অ্যামেরিকা মহাদেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে কখনও শিরোপা জেতেনি ইউরোপের কোনো দেশ৷ বর্তমান সাফল্যের জোয়ারে তারা কি ব্রাজিলে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয় করতে পারবে? এ প্রশ্ন কিন্তু আজকাল উঁকি দিচ্ছে অনেকের মনেই৷
বিজ্ঞাপন
ফুটবল এমন একটা খেলা, যাতে আগেভাগে হারজিত সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না৷ তাই রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার শেষ নেই৷ তবে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে পূর্বাভাষের একটা রীতি চালু রয়েছে৷ যেমন ব্রাজিলে আসন্ন বিশ্বকাপের আগে শুরু হয়ে গেছে হিসাব-নিকাশ৷ তাতে দেখা যাচ্ছে ইউরোপের কোনো দেশ অ্যামেরিকা মহাদেশে কখনো কোনো বিশ্বকাপ জয় করেনি৷ এখনো পর্যন্ত মোট সাতবার বিশ্বকাপের আসর বসেছে উত্তর ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায়৷ এবার ব্রাজিলে কি সেই প্রবণতায় ছেদ পড়বে?
ফুটবল জগতে এই মুহূর্তে ইউরোপের রমরমা৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে চারটি দেশের মধ্যে তিনটিই ছিল ইউরোপের৷ ক্লাব পর্যায়ে এই সাফল্যের মাত্রা আরও বেশি৷ ক্লাব পর্যায়ের বিশ্ব প্রতিযোগিতায় যে সাতটি টিমের জয় হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছয়টি ছিল ইউরোপের৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
আরও একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করার মতো৷ লিওনেল মেসির মতো দক্ষিণ অ্যামেরিকার অনেক তারকা খেলোয়াড় বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়ে ইউরোপে ক্লাব পর্যায়ে খেলতে ব্যস্ত থাকেন৷ ফলে ব্রাজিলে বিশ্বকাপের মাঠে তাঁরা যে বাড়তি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন, তা ধরে নেওয়া কঠিন৷ এমনকি খোদ ব্রাজিলের জাতীয় দলের মধ্যেও খুব কম খেলোয়াড় থাকবেন, যাঁরা শুধু ব্রাজিলেই খেলে আসছেন৷
একটা সময় ছিল, যখন নিজের দেশে খেলার কিছু বাড়তি সুবিধা ছিল৷ সবার উপরে ছিল দর্শকদের সমর্থন৷ আজকাল ফুটবল অনেক বেশি প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে পড়া সত্ত্বেও অন্য মহাদেশে গিয়ে খেলা এখনো পুরোপুরি সহজ নয়৷ অতীতে পরিবহন ছিল বড় এক সমস্যা৷ ১৯৩০ সালে উরুগুয়ে, ১৯৫০ সালে ব্রাজিল ও ১৯৬২ সালে চিলিতে বিশ্বকাপের সময় কিছু টিম জাহাজে করে খেলতে এসেছিল৷ আজ আর সেই সমস্যা নেই৷ বিলাসবহুল জেটে করে জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন৷ স্থানীয় আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে৷