যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবল দল জুনের মাঝামাঝি সময়ে যখন ব্রাজিল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলতে নামবে, তখনো অধিকাংশ অ্যামেরিকান বুঁদ হয়ে থাকবেন রাগবি কিংবা বেইসবলের খবরে৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপ সামনে রেখে রয়টার্স-ইপসোস যুক্তরাষ্ট্রে একটি জনমত জরিপ চালিয়েছে, যাতে প্রতি তিনজন অ্যামেরিকানের মধ্যে দু'জনই বলেছেন, এই টুর্নামেন্টে কি হলো – তা নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই৷ মাত্র সাত শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা প্রতিটি ম্যাচ উপভোগ করতে চান৷
‘সুপার পাওয়ার' যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজন হয়েছিল – তাও ২০ বছর হয়ে গেল৷ তার দুই বছর পর সেখানে শুরু হয় পেশাদার ফুটবল টুর্নামেন্ট – ‘মেজর লিগ সকার'৷ এই দুই দশকে অ্যামেরিকায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা যে বেড়েছে তার প্রমাণ মেলে লিগে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা হিসাব করলেই৷ শুরুতে ১০টি দল নিয়ে শুরু হলেও এখন তা বেড়ে ১৯টিতে দাঁড়িয়েছে৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেভিড বেকহ্যাম ও থিয়েরি অঁরির মতো তারকা খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণও এই লিগকে জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রেখেছে৷ নিউ ইয়র্ক ইয়াংকির সঙ্গে মিলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সফল দল ম্যানচেস্টার সিটি ইতোমধ্যে গঠন করেছে নতুন দল ‘নিউ ইয়র্ক সিটি ফুটবল ক্লাব', যারা আগামী বছরই এ লিগে খেলতে নামবে৷
ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক বেকহ্যামের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে মিয়ামির আরেকটি দল, যারা মেজর লিগে খেলতে আগ্রহী৷ কিন্তু বিশ্বকাপকে অ্যামেরিকান ফুটবলের ‘সুপার বোল' বা বেসবলের ওয়ার্ল্ড সিরিজের মতো জনপ্রিয় করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আরো অনেক পথ গড়াতে হবে ফুটবলকে৷
রয়টার্স-ইপসোস জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, তারা ফুটবল বিশ্বকাপ সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না৷ দুই তৃতীয়াংশের বেশি অ্যামেরিকান জানেন না – এবারের বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কোনটি৷
৪৮ বছর বয়সি হোসে ভারগাস যুক্তরাষ্ট্রর হিউস্টনে বসবাস করছেন ২০০৩ সাল থেকে৷ এবার সবগুলো খেলা টেলিভশনে দেখার সুযোগ হয়ত তিনি পাবেন না, তবে নিজের দেশ কলোম্বিয়ার প্রতি তার সমর্থন ঠিকই থাকবে৷
২০১৪ বিশ্বকাপে যাঁদের জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা
২০১৪ সালের বিশ্বকাপকে সেরা টুর্নামেন্টে পরিণত করায় রোনাল্ডো আর মেসির ভূমিকা থাকতেই পারে৷ কিন্তু আরো ১০ লুকানো রত্ন রয়েছে, যাঁরা সুযোগ পেলেই দেখাতে পারেন তাঁদের কেরামতি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খোয়াদভো আসামোয়া (ঘানা)
সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে অসাধারণ দক্ষতা ঘানার এই ফুটবলারের৷ ২৫ বছর বয়সি এই খেলোয়াড় তাই মাঠে হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের বিভীষিকা৷ ২০১০ সালের মতো ঘানা যদি তাদের সেরাটা দিতে পারে, এক্ষেত্রে অবশ্যই ভূমিকা রাখবেন আসামোয়া৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
পল পগবা (ফ্রান্স)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ফুটবলে পল পগবা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন৷ স্যার আলেকজান্ডার ফার্গুসনের মুখেও এই ফুটবলারের প্রতি প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁর সিদ্ধান্তেই এই কিশোর ফুটবলার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন৷ শক্তিশালী এই খেলোয়াড় যে বিশ্বকাপে মাঠ মাতাবে, তা বোধহয় বলাই যায়৷
ছবি: Marco Bertorello/AFP/Getty Images
অ্যাডাম লালানা (ইংল্যান্ড)
