প্রথম ৩০ জনের এই দলে অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার মারিও গোমেজ নেই; নেই রেনে আডলারের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপার৷ অপরদিকে শালকের লিওন গোরেটৎস্কা বা হফেনহাইমের কেভিন ফোলান্ডকে দলে রেখেছেন জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷
বিজ্ঞাপন
এই ‘প্রভিশনাল স্কোয়াড' থেকেও কমে ২৫ অথবা ২৬ জন প্লেয়ার বাকি থাকবে আগামী সপ্তাহে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলির পর৷ চূড়ান্ত ২৩ জন প্লেয়ারের দল পেশ করার শেষ তারিখ হলো ২রা জুন৷
বৃহস্পতিবার ল্যোভ যে দলের নামকরণ করলেন, তা দেখলে প্রথমেই চোখে পড়ে: ল্যোভ একাধিক অভিজ্ঞ, বাঁধা খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত প্লেয়ারদের দলে এনেছেন, যেমন জেনোয়ার ডিফেন্ডার স্কোদ্রান মুস্তাফি, ফ্রাইবুর্গের মিডফিল্ডার মাথিয়াস গিন্টার ও ডর্টমুন্ডের ডিফেন্ডার এরিক ডুর্ম৷
ল্যোভ কাকে বাদ দিলেন, তা বলতে হলে প্রথমেই ফিওরেন্তিনার স্ট্রাইকার মারিও গোমেজের নাম করতে হয়৷ ওদিকে ল্যোভ যে দু'জন নামি-দামি গোলরক্ষককে সঙ্গে নিচ্ছেন না, তারা হলেন মোয়েনশেনগ্লাডবাখের মার্ক-অন্দ্রে টের স্টেগেন ও সাবেক জার্মান গোলকিপার রেনে আডলার৷ বৃহস্পতিবার ল্যোভ নিজেই বলেন যে, তিনি মিডফিল্ডার সামি খেদিরার ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম করছেন, যদিও খেদিরা গত নভেম্বর মাসে হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পর আর রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠে নামেননি৷
সামি খেদিরার মতো লাৎসিও রোমের মিরোস্লাভ ক্লোজে-ও ইনজুরির পর আর টপ ফর্মে নেই৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্লোজেকে দলে রেখেছেন ল্যোভ৷ এটা হবে ক্লোজের চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ক্লোজেকে দলে রাখার কারণ আর খেদিরাকে বাদ না দেওয়ার কারণ সম্ভবত এক: মনোনয়নের মুখ্য শর্ত ছিল ‘‘ফর্ম এবং ফিটনেস'', বলেছেন ল্যোভ৷ কিন্তু খেদিরাকে চোট সত্ত্বেও রাখা হয়েছে তাঁর ‘‘ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতার'' কারণে৷
অপরদিকে শালকের গোরেটৎস্কা ও ম্যাক্স মায়ারের বয়স যথাক্রমে ১৯ এবং ১৮৷ এভাবেই দলে তরতাজা তারুণ্য মিশিয়েছেন ল্যোভ, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপেও তিনি যেটা করেছিলেন৷ সেটা ছিল ৭৬ বছর পরে জার্মানির তরুণতম বিশ্বকাপ দল৷ তবে এবার ল্যোভের প্রথম দুশ্চিন্তা হয় ইনজুরি নিয়ে, যেমন প্লে-মেকার বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগারের ইনজুরি৷
বুধবার ল্যোভ ‘স্ট্যার্ন' পত্রিকাকে বলেন: ‘‘আপাতত আমাদের মাত্র সাত বা আটজন প্লেয়ার আছে, যারা টপ ফর্মে রয়েছে৷'' ল্যোভ নিজেই ফিরিস্তি দিয়েছেন: ‘‘ক্লোজে, খেদিরা, গোমেজ, গুইন্ডোয়ান, শোয়াইনস্টাইগার, এরা সবাই আমাদের দলের খুঁটি বলা চলে, কিন্তু সকলেরই ম্যাচ প্র্যাকটিসের অভাব৷''
কথাটা সত্যি৷ খেদিরা গতবছর একটি লিগামেন্ট ছেঁড়েন; গুইন্ডোয়ান পিঠে চোট পেয়ে গতবছরের অগাস্ট মাস যাবৎ খেলেননি – শোয়াইনস্টাইগার আর গোমেজের কথা তো আগেই বলা হয়েছে৷ ডর্টমুন্ডের সোয়েন বেন্ডার এবং শালকের বেনেডিক্ট হোয়ভেডেজ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইনজিওর্ড থাকার পর হয়ত এই শনিবার মাঠে ফিরবেন৷ সেই সঙ্গে হামবুর্গের মার্সেল ইয়ানসেনকে যোগ করলে ল্যোভের প্রায় ট্যাঁক খালি! খোদ মেসুত ওয়েজিল আর্সেনালে এ মরশুমে বিশেষ ঝলসে উঠতে পারেননি – সদ্য পিঠের চোট থেকে সেরে উঠছেন ওয়েজিল৷ বায়ার্ন মিউনিখের টোনি ক্রোস আর জেরোম বোয়াটেংর ফর্মও বিশেষ ভালো যাচ্ছে না৷ সব মিলিয়ে ল্যোভ আপাতত যে টিম করেছেন, তা হলো:
