সমালোচনা করবেন, লড়াইয়ের কথা বলবেন, আর তাদের নেতা সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের হয়ে সন্দেশখালি নিয়ে সওয়াল করবেন, এটা দেখার পর জনতা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে সেটা কি খুব অন্যায় হবে। পশ্চিমবঙ্গে তো কংগ্রেস ও তৃণমূল এমন কাজ করছে, যাতে বিজেপি রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। যা দেখা যাচ্ছে, তাতে তারাই নিজেদের কাজের মাধ্যমে বিজেপি-কে খোলা মাঠ ছেড়ে দিচ্ছে। কৌস্তভের মতো অন্য কংগ্রেস নেতারাও বিজেপি-র দিকে পা বাড়ালে কি নৈতিকভাবে কিছু বলার জায়গায় থাকবে কংগ্রেস হাইকম্য়ান্ড? তারা তো স্বখাত সলিলে ডুবে মরছেন।