নারী-পুরুষ ভেদাভেদ
২ নভেম্বর ২০১১কলকাতা থেকে বেশ অনেকটা দূরে বনগাঁ লাইনের একটি ছোট্ট রেলস্টেশন মসলন্দপুর৷ সেখানকার গ্রামের ইস্কুলে পড়া একটি মেয়ের নাম বিদিশা সিনহা৷ তিনি এখন লন্ডন শহর থেকে দু'ঘণ্টা দূরত্বে কভেন্ট্রির কাছে একটি হাসপাতালে বিশেষ ধরণের চিকিৎসক হিসেবে ব্রিটিশদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন৷
ভালো ছাত্রী বিদিশা ডাক্তারি পড়তেই প্রথমবার কলকাতায় পা রাখেন৷ এরপর এমডি করেন৷ বিবাহসূত্রে তাঁর ইংল্যন্ডে আসা৷ তারপর সেদেশে যেহেতু ভারতীয় ডিগ্রি গ্রাহ্য হয়না, তাই একই ডাক্তারি বিদিশাকে ফের পড়তে হয়েছিল৷ পরে তিনি চাকরিও পান৷ এখনও তিনি সেকাজ করে চলেছেন৷
বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না৷ একজন নারী হিসাবে বিদেশ বিভুঁইয়ে চিকিৎসার মত গুরুতর দায়িত্বপালন করাটা তো সহজ কাজ নয়! সে ধরণের প্রতিবন্ধকতা অনেক সময়েই পেরোতে হয়েছে বিদিশাকে৷ নারী হিসেবে সহজাত গর্ববোধ, সংসার, সন্তানের প্রত্যাশাপূরণ আর দায়িত্বপালনের কাজগুলি তিনি যেমন করেছেন অত্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে, তেমনই সেসব কাজের সঙ্গে সঙ্গে নিজের পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে তাঁকে নিত্য সংগ্রাম করতেও হয়েছে৷ নিজেই যে কারণে তিনি বলে দিচ্ছেন, পুরুষশাসিত এই সমাজব্যবস্থায় একটি নারীকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য জায়গা ছেড়ে দিতে পুরুষরা কখনোই রাজি নয়৷ তা, সে, ভারত, বাংলাদেশ বা বিলেতের মাটি, সব জায়গাতেই ছবিটা একইরকমের৷
গুরুদায়িত্ব পালন, সংসার সন্তান সামলানোর পাশাপাশি, বিদিশা কবিতাপ্রেমী৷ নিজে লেখেনও তিনি কবিতা৷ তাঁর রচনা থেকে কবিতা পাঠ করে তিনি শুনিয়ে দেন ডয়চে ভেলের শ্রোতাদের জন্য৷ তিনি মনে করেন, কবিতা হল শব্দ দিয়ে আঁকা ছবি, যে ছবিতে ধরা পড়ে গভীর বোধ আর সেই বোধের অনুরণন৷
চিকিৎসার মত গুরুদায়িত্ব পালন, সংসার সন্তানের দায়ভার হাসিমুখে সমালানো, তারপরে আবার কবিতা লেখার মত বোধের জগতে সম্পর্কিত থাকা, একসঙ্গে এতকিছু করতে পারে বোধহয় একজন নারীই৷ সে কারণে, নারীর মধ্যে মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশ চরিতার্থ হয়ে থাকে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