দু’জন নারীর ডিম্বাণু ও একজন পুরুষের শুক্রাণু ব্যবহার করে শিশু জন্মদানের পদ্ধতিটি এবার ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ প্যানলের সমর্থন পেয়েছে৷ এই প্রক্রিয়ায় শিশুর দুরারোগ্য ব্যধি নিয়ে জন্মগ্রহণ ঠেকানো যাবে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস৷
বিজ্ঞাপন
‘থ্রি পেরেন্ট ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)' নামের এ পদ্ধতি ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন পেলে আগামী দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রথম শিশুটির জন্ম হতে পারে, যার বাবা-মা হবে তিনজন৷
নিজেদের জিনগত ত্রুটির কারণে যেসব দম্পতি সন্তান নিতে ভয় পাচ্ছেন, এ চিকিৎসা পদ্ধতি তাঁদের জন্য খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার৷ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক বছর ধরে এ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চললেও আইনি বিধিনিষেধ থাকায় কখনোই জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে কোনো মানব শিশুর জন্ম দেয়া হয়নি৷
ব্রিটিশ সরকার গত বছর প্রথমারের মতো এ পদ্ধতিকে আইনি ছাড়পত্র দেয়ার উদ্যোগ নেয়৷ তার অংশ হিসাবেই এ বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু হয়৷ এ পদ্ধতি যথেষ্ট নিরাপদ কি না তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রেও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে৷
ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়ায় যে ধরনের ত্রুটি থাকলে সন্তান হৃৎপিণ্ড, যকৃত, চোখ, পেশিতন্ত্র বা মস্তিষ্কে বড় ধরনের জটিলতা বা অসুস্থতা নিয়ে জন্ম নিতে পারে – সে মাইটোকন্ড্রিয়া সরিয়ে ফেলে অন্য একটি সুস্থ ভ্রুণের মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় এ পদ্ধতিতে৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতি বছর সারা বিশ্বে জন্ম নেয়া প্রতি ৬ হাজার শিশুর মধ্যে একটি এ ধরনের জটিলতা বা ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে৷
ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য অধ্যাপক পিটার ব্রোডা বলেন, এ পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ তাঁরা দেখেছেন, তাতে ‘থ্রি পেরেন্ট আইভিএফ' পদ্ধতির কোনো ঝুঁকি তাঁরা দেখতে পাননি৷ বরং জিনগত সমস্যায় ভুগছেন এমন দম্পতির জন্য এটি একটি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে৷
কেউ কেউ এ পদ্ধতির সমালোচনায় বলছেন, ‘থ্রি পেরেন্ট আইভিএফ' শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের চাহিদা মাফিক শিশু ‘তৈরির' দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ তবে এ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা বলছেন, জিন প্রকৌশল সম্পর্কে যে ধারণা প্রচলতি, তা এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷ অর্থাৎ ‘থ্রি পেরেন্ট আইভিএফ' ব্যবহার করে বাবা-মায়ের বৈশিষ্টের চেয়ে বেশি সুদর্শন, চৌকস, বুদ্ধিমান বা শক্তিমান শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব নয়৷
শৈশবেই উচ্চ রক্তচাপ; অবহেলা নয়
উচ্চ রক্তচাপ শুধু বয়স্কদের অসুখ নয়, শিশু-কিশোরদেরও হয়ে থাকে৷ তাই শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ কারণ তা না হলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক৷
ছবি: Fotolia/pete pahham
শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ?
‘শিশু ও উচ্চ রক্তচাপ’ –এ দুটো শব্দ যেন একসাথে মানায় না৷ উচ্চ রক্তচাপ যেন শুধু বয়স্কদের অসুখ – এমনটা মনে করেন অনেকেই৷ তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল! বলেন গ্যোটিংগেন শহরের শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিস্ট (হার্টের ডাক্তার) মার্টিন হুল্পকে-ভেটে৷
ছবি: DW
দেরিতে ধরা পড়ে
ডাক্তার হুল্পকে ভেটের কথায়, ‘‘জার্মানির শিশু-কিশোরদের মধ্যে চার থেকে পাঁচ ভাগেরই উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে অনেক দেরিতে৷’’
ছবি: DW/R. Breuer
গুরুত্ব দেওয়া হয় না
মিউনিখ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার রেনাটে ওবারহোফার বলেন, ‘‘শিশুদের উচ্চ রক্তচাপকে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না৷ যদিও এর ফলে শিশুদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে৷ অসুখের দিক দিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক – এ দুটোই সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে৷’’
ছবি: Alexander Raths/Fotolia.com
স্কুলের স্ট্রেস
আগে শোনা যেত ‘স্ট্রেস’ শুধু বড়দের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য৷ কিন্তু আজকের দিনে সেটা আর ঠিক নয়৷ কারণ বাচ্চাদের স্কুল থকেই শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতার যুদ্ধ, যার ফলে ওদেরও থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ৷ আর উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণই যে হলো মানসিক চাপ!
