বিলিয়নিয়ারদের মহাকাশযাত্রার প্রতিযোগিতায় অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসকে হারালেন ৭০ বছর বয়সি ব্রিটিশ বিলিয়নেয়ার রিচার্ড ব্র্যানসন৷ আর নয়দিন পরই বেজোসেরও মহাকাশে যাত্রা করার কথা৷
একজন ক্রুকে কাঁধে নিয়ে সাফল্য উদযাপন করছেন ব্র্যানসনছবি: Andres Leighton/AP Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বেজোসের প্রতিষ্ঠান অবশ্য দাবি করছে ব্র্যানসনের মহাকাশযান যথেষ্ট ওপরে যায়নি৷
রোববার ভার্জিন গ্যালাকটিকে চড়ে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মহাকাশের এমন স্থানে গিয়েছেন, যেখানে কখনো কোনো বিলিয়নিয়ার যাননি৷ অ্যামেরিকার নিউ মেক্সিকোর উৎক্ষেপণ স্থান থেকে স্থানীয় সময় বেলা দুইটা ৪০ মিনিটে মহাকাশে উড়ে যান ব্র্যানসন৷
১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় ওঠার পর মহাকাশ বিমান ইঞ্জিন চালু করে মূল যান থেকে বিচ্ছিন হয়ে যায়৷ মহাকাশের সীমানা ছুঁতে বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮৮ কিলোমিটার ওপরে ওঠে৷
ব্র্যানসনের সঙ্গে ডেভ মেকি এবং মাইকেল মাসুচি নামের দুজন পাইলট ছিলেন৷ ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রধান মহাকাশ প্রশিক্ষক বেথ মোসেস, প্রধান প্রকৌশলী কলিন বেনেট এবং গবেষণা ও সরকারি বিষয় সম্পর্কিত ভাইস প্রেসিডেন্ট সিরিশা বান্ডলাও ছিলেন ফ্লাইটে৷
ব্র্যানসন কী বলছেন?
মহাকাশযানের ভেতরে তোলা একটি ছবি নিজের টুইটারে শেয়ার করেছেন ব্র্যানসন৷ তিনি বলেন, ‘‘মহাকাশযাত্রার নতুন যুগে সবাইকে স্বাগত৷’’
মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর সেখানে ভিড় জমানো মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ১৭ বছরের কাজের শেষে অবশেষে ‘একজন গ্রাহকের অভিজ্ঞতা’ পেয়েছেন তিনি৷ আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশযাত্রা শুরুর পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি৷
বিশ্বের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ধনী মহাকাশযাত্রা নিয়ে একপ্রকার প্রতিযোগিতাই করছেন৷ এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা অ্যামাজনের জেফ বেজোসকে পেছনে ফেললেন ভার্জিন গ্যালাকটিকের রিচার্ড ব্র্যানসন৷
টেসলার প্রধান নির্বাহী এলন মাস্কও মহাকাশে, এমনকি মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন৷ এজন্য কোনো সঠিক সময় তিনি জানাননি৷ তবে সেপ্টেম্বরেই বেসামরিক নাগরিকদের মাহাকাশে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে মাস্কের স্পেসএক্স৷
প্লেন কি যথেষ্ট ওপরে পৌঁছেছিল?
ব্র্যানসনের যাত্রা শুরুর আগে বেজোসের প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন জানায়, বেশিরভাগ দেশ আকাশ শেষ হয়ে মহাকাশের শুরু হিসেবে যে দূরত্বকে হিসাব করে, ব্র্যানসনের মহাকাশযান এত ওপরে উড়ছে না৷
তবে বেজোস নিজে অবশ্য ব্র্যানসনকে এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে শুভ কামনা জানিয়েছেন৷
মার্কিন বিমান বাহিনী এবং মহাকাশ সংস্থা নাসা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার ওপরে মহাকাশ ও পৃথিবীর আকাশের সীমানা হিসেবে চিহ্নিত করে৷ কিন্তু ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন- এফএআই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশের সীমা নির্ধারণ করে৷ এই সীমাকে কারমান লাইন বলা হয়ে থাকে৷
এডিকে/এসিবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)
৮ জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন...
বেজোস, ব্র্যানসন, মাস্ক: মহাকাশে কে জিতছেন?
অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ভার্জিনের রিচার্ড ব্র্যানসন ও টেসলার ইলন মাস্ক মহাকাশে পর্যটন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন৷ এ লক্ষ্যে তারা কতদূর এগোলেন তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Virgin Galactic
নিউ শেপার্ড
এটি অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’ কোম্পানির বাহন ‘নিউ শেপার্ড’৷ এতে করে আগামী ২০ জুলাই অরবিটে ঘুরে আসবেন বেজোস, তার ভাই মার্ক ও আরেকজন৷ অনলাইনে নিলামের মাধ্যমে টিকিট পেয়েছেন ঐ ব্যক্তি, যার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি৷ টিকিটের দাম পড়েছে ২৩৮ কোটি টাকার কিছু বেশি৷ একটি রকেট নিউ শেপার্ডকে উপরে নিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসবে৷ এরপর নিউ শেপার্ড ক্যাপসুলটি প্যারাসুটের সহায়তায় পৃথিবীতে ফিরে আসবে৷
ছবি: Isaiah J. Downing/REUTERS
টিকিটের দাম
২০১৮ সালে রয়টার্স জানিয়েছিল নিউ শেপার্ডে উঠতে একজনকে কমপক্ষে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে৷ রকেট থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিউ শেপার্ড প্রায় ১০ মিনিট অরবিটে থাকবে৷ এসময় যাত্রীরা ওজনহীন অবস্থার অভিজ্ঞতা লাভ করবেন৷ নিউ শেপার্ডে ছয়জন যাত্রী যেতে পারবেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/Blue Origin/AP
ভিএসএস ইউনিটি
এটি রিচার্ড ব্রেনসনের ভার্জিন গ্যালাকটিকোর মহাকাশে যাওয়ার প্লেন৷ ভিএমএস ইভ নামের একটি বড় ক্যারিয়ার এয়ারক্রাফটে করে ভিএসএস ইউনিটিকে উপরে নিয়ে যাওয়া হবে৷ ভিএসএস ইউনিটি স্পেস প্লেনে ছয়জন বসতে পারবেন৷ এর মধ্যে দুজন ক্রু, বাকিরা যাত্রী৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Virgin Galactic
টিকিটের দাম
ভার্জিন গ্যালাকটিক ইতিমধ্যে ৬০০-র বেশি টিকিট বিক্রির আবেদন পেয়েছে৷ প্রতিটির দাম প্রায় দুই কোটি সাড়ে ১২ লাখ টাকা৷ ২০২২ সালে তারা বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে৷ ওড়া শুরু থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসা পর্যন্ত সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা৷ এর মধ্যে কিছুক্ষণ ওজনহীন অবস্থার স্বাদ পাবেন যাত্রীরা৷ টিকিটের দাম ক্রমান্বয়ে ৩৪ লাখ টাকায় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে ভার্জিন৷
ছবি: AFP/VIRGIN GALACTIC
স্পেসএক্স ড্রাগন
এটি টেসলার ইলন মাস্কের মহাকাশ যান৷ ইতিমধ্যে নাসার নভচারীরা এটিতে চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস-এ গেছেন৷ তবে এই সেপ্টেম্বরে ড্রাগনে চড়ে চার ব্যক্তির মহাকাশে যাওয়ার কথা রয়েছে যাদের কেউ পেশাদার নভচারী নন৷ তারা মহাকাশে তিনদিন থাকবেন৷ আইএসএস-এর চেয়ে বেশি উঁচুতে তারা যাবেন বলে জানা গেছে৷ বিলিওনেয়ার উদ্যোক্তা ও জেট পাইলট জারেড আইজ্যাকম্যান এই চারজনের টিকিট কেটেছেন৷
ছবি: NASA/AP Photo/picture alliance
চাঁদের কাছাকাছি
স্পেসএক্স ড্রাগনে সর্বোচ্চ সাতজন বসতে পারবেন৷ স্পেসএক্সের একেকটি মিশন তিন থেকে চারদিনের হতে পারে৷ ইলন মাস্ক সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারা স্টারশিপ নামে একটি রকেটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন যেটিত করে ২০২৩ সালে জাপানি বিলিওনেয়ার ইয়ুসাকু মেজাওয়াকে চাঁদের কাছাকাছি ঘুরিয়ে আনা হবে৷