জার্মান ফুটবল দলে চোট সমস্যা এবং সমাধান
ব্রাজিল বিশ্বকাপ জার্মানির জন্য আসছে ২৪ বছরের ট্রফি খরা কাটানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে৷ অথচ দলের তারকা খেলোয়াড়রা ভুগছেন চোট সমস্যায়৷ অবশ্য তরুণরা উঠে আসছেন আশার আলো হয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্যামি খেদিরা
২০১০ বিশ্বকাপে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে জার্মান দলে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন স্যামি খেদিরা৷ কিন্তু ২০১৪-র ব্রাজিল বিশ্বকাপে কি খেলতে পারবেন? শঙ্কা জাগিয়ে রেখেছে ইনজুরি৷ রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্লাব ফুটবল খেলা খেদিরা গত মাসেই ইতালি-জার্মানি প্রীতি ম্যাচে চোট পেয়েছেন হাঁটুতে৷ চোট সারাতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে৷
ছবি: Martin Rose/Bongarts/Getty Images
বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার
জার্মান দলের আরেক অপরিহার্য মিডফিল্ডার বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার৷ তাঁর প্রায় পুরো মৌসুমটাই গেছে চোটের সঙ্গে লড়াই করে৷ ক'দিন আগে চর্তুথবারের মতো অস্ত্রোপচার করাতে হলো অ্যাংকেলে৷ নতুন বছর শুরুর আগে তাই মাঠে ফেরার সম্ভাবনা নেই৷ জার্মান ফুটবলে তরুণ মুখের যে মিছিল শুরু হয়েছে, তা দেখে শোয়াইনস্টাইগারের এ মুহূর্তে কিছুটা দুশ্চিন্তাতেই থাকার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইলকায় গুনডোয়ান
প্যারাগুয়ের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচটির আগে জার্মানির জার্সি গায়ে গুনডোয়ানকে শেষ কবে দেখা গিয়েছিল বলতে বললে অনেক ভক্তই হয়তো মুশকিলে পড়ে যাবেন৷ আগস্টের সেই ম্যাচেও সদ্য চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই ফুটবলার প্রথমার্ধটাই ঠিকমতো খেলতে পারেননি৷ ম্যাচের আধ ঘণ্টা হবার আগেই পিঠে ব্যথা নিয়ে আবার মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে৷ ঘন ঘন চোটগ্রস্ত হবার অভ্যেসটা তাঁকেও পেয়ে বসেছে ৷
ছবি: AFP/Getty Images
হোলগার বাডশ্টুবার
২০১০ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে জার্মানির রক্ষণভাগে তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক৷ ২৪ বছর বয়সি এই ডিফেন্ডারও প্রায় এক বছর ধরে ভুগছেন চোট সমস্যায়৷ তাড়াতাড়ি মাঠে ফেরার আশায় ক'দিন আগে তাঁকেও চতুর্থবারের মতো যেতে হয়েছে অপারেশন থিয়েটারে৷ এ অস্ত্রোপচারের পর অবশ্য অনেকে মনে করছেন জার্মানি বিশ্বকাপের সময়টায় তাঁকে চাঙ্গা অবস্থাতেই পাবে৷
ছবি: Reuters
লুকাস পোডলস্কি
জার্মান দল তো বটেই, এমনকি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালও আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে৷ এবার আর্সেনালে যোগ দেয়া জার্মান জাতীয় দলের আরেক ফুটবলার মেসুট ওজিলের সঙ্গে ইংলিশ লিগ মাতানোর কথা লুকাস পোডোলস্কির৷ কিন্তু হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যাটা ২৮ বছর বয়সি এ ফুটবলারকে এতটাই ভোগাচ্ছে যে জার্মান দলে ফেরাটা তাঁর জন্য খুব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে৷
