1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্বকাপের জন্য যে প্রযুক্তিতে স্টেডিয়াম বানাবে কাতার

২৯ মার্চ ২০১১

২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসতে যাচ্ছে কাতারে৷ এটা পুরনো খবর৷ এজন্য অবশ্য কাতারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ কারণ অসহনীয় গরম৷ তবে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রচণ্ড গরমেও বিশ্বকাপ হওয়া সম্ভব৷

২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের জন্যে কাতার স্টেডিয়ামের মডেলছবি: picture alliance / dpa

ফিফাকে এমনটাই বোঝাতে সক্ষম হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি৷ বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই জুন-জুলাই মাস৷ কিন্তু এই সময়টাতেই কাতারে তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি৷ যেটা বলা যায় ফুটবল খেলার জন্য একেবারেই অনুপোযুক্ত৷ গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফা'রও একই মত ছিল৷ তাদের কথা ছিল, এই গরমে ফুটবল খেললে খেলোয়াড়রা অসুস্থ হয়ে পড়বে৷ কিন্তু তারপরও বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে কাতারে৷ কারণ আর কিছুইনা, প্রযুক্তি৷ যেটা এখনো বিশ্ববাসী দেখেনি৷ বিশ্বকাপেই সেটা প্রথমবারের মতো দেখা যাবে, এমনটাই বলছে কাতার৷

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম

মোট ১২টি স্টেডিয়ামে খেলা হবে৷ এর মধ্যে অবশ্য মাত্র তিনটির অস্তিত্ব আছে এখন৷ অর্থাৎ নয়টি নতুন স্টেডিয়াম বানাতে হবে৷ কাতার বলছে, প্রতিটি স্টেডিয়াম হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ যার তাপমাত্রা থাকবে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে৷ যেটা ফুটবলের জন্য আদর্শ৷ জার্মানির স্থাপত্য কোম্পানি এএসএন্ডপি এই স্টেডিয়ামগুলোর পরিকল্পনা করছে৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হবে কাতারের প্রখর সূর্যের তাপকেই৷ মানে প্রতিটি স্টেডিয়ামের বাইরে ও ছাদে থাকবে সৌর প্যানেল৷ যেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে৷ এই বিদ্যুৎ দিয়ে পানিকে ঠান্ডা করা হবে৷ যেটা আবার বাতাসকে করবে শীতল৷ এই শীতল বাতাসই স্টেডিয়াম জুড়ে বয়ে বেড়াবে৷ ফলে ঠান্ডা থাকবে মাঠের আবহাওয়া৷ শুধু স্টেডিয়ামেই নয়৷ খেলোয়াড়রা যেসব মাঠে অনুশীলন করবে সেখানেও একই ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

অ্যামেরিকার অ্যারিজোনাতেও কাতারের মতোই তাপমাত্রা থাকে৷ তাই সেখানেও তৈরি করা হয়েছে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টেডিয়াম৷ যার কারিগর জ্যাক বোয়েল৷ অবশ্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি সৌরশক্তি নয়, ব্যবহার করেছেন সাধারণ পদ্ধতি৷ তবে সৌরশক্তির মাধ্যমেও এই কাজ সম্ভব বলে মানছেন তিনি৷ অর্থাৎ কাতারের পক্ষেই তাঁর মত৷


ছাদ বসানো

এদিকে সৌরশক্তির মাধ্যমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা ছাড়াও আরেকটি পরিকল্পনার কথা বলছে জার্মান কোম্পানি এএসএন্ডপি৷ সেটা হলো ছাদ৷ মানে, স্টেডিয়ামের জন্য ছাদ বানানো হবে যেটা যখন তখন সরিয়ে ফেলা যাবে৷ এএসএন্ডপি পার্টনার ইয়োআখিম শারেস বলছেন খেলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ছাদ দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে স্টেডিয়াম৷ ফলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকবে৷ ফিফা অনুমতি দিলে খেলার সময়ও ছাদ দিয়ে ঢাকা থাকতে পারে স্টেডিয়াম৷

এছাড়া এই স্টেডিয়ামগুলো তৈরি হবে এমনভাবে যেন বিশ্বকাপ শেষে সেগুলো খুলে ফেলে অন্য কোনো জায়গায় বা অন্য কোনো দেশে আবার লাগানো যায়৷

স্টেডিয়ামের জন্য ছাদ বানানো হবে যেটা যখন তখন সরিয়ে ফেলা যাবেছবি: picture-alliance/dpa

দ্বীপ স্টেডিয়াম

বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়৷ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ও শেষ খেলাটি কাতার করতে চাইছে ‘আইল্যান্ড স্টেডিয়াম' অর্থাৎ দ্বীপ স্টেডিয়ামে৷ যার চারপাশে থাকবে পানি৷ এই পানি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে৷ প্রায় ৮৬ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবে এই স্টেডিয়ামে৷ জানা গেছে চার বছর লাগতে পারে এই স্টেডিয়াম বানাতে৷

স্টেডিয়ামের উপর কৃত্রিম মেঘ

সবশেষে আরেকটি পরিকল্পনার কথা শোনাবো আপনাদের৷ কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে৷ বিষয়টা হচ্ছে –বিশাল আকৃতির একটি বস্তু এমনভাবে স্টেডিয়ামের উপর স্থাপন করা হবে যেটা সূর্যের আলো মাঠ পর্যন্ত পৌঁছতে দেবে না৷ এই বস্তুটিকে বলা হচ্ছে ‘আর্টিফিশিয়াল ক্লাউডস' মানে কৃত্রিমভাবে তৈরি মেঘ৷ যার আকার হবে অনেকটা জেট বিমানের মতো৷ তার উপরে থাকবে কার্বন ফাইবার আর সৌর প্যানেল৷ রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে চলবে এটি৷ এতে থাকবে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা যেটা সূর্যের গতিবিধি লক্ষ্য রাখবে৷ ফলে সূর্য যখন যেদিক থেকে তাপ ফেলবে বস্তুটি ঠিক সেখানে গিয়েই দাঁড়িয়ে যাবে যেন তাপ মাঠ পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে৷ এভাবে মাঠের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা প্রায় চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমানো যাবে বলে আশা করছেন ড. সৌদ ঘনি৷ তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র ও শিল্পকৌশল বিভাগের প্রধান৷ যে বিভাগ এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে৷

ড. ঘনি বলছেন তাদের প্রকল্পটি কেবলমাত্র প্রাথমিক ধাপ পেরিয়েছে৷ এ বছরের শেষ নাগাদ তারা চার-বাই-তিন মিটারের একটি প্রোটোটাইপ বানাতে চাইছেন৷ যেটার মাধ্যমে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হবে৷ তাঁর আশা, তাপমাত্রা কমানো ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রচারমাধ্যমের কর্মীদের জন্য ব্যবস্থাটা সহায়ক হবে৷ কারণ তারা ইচ্ছে করলে এই বস্তুতে ক্যামেরা বসিয়ে তাদের কাজ সারতে পারবেন৷

এভাবে একের পর এক অত্যাধুনিক পরিকল্পনা নিয়ে কাতার এগিয়ে চলেছে বিশ্বকে একটা সেরা বিশ্বকাপ উপহার দিতে৷ সফলভাবে সেটা করে তারা চাইছে সেইসব সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে যারা ফিফা'র সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