‘‘বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা গত ৬৮ বছরে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি৷ তাই লুকোচুরি করে যারা পড়াশোনা করেছে, তাদের চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা দিতে হবে৷ দিতে হবে ব্যাংক ও বিএসএফ-এ চাকরির সুযোগ৷ বাতিল করতে হবে নিবন্ধনের শর্তও৷''
বিজ্ঞাপন
[No title]
ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন মফিজার রহমান৷ তিনি ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির পঞ্চগড়-নীলফামারী জেলার সভাপতি ছিলেন৷ ছিটমহল বিনিময়ের পর ১১১টি ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে নাগরিক অধিকার সমন্বয় উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এই সমন্বয় কমিটি যুগ্ম আহবায়কও মফিজার রহমান৷
ছিটমহল বিনিময়ের পর জীবনযাত্রায় কেমন পরিবর্তন এসেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মফিজার রহমান বলেন, ‘‘ভোটার আইডি কার্ডের কাজ শুরু হয়েছে, তবে এখনও তা হাতে পাইনি৷ এছাড়া ঈদের সময় ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছি৷ আগামী ২৫শে অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিটমহলে আসছেন৷ তিনি বাই-সাইকেল, টিন, টিউবওয়েল, হাস, মুরগিসহ ১৭ ধরনের জিনিপত্র দেবেন৷ বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে থেকে তিনি এগুলো আমাদের জন্য সংগ্রহ করেছেন বলে শুনেছি৷ বিভিন্ন অফিস আদালতে আমারা যাচ্ছি, সেখানে সম্মান দেয়া হচ্ছে৷ আজ থেকেই জমির কাগজ পেতে শুরু করেছি৷ আসলে এতদিন তো কিছুই ছিল না৷ এখন আস্তে আস্তে সব কিছু পেতে শুরু করেছি৷ আশা করি আরো পাবো৷’’
ওদিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ প্রথমবারের মতো সদ্য নাগরিকত্ব পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি দাসিয়ারছড়া সফরে যান৷ বিষয়টি উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও৷
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিটমহলবাসীর প্রত্যাশা কী? মফিজার রহমান জানান, ‘‘যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে৷ আমরা যারা আন্দোলন করে আজ বাংলাদেশের নাগরিক হয়েছি, তাদেরও স্বীকৃতি দিতে হবে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের মতো ভাতা দিতে হবে৷ কারণ আমাদের বয়স হয়েছে৷ লেখাপড়ার বয়স নেই, চাকরিও বয়স নেই৷ তাই বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে৷’’
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে গত ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে স্থল-সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে৷ এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সরকারি সেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয় ছিটমহলবাসী৷ ৩৭ হাজার বাসিন্দাসহ নিজেদের সীমানায় ভারতের এ ধরনের ১১১টি ছিটমহল পেয়েছে বাংলাদেশ৷ একইভাবে ১৪ হাজার বাসিন্দাসহ ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি৷
তাঁরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক
৬৮ বছর পর বাংলাদেশের কিছু জায়গা সত্যি সত্যি বাংলাদেশের হলো৷ ভারতের ভেতরের কিছু জায়গাও হয়েছে ‘ভারত’৷ প্রায় সাত দশক রাষ্ট্র পরিচয়হীন থাকা ছিটমহলবাসীদের অবশেষে নাগরিক হয়ে ওঠার আনন্দ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
উড়ল পতাকা
২০১৫ সালের ১ আগস্টের প্রারম্ভেই ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মানচিত্রের অংশ হয়ে গেল৷ দিনটিকে উৎসবের আনন্দে উদযাপন করা হয়৷ বাংলাদেশের অংশে ওড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আর ভারতে ওড়ানো হয় ভারতীয় পতাকা৷ ছবিতে কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছরা উপজেলায় বাংলাদেশের পতাকা ওড়াচ্ছেন উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ (মাথায় সাদা টুপি)৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
স্মরণীয় মুহূর্ত
জাতীয় পতাকা ওড়ানোর পর শুরু হয় অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা৷ কুড়িগ্রামের দাশিয়াছরার এ নারী জীবনে এই প্রথম উপলব্ধি করলেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক হওয়ার আনন্দ৷ মোমবাতি জ্বালিয়ে উদযাপন করা মুহূর্তটি নিশ্চয়ই তাঁর জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনের পরশ
বাংলাদেশের পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নিলফামারী – এই চার জেলায় ভারতের ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতে বাংলাদেশের ৭ হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫৪৯ মানুষ এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক৷ দাশিয়াছরায় আগুন জ্বালিয়ে মুহূর্তটি উদযাপন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
পঞ্চগড়ে উৎসব
৬৮ বছরের অবর্ণনীয় কষ্ট থেকে মুক্তির মুহূর্তে পঞ্চগড়ের ছিটমহলবাসীরাও হাতে তুলে নিয়েছিলেন প্রজ্বলিত মোমবাতি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
বাড়ল নাগরিক
বাংলাদেশ ও ভারতের অংশের ১৬২টি ছিটমহলের ৫১ হাজার ৫৪৯ জন অধিবাসীর মধ্যে এতদিন ৩৭ হাজার ৩৩৪ জন ‘ভারতীয়’ বাংলাদেশের ছিটমহলগুলোতে এবং ১৪ হাজার ২১৫ জন ‘বাংলাদেশি’ ভারতের ছিটমহলগুলোতে বাস করেছেন৷ এ পর্যন্ত ৯৭৯ জন ভারতে চলে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে৷ তারপরও বাংলাদেশের আয়তন এবং জনসংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/S. Islam
‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ এবং একটি প্রশ্ন
সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন৷ তারপরও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পুরোপুরি ‘শান্তিময়’ হবে এমন নিশ্চয়তা কি আছে? ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে সীমান্তে নিরীহ মানুষ হত্যা কি থামবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে...৷