ছবি: Reuters
মিরোস্লাভ ক্লোজে আর মারিও গোমেজ
জার্মান দলের মূল ফরোয়ার্ড হিসেবে এ দুজনের একজনকে অন্তত পেলে অনেকটা নিশ্চিন্ত হতে পারতেন কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ৷ কিন্তু আজ ক্লোজে ইনজুরিতে তো, কাল গোমেজ৷ দুজনকে একসঙ্গে দেখে একটা সিদ্ধান্তে আসার সুযোগই পাচ্ছেন না ল্যোভ৷ এখনও ক্লোজে লড়ছেন তাঁর বয়স (৩৫) আর ফিরে ফিরে আসা চোটের সঙ্গে৷ এদিকে অফ সিজনে ইতালির ফিওরেন্তিনায় যোগ দেয়ার পর থেকে গোমেজও ভুগছেন ফিটনেস সমস্যায়৷
ছবি: Getty Images/DW
মাক্স ক্রুজ
মিরোস্লাভ ক্লোজে আর মারিও গোমেজের অনুপস্থিতির সুযোগে জাতীয় দলে সুযোগ করে নিয়েছেন মাক্স ক্রুজ৷ গত মে মাসে ইকুয়েডরের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার আগে ফ্রাইবুর্গে খেলতেন৷ তারপর থেকে নতুন ক্লাব মুনশেনগ্লাডবাখের হয়েও রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে৷ ১২ ম্যাচে ৭ গোল তেমন ইঙ্গিতই দেয়৷ অভিজ্ঞ ক্লোজে এবং গোমেজের বিকল্প হিসেবে ক্রুজকে গুরুত্ব দিতেই পারেন জার্মানির কোচ ল্যোভ৷
ছবি: picture alliance/augenklick/GES
স্ভেন আর লার্স বেনডার
খেদিরার বিকল্প খুঁজে পাবেন কিনা এ নিয়ে কোচ ল্যোভকে বেশি ভাবতে দেননি বেনডার পরিবারের দুই ছেলে সভেন আর লার্স৷ দু ভাইয়ের মধ্যে লার্সই জার্মান দলে সুযোগ পেয়েছেন বেশি৷ ২০১২-র ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সহ-অধিনায়কের মর্যাদাও দেয়া হয়েছিল তাঁকে৷ বুন্ডেসলিগায় লার্স খেলেন লেভারকুজেনের হয়ে আর স্ভেন বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে৷
ছবি: picture alliance/ZB
ফিলিপ লাম
মাঝমাঠের দুই নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় খেদিরা আর শোয়াইনস্টাইগারের অভাবটা অধিনায়ক ফিলিপ লামকে দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করতে পারেন ল্যোভ৷ বায়ার্ন মিউনিখে তো ডিফেন্ডার থেকে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হয়েও ভালোই খেলেছেন লাম৷ ইতালির বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জার্মানির হয়েও একই পজিশনে খেলেছেন৷ অবশ্য মাঝমাঠ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হলে বিশ্বকাপে লামকে তাঁর ‘আসল জায়গা’ রক্ষণভাগেই দেখতে চাইবেন কোচ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোমান ভাইডেনফেলার
৩৩ বছর বয়সে গোলরক্ষক হিসেবে জার্মান দলে সুযোগ পেয়েছেন ভাইডেনফেলার৷ বোরুসিয়া ডর্টমুন্ডের গোলপোস্টের অতন্ত্র প্রহরী জাতীয় দলে একই দায়িত্ব পেয়েছেন স্রেফ নিজের যোগ্যতা দিয়ে৷ ক্লাবের হয়ে দুর্দান্ত খেলার পুরস্কার হিসেবেই ডাক পেয়েছেন জার্মান দলে৷ দলের প্রথম গোলরক্ষক অবশ্যই মানুয়েল নয়্যার৷ কিন্তু নয়্যার খেলতে না পারলে কী হবে – এই প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন ল্যোভ৷ ভাইডেনফেলার তো আছেনই!
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
গোলে (৩ জন মনোনীত): মানুয়েল নয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ); রোমান ভাইডেনফেলার (ডর্টমুন্ড); রন-রবার্ট জিলার (হ্যানোভার)৷