লকডাউনের মধ্যে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের বিশেষ উদ্যোগে চালু করা ১৪টি ফ্লাইটের অর্ধেকই বাতিল হয়েছে৷ এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেরই পাঁচটি ফ্লাইট রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার বাংলাদেশ থেকে প্রবাসীদের নিয়ে পাঁচটি দেশে মোট ১৪ টি ফ্লাইট যাত্রা করার কথা ছিল৷ কিন্তু এর মধ্যে সাতটি ফ্লাইটই বাতিল হয়েছে৷ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘‘এর মধ্যে বিমানের আসা-যাওয়াসহ পাঁচটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজেট এয়ারলাইন্স ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট রয়েছে৷ সকাল থেকে শুধু সালাম এয়ারের একটি ফ্লাইট যাত্রীদের নিয়ে মাস্কাট রওনা হয়েছে৷ সন্ধ্যায় বিমানের একটি ফ্লাইট জেদ্দা যাওয়ার কথা রয়েছে৷’’
ফ্লাইট বাতিল হওয়ার জন্য সৌদি আরবে অবতরণের অনুমতি না পাওয়া ও যাত্রী স্বল্পতাকে দায়ী করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স৷ প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ শাখার উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘‘সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে রিয়াদগামী ফ্লাইটের ল্যান্ডিং পারমিশন পেতে দেরি হওয়ায় সেটি বাতিল করা হয়৷ এছাড়া যাত্রী স্বল্পতার কারণে দুপুরে নির্ধারিত দুবাইগামী দুটি ও দাম্মামগামী একটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে৷’’
বাতিল হওয়া পঞ্চম ফ্লাইটের বিষয়ে তৌহিদ উল আহসান জানান, বিমানের যে ফ্লাইটি সকালে রিয়াদ যাওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যায় সেটার ফিরতি ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে৷
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Medichini
11 ছবি1 | 11
যাত্রীদের ভোগান্তি
এদিকে আগে থেকে ঘোষণা না দেয়ায় বিমানবন্দরে এসে ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী৷ উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা আগে রিয়াদগামী ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়েছে দাবি করেন এর যাত্রীরা৷ ভোররাতে বিমানবন্দরে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তবে বিমান বাংলাদেশের দাবি তারা আগে থেকে তথ্য জানিয়েছে৷ এ বিষয়ে তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘‘অনেক যাত্রী ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেনেন৷ বিমানের কাছে ট্রাভেল এজেন্টদের মোবাইল নম্বরই থাকে৷ বিমানের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফ্লাইট বাতিলের তথ্য জানানো হয়৷ এক্ষেত্রেও সেটা করা হয়ে থাকতে পারে৷’’
অবশ্য ফ্লাইটটির যাত্রীদের হোটেলে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ ‘‘ওই ফ্লাইটের ২০১ জন যাত্রীকে আমরা হোটেলে রেখেছি৷ পরের ফ্লাইটে তাদের পাঠানোর চেষ্টা করছি৷ এছাড়া অন্য দুই গন্তব্যের তিনটি ফ্লাইট বাতিলের তথ্য যাত্রীদের আগেই জানানো হয়েছে,’’ বলেন তিনি৷
লকডাউনে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে পাঁচটি দেশের আটটি গন্তব্যে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আটটি গন্তব্য হলো- সৌদি আরবের রিয়াদ, দাম্মাম ও জেদ্দা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি, ওমানের রাজধানী মাস্কাট, কাতারের রাজধানী দোহা ও সিঙ্গাপুর৷