পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে সন্ত্রাসবাদের কারখানার রক্ষক, সমর্থক ও মুখপাত্র বললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
বিজ্ঞাপন
গোয়ায় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের(এসসিও) বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। ১২ বছর পর কোনো পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে এলেন। এই সফরের ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে খুবই খারাপ সম্পর্কের উন্নতি হবে কি না, তানিয়ে সংবাদমাধ্যমে জল্পনার অন্ত ছিল না।
কিন্তু জয়শঙ্কর সব জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন। অতিথি বিলাওয়ালকে তিনি অত্যন্ত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। চীন, রাশিয়া-সহ একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন জয়শঙ্কর। ব্যতিক্রম বিলাওয়াল। এই প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''যে দেশ সন্ত্রাসবাদের শিকার, তারা কখনও সন্ত্রাসবাদের মদতদাতাদের সঙ্গে বৈঠক করে না।''
জয়শঙ্কর বলেছেন, ''বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বহুপাক্ষিক কূটনীতির অংশ হিসাবে ভারতে এসেছেন। তার এই সফর নিয়ে আমি এর থেকে বেশি কিছু দেখছি না।'' জয়শঙ্কর মনে করেন, ''সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা ওদের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারের থেকেও দ্রুতগতিতে কমছে।''
জয়শঙ্কর যখন এই কথা বলছেন, সেদিনই জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চের কাছে পাঁচজন ভারতীয় সেনা সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছেন।
জয়শঙ্কর পরে বলেছেন, ''যদি আমি ভালো অতিথি পাই, তাহলে অতিথি সৎকারও খুব ভালো করে করব। পাকিস্তান একদিকে সন্ত্রাস করবে, সন্ত্রাসে মদত দেয়ার অধিকার দাবি করবে, ন্যূনতম আন্তর্জাতিক রীতি-নিয়ম মানবে না, এটা হয় না।''
১২ বছর পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে এলেন। এসসিও বৈঠকে। এসেছেন চীন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।
ছবি: Indian Foreign Ministry/AP/picture alliance
বিলাওয়াল ভুট্টো গোয়ায়
দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানের কোনো মন্ত্রী ভারতে এলেন। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি গোয়ায় আসেন। তারপর তিনি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতে আসা যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গে তার আলোচনা।
ছবি: RUSSIAN FOREIGN MINISTRY/REUTERS
ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্য়াং। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত ও চীনের উচিত বন্ধুত্ব ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ খুঁজে বের করা। জয়শঙ্কর ও গ্যাংয়ের মধ্যে আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক বিষয়, বিশেষ করে লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্ত পরিস্থিতি এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ছবি: Indian Foreign Ministry/AP/picture alliance
লাভরভ-জয়শঙ্কর কথা
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর। লাভরভ অবশ্য কিছুদিন আগেও দিল্লি এসেছিলেন। ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত এখনো পর্যন্ত জাতিসংঘে রাশিয়ার নিন্দা করে কোনো ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি। তারা ভোটদানে বিরত থেকেছে। রাশিয়া থেকে তারা সস্তায় প্রচুর তেল কিনছে। পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ, ভারত রাশিয়ার পাশেই আছে। দিল্লি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
ছবি: Russian Foreign Ministry/AA/picture alliance
চীন-রাশিয়া কথা
এসসিও বৈঠকের ফাঁকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করেছেন লাভরভ ও গ্যাং। ইউক্রেন যুদ্ধে চীনও রাশিয়ার পাশে আছে বলে পশ্চিমা দেশগুলির অভিযোগ। চীনও রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় প্রচুর তেল কিনছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিছুদিন আগেই মস্কো গিয়েছিলেন। তবে চীন শান্তির জন্য মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই লাভরভ-গ্যাং বৈঠক বাড়তি গুরুত্ব পেয়েছে।
ছবি: RUSSIAN FOREIGN MINISTRY/REUTERS
এসসিও কী?
এসসিও মানে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন। ২০০১ সালে সাংহাইতে এর জন্ম। চীন, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত হলো সদস্য দেশ। তাছাড়া পর্যবেক্ষক দেশও আছে। ভারত এবার এসসিও-র সভাপতি। তাই গোয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হচ্ছে।
ছবি: Rauoof Gani/DW
গোয়ার রাস্তায়
গোয়ার বিভিন্ন রাস্তায়, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় লাগানো হয়েছে এই বোর্ড। সেখানে এসসিও সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানানো হয়েছে।
ছবি: Rauoof Gani/DW
মিডিয়া সেন্টার
দেশ-বিদেশের সাংবাদিকরা এসেছেন। তাদের জন্য তৈরি হয়েছে মিডিয়া সেন্টার।
ছবি: Rauoof Gani/DW
নিখুঁত ব্যবস্থা
এই বৈঠকের জন্য অনেকগুলি জায়গায় অফিস তৈরি করা হয়েছে। মূল বৈঠক হচ্ছে পাঁচতারা হোটেলে। তাছাড়াও বেশ কয়েকটি জায়গায় অফিস করা হয়েছে। এই বৈঠক ঘিরে রীতিমতো ব্যস্ত গোয়া।
ছবি: Rauoof Gani/DW
8 ছবি1 | 8
জয়শঙ্কর বলেছেন, ''আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত থাকব, তা ঠিক নয়। কিন্তু কোথাও না কোথাও তো একটা লাইন টানতে হবে। যদি প্রতিবেশী আমার শহর আক্রমণ করে, তাহলে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা যাবে না।''