ছবি: picture-alliance/dpa
খেলাধুলা
এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন পড়াশোনা বা স্কুলের অন্যান্য চাপের পাশাপাশি খেলাধুলা, গান-বাজনা বা কোনো হবি থাকা৷ যাতে শিশু, কিশোর-কিশোরীরা তাদের রাগ, দুঃখ, কষ্ট ভুলে গিয়ে মাথাটাকে পুরোপুরি অন্য দিকে ঘোরাতে পারে৷
ছবি: Khaneye Koudak Teheran
খাওয়া-দাওয়া
শিশু-কিশোররা খেতে পছন্দ করে ‘পিৎসা’, তেলে ভাজা ‘ফ্রেঞ্চফ্রাই’ বা এ ধরনের নানা খাবার৷ এ সব খাবারে থাকে প্রচুর তেল এবং লবণ৷ তাছাড়া কফিনসহ এনার্জি ড্রিংক বা মিষ্টি পানীয়ও অল্পবয়সিদের বেজায় পছন্দ৷
ছবি: MEHR
উচ্চ রক্তচাপ সহজে বোঝা যায় না
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ সেভাবে বোঝা যায় না৷ তবে অনেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে দেখা দেয়৷ নিজের সন্তানের এ ধরনের পরিবর্তন দেখলে মা-বাবার সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা দরকার৷
অতিরিক্ত ওজন
অনেক সময় বংশগত ধারাকে উপেক্ষা করার উপায় থাকে না – তা উচ্চ রক্তচাপই হোক বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যাই হোক৷ তাই যাদের মা-বাবার অতিরিক্ত ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ছোটবেলা থেকে খাদ্যাভাসের দিকে নজর রাখা ও ব্যায়াম করা প্রয়োজন৷
ছবি: picture alliance/dpa
ধমনীর কাঠিন্য
কার্ডিওলজিস্টরা বলেন, ‘‘উচ্চ রক্তচাপের চেয়েও ধমনীর কাঠিন্য বা সমস্যা থেকে হৃদরোগ হতে পারে৷ এক্ষেত্রে ধমনী আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে৷ তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ধুমপান, ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসুখও৷
ছবি: Fraunhofer MEVIS, Bremen
কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার ভয়
উচ্চ রক্তচাপের ফলে অনেকের কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷ এ রকমটা হলে সারা জীবনের জন্য ডায়ালিসিসের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়৷ অথবা নিতে হয় কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো ঝুঁকি৷
ছবি: imago/imagebroker
ওষুধ
প্রতিনিয়ত নানা ধরনের ওষুধ সেবনও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে ‘হাইপার অ্যাকটিভ’, অর্থাৎ অত্যন্ত চঞ্চল বা অশান্ত ছটফটে বাচ্চাদের কথা৷ বহুক্ষেত্রে তাদের যে সমস্ত ওষুধ দেওয়া হতে থাকে, তা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রক্তচাপ মাপা প্রয়োজন
‘‘যেসব বাচ্চার কিডনি, ইউরিনারি নালী এবং আয়োডিনের সমস্যা রয়েছে অথবা যারা হার্টে খুঁত নিয়ে জন্মেছে, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ত চাপ মাপা প্রয়োজন৷’’ এই পরামর্শ দিয়েছেন জার্মানির শিশু-কিশোর ফেডারেল সমিতির বিশেষজ্ঞ ডা. ভল্ফরাম হার্টমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কিছু নিয়ম
নিয়মিত শরীরচর্চা অনেক রোগব্যাধিকে দূরে রাখে৷ তাই শৈশবেই শরীর চর্চা ও সুষম খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজন৷ বিশেষ করে যথেষ্ট কলা, বিভিন্ন বাদাম, আলু ইত্যাদি৷ অন্যদিকে লবণ জাতীয় খাবারকে না বলা দরকার৷ স্ট্রেস এড়িয়ে যোগ ব্যায়াম ও বিনোদনমূলক কোনো ব্যায়াম করাও যেতে পারে৷
ছবি: Fotolia/pete pahham
13 ছবি1 | 13
ব্রিটেনের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দুইভাবে ‘থ্রি পেরেন্ট আইভিএফ' করার বিষয়ে কাজ করছেন৷ তাঁরা বলছেন, মায়ের জিনের ত্রুটি ভ্রুণের মাধ্যমে শিশুর দেহে সঞ্চারিত হয়৷ এ কারণে ভ্রুণ থেকে ক্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়া প্রতিস্থাপন করতে প্রয়োজন হবে অন্য কোনো নারীর সুস্থ ডিম্বাণু৷
প্রথম পদ্ধতিতে দুই নারীর দুটি ডিম্বাণু হবু বাবার শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করা হবে৷ এরপর দুটি ভ্রুণ থেকেই নিউক্লিয়াস সরিয়ে নেয়া হবে৷ দাতার ডিম্বাণু থেকে তৈরি ভ্রুণের নিউক্লিয়াসটি নষ্ট করে ফেলে সেখানে বসানো হবে হবু মায়ের ডিম্বাণু থেকে তৈরি ভ্রুণের নিউক্লিয়াস৷ এতে করে ভ্রুণের জিন কেবল বাবা ও মায়ের বৈশিষ্ট ধারণ করবে৷ কিন্তু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটি এতে থাকবে না৷ এই ভ্রুণটিই পরে মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হবে৷
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের কাজটি করা হবে নিষিক্ত করার আগেই৷ অর্থাৎ, দুই নারীর দুটি ডিম্বাণু থেকে নিউক্লিয়াস সরিয়ে নেয়া হবে৷ দাতার ডিম্বাণু থেকে নেয়া নিউক্লিয়াসটি নষ্ট করে ফেলে সেখানে বসানো হবে হবু মায়ের ডিম্বাণু থেকে নেয়া নিউক্লিয়াসটি৷ এতে ডিম্বাণুটির জিন কেবল মায়ের বৈশিষ্ট ধারণ করবে৷ কিন্তু মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার ত্রুটি এতে থাকবে না৷ এরপর হবু বাবার শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করে সেটি হবু মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হবে৷