এবার বিশ্বকাপে ইংলিশ শিবিরের শিরোপা জেতার আশা অনেকটাই বেশি৷ ২০১৩/১৪ মৌসুমে লালানা যে আভিজাত্য এবং দক্ষতার সাথে খেলেছেন, তা এককথায় অসাধারণ৷ তাই এই মিডফিল্ডারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন অনেকেই৷
ছবি: Getty Images
মিরালেম পিয়ানিচ(বসনিয়া)
কিশোর এই ফুটবলারকে নিয়ে ইটালির মিডিয়ায় বরাবরই মতামাতি৷ বসনিয়ায় এই ফুটবলারকে বলা যায় স্বভাবজাত ফুটবলার৷ অসাধারণ পাস, দূর দৃষ্টি এবং ফুটবল নিয়ন্ত্রণে অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর৷
ছবি: Getty Images
ইয়োইচিরো কাকিতানি (জাপান)
জাপানের অন্যতম আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার কাকিতানি৷ তাঁর পেস, গতি এবং লিঙ্ক আপের দক্ষতা অসাধারণ৷ ২৪ বছর বয়সি কাকিতানি ব্রাজিল বিশ্বকাপে তাঁর সেরাটা দিয়ে সামুরাই ব্লুদের অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
কেভিন দে ব্রয়না (বেলজিয়াম)
বেলজিয়ামের স্বর্ণ প্রজন্মের অন্যতম অংশীদার কেভিন দে ব্রয়না৷ বুন্ডেসলিগায় তাঁর অসাধারণ অভিষেক এখনো মনের মধ্যে গেঁথে আছে ফুটবল ভক্তদের৷ মাত্র ২৩ বছর বয়সি এই শক্তিশালী ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখার অপেক্ষায় থাকবেন বিশ্ববাসী৷
ছবি: Getty Images
লুকাস মুরা (ব্রাজিল)
২১ বছর বয়সি এই ফুটবলার ব্রাজিল শিবিরে কয়েক বছর আগে প্রবেশ করেছে৷ ফরাসি ফুটবল ক্লাব পিএসজি-র গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি৷ আর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের আক্রমণ ভাগেও এই প্রতিভাবান ফুটবলারের খেলা দেখার অপেক্ষায় থাকবেন ভক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জেমস রোদ্রিগেজ (কলম্বিয়া)
এ বছর বিশ্বকাপে সবার চোখ থাকবে কলম্বিয়ার দিকে৷ কেননা দক্ষিণ অ্যামেরিকার এই দলটি এখন দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে৷ মোনাকো তারকা রোদ্রিগেজ কাঁধে রয়েছে দলের সব চাপ৷ ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের গতি এবং খেলার ধরণ অসাধারণ৷ তিনি এই দলের একটি রত্নে পরিণত হয়েছেন৷
ছবি: Getty Images
এদুয়ার্দো ভার্গাস (চিলি)
ফার্গাস এখন ভ্যালেন্সিয়ায় রয়েছেন৷ তবে খুব শিগগিরই স্টুটগার্ডে জার্মান ভক্তরা প্রীতি ম্যাচে তাঁর দেখা পাবেন৷ তবে ২৪ বছর বয়সি প্রতিভাবান এই ফুটবলারের জন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ একটি নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইয়োর্দি ক্লাসি (নেদারল্যান্ডস)
ইয়োর্দি ক্লাসির মধ্যে লুকিয়ে আছে সহজাত ফুটবলার৷ নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলের পুরো দায়িত্ব এখন এই মিডফিল্ডার এ কাঁধে৷ মাত্র ২২ বছর বয়সেই ১০০ ম্যাচ খেলার মাইল ফলক ছুঁয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
হোসে ভারগাস জানান, তাঁর স্প্যানিশ ভাষাভাষি বন্ধুদের মধ্যেই ফুটবল বেশি জনপ্রিয়৷ তাঁর ভাষায়, ফুটবল এমন একটি খেলা – ইউরোপ আর ল্যাটিন অ্যামেরিকার মানুষই যেটি বেশি দেখে৷
এবারের বিশ্বকাপসহ ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফিফা আয়োজিত সব ফুটবল ম্যাচ ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারের জন্য ২০০৫ সালে ১০ কোটি ডলারে স্বত্ত্ব কিনেছিল এবিসি এবং ইএসপিএন৷ অথচ স্প্যানিশ লিগ সম্প্রচারের স্বত্ত্ব পেতে ইউনিভিশনকে দিতে হয়েছে সাড়ে ৩২ কোটি ডলার৷
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হিস্পানিকদের এক তৃতীয়াংশ জরিপে বলেছেন, তারা ব্রাজিল বিশ্বকাপের দিকে পুরো মাত্রায় নজর রাখবেন৷ ২০১০ সালের পরিসংখ্যান সুমারি অনুযায়ী, হিস্পানিকদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ৷
গত ৭ থেকে ১১ এপ্রিল ১ হাজার ৪১৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকানের ওপর এই জরিপ চালায় রয়টার্স-ইপসোস৷ এই জরিপে অংশ নেয়া ফিনিক্সের বাসিন্দা কেলি কোসিন্যু জানান, স্কুলে ফুটবল খেললেও কলেজে বৃত্তি পেতে সুবিধা হবে ভেবে পরে তিনি ভলিবলে মনোযোগ দিয়েছিলেন৷ এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে তারও খুব বেশি আগ্রহ নেই৷
‘‘ফুটবল খেলাটা এখানে সবাই সেভাবে ফলো করে না৷ বাস্কেটবল আর বেইসবলকেই ‘অল-অ্যামেরিকান' খেলা বলে মনে করা হয়৷''